কমাশিসা ডেস্ক: কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাসনদের স্বীকৃতির জন্য ২০ লাখ কওমি ছাত্রের ৪০ লাখ চোখ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছে বলে দাবি করেছে ‘কওমি শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন। আজ বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সংগঠনটির সদস্যরা। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, তিনি যেন কারও চোখ রাঙানির পরোয়া না করেন।
স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্যসচিব ইয়াহইয়াহ মাহমুদ বলেন, ‘কওমি শিক্ষাসনদের স্বীকৃতি আদায়ে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা ফুঁসে উঠছেন। সময়ের সাহসী সন্তান ফরিদ উদ্দীন মাসউদসহ কওমি অঙ্গনের অভিভাবকেরা ছাত্রসমাজের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ত্যাগ ও কোরবানি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বেফাকের ছদ্মবেশে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি একটি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে এর বিরুদ্ধে নেমেছে।’
ইয়াহইয়াহ মাহমুদ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে ওই সব রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে বেফাক পুনর্গঠন করা হবে। এ জন্য শীর্ষস্থানীয় আলেমদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হবে।
কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বিশেষ গোষ্ঠী কে, জানতে চাইলে ইয়াহইয়াহ মাহমুদ বলেন, ২০-দলীয় জোটসংশ্লিষ্ট কিছু আলেম, তাঁরা স্বীকৃতি নিয়ে কালক্ষেপণ করতে চাইছেন। এঁরা আসলে জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়।
ইয়াহইয়াহ মাহমুদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যদের কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে দরদি বক্তব্য শুনে আমরা আপ্লুত।’ তিনি শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের সবটুকু সময় দিয়ে পড়ালেখা করে যে শিক্ষার্থী সনদবিহীন জীবন কাটায়, তার ব্যথা আপনার চেয়ে বেশি কেউ জানে না। আপনার দরদিয়া হৃদয়ের আকুতিটা এবার কওমি বন্ধুদের জীবনের বাতি হয়ে জ্বলে উঠুক। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
কওমি সনদের স্বীকৃতির নিয়ে ২০০৬ সালেও আলেমদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল, এর কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে ইয়াহইয়াহ মাহমুদ বলেন, ‘কওমির স্বীকৃতি নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। আলেমদের এক সমাবেশে খালেদা জিয়া ২০০৬ সালে কওমির স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। ওই সভায় আমিও ছিলাম। আসলে এই সরকারের (আওয়ামী লীগ) কাছ থেকে স্বীকৃতি নেবে কি না, এটা নিয়েই দ্বন্দ্ব।’
অভিযোগ আছে, স্বীকৃতির দাবিতে সোচ্চার আলেমরা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং সরকার গঠিত ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা আইন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩’ খসড়া পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দীন মাসউদের নাম বলছেন অনেকে। এমন প্রশ্নের জবাবে ইয়াহইয়াহ মাহমুদ বলেন, ফরিদ উদ্দীন মাসউদ কোনো দলের সঙ্গে নেই। তাঁর সঙ্গের কেউ সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের আদলে স্বীকৃতি চাওয়ায় পরিষদের পক্ষ থেকে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সভাপতি শাহ আহমদ শফীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে ১৩ অক্টোবর বেলা ১১টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, ১৪ অক্টোবর থেকে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে মানববন্ধন, গণসংযোগ ও গোলটেবিল বৈঠকের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।