রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ২:০৩
Home / আকাবির-আসলাফ / হাটহাজারীর মহান পুরুষ মুফতী আহমদুল হক রহ.

হাটহাজারীর মহান পুরুষ মুফতী আহমদুল হক রহ.

34জন্মলাভ
হেদায়েতের দীপ্তিময় সূর্য, ফকীহুল উম্মাহ মুফতিয়ে আজম মুফতী আহমদুল হক রহ. ১৩২৭ হিজরী মোতাবেক ১৯১১ ঈসায়ী সালে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিল গ্রামের মীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হযরতের পিতার নাম মীর মুহাম্মাদ ইসমাঈল। তিনি একজন মুত্তাকী আলিম ছিলেন। মাতার নাম জমীলা খাতুন।

প্রাথমিক শিক্ষা
মুফতী আহমদুল হক রহ.-এর পুরো পরিবার ছিল ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির এক অনুপম উদাহরণ। হযরতের দাদীজান নিজ বাড়িতে এলাকার ছোট বাচ্চাদের কুরআন শরীফ ও প্রয়োজনীয় দীনি শিক্ষা দিতেন, তাই হযরতকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বাইরে কোথাও যেতে হয়নি। নিজ বাড়িতে দাদীর তত্ত্বাবধানে তিনি দীনি শিক্ষার সূচনা করেন। এরপর স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়েও তিনি কিছুদিন পড়ালেখা করেন।

মাদরাসা জীবন
১৩৪৪ হিজরী মোতাবেক আনুমানিক ১৯২৮ ঈসায়ী সনে তিনি ফটিকছড়ি জামিউল উলূম মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি জামাতে হাফতম পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম শহরের দারুল উলূম মাদরাসায় ভর্তি হন। এর কিছুদিন পর তিনি সে সময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে ভর্তি হন। এ মাদরাসায় তিনি জামাতে হাফতম থেকে মেশকাত জালালাইন জামাত পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। হাটহাজারী মাদরাসায় তার শিক্ষক ছিলেন মাওলানা হাবীবুল্লাহ, মাওলানা জমীরুদ্দীন, মুফতিয়ে আজম ফয়জুল্লাহ, খতীবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ রহ. প্রমুখ।

দারুল উলূম দেওবন্দে
মুফতী আহমদুল হক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৩৯ সালে উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম দেওবন্দ গমন করেন। সেখানে তিনি মেশকাত জামাতে ভর্তি হন। দু’বছর পাঠকাল শেষ করে ১৯৪১ সালে তিনি দাওরায়ে হাদীসের সনদ অর্জন করেন। এরপর হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে উচ্চতর গবেষণার জন্য তিনি আরো দু’বছর দেওবন্দে কয়েকজন শিক্ষকের নিকট থেকে এসব বিষয়ে নিবিড় তালীম নেন। গবেষণা পাঠশেষে তিনি যখন স্বদেশের উদ্দেশে রওনা হন তখন কলকাতায় তার উস্তাদ মাওলানা জমীরুদ্দীন ও মুফতী আযীযুল হক সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়। তারা হজ্জে যাওয়ার পথে সেখানে যাত্রাবিরতি করছিলেন। তারা হযরত মাওলানাকে বলেন, দেওবন্দ মাদরাসায় এবারই প্রথম তাফসীরের উপর বিশেষ কোর্স শুরু হয়েছে; তুমি সেই কোর্সটিও শেষ করে আসো। তাদের এ কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি পুনরায় দেওবন্দ যান এবং এক বছরের তাফসীর কোর্স শেষ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।

কর্মজীবন
দেশে আসার পর হাটহাজারী মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুরোধে তিনি মাস ছয়েক হাটহাজারী মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। এরপর পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুফতী আযীযুল হক সাহেব হাটহাজারীর মাওলানা হাবীবুল্লাহ সাহেবের নিকট মুফতী আহমদুল হককে শিক্ষক হিসেবে পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তার আগ্রহের প্রেক্ষিতে মুফতী সাহেব পটিয়া মাদরাসায় যোগদান করেন। পটিয়া মাদরাসায় তিনি একাধারে চার বছর শিক্ষকতা করেন।
পটিয়ায় চার বছর অধ্যাপনার পর ১৯৪৮ সালে তিনি পুনরায় হাটহাজারী মাদরাসায় চলে আসেন। এখানে তিনি নাহু, ছরফ, মানতেক, তাফসীর, হাদীসসহ সকল শাস্ত্রের কিতাবের দরস দিতেন। হাটহাজারীর শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুল আজীজ রহমাতুল্লাহি আলাইহির ইন্তেকালের পর তিনি শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব লাভ করেন। এছাড়া তিনি মুফতিয়ে আজম ফয়জুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহির সহকারী হিসেবে হাটহাজারীর ফতোয়া বিভাগের ফতোয়া প্রণয়নে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে মুফতিয়ে আজমের ইন্তেকালের পর তিনি প্রধান মুফতী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

আধ্যাত্মিক সাধনা
হাটহাজারী মাদরাসায় অধ্যয়নকালেই তিনি কুতবে আলম মাওলানা জমীরুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহির হাতে আধ্যাত্মিক সাধনার বায়আত গ্রহণ করেন। এরপর হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহির বিশিষ্ট খলীফা সাইয়েদ মিয়া আছগর হুসাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছেও আধ্যাত্মবাদের সবক নেন। সাইয়েদ মিয়া আছগর হুসাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহির ইন্তেকালের পর উপমহাদেশের আধ্যাত্ম সাধনার প্রবাদপুরুষ সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহি আলাইহির সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।

ব্যক্তিজীবন
ব্যক্তিজীবনে হযরত মুফতী সাহেব ছিলেন অত্যন্ত নরম ও সাদা দিলের মানুষ। কারো সঙ্গে কোনো বিষয়েই কখনো তর্ক করতেন না। অল্পেতুষ্টি এবং পরোপকার ছিল তার জীবনের উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তার মুর্শিদের নির্দেশ অনুসারে তিনি প্রতিদিন বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের সেবা-শুশ্র“ষা করতেন। হাটহাজারী মাদরাসার প্রধান মুফতী হওয়া সত্বেও তিনি কখনো মাদরাসা-প্রধানের অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতেন না। এমনকি অসুস্থ হয়ে যখন তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন তখনও তিনি স্বজনদের দিয়ে মাদরাসা থেকে ছুটি নিয়ে নিতেন।

চির বিদায়
বাংলার বরেণ্য এই মুফতী ১১ রবীউল আউয়াল ১৪৩০ হিজরী মোতাবেক ৯ মার্চ ২০০৯ ঈসায়ী সনে সোমবার ভোর চারটায় আল্লাহর ডাকে অন্তিম সাড়া দিয়ে উর্ধ্বাকাশে যাত্রা করেন। হযরতের নামাযে জানাযার ইমামতি করেন আল্লামা আহমদ শফী সাহেব। জানাযার পর তাকে হাটহাজারী মাদারাসার মাকবারায়ে হাবীবীতে দাফন করা হয়।

সূত্র :
আল্লামা আহমদুল হক রহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
মুফতী জসীমুদ্দীন সম্পাদিত
প্রকাশনায় : মুফতীয়ে আযম একাডেমী, সুয়াবিল, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম; প্রকাশকাল : ২০০৯

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

আদালতের ওপর বিশ্বাস ভেঙে গেছে: সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী

নাজমুল মনযূর: আদালতের ওপর বিশ্বাস ভেঙেছে ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা সেই মুসলমানদের। এমন কথাই ...