একান্ত সাক্ষাৎকারে বেফাকের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু
কওমী মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থার স্বীকৃতি বাস্তবায়নের লক্ষে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কমিটির একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে। ২৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারিতে বেফাকের নেতারা বৈঠক করে সে কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বীকৃতি বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি ও বেফাকের প্রত্যাখ্যানসহ স্বীকৃতি বাস্তবায়নের সমস্ত বিষয়-আশয় নিয়ে মতামত দিয়েছেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোড-বেফাকের মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু। জনাব মুসলেহ উদ্দিন রাজু হাফেজে হাদিস, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাকের সাবেক সভাপতি, আল্লামা নূরুদ্দীন গহরপুরী রহ.-এর ছেলে। তিনি সিলেটের জামিয়া গহরপুরের মুহতামিম এবং, সিলেট জেলা বেফাক সভাপতিও। কওমি সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশেষ প্রতিবেদক- আমিন আশরাফ
আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাক দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে। আর কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির দাবিও প্রথম বেফাকই তুলেছে। স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করতে কারিকুলাম জমা দেওয়ার জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কিন্তু বেফাক সরকারের এই কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: কওমি স্বীকৃতির বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করার পর হাটহাজারিতে মিটিং ডেকে তারা যে প্রত্যাখ্যানের কথা বললো, সেটা কি সরকার গঠিত ৯ সদস্যের কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করলো না প্রজ্ঞাপনটাকিই প্রত্যাখ্যান করলো সেটা আমার কাছে এখনো পরিস্কার না। আর আমি তো ওই মিটিংয়ে ছিলাম না তো পুরো বিষয়টা আমার জানা নেই। কমিটিকে প্রত্যাখান করলে এক কথা, প্রজ্ঞাপন প্রত্যখান করলে অন্য কথা।
আওয়ার ইসলাম: বেফাকের একজন সাংগঠনিক দায়িত্বশীল হিসেবে বিষয়টা নিয়ে যদি আপনি পরিস্কার না থাকেন তাহলে এটা কার দুর্বলতা বলে মনে করবো, আপনার না বেফাকের?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: আসলে বেফাক যদি এমন পরিস্থিতিতে শুরা ও আমেলার নিয়মতান্ত্রিক বৈঠক না করে তাহলে আমরা জানবো কি করে? বেফাকের যে ফোরাম রয়েছে, সে ফোরামের কোনো মিটিং হয়েছে বলে আমার জানা নেই। নিয়মতান্ত্রিক কোনো মিটিং হলে আমি জানতাম। সেদিন হাটহাজারিতে যে মিটিং হয়েছে সেটা হাটহাজারী হুজুরের (আল্লামা শাহ আহমদ শফী) একান্ত মতবিনিময় হয়েছে। আমি যতোটুকু জানি, সেদিন শুরার কোনো মিটিং হয়নি।
আওয়ার ইসলাম: তার মানে ২৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারির মিটিং কে কোনভাবেই আপনি বেফাকের মজলিসে শুরা ও আমেলার নিয়মতান্ত্রিক কোনা মিটিং মনে করছেন না?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: শুরার মিটিং হলে আমি জানতাম। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা শুধু একটা মতবিনিময় সভা বা পরামর্শ সভা হয়েছে। যে কারণে সিদ্ধান্তটা এভাবে নিয়মাফিক বা অফিসিয়ালভাবে আসে নাই।
আওয়ার ইসলাম: তাহলে কী আমরা ধরে নেব, সরকার ও আলেম সমাজ একটা মুখামুখি অবস্থানে।
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: আসলে এখানে আলেম ও সরকার মুখামুখি না। মুখামুখি আমরা নিজেরাই। আমরা সবাই একে অপরের মুখামুখি। প্রত্যাখ্যানের যে ঘোষণা এসেছে, আমার মনে হয়েছে যে, তা মূলত আমরা কমিটিকেই প্রত্যাখান করা করেছি প্রজ্ঞাপনকে না। তার মানে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে প্রত্যাখান করেছি।
আওয়ার ইসলাম: এর থেকে উত্তরণে কি পথ আমরা খুঁজতে পারি?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: স্বীকৃতি নিয়ে আন্দোলনের সুত্রপাতটা বেফাকেই শুরু করেছিল। আর বেফাক যখন স্বীকৃতি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে, কেউ তখন বেফাকের স্বীকৃতির পক্ষে কেউ ছিল না। স্বীকৃতি জিনিসটা যে কি সেটা বুঝানোর পূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার একমাত্র বেফাকই। আর গঠিত ৯ সদস্যের কমিটিতে যারা আছেন তাদের মধ্যে সবাই এক সময় বেফাকের সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন কারণে হয়তো তারা এখন বেফাক থেকে দূরে। কিন্তু সবাই তো এক সময় তো বেফাকের সদস্য ছিলেন। যেমন ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের মাদরাসা বেফাকের অধিনে পরীক্ষা দেয়।তিনিও বেফাকের একাধিক আয়োজন উৎসবে আমন্ত্রিত হন। মাওলানা রুহুল আমীন সাহেব তিনি বেফাকের সাবেক মহাসচিব। ফরিদাবাদ মাদরাসার আবদুল কুদ্দুস তিনি বেফাকের নীতিনির্ধানী পর্যায়ের লোক। জামিয়া ইমদাদিয়া, কিশোরগঞ্জের মুহতামিম মাওলানা আনওয়ার শাহ, তিনিও বেফাকের সহ সভাপতি।তারপর পটিয়া মাদরাসার মাওলানা আবদুল হালিম বুখারি। তিনিও ১৯৯৬-এর আগে দুই টার্মে বেফাকের সহকারি মহাসচিব ছিলেন। তখন আমার আব্বা নুরুদ্দীন গহরপুরী রহ. বেফাকের মহাসচিব ছিলেন।তারপর আছেন আবদুল বাসিত বরকতপুরী। তিনি যদিও সিলেটের আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব, তারপরও তিনিও একটার মাদরাসার মুহতামিম। আর সেই মাদরাসাটা বেফাকে অন্তর্ভূক্ত আছে। সঙ্গত কারণে তিনিও বেফাকের সদস্য। তারপর মুফতি এনামুল হক, সিনিয়র মুহাদ্দিস, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। বসুন্ধরা মাদরাসা তো দীর্ঘদিন বেফাকের অধিনেই পরীক্ষা দিয়েছিল। এই তো গেল কয়েক বছর যাবত তারা পরীক্ষা দিচ্ছে না । মনে হয় সিস্টেমগত কোনো কারণে তারা এখন আর বেফাকের অধীনে নেই। কিন্তু তাদেরও বেফাকের প্রতি শতভাগ আন্তরিকতা রয়েছে। আমি মনে করি সবাই বেফাকের লোকজন। সবাই বেফাককে ভালো চোখেই দেখে। তবে স্বীকৃতির নিয়ে আন্দোলনটাতে বেফাকের অবদান সবচেয়ে বেশি।
আওয়ার ইসলাম: তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন যারা কমশিনে রয়েছে তারা বেফাকেরই লোক?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: বেফাকের প্রতি তাদের আন্তরিকতা এখনো রয়েছে। আমি অবশ্যই এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। তা না হলে হাটহাজারীতে মিটিং ডেকে প্রত্যাখ্যানের পরেও তারা এটাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এটা আমাদের কাছে একটা সম্ভাবনাময় একটা দিক। নতুন কমিশনের অনেকেই বলেছেন, তারা যেখানে আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে সেখানে তো আমরা যেতে পারি না। তারপরেও মুরব্বি হিসেবে তিনি দাওয়াত দিয়েছেন, সেখানে তো আমরা যাবোই।
আওয়ার ইসলাম : চলমান সংকটের নিরসণে আপনার পরামর্শ কী ?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: আর এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ হলো, সর্বশেষ ইদের আগে যে বেফাকের মজলিসে আমেলার মিটিং হয়েছিল, সেই মিটিংয়ে আমি বলছিলাম, ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব, স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ করেছেন। ওই বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন। আর সেই সফরগুলোতে তারা যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সে বক্তব্যটা খুব পরিস্কার। ‘আমরা নতুন কিছু চাই না। আমাদের পুরাতন যে ১৭ জন সদস্য বিশিষ্ট কমিশন রয়েছে সেটাই বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমার মাঠে নেমেছি। এর পক্ষেই আমরা জনমত গড়ে যাচ্ছি। স্বাক্ষর নিচ্ছি ।’ তারা তখন বেফাকের মুরব্বিদের প্রশংসাই বেশি করেছেন। তাদের মুখ থেকে মুরব্বিদের বিপক্ষে কোনো নেতিবাচক শব্দ বের হয়নি। তো তারা আপনাদেরই প্রশংসা করে যাচ্ছেন। আপনাদেরই সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের ডেকে এ বিষয়ে যদি সমন্বয় করে কাজ করা যায় তাহলে হয়তো এ বিষয়ে একটা ফায়সালা আসবেই। আর যদি তা না করে আপনারা তাদেরকে ষড়যন্ত্রকারী বা অন্য কিছু বলেন, তাহলে তো সমাধানের কোনো পথ খোলা থাকবে না।
আর আমাদের মধ্যকার কিছু উগ্রপন্থী লোক রয়েছেন, যারা এ বিষয়ে কারো সঙ্গে বসতে রাজি না। তবে কেউ কেউ বসতে রাজি হলেও তবে তারা অফিসিয়ালি মিটিং পর্যায়ে বসতে কোনোভাবেই রাজি নয়। অফিসিয়ালি কিছু করতে তাদের যথেষ্ট অনিহা রয়েছে। মোটকথা নিজেদের মাঝে কিছুটা দুরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় আমার আলোচনটা হালে পানি পায় নাই। ব্যাক্তিগত রেষারেষিটা যদি কেউ সকলক্ষেত্রে টানে তাহলে সমস্যা বাধবেই। এটা উতরে ওঠার কোনো সুযোগই নেই। যদি এ ধরনের কোনো সমস্যা না থাকতো তাহলে সবকিছু খুব সহজেই সমাধান হয়ে যেত।
আওয়ার ইসলাম : চলমান সংকটের নিরসণে আপনার পরামর্শ কী ?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: আর এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ হলো, সর্বশেষ ইদের আগে যে বেফাকের মজলিসে আমেলার মিটিং হয়েছিল, সেই মিটিংয়ে আমি বলছিলাম, ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব, স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ করেছেন। ওই বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন। আর সেই সফরগুলোতে তারা যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সে বক্তব্যটা খুব পরিস্কার। ‘আমরা নতুন কিছু চাই না। আমাদের পুরাতন যে ১৭ জন সদস্য বিশিষ্ট কমিশন রয়েছে সেটাই বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমার মাঠে নেমেছি। এর পক্ষেই আমরা জনমত গড়ে যাচ্ছি। স্বাক্ষর নিচ্ছি ।’ তারা তখন বেফাকের মুরব্বিদের প্রশংসাই বেশি করেছেন। তাদের মুখ থেকে মুরব্বিদের বিপক্ষে কোনো নেতিবাচক শব্দ বের হয়নি। তো তারা আপনাদেরই প্রশংসা করে যাচ্ছেন। আপনাদেরকেই সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদেরকে ডেকে এ বিষয়ে যদি সমন্বয় করে কাজ করা যায় তাহলে হয়তো এ বিষয়ে একটা ফায়সালা আসবেই। আর যদি তা না করে আপনারা তাদেরকে ষড়যন্ত্রকারী বা অন্য কিছু বলেন, তাহলে তো সমাধানের কোনো পথ খোলা থাকবে না।
আর আমাদের মধ্যকার কিছু উগ্রপন্থী লোক রয়েছেন, যারা এ বিষয়ে কারো সঙ্গে বসতে রাজি না। তবে কেউ কেউ বসতে রাজি হলেও তবে তারা অফিসিয়ালি মিটিং পর্যায়ে বসতে কোনোভাবেই রাজি নয়। অফিসিয়ালি কিছু করতে তাদের যথেষ্ট অনিহা রয়েছে। মোটকথা নিজেদের মাঝে কিছুটা দুরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় আমার আলোচনটা হালে পানি পায় নাই। ব্যাক্তিগত রেষারেষিটা যদি কেউ সকলক্ষেত্রে টানে তাহলে সমস্যা বাধবেই। এটা উতরে ওঠার কোনো সুযোগই নেই। যদি এ ধরনের কোনো সমস্যা না থাকতো তাহলে সবকিছু খুব সহজেই সমাধান হয়ে যেত।
আওয়ার ইসলাম: জোট সরকারের আমলে স্বীকৃতি নিয়ে একটা আলোচনা শুরু হয়েছিল। সরকারিভাবে গেজেটও প্রকাশ হয়েয়েছিল। আর বর্তমান সরকারও চেষ্টা করে যাচ্ছে স্বীকৃতিটা যেভাবেই হোক দিয়ে দেবে। তো সরকারও দিতে চাচ্ছে আলেমরাও নিতে চাচ্ছে। তো এখন স্বীকৃতির জন্য মূল অন্তরায় বা একমাত্র বাধাটা কোনো ব্যক্তি না প্রতিষ্ঠানের বলে আপনি মনে করেন?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: স্বীকৃতির জন্য আমার মতে কোনো আর কোনো বাধা নেই। আসল কথা হচ্ছে, আমাদের পারষ্পারিক মতবিরোধ। একজন অপরজনকে সহ্য না করার সংস্কৃতি চলছে সেটাই এখন প্রধান অন্তরায়। আর স্বীকৃতি না হওয়ার জন্য কিছু ব্যক্তিই দায়ি, কোনো প্রতিষ্ঠান দায়ি আছে বলে আমি মনে করি না।
আওয়ার ইসলাম: আর তারা কি কোনো রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব না শিক্ষা সংস্কৃতির লোক?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: তারা কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যারা রাজনীতি করেন, মানে যারা বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাদেরকে ক্ষমতায় থাকা দল কখনো গুরুত্ব দেবে না আর বিরোধীরাও চান না অন্যরা একটা কাজ করে ফেলুক। আমাদের দেশে এটাই স্বাভাবিক। আমার মনে হয় সেটা নিয়েই আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। আর মূলত সে কারণেই স্বীকৃতিটা পেতে দেরি হচ্ছে।
আওয়ার ইসলাম: তার মানে আপনি বলবেন যে, বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের আক্রমনের কারণে বেফাক আজ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: এই আক্রমণটা আগেও ছিল। ১৯৯৬-এ স্বীকৃতি হওয়ার কথা ছিল। আমি যতোটুকু জানি যে, আব্বা যখন বেফাকের সভাপতি ছিলেন। তখন আমাদের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন তখনকার শিক্ষা কমিশনের সাধারণ সদস্য। তখন আমার আব্বা মাওলানা নূরুদ্দীন গহরপুরী রহ. তার সঙ্গে দেখা করে স্বীকৃতি বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন।
আওয়ার ইসলাম: তো আপনার কাছ থেকে আমরা একটু ইতিহাসের পাঠ নিতে চাই? স্বীকৃতির জন্য প্রথম আলোচনা শুরু কে করেছিলেন?
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: মাওলানা আবদুল জব্বার প্রথম স্বীকৃতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন। তাঁর পক্ষ থেকে শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হককে বলা হয়েছিল স্বীকৃতি নিয়ে মাঠে ময়দানে জনমত গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু শাইখুল হাদিস রহ. তখন অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন, মুরব্বি (নূরুদ্দীন গহরপুরী রহ.) যদি আমাকে লিখিত অনুমতি দেন তাহলে আমি স্বীকৃতির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজে অগ্রসর হতে পারি। তারপর আবদুল জব্বার সাহেবরা ঢাকা থেকে পাঁচজনের একটা টিম আব্বার কাছে পাঠিয়েছিলেন। তখন আব্বা এ বিষয়ে লিখিত অনুমতি দেন। তারা আব্বাকে বলেছিলেন, আপনি যদি শায়খুল হাদীস সাহেবকে বলে দেন তাহলে তিনি এ নিয়ে কাজ করতে রাজি আছেন। তারপর শায়খুল হাদীস রহ. স্বীকৃতির দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু এ সম্পর্কে সবকিছু বলা হয়, কিন্তু স্বীকৃতির জন্য প্রথম যিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার কথা চেপে যাওয়া হয়। ওই পাঁচজন টিমের আজ অনেকেই বেঁচে নেই। জোবায়ের চৌধুরী আছেন, তার সাথে আলাপ করলে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আর শাইখুল হাদীস রহ. শুধুমাত্র আব্বার নির্দেশের কারণেই স্বীকৃতির জন্য আন্দোলনে নেমেছিলেন। আর এ কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ ছিলো না। কারণ সে সময়ের পরিস্থিতি এখনকার মতো ছিল না। আলেমদের প্রায় অনেকেই সে সময় স্বীকৃতির বিপক্ষে ছিলেন। আর এখন যারা স্বীকৃতি নিয়ে আন্দোলনের মাঠে আছেন, তাদের মধ্যে এখনও অনেকেই আছেন যারা স্বীকৃতি চান না। আসলে আমরা জানি না কওমি স্বীকৃতিটা আসলে কী? আর স্বীকৃতি হলে কী পন্থায় হবে সেটাও আমাদের অনেকের কাছে এখনও পরিস্কার নয়। আমরা কী শুরুতেই মার্স্টাসের মান পেয়ে যাবো না ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে। মূলত এর প্রক্রিয়াটা কি হবে সে বিষয়ে আমরা এখনও অন্ধকারে।
আওয়ার ইসলাম: আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মুসলেহ উদ্দিন রাজু: আওয়ার ইসলাম পরিবারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
আওয়ার ইসলামের সৌজন্যে