জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান: প্রাক্তন মহাপরিচালক বিডিআর।
ফেসবুকে দেখলাম হাটহাজারি কাওমি মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা শাহ্ আহমদ শফি সাহেব বলেছেন তিনি ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার মতো বাংলাদেশেও কাওমি মাদ্রাসার একইরুপ স্বীকৃতি চান সরকারের কাছে। আমি তাঁর এই প্রস্তাবের সাথে স্ববিনয়ে দ্বিমত পোষণ করছি। বাংলাদেশের কাওমি মাদ্রাসার পরিচালন ব্যবস্থা এবং এর স্বীকৃতির বিষয়টি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে চিন্তা করতে হবে। তদুপরি ভারত বাংলাদেশ নয়। আমাদের প্রয়োজন এবং ভারতের প্রয়োজন এক হবেনা। তফাৎ থাকবে। গরীব মানুষের দারিদ্রকে সামনে রেখে শুধু গরীবের সন্তানদের দীনি শিক্ষা দানে ধনিদের অনুদান গ্রহন করে কাওমি মাদ্রাসা একধরনের স্ববিরোধিতার মধ্যে আজন্ম নিপতিত হয়ে আছে। কাওমি মাদ্রাসা যাদের অনুদান গ্রহন করে তাদের সন্তানেরা কাওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেনা। আর যাদের সন্তানরা কাওমি মাদ্রাসায় পড়ে তারা কোনো অনুদান দেয় না। আজ পর্যন্ত কাওমি মাদাসা সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের সন্তানদের কাওমি মাদ্রাসা শিক্ষায় আকৃষ্ট করতে পারে নাই। কেন? এই কেনর উওর হলো কাওমি মাদ্রাসা থেকে কোনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার , আরকেওলজিষ্ট, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী, স্পেস সাইন্টিষ্ট, মিতৃকা বিজ্ঞানী, বোটানিষ্ট প্রভৃতি তৈরী হয়ে বের হয় না।
কোরআনুল কারিমের সুরা আল আলাকের আয়াত এক এর দিকনির্দেশনার মর্মার্থ এই দাঁড়ায় যে কেবল আখেরাতের জ্ঞান যেমন পূর্ণ জ্ঞান নয় তেমনি কেবল দুনিয়াবী বা মাখলুকাতী জ্ঞানও পূর্ণ জ্ঞান নয়। পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হলে দুনিয়া এবং আখেরাতের জ্ঞানকে সমন্বিত করে প্রণীত সিলেবাসের দ্বারাই তা অর্জন করতে হবে। আর এখানেই আমাদের ভারতের দেওবন্দ থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে কাওমি মাদ্রাসার নতুন সিলেবাস ও নতুন স্বীকৃতি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
কিন্তু আমারা যদি কোরআন কারিমের অবতীর্ণ হওয়া প্রথম আয়াত টির দিকে গভীর মনোযোগের সাথে তাকাই তাহলে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার একটি দিক নির্দেশনা পাই । যেমন :
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ (Al-Alaq 96:1, Arabic – Original*)
Proclaim! (or read!) in the name of thy Lord and Cherisher, Who created- (Al-Alaq 96:1, English – Yusuf Ali)
এই আয়াতে কারিমার দিকনির্দেশনাকে যদি যথা শাব্দিক অর্থে বিশ্লেষণ করি তাহলে আমাদেরকে পড়তে হবে বা জ্ঞান অর্জন করতে ” রব ” সম্পর্কে এবং রবের ” সৃষ্টি ” সম্পর্কে। অর্থাৎ রবের উপরে যেমন জ্ঞান অর্জন করতে হবে একই সাথে রবের সৃষ্টি সম্বন্ধেও জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তাহলে পবিত্র কোরআনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী একটি মাদ্রাসার সেলেবাসে কোরআন ও হাদিসের সাথে বরের সৃষ্টির বিষয়ও অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। যেমন কোরআন, হাদিস এবং আখেরাতের বিষয়ের সাথে মাখলুকাতের বিষয়ও একিভূত করে মাদ্রাসার সিলেবাস প্রস্তুত করতে হবে। মাখলুকাতের বিষয়কে কাওমি মাদ্রাসার ক্যারিকুলামের বাইরে রাখার কারণেই আজ পর্যন্ত কাওমি মাদ্রাসা সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের সন্তানদের এই শিক্ষায় আকৃষ্ট করতে পারেনি। একটি স্বাধীন দেশে কাওমি মাদ্রাসার মতো এতো বিশাল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবেল সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণীর মানুষের সন্তানদের শিক্ষায় নিবেদিত হবে এটা যেমন আমাদের স্বাধীনতার চেতনার সাথে যায় না তেমনি এই সিলেবাসে শিক্ষা প্রদান কোরআনুল হাকিমের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক ( সুরা আল আলাক; আয়াত – এক )।
কোরআনুল কারিমের সুরা আল আলাকের আয়াত এক এর দিকনির্দেশনার মর্মার্থ এই দাঁড়ায় যে কেবল আখেরাতের জ্ঞান যেমন পূর্ণ জ্ঞান নয় তেমনি কেবল দুনিয়াবী বা মাখলুকাতী জ্ঞানও পূর্ণ জ্ঞান নয়। পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হলে দুনিয়া এবং আখেরাতের জ্ঞানকে সমন্বিত করে প্রণীত সিলেবাসের দ্বারাই তা অর্জন করতে হবে। আর এখানেই আমাদের ভারতের দেওবন্দ থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে কাওমি মাদ্রাসার নতুন সিলেবাস ও নতুন স্বীকৃতি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান।
প্রাক্তন মহাপরিচালক বিডিআর।