কমাশিসা ডেস্ক: আমাদের মাঝে বিতর্কের রেশ এখনো কাটেনি। সিদ্ধান্তহীনতায় কওমি অংগন কালাতিপাত করছে। স্বকীয়তা স্বীকৃতি এবং সংস্কারের ভাবনা নিয়ে বিস্তর ফারাক। যারা প্রবীন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল নিয়ে তেমন ধারণা নেই, তাদের কথা হলো স্বীকৃতির নামে বিকৃতির আয়োজন চলছে। আবার অনেকে স্বীকৃতি চান তবে কিভাবে কোন পথে তার পুর্ণ ধারণা জাতিকে দিতে পারছেন না। তরুণদের মাঝে স্বীকৃতির বিষয়টি বেশি আলোচিত হচ্ছে। যেহেতু প্রবীনগণ নিজেদের একটা তৈরী করা পজিশন নিয়ে আছেন তাই তাদের খুব একটা ভাবায়না। ভাবায় তাদের যারা এখন ময়দানে আছে পজিশনের তালাশে। পদে পদে প্রতিবন্ধকতা দেখে সংস্কার স্বীকৃতির আওয়াজ তুলছে। পাছে ভাবছে উস্তাদজি নারাজ হয়ে যান কিনা। কিন্তু টাইটেলের পর ছেলেটির কি গতি প্রকৃতি কিভাবে দিন যাপন করছে তার খবর রাখার সময় ক’জনের আছে।
বস্তুত স্বীকৃতি এমনি হবেনা সংস্কার ছাড়া। বর্তমান কওমি সিলেবাস সংস্কার ফরজের কাছাকাছি। প্রাথমিক মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক সিলেবাসকে ঢেলে সাজানো অনিবার্য্য। নিম্নমানের বাংলা আরবি ভাষার বইগুলোর কার্যকারিতা এখন আর নেই। সাধারণ অংক বিজ্ঞান ও সমাজপাঠের বই নাই বললেই চলে। স্বীকৃতির জন্য তাড়াহুড়া করে যে সংস্কার হবে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই কওমি ঘরানার অনেক যোগ্য মেধা আছে তাদের ডেকে এনে আগে খসড়া সিলেবাস তৈরী হউক। পরবর্তিতে মুহতামিম নাজিম ও অভিজ্ঞ উলামাদের পরামর্শে চুড়ান্ত করা যেতে পারে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই না করে এভাবে যদি শুধু ডায়লগ চলে তাহলে ফিতনাই বাড়বে।
খুব কান ভরে শুনুন। এদেশে দুটি সরকার স্বীকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা আছে। একটি স্কুলের অপরটি আলিয়ার। তৃতীয় আরেকটি শিক্ষার স্বীকৃতি নেয়া সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। চাইলে আমরা যে কোন একটি বেছে নিতে পারি। স্কুলের সিলেবাসটা কওমির জন্য মানানসই বলে অনেকে মত দিয়েছেন। আর তা ১০ম পর্যন্ত। বাংলা ইংরেজি অংক সাধারণ বিজ্ঞান ও সমাজ পাঠ এবং ইতিহাস। এই ছয়টি সাবজেক্টকে ফলো করে ১০ম পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া। শুরু থেকে ১০ম পর্যন্ত দ্বীনিয়াত ও আরবি বিষয় গুলো কওমির নিজের মতো করে থাকবে। এমনকি যারা সংস্কার চানা না তাদের জন্যও সুবিধা যে কোন কিতাবের পরিবর্তন লাগছেনা। শুধু স্কুলের স্বীকৃত শিক্ষাটা ১০ম পর্যন্ত গ্রহন করার মানসিকতা তৈরি করা। তাতে সরকার আর আলাদা করে নিবন্ধন কিংবা স্বীকৃতির বিষয় ভাববে না। প্রজন্মরা স্বীকৃতিহীনতায় ভোগবেনা। ইহা খুব জরুরী বিষয়।
আমরা বার বার একথাটা্ই বলতে চেষ্টা করছি যে দেশের মূল স্রোতের সাথে কওমি শিক্ষার একটা ব্রিজ তৈরী করতে হবে। আর এটা বাস্তবায়ীত হয়েগেলে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। ইউরোপ আমেরিকায় যেভাবে কওমি মাদরাসা গুলো আজ স্বসম্মানে দাঁড়িয়ে আছে তার পিছনে হলো স্কুলের সিলেবাস ১০ম পর্যন্ত গ্রহন।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে কওমি কর্তৃপক্ষ দাবী জানাতে পারে যে কওমি অংগনে যেন ১০মের ব্যবস্থা সরকার মেনে নেয়। অথবা পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ প্রদান করে। এতে করে সকল শ্রেণীর মানুষের সন্তানেরা কওমিতে লেখাপড়া করা শুরু করবে। মানুষ অর্থকড়ি দিয়ে পড়াবে।আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসবে।
তাতে সুবিধা কি?
কওমির উলামারা যখন ্স্কুলের সিলেবাস পাঠ্যসুচিতে নিবেন তখন গড়মিল গুলো ধরা পড়বে্। নিজেদের স্বার্থে সরকারকে প্রয়োজনীয় সংশোধনের চাপ দিতে পারবেন। অভিভাবকদের নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ হবে। দেশের ৯৫% ছাত্র/ছাত্রীদের ঈমান আক্বীদা বিশ্বাসের অতন্দ্রপ্রহরি হিসাবে কাজ করতে পারবেন।
আর যদি তা না করেন তাহলে ধাপে ধাপে গোটা দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। স্যাকুলার প্রজন্মেদর মাতালিপনায় পুরো দেশজুড়ে তখন উন্মাদনা ছড়াবে। অতএব শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবলে হবেনা গোটা জাতিকে নিয়ে ভাবুন। বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হোন। সাইকেলের যোগ শেষ হয়ে এখন উড়োজাহাজের জামানার শুরু। তাই কালক্ষেপন মানে সময়ের অপচয় উম্মাহর অপুরণীয় ক্ষতি। দায়া করে স্বীকৃতি বিকৃতি স্বকীয়তার বাক বিতন্ডায় না গিয়ে সময়ের কার্যকর ভুমিকা পালন করুন ইহাই জাতির দাবি উম্মাহর কামনা।