বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:৫৩
Home / খোলা জানালা / স্বীকৃতির মূলা যখন আশি টাকা তুলা প্রেক্ষাপট কওমি এবং ডকট্রিন অব নেসেসিটি

স্বীকৃতির মূলা যখন আশি টাকা তুলা প্রেক্ষাপট কওমি এবং ডকট্রিন অব নেসেসিটি

13627143_1141059719285269_1337169611598537323_nরশীদ জামীল:
(এক)

ঐতিহ্যের ললাট যদি বাঁধা থাকে নতজানু পরনির্ভর মলাটে, আত্মোপলব্দি দগ্ধ হয় যদি বিদগ্ধর বিস্মৃতিতে, স্মৃতি যদি ভীতি হয়ে ভুলে যায় স্থিতি আর ভেসে থাকে খড়কুটে, সিংহের শাবক যদি ভেড়া পালে মিশে যেয়ে ভুলে যায় গর্জন, হারিয়ে তো যাবেই তবে যা কিছু অর্জন। এখন যারা বীরপ্রসবা তীরন্দাজের পরম্পরা, কাছে থাকা কিংবা দূরে পরস্পরা, বিচিত্র কোন পুলক বোধে মনের সুখে শোকগুলোকে সিক্ত করে জড়িয়ে আছেন, তা জানি না। ইচ্ছে করে…

ইচ্ছে করি বন্দী করি সময় সাথে সন্ধি করি
বোধগুলোকে দিই জাগিয়ে,
খামখেয়ালির আসন ছেড়ে ভ্রমহেয়ালির পর্দা ফেড়ে
জড়তাকে দিই ভাগিয়ে।

হয়ে ওঠে না। ঘুমন্তকে জাগানো যায়। জেগে ঘুমালে সাধ্য কার যে জাগাতে পারে! যা ছিলো গর্বের, গড্ডালিকাপ্রবাহীদের দাম্ভিকতা খর্বের, আর বীরত্বগাথা, সেই মহিয়ানি মত্ততা স্বেচ্ছাচারী তপ্ততায় নিভন্ত দীপ হয়ে দাপাদাপি করছে। সাত্তিক সলিতাগুলো নালিতা শাকের মতো হেলে-দুলে পড়ছে। আকাশ ছোঁয়া মাথাগুলো ঝুঁকে আছে আজ, মলিত দলনীতে মাড়িত হয়ে নোংরা ধুলোয়। হেরে গেছে এহসাস আনানিয়্যাতের অহমে। তা’জিমানা নজরেরা আগ্রহী হয়ে ওঠছে ইউ টানে, নেই সেটা ফহমে। যে কারণে আজ পারষ্পরিক দূরত্ব। আর তাই স্বীকৃতির ঝুলানো মূলাও এখন আশি টাকা তুলা! অবাক হবার কিছু নেই। খামখেয়ালি যদি জয়ী হয়, অধিকার ক্ষয়ী হয় নেমে আসে দুর্ভোগ কর্মফলের আবরণে

অলসতার আর খামখেয়ালির কাছে আত্মসমর্পণ করার অর্থ স্বেচ্ছায় নিজেদের অধিকার হতে বঞ্চিত হওয়া। নিঃষ্পৃহ অবিলাস বিসাদের কারণ হয়। দেয়লের বাঁকে বাঁকে থেকে যায় ছিদ্র। সুযোগ পায় ছিদ্রান্বেষীরা, ছলাকলা করে ঐতিহ্যের কফিনে পেরেক ঠুকার। হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর আজ নেমে এসেছে খড়গ। নিস্পৃহাকে দায়ী করলে ভুল হবে?

কওমি শিক্ষা বোর্ডগুলো কওমি নীতির মোড়কে ইক্বরার আলোকে একটি সার্বজনীন শিক্ষানীতি প্রণয়ণে ব্যর্থ হয়েছে বলেই আজ আপাঙক্তেয়রা সুযোগ পেয়েছে মাসির দরদ দেখাবার, এ কথা কি অস্বীকার করার উপায় আছে? অন্তত এই অর্থে সরকার তে একটি ধন্যবাদ পেতেই পারে। ভাল হোক মন্দ হোক ৩৬ পৃষ্ঠার একটি ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষা নীতিমালা’ তারা তৈরি করে দিয়েছে। এ থেকে যদি কওমি কর্ণধারদের চেতনার জানালা থেকে পর্দাটি সরে! বোধ যদি একটুখানি নড়ে! তাঁরা যদি ভাবেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা কেনো ভাবছি না! আমরা কেনো একটি কমপ্লিট নীতিমালা তৈরি করতে পারছি না! আর যদি, আমাদের মতো করে তাদের কানেও যদি স্বপ্নভাঙার শব্দ বাজে, তলিয়ে যাবার স্রোত যদি থেমে যায়, স্তূত যদি নেমে যায়, কপালটা ঘেমে যায়, রেষারেষি পাশে রেখে হাতে আসে হাতে, তবে কওমি আঙিনার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারে, এমন সাধ্য নেই কারো। আর অসাধ্য সাধিত যদি হয়ে যায় কারো দ্বারা, সেই চোখ উপড়ে ফেলতে দেরি হবে না এক তিল সময়ও।

স্বীকৃতি’র মূলা ঝুলিয়ে কওমি ঐতিহ্যের ঘাড়ে চলছে রাষ্ট্রীয় কোপাকুপি। সরকারি মাঠে স্বীকৃতি নিয়ে আজ শুরু হয়েছে খেলা। বঞ্চিত বিমনাদের বিভাজিতি ঝেড়ে ফেলে জেগে ওঠবার নাম নেই! তাহলে কি লক্ষ লক্ষ সন্তানের তাদের কাছে দাম নেই!

মনে করি আছে। মনে করা যদি ভুল না হয় তাহলে পেছনে তাকাবার আর কোনো স্কুপ নেই। ভুলে গেলে ভুল হবে খারাপ আবহাওয়ার কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ আছে খেলা। ছাইপাশ ইখতেলাফে যদি বয়ে যায় বেলা, কবে আবার যখন শুরু হবে, ফলাফল যে কী হবে, সহজেই অনুমেয়। তাই বলি, এখনো ফুরিয়ে যায়নি সময়। চেতনারা ফিরে পাক সময়ের সন্ধান, ভেঙে যাবার আগে আগে স্বকীয়তার দান্দান, আর ঠিক সেদিকেই চেয়ে আছে অসহায় এক খান্দান।

কেন এই বঞ্চিতি?
আলস্য খামখেয়ালি যদি জয়ী হয়, অধিকার তখন রূপ নেয় অনধিকার চর্চায়, কিচ্ছু করার থাকে না। ফলে…

… ফলে মাত্র আট মাস বাইশ দিন যুদ্ধ করে কেউ যেখানে মুক্তিযোদ্ধা, তিনশ বেয়াল্লিশ বছর যুদ্ধ করেও অনেকের কিছু আর হয়ে ওঠা হয় না! পোড়-খাওয়া সেই যারা ১৯০ বছর ধরে লড়ে গেলো বুদ্ধি-ভিত্তিক কায়দায়, সর্বস্ব লুটিয়ে দিলো মা মাটি আর মানুষের জন্যে, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও, নির্যাতনের নির্ঘণ্ট মাড়িয়েও যারা গেয়ে গেলো মুক্তির গান, তাঁরা আজ কেউ না! তাদের উত্তরসূরিরা আজ স্বাধীন বোধের অন্তরায়! কথা তো কেবল সেটা না। কথা হল …

… কথা হলো, দাবদাহী গ্রীষ্মের অতিষ্ণ তৃষ্ণায় পানি পানি চিৎকার আর বীরাঙ্গনা শীৎকারে নাভিশ্বাসী ভূপতিরা পেয়েছিল বিশ্বাস যে কারণে, যন্ত্রণার ছলো ছলো বর্ষায় আর জালিমীয় ঈর্ষায় ভেসে যাওয়া সুখগুলো পেয়েছিলো ভেলা, ভেসে থাকা যাবে যাতে, কাশ-বাগান উজাড় ছিল, শরতের শিউলিরা গলাকাটা মুরগির মত ছটফট করছিলো শেষের সূচনায়, পশ্চিমা দানবীয় অসুরীয় আশীবিষে দূষিত বাতাস যখন পেয়েছিলো বাতায়ন, বাষ্পায়িত স্থানান্তরের হৈমন্তী আবাহনে, কণকণে ঠাণ্ডাত থরো থরো কাঁপুনিতে হিমাচলে অচল হওয়া শীতের পাখিরা যখন মেলেছিলো ডানা যাদের কারণে, আর ফুটেছিলো ফুল সর্বস্ব খোয়ানো বসন্তের কৃষ্ণচূড়ায়, যন্ত্রণার পাহাড় কেটে খাল করে, খালকেটে নদী করে অস্থি’র লবণঝরা মেহনতে মুক্ত করা সেই, শ্রাবণের সন্ধ্যাটুকু সেই, সেই তারা, যাদের রক্তে এখনো মুক্তির অববাহিকা বয়ে চলে।

সরকারকে মনে করিয়ে দিই, যাদের রক্তে এদেশ গড়া, এ দেশ মানে আসল মাটি, যে মাটিতে ভিত রচিত, তাদের যারা উত্তরসূরী, মুক্ত-স্বাধীন স্বত্বভূমের মূল ওয়ারিসান, এরা কিন্তু খেলনা নয়, উড়িয়ে দেবার ফেলনা নয়। পাথর গায়ে নরম মাথা টুকতে নেই। পাথর থাকে যেমন ছিল মাথাটির আর খোঁজ মিলে না! জানলে ভাল, না জানলে আরো ভাল। জানলে ব্যথা নাশকে পার পেয়ে গেলেন, মাথাটা থাকলো। আর না জানলে… ল্যাংড়া মশার বংশ তো আর নিঃবংশ হয়ে যায়নি! নমরুদীয় পরিণতি কপালে যদি লেখাই থাকে, কার সাধ্য আছে বদলাতে পারে!

যাদের কথা বলতে চাই,
যাদের ত্যাগে এদেশ পেলাম-

যারা ছিলেন বলেই ফেরা দুগ্ধ শিশু মায়ের কোলে
যারা ছিলেন দানব ঘাতী আঘাত ছিলো শেকড় মূলে
মার খেয়েও সামনে বাড়া, আয় দেখি আয় মারবি কত
রক্ত খাবি, যা খেয়ে যা দিচ্ছি বুকের বোতাম খুলে।

যাদের ভয়ে কাঁপত ওরা, ওরা মানে চামড়া সাদা
সিংহ রূপে রাজ করেও বনতে হলো নিরেট গাধা
পালিয়ে ছিলো যখন তারা লেজকাটা শেয়ালের মতো
বিশ্ববাসীর কাছে যেটা আজও একটা বিরাট ধাঁ ধাঁ।

যারা ছিলেন বলেই ওরা পায়নি খুুঁজে শক্ত মাটি
যে কারণে চূর্ণ হলো আগ্রাসনের দম্ভ ঘাটি
সেই তারা আজ উপেক্ষিত বঞ্চনাতেই তৃপ্ত হয়ে
অংক কষেণ খানকা খুলে কার চেয়ে কে বেশি খাটি!

এই সুযোগে আপনি যদি মত্ত থাকেন কথ্য গানে
প্রতারণার এসিড যদি ঢালতে থাকেন এদের কানে
ভাবেন যদি ধ্বংস করে দেবেন কওমি আঙিনাটি
লাভ হবে না এরা কিন্তু হেসে হেসে মরতে জানে।

দায় কার?  ————- দায়ের দায়িত্ব নিয়ে পুরান কথা নতুন করে।
আবার হবে আস্তে-ধীরে————- ক্রমশ

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...