বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:৪৫
Home / আন্তর্জাতিক / ইয়া হাসরাতান আ’লাল উলামা!

ইয়া হাসরাতান আ’লাল উলামা!

খতিব তাজুল ইসলাম:
يا حسرة علي العلماء    হায় আফসোস উলামাদের উপর!
 
91-0011-izmir-3-6-11গেল সপ্তায় একটা লেখা আমার নজরে আসে। আমারই ফ্রেন্ডলিস্টের বড় একজন লেখক। তার গবেষণা ধর্মী অনেক কলাম কমাশিসায় ছাপা হয়েছে। আমি কিছু শেয়ারও করেছি। কিন্তু গেল সপ্তাহর লেখাটি পড়ে আমার আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। বিষয়টা ছিলো মুসলিম বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞান চর্চা নিয়ে। তিনি আবু আলী ইবেন সীনা আর-রুশদ আল-বেরুনী সহ বড় বড় বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানীদের জীবনী টেনে এনে বলতে চাইছেন যে, বিজ্ঞান চর্চা একটা বাজে খেলাফে ইসলাম বিষয়।এদের অধিকাংশ নাকি ছিলেন ফাসিক ফাজির। অতএব সত্যিকার আল্লাহ ওয়ালা কেউ বিজ্ঞান চর্চা করতে পারেনা্। ইহা দুনিয়াবী কারবার । বৈশ্বিক লোভ লালসা যাদের তারাই দুনিয়ার চমক দমক নিয়ে ভাবে সে পথে হাটে।
আমি উনার কলামটি পড়ে চুপসে গেলাম। কোন কমেন্ট করতে মন চাইলোনা। দেখছি অনেকে দ্বীমত সহমত প্রকাশ করছেন। কলামটা আমার খুব মর্মপীড়ার কারণ হয়ে দেখা দিলো।এখানে দুটি বিষয়কে তিনি এক করে ফেলেছেন। একটি বিজ্ঞান গবেষণা অন্যটি দুনিয়ার চমক দমক। দুনিয়ার চাক্ চিক্য চমক দমকে মগ্ন হয়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া কিংবা ভোগ বিলাসে মত্ত হওয়া নিতান্ত ভিন্ন জিনিস।
তিনি স্পেনের আল-হামরা আগ্রার তাজমহলের ইতিহাস টেনে ভোগ বিলাসের উদাহরণ দিয়ে বলতে চাইছেন যে এইসব গবেষণাই মুসলমানদের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। একথা সত্য যে মুসলমানদের পতনের বড় একটি কারণ হলো ভোগ বিলাস। কিন্তু আমি বলবো আরেকটি কারণ আছে যা আমরা কেয়ার করিনা সেটা হলো অযোগ্য অথর্ব নেতৃত্ব। খান্দানী রাজতন্ত্র বহাল রাখতে বাদশাহ মারাগেলে তার ৫ বছরের ৮ বছরের শিশু সন্তানকে পরবর্তী বাদশাহ হিসাবে ঘোষণা। আনাড়ি বদ আমল বদ আখলাক্ব নেতৃত্বই পতনের মূল একথা আমি হলফ করে বলতে পারি। একবার মহাথির মুহাম্মাদের মালেশিয়ার দিকে তাকান আরেকবার পাশের দেশ ইন্দোনেশিয়ার দিকে। এরদোগানের তার্কির দিকে তাকান অপরদিকে সৌদী আরব মিশর সহ আরব জাহানের দেশগুলোর দিকে।
কুসতুনতুনিয়া বিজয়ী সুলতান মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ’র শাহাদতের পর মুসলমানদের বিজয় কেন অব্যাহত থাকলোনা?
আমার ধারনা মতে সেই আলেমে দ্বীন অযোগ্য নেতৃত্বকে বিজ্ঞান গবেষণার সাথে এক করে ফেলেছেন। আমি দেখেছি তিনি জেহাদের বিষয়ে খুব সুন্দর সুন্দর কলাম লিখেছেন। আচ্ছা বর্তমান জেহাদ তিনি কি দিয়ে করবেন? এই আয়াতের ব্যাখ্যা তিনি কি দিবেন যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করছেন-
“তোমরা দুশমনের মোকাবেলায় সাধ্যের ভিতর প্রচন্ড শক্তি সঞ্চয় করো প্রশিক্ষীত ঘোড়ার মাধ্যমে যাতে ভয় দেখাতে পারো আল্লাহ ও তোমাদের দুশমনদেরকে।”
আমার প্রশ্ন হলো বর্তমান ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমনরা কি ভোগ বিলাসে নেই? অবশ্যই আছে। খুব ভাল করেই আছে। তবে তারা তাদের দেশ জাতি ও জনগণের নিঃছিদ্র নিরাপত্তা কায়েম করার পর। আজকের জামানায় প্রশিক্ষীত ঘোড়া বলতে সেই ঘোড়া নাকি যাকে আমরা গলায় রশি দিয়ে ঘুরাই? আফগানিস্তান থেকে ইরাক লিবিয়া সিরিয়া কাশ্মির ফিলিস্তিন বার্মা পর্যন্ত বিস্তৃত এই খুনের হোলিখেলা বন্ধ হচ্ছেনা কেন? বার্মার মুসলমানরা কি খুব ভোগ বিলাসে মত্ত আছে? সেই সব দেশে কি প্রশিক্ষীত ঘোড়ার খুব কমতি?
আজ আকাশ জল ও স্থলে শক্তির প্রাধান্য কার? কারা ঘরে বসে বসে দূর নিয়ন্ত্রিত ড্রোন দিয়ে বেছে বেছে মুসলিম বীরদের হত্যা করছে? কারা ৯/১১ ঘটিয়ে গায়ের জোরে মুসলমানদের উপর ফেলে দিয়ে এখনো বীরদর্পে মিথ্যার কাসুন্দী গেয়ে চলেছে? গোটা পৃথিবীর একজন সাহসি রাষ্ট্রনায়ক নেই যে এই জঘন্য পাপের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ জানায়।
আপনি বিজ্ঞান চর্চাকে দুনিয়ার কাজ বলে তিরস্কার করছেন। অথচ এই বিজ্ঞানের বরকতেই আজ পাকিস্তান একমাত্র মুসলিম দেশ যার এটমিক পাওয়ার আছে। যে কারণে কমপক্ষে দুশমন ১০০ বার আগে চিন্তাকরে তারপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিবে। পবিত্র কুরআনের শতাধিক বিজ্ঞানময় আয়াত আছে যেখানে সরাসরি আল্লাহ তায়ালা মানুষকে গবেষণার জন্য আহব্বান জানিয়েছেন।
‘সুর্যের এমন সামর্থ্য নেই যে চন্দ্রের নাগাল পাবে কিংবা রাত্র দিনকে অতিক্রম করার। সকলেই মহাকাশে পরিভ্রমণ করছে”। (সুরা ইয়সীন)
পবিত্র কুরআনের প্রথম ওহী হলো “পড়” পড়াপড়ি একটি বি্জ্ঞান। কুরআনের ভাষাটাও একটা বিজ্ঞান। ১৯ নাম্বার বা সংখ্যাটা পুরোপুরি বিজ্ঞানময়। গোটা কুরআনে মজীদকে এই ১৯ নাম্বারের কোড দিয়ে আল্লাহ তায়ালা হেফাজত করেছেন। তাহলে আমরা বলছি কি? করছি কি? কেন আমরা আমাদের প্রজন্মদের মানসিক মেধা ও যোগ্যতায় পংগু করে তুলছি? আজ গোটা পৃথিবীর মুসলমানরা মিলে দীর্ঘ ৬৭ বছর যাবত ছোট্ট একটি দেশ ইসরাইলের সাথে পেরে উঠতে পারছেনা?
বন্ধু জানি তোমার নেক নিয়ত আছে তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু যেদিকে তুমি জাতিকে আহব্বান করছো সে পথতো কুরআনের পথ নয়, মুজাহিদের পথ নয়, সচেতন মুসলমানদের পথ নয়, বিজয়ের পথ নয়; সে পথ গোলামির পরাজয়ের গ্লানির দুর্নাম আর কষ্টের।
হে তরুণ সম্প্রদায় ! হে আলেম ! হে উম্মাহর চিন্তাশীল ! দয়াকরে গবেষণায় রত হও। অবিশ্বাস্য আবিষ্কারে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দাও। আর তা যেন হয় গোটা পৃথিবী সহ মুসলমানদের জন্য সুখকর আরাম দায়ক নিরাপত্তাদায়ক শান্তির বাহক।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...