বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৬:০২
Home / অনুসন্ধান / হাউজ অফ উইজডম – মুসলমানদের হারানো গর্ব

হাউজ অফ উইজডম – মুসলমানদের হারানো গর্ব

লিখেছেন: ওয়ারিশ আজাফ নাফি:

hadith-books কমাশিসাহাউজ অফ উইজডম বা বায়েত আল হিকমা ইসলামের স্বর্ণযুগের সম্ভবত সেরা কীর্তি। খলিফা হারুণ আল রাশিদ ৮০০ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে তার স্বপ্নের বায়েত আল হিকমা নামে এই লাইব্রেরী এবং গবেষণা কেন্দ্রটি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে উনার ছেলে খলিফা আল মামুন এটিকে নিয়ে যান এক অনন্য উচ্চতায়।

খলিফা হারুন আল রশীদ হাউজ অফ উইজডম স্থাপন করে আমন্ত্রন জানান গ্রীক, ইজিপশিয়ান ,ইন্ডিয়ান পন্ডিতদের্। ধর্মের কোন ভেদাভেদ তিনি করেন নাই। ততকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ মুসলিম স্কলারদের তিনি এক ছাদের নীচে নিয়ে এসে হাতে ধরিয়ে দেন সক্রেটিস ,প্লেটো ,এরিস্টটল, ইউক্লিড ,এরিস্টার্কাস,টেলেমির যাবতীয় গবেষনার প্যাপিরাস, পার্চমেন্ট। নির্দেশ দেন যতটা সম্ভব জ্ঞ্যান আহরণ কর, গবেষনা করো। জ্ঞ্যানের কোন বিকল্প নেই। শুধুমাত্র মুসলমান না খ্রিস্টান ,ইহুদী যেকোন ধর্মের দার্শনিক ,বিজ্ঞ্যানী হাউজ অফ উইজডেমে স্বাগতম ছিলেন।

এমন কি বিজ্ঞানীদের যাতে কোন অর্থকষ্ট না হয় তার জন্য তিনি সর্বোচ্চ বেতন ভাতা নির্ধারণ করেন। তিনি বলতেন
” সৈনিকরা হয়ত বাগদাদ কে রক্ষা করবে কিন্তু হাউজ অফ উইজডমের বিজ্ঞানীরাই বাগদাদকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম শহর হিসেবে অধিষ্ঠিত করবে। ”

প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই বায়েত আল হিকমা হয়ে উঠে দর্শন ,সমাজবিজ্ঞান ,গণিত , কেমিস্ট্রি ,মেডিকেল সায়েন্সের শ্রেষ্ঠতম গবেষণার স্থান। একের পর এক অনুবাদ হতে থাকে গ্রীক ,মিশরীয় ,সংস্কৃত গবেষণাপত্র। খলিফা নিজের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন দেশ থেকে বই ,রিসার্চ পেপার সংগ্রহ করে হাউজ অফ উইজডমে জমা করতে থাকেন।

৯০০ শত খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি বায়েত আল হিকমা বা হাউজ অফ উইজডম হয়ে উঠে পৃথিবীর সর্ববৃহত,সবচাইতে সমৃদ্ধ লাইব্রেরী এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা একাডেমিক সেন্টার ফর এক্সিলেন্স হিসেবে।

হাউজ অফ উইজডম থেকেই বিখ্যাত গণিতবিদ আল খারিজমি তার এলজেব্রা বা বীজগণিতের উপর তার বিখ্যাত প্রকাশনা ” “কিতাব ই আল জাবর” বের করেন যার থেকে আজকের এলজেব্রা বা বীজগণিতের জন্ম। আল খারিজমি কে বলা হয় ফাদার অফ এলজেব্রা।

পদার্থিবিজ্ঞ্যানী আল মুসা এখানে গবেষণা করে ইউনিভার্সিলিটি ইন দা লজ অফ ফিজিক্স এর উল্লেখ করেন। তিনিই সম্ভবত প্রথম ব্যাক্তি যিনি এটির উল্লেখ করেন।

মোহাম্মদ মুসা তার দুই ভাইকে নিয়ে প্রকাশ করেন ইঞ্জিনিয়ারিং জগতের লেজেন্ডারি গবেষণা পত্র ” বুক অফ ইনজিনিয়াস ডিভাইসেস। ”

মেডিকেল সায়েন্সে স্মলপক্স ,সার্জারি নিয়ে চলে যুগান্তকারী গবেষণা যেগুলো পরে ইতালিয়ান রেনেসাতে প্র্যাক্টিকালী ইউজ করা হয়েছে। এছাড়াও অপটিক্সের আজকের অগ্রগতির শুরুটা হয়েছিল এখান থেকেই

খলিফা আল রাশিদের ছেলে আল মামুন করেন আরেক পাগলামী। তিনি টলেমির অভজার্বেসনশ এর সত্যতা প্রমাণ করতে নির্মাণ করেন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ( Astronomical Ovservatory) । সেখানে মহাকাশ বিজ্ঞ্যানী ,গণিতবিদেরা টলেমির অভজার্বেশন কে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করেন।  আল মামুনের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমান ভূতত্ত্ববিদেরা সৃষ্টি করেন সে আমলের সবচাইতে ডিটেইলড ওয়ার্ল্ড ম্যাপ।

হাউজ অফ উইজডম বা বায়াত আল হিকমার বিজ্ঞ্যানীরা জ্ঞ্যান বিজ্ঞ্যানের জগতে এতো বেশী অবদান রেখেছেন যে লিখতে গেলে সেটা কয়েকটা বইয়ে শেষ করা যাবেনা। ১২০০ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গোলদের বাগদাদ আক্রমনে হাউজ অফ উইজডম ধ্বংস হয়। ঠিক যেমন পরিণতি হয়েছিল লেজেন্ডারি আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরীর পুড়ে যায় লাখী গবেষণাপত্র ,মূল্যবান বই  এই হইল ইসলামের স্বর্ণযুগে মুসলমানদের বিজ্ঞ্যান চর্চার ছোট্ট একটা নমুনা। এত কথা বললাম এই কারণে  যে মুসলিমরা এল জেব্রা আবিস্কার করেছিল ,টলেমির অবজার্বেশনের বিশ্লেষণ করেছিল ,গ্রীক ইজিপশিয়ান প্যাপিরাসের অর্থোদ্ধার করেছিল, এরিস্টটল ,টলেমি ,সক্রেটিস ,প্লেটোরা বিধর্মী হলেও তাদের রেখে যাওয়া জ্ঞ্যান আহরণ করেছিল
সেই মুসলমানেরা আজকে ফেসবুক পেজে আমিন না দিয়ে যাবেন না বলে লাইক ভিক্ষা করে। হোয়াট আ শেম!
From post of Saimum Sadi

লিখেছেন: ওয়ারিশ আজাফ নাফি

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...