মুহাম্মদ শামীম আখতার : একটি সময় থাকে, যখন কোন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তার বা তাদের চেলা চামুন্ড দিয়ে চলমান বা অতীত ইতিহাসকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করে, যেন সেই ব্যাখ্যা তাদের মিথ্যা মিথের ভিত্তি ধ্বংস করতে না পারে। এই যে কিছুদিন আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলতো তারা সন্ত্রাসী অথবা উইপন অব মাস ডেসট্রাকশন ধ্বংস করার জন্য ইরাকে আক্রমণ চালিয়েছে। কিন্তু এই সেদিনই জর্জ বুশ জুনিয়রের একটি সাক্ষাৎকার শুনলাম, যেখানে তিনি স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছেন যে, গত শতকে ইরাক বা তার আগে মধ্যপ্রাচ্যে আক্রমনের মূল কারণ ছিল তেলের উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। কিন্তু তখন তাদের চেলা চামুন্ডারা সেই মিথ্যা প্রচারণাই করে গেছেন, যারা সত্য বলতে চেয়েছেন, তাদের সত্যবাক্য গভীর সমুদ্রে সামান্য ফেনা তুল্য মনে হয়েছিল। আজকে সত্য প্রকাশিত হ্েচ্ছ এবং মিথ্যার উপর চপেটাঘাত করার সময় এসেছে। ঠিক একইভাবে ব্রিটিশ লাইব্রেতীতে যে মার্কসবাদ জন্ম নিয়েছিল, সেই মার্কসবাদ ছিল মধ্যএশিয়ার মুসলমান দেশ দখল এবং তৎকালীন ব্রিটিশ কলোনীতে আল-কোরানের আলোকে উদীয়মান সাম্রা জ্যবাদী বিরোধী স্পিটকে ধ্বংস করার জন্য একটি বিকল্প মানবসৃষ্ট তথাকথিত বিপ্লবী মতবাদ সৃষ্টি করা। অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হয়, এই কম্যুনিজম বা সমাজবাদের নামে মুসলমান বিশে^ যে হানাহানি খুনোখুনি হয়েছে তা বোধ করি মুসলমানদের কোন বিষয়গত মতবিরোধ নিয়ে সৃষ্ট সংঘাতের সাথে তুলনীয় নয়। এক ইন্দোনেশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক শক্তি ধ্বংস করার নামে কয়েকদিনেই লক্ষাধিক মুসলমান হত্যা করা হয়, যেমন আজও ওম শান্তির ভন্ড মুখোশের আড়ালে মুসলমান হত্যা করা হচ্ছে মায়ানমার, ভারতে এমনকি চীনেও। তো সেটি অনেক লম্বা ইতিহাস। আমি সে দিকে যেতে চাইছি না, বরং আমি বানর থেকে মানব উৎপত্তির ডারউনের তত্ত্ব সম্পর্কে সচেতন পাঠকদের কিছু বলতে চাই।
আশ্চর্যের কথা কি জানেন আল-কোরানে বিধৃত মানব উৎপত্তির ইতিহাসকে ভোঁতা প্রমাণের জন্য খ্রীস্টান বৃটিশ বিজ্ঞানীর সেই বিবর্তনবাদ তত্তও¡ কিন্তু সেই সমাজবাদীরাই গ্রহণ করে। রসুনের গোঁড়া ঠিক কোথায় তা খেয়াল করুন। তো যা বলছিলাম ডারউইন বা তারই মত চেলারা বলতেন যে মানুষের উৎপত্তি বানর থেকে, যাকে তিনি বলতেন বিবর্তনবাদ। দেশের স্কুল থেকে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত মুসলমানদের খাটুনির টাকায় লালিত পালিত কুলাঙ্গার শিক্ষকরা আর তাদেরই মুরিদ ছাত্র-ছাত্রীরা এভাবে মানুষকে বানরের কাতারে নিয়ে এসেছিল, যেমন আজ বাংলা পহেলা বৈশাখবরণের নামে পেঁচা, শিয়াল, কুত্তার মুখোশ বনি আদমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে পিছে বসে সেই একই শক্তি তৃপ্তির হাসি হাসে। এক সময় এই কমুদের সম্পর্র্কে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য শুনতাম। তারা নাকি মস্কোতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতি ধরতেন। এই বিভ্রান্ত গোষ্ঠীই একাত্তরে পিকিংপন্থী নাস্তিক আর রুশপন্থী নাস্তিকের নামে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী মুসলমানদেরকে কৌশলে হত্যা করে। এই ইতিহাস নিয়ে কোন মুনতাসীর মামুন বা আনোয়ার হোসেন পাওয়া যায় না। কারণ এই প্রসঙ্গ নিয়ে জাবর কাটলে ফান্ড পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের সাথে বানরের একটি সম্পর্ক হচ্ছে তাদের দৈহিক সামান্য মিল, কিন্তু আজও কোন বানরকে দুধকলা খাওনোরও পরও কোন বিপ্লবী মঞ্চে বসে সেই বানর কোন তত্ত্ব নিয়ে স্বাধীনভাবে আলোচনা করতে পেরেছে। আমরা জানি তোঁতা পাখি মানুষের কথা অনুকরণ করতে পারে, ডলফিন মানুষের হাত নাড়ানো দেখে, সেও ডানা নাড়ে, কিন্তু তোঁতা পাখি বা ডলফিনকে মানব জাতির তালতো ভাই বলে কারও বলার সাহস হয়নি। তাহলে প্রকৃত ব্যাখ্যা কি? এই কৌতুহল নিরসন করার জন্য সকল জাহানের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাক লওহে মাহফুজে থাকা আল-কোরানকে জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর উপর নাযিল করেছেন । আল-কোরান হচ্ছে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।
এই কোরানে বলা হয়েছে মানব সৃষ্টি হয়েছে আদম আ: থেকে। হযরত মুহাম্মদ সা. এর একটি হাদিস থেকে জানতে পারি, হযরত আদম আ. এর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল যাট হাত, যা কমতে কমতে বর্তমান সময়ে এসেছে। এই হাদিসটি পূর্নাঙ্গভাবে পরে বর্ণনা করবো। তো যা বলছিলাম, নবীর বক্তব্য কোরানে না থাকলেও সেটিও আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণিত মানতে হবে। কারণ সুরা নিসার ৮০ নং আয়াতে আল্লাহর রাসুল (সা.) সম্পর্কে বলা হচ্ছে: “যে রাসুলের হুকুম মান্য করলো, সে আল্লাহর হুকুমই মান্য করলো।” তো সেই হাদীসে আদম আ: এর দৈহিক কাঠামোর একটি বিবর্তন বর্ণনা রয়েছে, যার সাথে ডারউইনের তত্ত্বের কোন মিল নেই, বরং পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। এছাড়া ডারউনের বিবর্তনবাদের ধারনায় বলা হচ্ছে বানর থেকে মানবের বিবর্তন। এর বিপক্ষে একটি যুক্তিসংগত প্রশ্ন হচ্ছে: সেই বানর আছে, বিবর্তন ধারায় সৃষ্ট মানবের আদলে মানবও আছে, তাহলে অন্তবর্তী সময়ে যে বিবর্তিত সৃষ্টি তাদের একটিকেও কেন দেখা যায় না? সব মিলিয়ে এখন ডারউনের বিবর্তনবাদ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আর এই মিথ্যার মধ্য দিয়ে এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে, সে সময় এই বিবর্তনবাদ তৈরী করা হয়েছিল মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ডারউইন তাহলে মানুষের উৎপত্তি কেন বানর থেকে আনলেন? কেন তিনি জলহস্তি, কুমির বা সিংহ বলেননি? এর একটি সহজ উত্তর হচ্ছে: মার্কস এবং ডারউইনরা যখন একটি বিভ্রান্তির জট তৈরী করতে যাচ্ছিলেন তখনও তারা আল-কোরানের সুরা বাকারার ৬৫ নং আয়াত পাঠ করেছিলেন। এই আয়াতে দাউদ আ. এর সময়ে শনিবারে মাছ ধরা বা অনুরূপ কোন কাজ বন্ধ রাখার জন্য বনি ইসরাইলের একটি জেলে গোষ্ঠী আল্লাহর সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে একটি গর্ত করে যাতে শনিবারে সেই গর্তে মাছ গিয়ে জমা হয়, যা রবিবার তারা উত্তোলন করতে পারে। বিষয়টি আল্লাহর কাছে গুরুতর গুনাহ বলে গণ্য হয় এবং তিনি সেই জেলেদেরকে বানরে পরিণত করেন। এই বানররা একে অপরকে চিনতে পারতো এবং পাপের জন্য ক্রন্দন করতো। এভাবে তারা তিনদিন বেঁেচ থাকে এবং তিনদিন পর আল্লাহর হুকুমে তাদের মৃত্যু হয়। পরে তাদের মৃতদেহ প্রবল বাতাসে সাগরে গিয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। দাউদ আ. এর সময় লোহিত সাগরের পাশর্^বর্তী ইলাহ নামক স্থানে ঘটনাটি ঘটে। ( এ প্রসঙ্গে আল-কোরানের ২:৬৫, ৫:৬০ এবং ৭:১৬৬ পাঠ করা যেতে পারে)
সুরা বাকারার ৬৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন,
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِينَ اعْتَدَواْ مِنكُمْ فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُونُواْ قِرَدَةً خَاسِئِينَ
বাংলা তরজমা: “তোমরা তাদেরকে ভালরূপে জেনেছ, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘণ করেছিল। আমি বলেছিলামঃ তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।” (২:৬৫)
সুরা আল-মায়েদার ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
قُلْ هَلْ أُنَبِّئُكُم بِشَرٍّ مِّن ذَلِكَ مَثُوبَةً عِندَ اللّهِ مَن لَّعَنَهُ اللّهُ وَغَضِبَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ وَعَبَدَ الطَّاغُوتَ أُوْلَـئِكَ شَرٌّ مَّكَاناً وَأَضَلُّ عَن سَوَاء السَّبِيلِ
বাংলা তরজমা:: “বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি, তাদের মধ্যে কার মন্দ প্রতিফল রয়েছে আল্লাহর কাছে? যাদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, যাদের প্রতি তিনি ক্রোধাম্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে বানর ও শুকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন এবং যারা শয়তানের আরাধনা করেছে, তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকেও অনেক দূরে।” (৫: ৬০)
একই ভাবে সুরা আল-আরাফের ১৬৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
فَلَمَّا عَتَوْاْ عَن مَّا نُهُواْ عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُواْ قِرَدَةً خَاسِئِينَ
বাংলা তরজমা : “তারপর যখন তারা এগিয়ে যেতে লাগল সে কর্মে যা থেকে তাদের বারণ করা হয়েছিল, তখন আমি নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।”
আমরা জানি কার্ল মার্কস ছিলেন ইহুদী এবং যদি এই বিভ্রান্তি তত্ত্ব আবিষ্কারের পিছে ডারউইনের মত ব্যক্তির নেপথ্যেও যদি ইহুদী থাকে, তবে তাদেরও মতলব হতে পারে নিজের গুষ্ঠীর অপরাধমূলক ইতিহাসকে অন্যের ঘাড়ে চাপানো। আমরা জানি আদম আ. কে খ্রীস্টান ও ইহুদীরাও নিজেদের আদি পিতা বলে মানে আর দাউদ আ. এর আগমন বহু পরে। দাউদ এর সাথে গোলিয়াথের যুদ্ধের ইতিহাসও সুবিদিত। তাহলে সেই অন্তবর্তীকালের একটি বিক্ষিপ্ত ইতিহাসকে তাহলে কেন গোটা মানব জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়? ইতিহাসকে বিকৃতি বলতে যা বোঝায় ডারউইন বা মার্কস বা অপরাপর সমাজতান্দ্রিকতার তান্ত্রিকরা তাই করেছিলেন। আর এই বিকৃতির শিকার হয়ে দীর্ঘ একশ বছরের সময়কাল সমাজতন্ত্রের ভোদকা, হুইস্কি খাইয়ে যে বিকৃত মানব নেতৃত্ব গড়ে উঠেছিল, তা ছিল মুসলমানদের ফিতনার যুগ, তেমনি তা ছিল গোটা মানবজাতির জন্য সংকটকাল। সেই সংকট থেকে এখনও অনেকে বের হতে পারেনি। ফলে তারা হাশরের ময়দানে এই ভ্রান্তি বিশ্বাসের কারনে শাস্তি ভোগ করবে। শুধু পরকাল নয়, ইহকালেও তারা লাঞ্চিত হয়েছে এবং হবে। ইমাম খোমেনী রহ. গর্ভাচেভকে লেখা চিঠিতে যে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন তা আজ সত্যে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি লিখেছিলেন সমাজতন্ত্র রাজনীতির ইতিহাসে স্থান করে নেবে। সেই গর্ভাচেভের ইউ টার্ন, চসেস্কুর পতন – সব মিলে সমাজতন্ত্র এখন ইতিহাসের জাদুঘরে । তবে একটি বিশেষ চক্রের ইন্ধনে বাংলাদেশের বিশ^বিদ্যালয়ে মুসলমানদের টাকা খেয়ে একটি চক্র সেই মিথ্যা পাঠ দিয়ে চলেছে, যা বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য যেমন অবমাননাকর, তেমনি তা প্রকৃত সত্যদর্শীর জন্য অপমানজনকও বটে।
আসল কথা হচ্ছে : কোরান ও হাদীস থেকে বিবর্তনবাদের একটি বিশেষ ব্যাখ্যা পাই, যা বানর তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিপরীত। আল-কোরানে বর্ণিত মানব বিবর্তন মূলত দুইভাবে হয়েছে: আকারগত এবং বয়সগত; আরেকটি বিবর্তনকে জ্ঞানগত বিবর্তন বলেও অভিহিত করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে এই বিবর্তন কোনভাবেই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বকে খাঁটো করে না, বরং আল্লাহ যে জ্ঞানের কারনে মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছিলেন গোটা ব্যাপারটি সেই রহস্যের মধ্যেই রয়েছে।
মানব সৃষ্টি কোন হেয়ালীপনা নয়, একটি উদ্দেশ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান, যা ফেরেশতাদের দেওয়া সামান্য ভবিষ্যত জ্ঞান- তাকেও অতিক্রম করে। বস্তুত ফেরেশতারা আদম সৃষ্টির সময়ে বলেছিলেন যে ইনসান দুনিয়ায় রক্তপাত করবে। এটি ঠিক শতভাগ ভবিষ্যতজ্ঞানের ফল নয়, কারণ এটি মালায়েকদের একটি অবজারভেশনের উপর ভিত্তি করে তৈরী হাইপোথিসিস। কারণ আদমের আগে এই দুনিয়ায় যে জ¦ীনরা বসতি করতো, তারা রক্তপাত করেছিল।
এখন বিবর্তনবাদের দিকে ফিরে আসি। ইসলামে আকারগত বিবর্তনবাদের স্বরূপ কী? একটি হাদীস থেকে তার ধারণা পেতে পারি। বুখারী শরীফে সংকলিত হয়েছে সেই হাদীসটি।
“হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা আদম (আ.) কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। অত:পর তিনি (আল্লাহ) তাকে (আদমকে) বললেন, যাও, ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর এবং তারা তোমার সালামের জওয়াব কীভাবে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কারণ সেটিই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। অত:পর আদম (আ.) (ফেরেশতাদের) বললেন, আসসালামু আলাইকুম। ফেরেশতামন্ডলী তার উত্তরে। ‘আসসালামু ’আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বললেন। ফেরেশতারা সালামের জওয়াবে ওয়া রহমাতুল্লাহ শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তারা আদম আ. এর আকৃতিধারী হবেন। তবে আদমের সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান সময়ে এসেছে।”
একইভাবে আদ সামুদ জাতি সম্পর্কে কোরানে বর্ণনা আছে, তাদের বিশাল দৈহিক বর্ণনার কথা আছে। কিন্তু সেই সকল মানুষের সাথে উচ্চতাগত এবং উচ্চতার সাথে আনুপাতিক হার রক্ষা করে বৃহৎ মানুষ পাওয়া যায়, কিন্তু বানর পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আরেকটি সুত্র থেকে যদিও আমার এক পাঠিকা বয়সের সূত্র কোথায় পেয়েছি, সেই প্রশ্ন করেছিলেন, ফলে সূত্রটি নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। নবীদের বয়সের একটি তালিকা রয়েছে, যা থেকেও বয়সের বিবর্তন প্রমাণিত হচ্ছে, যেমন
নবীর বা রাসুলের নাম বয়স
আদম (আ:) — ১০০০
নুহ (আ:) — ৯৫০
শুয়াইব (আ:) — ৮৮২
সালেহ (আ:) — ৫৮৬
যাকারিয়া (আ:) ২০৭
ইব্রাহীম (আ:)) ১৯৫
সুলায়মান (আ:) ১৫০
ইসমাইল (আ:) ১৩৭
ইয়াকুব (আ:) ১২৯
মুসা (আ:) ১২৫
ইসহাক (আ:) ১৫০
হারুন (আ:) ১১৯
ইউসুফ (আ:) ১১০
ঈসা (আ:) ৯৫
হযরত মুহাম্মদ (সা:) ৬৩
আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা:) বাইবেলীয় সূত্র থেকে বর্ণনা অস্বীকারও করতে বলেননি আবার স্বীকার করতেও বলেননি, কারণ বাইবেলের বর্তমানরূপ বিকৃত। যদি বাইবেলীয় সূত্র থেকেও এই বয়সের হিসেব পাওয়া যায়, তবে এখানে বয়স ভিত্তিক বিবর্তন এর একটি সূত্র পাওয়া যায়। আর যদি এটি হাদীস বা কোরানের সূত্র থেকে জানা যায় তবে তো নিশ্চিত হওয়াই গেল। আমি বয়সের এই হিসেব সম্পর্কে কিছুটা সংশয়ের কারনে পাঠকদের কাছে অনুরোধ রাখছি, এই সম্পর্কে কোন তথ্য তাদের কাছে থাকলে- জানাবেন।
বর্তমান জজিরাতুল আরবে খনন কাজ পরিচালনা করার সময় দেখা গেছে কিছু কঙ্কাল, যার সাথে বর্তমান মানবীয় কঙ্কালের হুবহু মিল রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর আকার ছিল বড়, যা কোরাণের বির্বতন ধারনাকে সত্য প্রমাণ করে।
ইনাসানের জ্ঞানগত বিবর্তন অবশ্যই হয়েছে। যেমন আদম আ. বস্তুর নাম জানতেন, তিনি আশি হাজার ভাষা জানতেন, কিন্তু লিখন বিদ্যা তিনি জানতেন না, এটি ইদ্রিস আ. কে শেখানো হয়। নুহ আ. এর আগে কেউ নৌকা বানাতে পারেনি, তেমনি সুলায়মান আ. এর আগে কেউ বিমানের ধারনা করতে পারেনি। এই বিবর্তনের ধারনায় রাসুল মুহাম্মদ সা. কে সপ্তম আসমানে নিয়ে আবার দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়। এটি আরেকটি মহাজাগতিক জ্ঞান, যা কেউ পায়নি। সুতরাং উচ্চতা, কাঠামোগত এবং জ্ঞানগত বিবর্তনের ধারাকে ইসলাম স্বীকার করে ।
এই বিষয়টি এখন যদিও বিশ্¦বিদ্যালয়ের নাস্তিক শিক্ষকরা ছাড়া অন্য কেউ বিতর্ক করেনা, তবু আমি এই টুকুই বুঝাতে চাই: আল্লাহর প্রেরিত কোরান এবং হাদীসের মধ্যেই রয়েছে মানব সভ্যতার না জানা সব কথা। আল্লাহর রাসুল তাই বিদায়ী হজে¦ ঠিকই বলেছিলেন আল্লাহর কিতাব আল-কোরান ও হাদীসকে আঁকড়ে থাকলে আমাদের পথভ্রষ্ট হবার কোন সম্ভাবনা নেই। বাস্তবিকই তাই। শুধু বিবর্তনবাদই নয়, মাহাকাশবিদ্যা, ভ্রণতত্ত্ব -এর মত বিতর্কিত বিষয়গুলোর আল-কোরান ও হাদীসের বর্ণনার সাথে সাম্প্রতিক আবিষ্কারের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত হবে মানবীয় তত্ত্বকে ছুঁড়ে ফেলে আল্লাহর পথে আসা।
সূত্র : বাংলাদেশমুভস