(ক)
নতুন খতিব লিখিত খুতবা পাঠ করছেন।
খুতবায় তিনি বলেন, আমরা সকলেই একথা জানি যে, হজরত আদম এবং হজরত হাওয়া (আ.) যখন জান্নাত থেকে নেমে দুনিয়ায় এসেছিলেন তখন তারা এই আরাফার ময়দানে (জাবালে রহমত) এসে একত্রিত হয়েছিলেন।
এই পবিত্র স্থানেই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দেন। হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এই চূড়ায় উঠেন এবং তার সেই মহামূল্যবান ভাষণের একটি এখান থেকে দেন।
তিনি বলেন, ‘সুদকে হারাম করা হয়েছে, সকল সুদ আমার পায়ের নিচে। অজ্ঞতা-মুর্খতা কোনোটারই স্থান ইসলামে নেই। ভুলেও কাউকে গালি দেওয়া যাবে না। যে গালি-অভিশাপ দেয়, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়’।
প্রিয় উপস্থিতি! হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এই পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে, এই জাবালে রহমতে দাঁড়িয়ে তিনি এই কথা বলেছিলেন।
আমরা সকলেই মুসলমান। মুসলমান কাকে বলে? যতো কঠিনই হোক না কেন, অথবা আমাদের মনপুত হোক বা না হোক, আল্লাহ যা নির্দেশ করেছেন, যে তার সেই নির্দেশের অনুগামী হয় সেই মুসলমান।
হে আল্লাহর মেহমানবৃন্দ! আমরা সকলেই জানি যে, আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য এই দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আমাদের নিঃশ্বাস বায়ু সীমিত। সকল জীবকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। এই জন্য আমাদের উচিত হলো, আমাদের এই সীমিত সময়কে সবচেয়ে ভালো কাজে ব্যয় করে, এই দুনিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
(খ)
ইমাম ও আলেমদের উদ্দেশে আব্দুর রহমান আস সুদাইস বলেন, আমরা নবী মোহাম্মদ (স.) এর উম্মত। আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি, ভুলে গেলে চলবে না। মানুষকে দ্বীনের পথে আনতে হবে সুন্দর হৃদয় দিয়ে। বল প্রয়োগ করে ধর্ম প্রচার করা যাবে না। উগ্রতা পরিহার করতে হবে। ইসলাম প্রচারে সব মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে।
খতিব বলেন, আরব-অনারবের কোনো পার্থক্য নেই। জাতি ও দেশ ভেদের পার্থক্য ইসলাম সমর্থন করে না। এটা নবীর শিক্ষা। তিনি এখানে দাঁড়িয়ে এটা বলেছিলেন।
তিনি আরও বলেছেন, মুসলমানরা এক অঙ্গভুক্ত। একজনের থেকে আরেকজনকে আলাদা করার সুযোগ নেই পরস্পরের প্রতি দয়া ও ভালবাসা প্রদর্শন করতে হবে। পরস্পরের মঙ্গল কামনা করতে হবে।
বয়ানে তিনি, নির্যতিত ফিলিস্তিন, ইরাক, ইয়ামেন মুসলমানদের জন্য দোয়া করেন এবং মুক্তি কামনা করেন।
‘মুসলমানরা ভাই-ভাই। আমাদের সেভাবে চলতে হবে। ইসলাম মানবতার ধর্ম, সহানুভূতির ধর্ম। ইসলাম গ্রন্থিত হয়েছে ন্যায় বিচার দ্বারা, সততা দ্বারা ও ভালো ব্যবহার দ্বারা। এটা আমাদের মানতে হবে। আপনারা এটা মানবেন, আপনারা নিরাপদ ভূমিতে যেভাবে চলছেন হজ পরবর্তী জীবনে সেভাবেই চলবেন’।
যুবকদের জন্য তিনি বলেন, ইসলামের প্রচার ঘটেছে তোমাদের মতো যুবকদের হাত ধরে। তোমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি সেটা ভুলবে না। যৌবনে গা ভাসিয়ে চলবে না।
(গ)
পুরো খুতবায় ধর্মীয় উগ্রতা ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান নতুন খতিব আব্দুর রহমান আস সুদাইস।
আরবকে নিরাপদ নগরী উল্লেখ করে এর নিরাপত্তা যেন অটুট থাকে, সে দোয়া করেন তিনি।
ভাষণে আব্দুর রহমান আস সুদাইস আরও বলেন, আজকের দিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে এ দিবসের তাৎপর্যের নানা দিক তুলে ধরেন।
স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় খুতবা শেষ হয়।
তিনি সুন্নতের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন এবং হজ পরবর্তী চার দিনের কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে বলে দেন।
সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, ভালো কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করবেন। আল্লাহর ইবাদতে বেশি সময় কাটাবেন, নামাজকে গুরুত্ব দেবেন। নবীর প্রতি দরূদ পড়বেন তার শাফায়াত প্রত্যাশা করবেন।
বয়ানে তিনি ইসলামের চার খলিফার নাম উল্লেখ করেন এবং তাদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
ভাষণের শেষ অংশে দোয়ায় তিনি বিশ্ব শান্তি কামনা করে মুসলমানদের ঐক্য প্রত্যাশা করেন। আত্মশুদ্ধি কামনা করেন। আল্লাহর গুণবাচক নিয়ে নিয়ে মানবতার মঙ্গল কামনা করেন। এসময় কান্নার আওয়াজ শোনা যায় আরাফার মাঠ থেকে।
দোয়ায় তিনি নবীর দেখানো পথে চলার শক্তি কামনা করেন। উপস্থিত হাজিদের জন্য আল্লাহর দরবারে কবুল হজ কামনা করেন। হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য দোয়া করেন। সমগ্র বিশ্বের কবরবাসীদের মাগফিরাত কামনা করেন।
খুতবায় তিনি সৌদি হাজীদের উন্নয়নে গৃহীত সৌদি সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে তিনি বাদশাহর সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন ও দোয়া প্রার্থনা করেন।
এ সময় সাবেক খতিব শায়েখ আব্দুল আজিজকে মসজিদে নামিরার সামনের কাতারে চেয়ারে বসে বয়ান শুনতে দেখা গেছে।
সৌজন্যে- বাংলানিউজ