বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:৫৪
Home / আমল / ইসলাম ও সভ্যসমাজ

ইসলাম ও সভ্যসমাজ

islamমুহাম্মদ আল বাহি : প্রায় সময় দাবি করা হয়, ‘ইসলাম কেবল আদিম সমাজের ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। কারণ ইসলাম তাদের উন্নত করতে পারে। আর এ জন্যই গোত্রীয় সমাজের কাছে এর আবেদন ছিল। সভ্যসমাজে ইসলামের আর কার্যকারিতা নেই।’

কিন্তু ‘সভ্যসমাজ’ বলতে কী বুঝানো হচ্ছে? এর মাধ্যমে কি সেই আধুনিক সমাজের কথাই বলা হচ্ছে বস্তুবাদী ও শিল্পভিত্তিক সংস্কৃতির ওপর যা নির্ভরশীল?

আসলে প্রাকৃতিক ও গাণিতিক বিজ্ঞানের জগতে যে বিরাট অগ্রগতি ঘটেছে, তা মানুষের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করলেও এতে আত্মার উৎকর্ষ সাধিত হয় না। নৈতিকতার বিষয়ে বিজ্ঞানের করার নেই কিছুই। বিজ্ঞান প্রধানত বস্তুগত যান্ত্রিক দিকগুলোর সাথে সম্পৃক্ত। প্রাকৃতিক ও গাণিতিক বিজ্ঞানের শাখাগুলো এই বিশ্ব জগতের রহস্য উদঘাটনে বিরাট ভূমিকা পালন করে। তবে এই বিজ্ঞান মানুষের নৈতিক মূল্যবোধগুলো থেকে অনেক দূরে। বরং কেউ কেউ বিভ্রান্ত হয়ে আধ্যাত্মিক মূল্যবোধকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বস্তুবাদী নিয়মকানুন অনুসরণ করতে পারেন।

বস্তুগত সভ্যতা এবং উন্নত মানবিক বোধ তথা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও নৈতিকতার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। নৈতিকতার উচ্চ মানে পৌঁছতে মানুষকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হয়। সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী প্রভু, তথা সর্বশক্তিমান আল্লাহর অস্তিত্ব উপলব্ধি করার জন্য মানুষের প্রয়োজন ধর্মীয় দিকনির্দেশনা।

বস্তুগত সমৃদ্ধি ঘটলেই যে সেই সাথে নৈতিক সংস্কারও ঘটে যাবে, তা নয়। একটি সমাজ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বেলায় বিপুল অগ্রগতি লক্ষ করতে পারে তার নৈতিক অবক্ষয় সত্ত্বেও। সুতরাং যদি অহংবাদ ব্যক্তিস্বার্থবাদ অব্যাহত থাকে, বিনয় ও শ্রদ্ধাবোধ কমে যাবে এবং মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস হারাবে। আর এভাবে সমাজ হারাবে তার মানবিক বিষয়গুলো। এর অর্থ হলো, যদি বস্তুগত ও শিল্পভিত্তিক সংস্কৃতির মধ্যে সঙ্ঘাত বাধে, মানুষ অন্যের অধিকার লঙ্ঘন করতে চাইবে। পরিণতিতে মানবসত্তা হিসেবে তার মর্যাদা হারিয়ে ফেলবে।

এর থেকে দেখা যায়, আধুনিক বিজ্ঞানকে ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলে মানুষ নেমে যায় মানবতার নিম্নপর্যায়ে।

মানুষ নিছক যন্ত্র নয়। কারণ মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আছে। যন্ত্রের পছন্দ-অপছন্দের প্রশ্ন ওঠে না। মানুষ যন্ত্রকে চালায়। উল্টোটা ঘটে না। মানুষ যদি নৈতিকতাকে অনুধাবন, সঠিক ও ভুলের ফারাক, আনুগত্যের ও সহযোগিতার গুরুত্ব উপলব্ধি এবং সর্বোপরি আল্লাহতায়ালার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে, তাহলে নিজের বিষয়াদির সুব্যবস্থাপনা আর জীবনের যান্ত্রিক দিকগুলো পরিচালনায় সক্ষম হয়।
পরহেজগারি হলো আল্লাহকে ভয় করা, সৎ কাজ করা, সহিষ্ণুতা, সৎ পথে ধৈর্য ও সাধনা। এ সব কিছু প্রাকৃতিক ও গাণিতিক বিজ্ঞান থেকে পৃথক। আল্লাহভীতি ছাড়া এ বিজ্ঞান মূল্যহীন।

মানুষকে মানবতার উন্নততর স্তরে উন্নীত করার লক্ষ্যে পরিচালিত করাই ইসলামের বাণী। গ্রামে কিংবা শহুরে শিল্পনির্ভর সমাজে, যেখানেই মানুষ বাস করুক না কেন, সর্বত্র এটা প্রযোজ্য। সর্বশক্তিমান আল্লাহ ইসলামকে অভিহিত করছেন মানুষের আত্মাকে পবিত্র এবং তাকে হিংস্র পশুর চেয়ে উন্নত স্তরে নেয়ার আদর্শ হিসেবে। ইসলাম মূলত জীবনের নৈতিক দিকের সাথে জড়িত, যাতে পথচ্যুত মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়। তাই ইসলামের বাণী বিশ্বজনীন। সর্বত্র ও সর্বদা সব জাতি ও গোত্রের মানুষের জন্যই ইসলাম।

আল্লাহতায়ালা বলছেন, তিনিই নিরক্ষরদের মাঝে তাদের নিজেদের একজন বার্তাবাহক পাঠিয়েছেন, তাঁর নাজিলকৃত বাণী তাদের শোনাতে, তাদের পবিত্র করতে এবং কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দিতে, যদিও এ যাবৎ তারা প্রকৃতপক্ষে ছিল প্রকাশ্য ভ্রান্তির মাঝে। যারা এখনো তাদের সাথে যোগ দেয়নি, ওদের জন্যও এই রাসূল প্রেরিত হয়েছেন। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (আল জুমুআহ : ২-৩ আয়াত)

শিক্ষাব্যবস্থার ঘাটতি : যুক্তি দেখানো যেতে পারে যে, মানুষ ইসলাম ছাড়াও চলতে পারে। কেননা শিক্ষা দিলে মানুষের আচার-আচরণ উন্নত এবং তার বিশ্বাস পরিশুদ্ধ হয়।

বাস্তবে এমন কোনো শিক্ষাব্যবস্থা নেই যা মানুষের আচরণ ও বিশ্বাসকে এমনভাবে উন্নত করে না যাতে সে নিজের জন্য, সমাজের জন্য এবং স্রষ্টার দৃষ্টিতে কল্যাণকর বা সঠিক প্রমাণিত হতে পারে। যদি তেমন কোনো শিক্ষাব্যবস্থা থেকে থাকে, সেটা ইসলামই।
আসলে শিক্ষা মানুষের আচরণকে সঠিক নির্দেশনা দেয় এবং তাকে অনেক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। কিন্তু শিক্ষা যদি ধর্মীয় দিকের অবমূল্যায়ন করে, তাহলে শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে দাঁড়ায় ত্রুটিপূর্ণ। এটা মানুষের মুক্তি দিতে পারে না।

ইসলাম শুধু পথনির্দেশক বাণী নয়। বরং আল্লাহর প্রতি মানুষের বিশ্বাস সংরক্ষণ এবং একত্ববাদের সাথে সম্পর্কিত। ইসলাম আল্লাহতায়ালাকে ভয় করে চলতে উৎসাহিত করে। এটা করতে গিয়ে ইসলাম মানুষের বিবেক জাগিয়ে তোলে এবং এমনভাবে পরিচালনা করে যে, মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নৈতিক মূল্যবোধ উপলব্ধি এবং সঠিক পথ অনুসরণ করে। এসব মূল্যবোধ প্রয়োগ করা হলে সব মানুষের কাজই ন্যায়ানুগ হবে।

সংক্ষেপে বলা যেতে পারে, ইসলামের সর্বপ্রথম লক্ষ্য হলো, মানুষের হৃদয় বা অন্তঃকরণ। ইসলাম চায় হৃদয়কে বিশুদ্ধ করে প্রকৃত ও সত্য বিশ্বাস দিয়ে একে পরিপূর্ণ করতে। এরপর ইসলামের লক্ষ্য মানুষের মন নৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা উদ্বুদ্ধ করা। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে এ দিক দিয়ে। কারণ আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় বিষয়কে কোনো গুরুত্ব না দিয়েই শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মনকে আলোকিত করার প্রয়াস চলছে।

লেখক : ‘ইসলামিক কালচার’-এর সাবেক জেনারেল ডিরেক্টর ও মরহুম।
ভাষান্তর : মীযানুল করীম

সূত্র : অন্যদিগন্ত

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

শবে বরাত মানে লাইলাতুন নিস্ফি মিন শা‘বান!

শবে বরাত সম্পর্কে কোনো সহিহ হাদিস নেই? Mohiuddin Kashemi সাহেবের ওয়াল থেকে: অজ্ঞ, নির্বোধ কিংবা ...