শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৬:১৬
Home / অনুসন্ধান / স্বীকৃতির অন্তরালের খবর… (১ম পর্ব)

স্বীকৃতির অন্তরালের খবর… (১ম পর্ব)

13925084_127101857731135_4845825660552401458_nসৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ|| “কওমী মাদরাসা শিক্ষা সনদের সরকারী স্বীকৃতি চাই” এই দাবীর প্রতি বাংলাদেশের সকল বোর্ড ও শীর্ষ আলেম আলহামদুলিল্লাহ একমত। বিরোধটি কেবল কী স্বর্থে হবে এবং কার মাধ্যমে হবে। আল্লামা আহমদ শফি দাঃবাঃ স্পষ্ট তার অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন, দেওবন্দের আদলে স্বীকৃতি তিনি চান এতে তার কোন আপত্তি নেই। এখন বুঝতে হবে কারা মূলত কওমী সনদের স্বীকৃতির বিরোধীতা করছেন ঘরে বাইরে? এবং কেন করছেন? তারা কারা?আর স্বীকৃতির ব্যাপারে বেফাক সহ অনন্য বোর্ডগুলোর ভূমিকাও অবস্থান কি? জানতে সাথে থাকুন শেষ পর্যন্ত।

মৌলিক ও নীতিগতভাবে ঐক্যমত
======================
আল্লামা আহমদ শফি হুজুর শর্তের সাথে সম্পূর্ন মিল রেখেই আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব দারুল উলুম দেওবন্দের উসুল হাশতেগানার উপর ভিত্তি করেই দেওবন্দের সরাসরি পরামর্শে এখন সরকারকে ৬টি শর্ত দিয়েই স্বীকৃতি নিচ্ছেন। যা হাটহাজারীর হুজুরের শর্তের চেয়ে আরো কঠিন। তিনি এব্যাপারে দেশের মুরুব্বীদের সবাক্ষনিক পরামর্শের পাশাপাশি সরাসরি দেওবন্দের হযরতদের পরামর্শে কাজ করছেন। তাঁর দেয়া সরকারকে নতুন খসড়া প্রস্তাবে স্পষ্ট লিখা আছে..
“বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা রাজনীতির কবলে পড়ে যেন মাদরাসা তার স্বকীয়তা না হারায়, সেজন্য কিছু শর্ত যোগ করা হল। উল্লেখ্য
যে,এসব শর্ত কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র
বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে পেশ করা হল।

(১) কওমী মাদরাসা নেসাব ও নেজাম তালীমে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা চলবে না।

(২) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা সম্পূর্ন্নভাবে অক্ষুন্ন রাখতে হবে।

(৩) মাদরাসা পরিচালনা প্রদ্ধতিতে হস্তক্ষেপ করা চলবে না।

(৪) কওমী মাদরাসা কখনোও এমপিওভূক্ত হবে না।

(৫) কোনো মাদরাসা প্রতিষ্টার ক্ষেত্রে সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এতদসংক্রান্ত নীতিমালা প্রযোজনে সংশ্লীষ্ট (কওমী মাদরাসা স্বাধীন) কতৃপক্ষ প্রনয়ন করবে।

(৬) প্রচলিতত কওমী মাদরাসা বোর্ডসমূহ তাদের স্ব-স্ব বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে।

স্বীকৃতি যারা চান না
===============
বর্তমানে যারা স্বীকৃতি চান না, তারা দুই প্রকার।
(১) কওমীর ভেতরের লোক
(২) কওমী মাদরাসা বিরোধী পক্ষ

কওমী মাদরাসার পক্ষে যারা স্বীকৃতি চান না, তারা
দুই ধরনের,
(১) কোন সরকারের কাছ থেকেই স্বীকৃতি চাই না
(২) আওমী লীগ থেকে চাই না,বিএনপি থেকে নিব14485104_181375042303816_6552556997280822365_n

প্রথম পক্ষে যারা আছেন তারা কওমীর পরম আপনজন ও হিতাকাঙ্খি। আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। তারা বুঝে বা না বুঝে কল্পনা প্রসূত ৫০সালে কি হবে সে ভাবনায় বিভূর। আবেগ বশত বা চিন্তার দন্যতা থেকে হয়তো । তাদের সংখ্যা খুবই কম। কওমীর মেজরটি তরুন স্বীকৃতির পক্ষে। ভারত পাকিস্তান যেহেতো স্বীকৃতি নিয়ে স্বকীয়তা নষ্ট হয় নি তাই আমাদের আবেগ তাড়িত হয়ে কল্পনিক আতঙ্কগ্রস্থ হবার কোন কারন নেই। কেন খামকা তরুনদের ভীত করছেন ক’জনে। বাধ দেন তো এসব!

অপরদিকে যারা বিএনপি জামাত জোট থেকে স্বীকৃতি চান,তাদের ভাষায়, “নাস্তিক খুনী আওয়ামীলীগ সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি চাই না। তারাই এখন বেফাকের অন্যতম কৌশলী হয়ে উঠেছেন। তারাই মূলত বর্তমান পরিস্তিতির ধ্রুমজাল সৃষ্টির জন্য দায়ী। এরাই শাপলার মতো স্বীকৃতি নিয়ে বিশেষ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ছাতা হিসাবে আবার ব্যবহার করতে চান দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন অতিশয়পর বৃদ্ধ হাদীস বিশারদ, শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফি হাফিজাল্লাহুকে। তাই হেফাজত আন্দোলন ও স্বীকৃতি সনদ নিয়ে তাদের নানান দৌড়ঝাপ কে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। শাপলার কৌশলিরা এখন মিডিয়াতে বেফাক নেতা হিসাবে কথা বলেন। গত পরশু এক টিভিতে শাপলার বীর গাজী (তাদের ভাষায়) রুহি এসেছিলেন বেফাক হয়ে কথা বলতে। তার শারিরিক অঙ্গিভঙ্গি, শব্দ চয়ন, মাস্তানি বক্তৃতার বেয়াদবী স্টাইল দেখে আমি একজন কওমী মাদরাসার ছাত্র হিসাবে লজ্জাবোধ করছি।

আর কওমী মাদরাসা সনদের বিরোধী যারা করেন বাহির থেকে তারা দুই দল।
#জামাত নতুবা
#বিদাআতি

স্বীকৃতির নানান পক্রিয়া
================
বাংলাদেশে আনুষ্টানিক “কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতির” ব্যপারে বেফাকই সর্বপ্রথম কাজ শুরু করে। বেফাকের তৎকালীন সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা নুরুদ্দীন গহরপুরী রহ এর নির্দেশে মাওলানা জাহানাবাদী কাগজপত্র তৈরি করতে থাকেন। ২০ জুলাই ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম শায়খুল হাদীস আল্লামা গহরপুরীর নেতৃত্বে আলেমদের সাথে এক বৈঠকে তৎকালীন সরকার স্বীকৃতির ব্যাপারে মৌখিক নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে একমত পোষন করে। পরে সরকারের সাথে আলেমদের নানান কারনে দূরত্বের ফলে বিষয়টি আর আলোর মূখ দেখেনি।

পরর্বতিতে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশের সমস্ত আলেম স্বীকৃতি গ্রহনে একমত হয়ে কাজ শুরু করেন।

বিরোধীতা সেই থেকে শুরু
===================
বিএনপি সরকারের নীতি নির্ধারকরা এব্যাপরে যতেষ্ট আন্তরিক থাকলেও স্বীকৃতির অন্তরায় হয়ে দাড়ায় জামাত। তারা দলীয় বৈঠক করে এই মিশন বাসস্তবায়নে লোক নিয়োগ করে। তারপরঃ
তখন সরকার স্বীকৃতিঃ দিতে চাইলে ইসলামি ব্যাংকের পরিচালক #মুখলেসুর_রহমান সরাসরি “কওমী সনদের সরকারি স্বীকৃতি টেকাতে ” বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে দৌড়ঝাপ ও নানান গোপন বৈঠক করতে থাকেন। তখন সরকার জামাতের চাপে পরে সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাড়ায়। তখন আমাদের উদ্দ্যোগে পল্টন ময়দানে (আমি সরাসরি জড়িত ছিলাম) একদফা এক দাবী নিয়ে “কওমী মাদরাসা জাতীয় ছাত্র কনভেশন” বিশাল সমাবেশ থেকে আনুষ্টানিক কর্মসূচি দেয়া হয়। তারপর শায়খুল হাদীস রহ মুক্তাঙ্গনে স্বীকৃতির দাবীতে অমরন অনেশন করেন।

কিন্তু ততোদিনে সরকারের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। বাধ্য হয়ে বিএনপি সরকার ভোটের রাজনীতির ফায়দার জন্য ২০ডিসেম্বর ২০০৬ সালে লামছাম একটি গেজেট প্রকাশ করে স্বীকৃতির অনুমুদন দেয়। তারপর আরো কিছু অফিসিয়াল কাজ এগোতে থাকে। ২০০৮ সালের ১৩সেপ্টম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশন কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সাটির্ফিকেট দিয়ে পাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই সময়ে আমাদের আন্দোলনের সাথে ছায়া হয়ে ছিলেন একজন মানুষ, বেফাক মহাসচীব আব্দুল জব্বার জাহানাবাদী সাহেব। তার সে সময়ের ঋন শোধ করার মতো নয়।

জাহানাবাদীর মত বদল
===================
তারপর তত্বাধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে পেরিয়ে যায় দীর্ঘ সময়। এর পর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহন করে। ততোদিনে বেফাক মহাসচীব মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবাদী তার অবস্থান থেকে সরে দাড়ান। তিনি মাঠে আওয়াজ তুলেন স্বীকৃতি চাই না। বিশ বছর কেন চেয়েছিলেন এর কোন ব্যাখ্যাও দেন নি। কওমি স্বীকৃতি এবং সংস্কারের আওয়াজ নতুন কিছু নয়। বিশ বছর আগে থেকেই চলে আসছে। ইদানীং সরকারের পক্ষ থেকে, যে কারণেই হোক, আগ্রহ দেখানোর পর থেকেই মূলত ভাত-তরকারির কথা ভুলে সবাই খিছুড়ির দিকে ঝুঁকেছেন। কারণ,
হতে পারে খিচুড়ি বাঙালির প্রিয় খাবার।®

স্বীকৃতি ও বেফাকের পক্ষে কাজ করতে থাকা ঢাকার বড় বড় আলেমরা মৃত্যু বরন করেন। খতিব উবায়দুল হক, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক, গহরপুরী, মুফতি আমিনী রহ. নাফেরার দেশে চলে যান। তাদের সন্তানরা বেফাকের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দ্বায়িত্ব পান। ফলে ছেলেদের পরোয়া না করে পিতাতুল্য জাহানাবাদী হযরত ক্রমশ বেফাককে তার একক সিদ্ধান্ত ও নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টা করতে মড়িয়া হয়ে উঠেন। তাকে বিএনপি রাজনীতির প্রভাব প্রবল ভাবে আচ্ছন্ন করতে থাকে। এখানেই মূল সমস্যা মাথাছাড়া দিয়ে উঠে। স্বীকৃতি বিএনপির কাছ থেকে নিব, আওমীলীগ থেকে নয়। তিনি বুঝতে রাজি নন বিএনপি আওয়ামীলীগ দুটিই তাগুত। কেউ কওমীর আপন নয়। আমাদের যেখান থেকে পারা যায় অধিকার আদায় করে নিতে হবে।

নতুন করে স্বীকৃতির উদ্দ্যোগ
===================
তারপর দেশের ও দেওবন্দের সকল মুরুব্বীদের পরামর্শে আল্লামা মাসউদ সাহেব সরকারের সাথে তার সুম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ফের নতুন করে স্বীকৃতির পক্ষে কাজ শুরু করেন।সেই প্রেক্ষিতে ১৫/০৪/১২ইংরেজি সরকারী প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আল্লামা আহমদ শফিকে চেয়ারম্যান করে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামের সমন্নয়ে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট (বেফাক কে সাথে নিয়ে) “বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা কমিশন” গঠিত হয়।

উক্ত কমিটি আহমদ শফি দাঃবাঃ এর সভাপতিত্বে ৬টি বৈঠক করে এবং কওমী সনদের কাটামো, নীতিমালা, ধরন, গেজেট, সিলেবাসের খসড়া চুড়ান্ত করে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে কাজ কে তড়ান্নিত করতে সরকারি ভাবে www.qawmisikkhacommission.com.bd নামে শিক্ষা মন্ত্রনালয় একটি ওয়েব সাইটও প্রকাশ করে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, চুড়ান্ত পক্রিয়ার মুর্হুতে একটি অংশ জামাত বিএনপির প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় কমিশন থেকে দূরে সরে দাড়ান। মখলিসুর রহমানরা তখন আর মন্ত্রনালয়ে দৌড়ঝাপ করতে পারেন না, তারা বিকল্প হিসাবে কওমীর পেছনের রাস্তা অবলম্বন করেন। পেছনের দরজা দিয়ে কওমী ঘরনার তাদের বন্ধুদের সক্রিয় করে তুলেন নানান ফলোভনে। হঠাৎ বেফাকের নামে জাহানাবাদীরা সরকারকে লাখ লাখ লাশ পড়ার হুমকী দিয়ে বসেন।

এর পরে দীর্ঘ চার বছর যারা স্বীকৃতি চান, তারা নানানভাবে তাদের সাথে সমন্নয় করার চেষ্টা করেছেন। হাটহাজারীর হযরতের সাথে দেখা করতে হাটহাজারীতে গিয়েও মাসউদ সাহেব কুচক্রি মহলের চক্রান্তে ব্যার্থ হন। তারপরে তিনি বেফাক সহ সভাপতি শায়খুল হাদীস আশরাফ আশরাফ আলী সাহেব, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা আব্দুল হালিম বোখারী, সুলতান যওক নদভী, শায়েখ মাহমুদুল হাসান, আব্দুল হামিদ মধুপুরের পীর সাহেব, জাহানাবাদী সহ সারা দেশের শীর্ষ আলেমদের সাথে বহুবার মত বিনিময়ও কররেছেন,ফোনালাফ করেছেন, এবং তাদের নির্দেশও দোয়া নিয়ে কাজে শুরু করেন। তাদের মমতামতের ভিত্তিতেই মাসউদ সাহেব স্বীকৃতির জন্য কাজ শুরু করেন। অনেকে অপপ্রচার করছেন যে, বেফাককে বাদ দিয়ে মাসউদ সাহেব স্বীকৃতি আনছেন। বর্তমানেও মাসউদ সাহেবের সাথে খচড়া উপ কমিটিতে একাধিক বেফাক গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্তশীলরা আছেন। তার পরিচালিত “জামেয়া ইকরা”ও বেফাকের অন্তর্ভূক্ত প্রতিষ্টান।

“স্বীকৃতির জন্য এসব আন্দোলন সংগ্রামের কথা সবাই জানেন। এই আন্দোলন কোন সরকার করে নি, আমরা কওমী মাদরাসা সম্পৃক্তরা করেছি।
২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর হযরত আল্লামা আহমদ শফি সাহেব দা.বা., হযরত মাওলানা সুলতান যওক নদভী সাহেব দা.বা. হযরত মাওলানা আব্দুল হালীম বুখারী দা.বা., হযরত মাওলানা আশরাফ আলী দা.বা. প্রমুখের নেতৃত্বে একটি বড় আকারের কওমী মাদরাসার প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করেন। সেই বৈঠকে আবার স্বীকৃতির দাবি তোলা হয় এবং প্রায় ষাট জনের বিশাল প্রতিনিধি দল থাকায় সেখানেই আলোচনা গতি পায় এবং একটি কমিশন গঠনের প্রসংগ আসে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের বাঁধায় তা আর হয়নি। এর দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর মাওলানা রুহুল আমীন সাহেব দা.বা. (গওহরডাঙ্গা) উদ্যোগী হন এবং পরবর্তী তিনি এবং মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা. নিজ উদ্যোগে কাজ শুরু করেন।14601026_181375055637148_1100361282001825428_n
তো? এই সরকার যদি এতো উঠেপড়ে লাগে তাহলে এই দীর্ঘ প্রায় তিন বছর কেন কোন কাজ করলো না স্বীকৃতির জন্য? স্বীকৃতি কারো দয়া বা দান-ভিক্ষা না, এটা আমাদের অধিকার এবং আমরা সেই অধিকার আদায় করবো ইন-শা-আল্লাহ। যদি মনে করেন আপনি কোন সরকারের এই স্বীকৃতি নামক দান নিচ্ছেন তারমানেই আপনার মেরুদণ্ড নাই (ব্যাপারটা একটু পরে স্পষ্ট করছি) তারপর কমিশন গঠন হলো বেফাক ও ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত বোর্ডগুলো নিয়ে। কমিশন রিপোর্ট জমা দিলো, এবং কওমী অঙ্গনেরই কারো কারো হুমকির মুখে মন্ত্রীসভার বৈঠক থেকে একটা জাতির আশা, স্বপ্ন, অধিকার ফিরে গেল। আমি সেসব নোংরা ইতিহাস স্মরণ করতে চাই না।
এর দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর পর গত এগারই অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর হাতে “মানব কল্যাণে শান্তির ফতওয়া” অর্পন উপলক্ষে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা আয়োজিত সেমিনারে স্বীকৃতির প্রসঙ্গটি আসে।”সে হিসাবে তিনিও বেফাকেরই একজন।তার অনুরোধে দুমাস আগে জঙ্গি বিরোধী লাখো আলেমের ফতোয়া প্রদান অনুষ্টানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবার কওমী সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে আনুষ্টানিক ঘোষনা দেন।”®

স্বীকৃতি চাই না কেন?
===================
এই ঘেষনার পরেই জাহানাবাদী ফের সারা দেশে সফর করে স্বীকৃতি চাইনা বলে বক্তৃতা দিয়ে কওমী ছাত্র তরুনদের সমালোচনাও তুপের মূখে পরেন। পরে সরকার গত২৭ সেপ্টম্বর পূর্বের খসড়া পরিক্ষা নিরিক্ষার জন্য একটি উপকমিটি গঠন করে। ঠিক তখন বেফাক আবার নড়ে চড়ে উঠে।

এব্যাপরে রশিদ জামিল ভাই চমৎকার লিখেছেন, “বাংলাদেশে বেশি কওমি মাদরাসার প্রতিনিধিত্ব করে ‘বেফাক’। বেফাকের আরবি প্রনাউনসিয়েশন হল ওয়েফাক্ব। ওয়েফাক্ব মানে সঙ্গতি বা একিভূতি। অর্থাৎ মতানৈক্যের উর্ধে উঠে বিভাজিত মাদরাসাসমূহকে একটি মজবুত ডোরায় বেঁধে রাখা। কিন্তু নিজের ঘরের স্তম্ভগুলিকে ব্যালেন্স পজিশনে রাখতে ব্যর্থতার পরিচিয় দেয়া হতে থাকলে নামের সাথে কাজের মিল খুঁজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হওয়া ছাড়া তো উপায় থাকে না।
স্বীকৃতির প্রশ্নে বেফাক কার্যত নির্লিপ্ত। মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ কাজ করে যাচ্ছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় কীভাবে কী হতে পারে বা হওয়া উচিত, মতামত দেয়ার জন্য ৯ সদস্যের একটি উপ-কমিটি করে দিয়েছে সরকার। এখন গেল গেল গেল রব কেনো? যারা বলছেন, স্বীকৃতি চান না তারা আবার কমিটিতে থাকার প্রশ্ন আসে কি করে? কিছু যদি না-ই চাই, তাহলে কে নিল, কীভাবে নিল, কী আসে যায়! আর চাইলে চাওয়ার মত চাইতে লজ্জার কী ছিল!

-‘মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ’র নেতৃত্বে আমরা স্বীকৃতি চাই না’! তাহলে কার নেতৃত্বে চাই, বলি না কেনো? কাজ করি না কেনো? করলাম না কেনো।”

বেফাকের নাম ভাঙ্গানো
==================
“খসড়া যাচাই ও পরিক্ষা নিরিক্ষা উপ কমিটি”
এটাকে এতো বড় করে দেখা হাস্যকর ও অযৌক্তিক। এই কমিটিকে প্রত্যাখান করতে সাজ সাজ রব আর ঝাকে ঝাকে বিমান টিকেট ক্রয় করে হাটহাজারীতে বারবার উড়াল দেয়া প্রমান করে ঢাকার বিশ দলীয় জোট নেতাদের রাজনৈতিক দেওলায়িত্ব ও হাটহাজারীর হুজুরকে ছাতা হিসাবে ব্যবহার করে স্বীকৃতি পক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করার মিশন।

২৯জুলাই হাটহাজারীতে সতন্ত্র উলামা বৈঠকে ( সতন্ত্র বললাম কারন সেটা বেফাকের কোন অফিসিয়াল শূরার বৈঠক ছিল না) দুজন নেতা ছাড়া সবাই স্বীকৃতি গ্রহনের পক্ষে মতামত দিলে তাদের ষড়যন্ত্র মাটে মারা যায়। তারা চাইছিলেন, “আল্লামা আহমদ শফি স্বীকৃতিকে প্রত্যাখান করে তাদের বলবেন, আমরা নাস্তিক সরকারের কাছে স্বীকৃতি চাই না, ১২সালের মতে তাদের ভাষায় বলবেন “স্বীকৃতি দিলে লাখ লাখ লাশ পড়বে”। কিন্তু আলেমদের সম্মিলিত দাবী ও হাটহাজারীর হুজুরের আগ্রহে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শর্ত মেনে স্বীকৃতি চাই, এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছে।

হাটহাজারীর সেই বৈঠককে কেউ কেউ বেফাকের বৈঠক নামে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করলেও সব গোমড় ফাঁস হয়ে যায় বেফাকের সাবেক সভাপতি গহরপুরী হুজুরের ছাহেবজাদা, সিলেটের বুহত্তম দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্টান গহরপুর জামেয়ার মুহতামিম, বেফাকের বর্তমান সাংগঠিনক সম্পপাদক মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজুর গতকালের এক সাক্ষাৎকারে। একটি জাতীয় বোর্ড এমন একটি নীতি নির্ধারনী বিষয়ে আজ পর্যন্ত একটি অফিসিয়াল বৈঠক ঢাকেতে নিজ কার্যালয়ে ডাকতে না পারা লজ্জাজনক ও দুঃখজনক বিষয়ে। বোর্ড তার আবস্থানকে রাজনৈতিক কূটচাইলে পড়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে তাই প্রমান করে। বেফাক ছিল এদেশের হাজার হাজার আলেমের আস্থা ভরসার প্রতীক। বেফাকের স্বকীয়তা ও আর্দশকে নষ্টের দায়ভার কাউকে না কাউক। অবশ্যই নিতে হবে।

প্রত্যাখ্যান নাটক
============
এই কমিটিকে প্রত্যাখানের বিষয়ে অনেক আলেম মনে করছেন, বৈঠকে এই খসড়া কমিটি বাতিলের দাবী জানানো যেত। কিন্তু সেটা না করে প্রত্যাখান করা বড্ড বেমানানও বিচক্ষনতার পরিচয় নয়। রশিদ জামিলের ভাষায় বলছি, -‘মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ এখন আর কওমি উলামার
মুরব্বি পর্যায়ের কেউ নন। তিনি লাইনচ্চ্যুত’। ভালো কথা। ‘রুহুল আমিন সাহেব আওয়ামি ঘরানার’। তাও মানলাম। কিন্তু বাকিরা যারা? অন্যান্য যাদের নাম কমিটিতে দেখছি, সুলতান যওক নদবি, আব্দুল হালিম বোখারি, আনওয়ার
শাহ কিশোরগঞ্জি, উনারাও কি কওমি মুরব্বিয়ানা থেকে বরখাস্ত? কবে হলেন? কারা করলেন? তাদের প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা কি কেউ রাখেন?
আমরা তো জানি এই নামগুলো কওমি অঙ্গনে এক একটি ব্র্যান্ড মতন। তবে কি ভুল জানি? আমরা তো জানি মাওলানা আনওয়ার শাহ বেফাকের সহ সভাপতির পদে আছেন।

সৃষ্ট ধ্রুমজালের অবসান
==================
“সরকার ঘোষিত সাম্প্রতিক একটি নিরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়।
এই ছোট্ট একটা কমিটিতে কেন কাদের কে রাখা হলো না, কেন ওমুকদের রেখে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা. কে আহবায়ক করা হলো, এগুলো আসলে জ্ঞানের অপরিপক্বতা ছাড়া আর কিছুই না। মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা. যেমনটা সেদিন হাসতে হাসতে বলছিলেন, কী এক কমিটি আর আমাকে আহবায়ক বানানো হয়েছে আর মানুষ মনে করতেসে ফরীদ মাসঊদ বুঝি বিরাট নেতা হয়ে গেছে। জ্বি ভাই, বিষয়টা এতোটাই ছোট এবং হালকা। আমি আর এনিয়ে কথা বাড়াচ্ছি না মূল বিষয়ে চলে যাই।
কমিটির দুই জন সদস্য গণমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, তারা জানতেন না যে, তাদের কে কমিটি রাখা হচ্ছে।
এর প্রতিবাদে অসমর্থিত সুত্রে প্রকাশ, হাটহাজারীর এক বৈঠকে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব সাহেব হাইকোর্টে রিট করার দাবি জানিয়েছেন কেন এই দু’জন কে না জানিয়ে তাদের কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই বিষয়ে আমিও তাঁর দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বলছি, হাইকোর্টে রিট করা হোক। রিট করার পর নিশ্চয় আদালত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর কে নোটিশ দিবেন এর জবাব দেয়ার জন্য। সরকার তখন নিশ্চয় সার্ভার থেকে এই দুই জনের ফোনালাপের রেকর্ড উদ্ধার করবে এবং তা আদালতে দাখিল করবে। সেই সাথে আমরা জেনে যাবো যে, তারা কি জানতেন নাকি জানতেন না।
অবশ্য তাদের এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা. করেছেন এই ভাবে যে, যখন তারা এই কথা বলেছেন, তখনোও তাদের নিকট প্রজ্ঞাপনের আনুষ্ঠানিক কপি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরকারি ডাক যোগে পৌছেনি, তাই হয়ত তারা এটা বলতে চেয়েছেন যে, আমরা তো সুনিশ্চিত ভাবে জানি না। ( হতেই পারে, কারণ মিডিয়াতে তো কত কিছুই আসে, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হয়ত তারা মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়া প্রজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করতে চাননি)
তবে, এই দুই সদস্যের একজন গতকালকে উক্ত কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হয়ে গিয়েছেন, তাই হয়ত আর এতো কিছুর দরকার পড়বে না ইন-শা-আল্লাহ। অপরজন অসুস্থ থাকায় উপস্থিত হতে পারেন নি। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁকে শিফায়ে কামেলা আজেলা দান করুন, আমীন”।® সরকারি একটি মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপন সংস্লিষ্টদের না জানিয়ে, কথা না বলে প্রকাশ করবে এটা কি ভাবা যায়?

সমাধান কোন পথে
================
সমাধানের সবচেয়ে বড় পথ দুই সরে তাজ আল্লামা আহমদ শফি ও আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদের সাক্ষাৎ। তাছাড়া বড় বোর্ডগুলো একত্রে বসানোর যে উদ্দ্যোগ চলছে রাজনৈতিক নেতাদের ছাড়া বসতে পারলেই সমাধান হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
এছাড়া মাওলানামুসলেহ উদ্দীন রাজু: আওর ইসলামকে বলেছেন,” এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ হলো, সর্বশেষ ঈদের আগে যে বেফাকের মজলিসে আমেলার মিটিং হয়েছিল, সেই মিটিংয়ে আমি বলছিলাম, ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব, স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ করেছেন। ওই বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন। আর সেই সফরগুলোতে তারা যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সে বক্তব্যটা খুব পরিস্কার। ‘আমরা নতুন কিছু চাই না। আমাদের পুরাতন যে ১৭ জন সদস্য বিশিষ্ট কমিশন রয়েছে সেটাই বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমার মাঠে নেমেছি। এর পক্ষেই আমরা জনমত গড়ে যাচ্ছি। স্বাক্ষর নিচ্ছি ।’ তারা তখন বেফাকের মুরব্বিদের প্রশংসাই বেশি করেছেন। তাদের মুখ থেকে মুরব্বিদের বিপক্ষে কোনো নেতিবাচক শব্দ বের হয়নি। তো তারা আপনাদেরই প্রশংসা করে যাচ্ছেন। আপনাদেরকেই সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদেরকে ডেকে এ বিষয়ে যদি সমন্বয় করে কাজ করা যায় তাহলে হয়তো এ বিষয়ে একটা ফায়সালা আসবেই। আর যদি তা না করে আপনারা তাদেরকে ষড়যন্ত্রকারী বা অন্য কিছু বলেন, তাহলে তো সমাধানের কোনো পথ খোলা থাকবে না।®

আর আমাদের মধ্যকার কিছু উগ্রপন্থী লোক রয়েছেন, যারা এ বিষয়ে কারো সঙ্গে বসতে রাজি না। তবে কেউ কেউ বসতে রাজি হলেও তবে তারা অফিসিয়ালি মিটিং পর্যায়ে বসতে কোনোভাবেই রাজি নয়। অফিসিয়ালি কিছু করতে তাদের যথেষ্ট অনিহা রয়েছে। মোটকথা নিজেদের মাঝে কিছুটা দুরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় আমার আলোচনটা হালে পানি পায় নাই। ব্যাক্তিগত রেষারেষিটা যদি কেউ সকলক্ষেত্রে টানে তাহলে সমস্যা বাধবেই। এটা উতরে ওঠার কোনো সুযোগই নেই। যদি এ ধরনের কোনো সমস্যা না থাকতো তাহলে সবকিছু খুব সহজেই সমাধান হয়ে যেত।”

স্বীকৃতি দাবি সার্বজনীন। বেফাকের উচিত ছিল
ময়দানের আওয়াজ কানে নেওয়া। যেভাবে যা হলে সবকিছু ঠিকটাক রেখে বাকিকিছু হতে পারে,
পদক্ষেপ নেওয়া। বেফাকের উচিত ছিল
বাংলাদেশের অন্যান্য ছোটছোট মাদরাসাগুলোর
সাথে নিজ উদ্যোগে লিয়াজো করা, সবাইকে
নিয়ে বসা, বারবার বসা। একটি কমপ্লিট রূপরেখা তৈরি করে সরকারকে দেয়া। সরকারের সাথে দেন-
দরবার করা। মেনে নিলে তো ভালো। না নিলে
সংবাদ সম্মিলন করে জাতিকে জানানো। তাহলে
বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হত না। কিন্তু এক্ষেত্রেও
বেফাক চরম ব্যর্থতার পরিচিয় দিল। আজও ঘুম
ভেঙেছেনা মূলত বেফাকের। রাজনৈতিক আফিম আর আশিশের নেশায় কেউ বেসামাল। ঘোলা
জল গড়িয়ে গড়িয়ে বাইরে পরে সবকিছু শেষ হবার আসার আগে সঠিক ভাবে উদ্দ্যোগ নেয়া সময়ের দাবী।
চলবে…

আগামী কাল পড়ুন, ষড়যন্ত্রের নীল নকশা – দৈনিক ইনকিলাবের ভূমিকা ও বেদাতিদের দৌড়ঝাপ।

®copy কৃত কিছু উদৃতি

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...