শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:৩০
Home / কওমি অঙ্গন / দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা কারিকুলামের প্রকৃতি

দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা কারিকুলামের প্রকৃতি

azharকাজি মুহাম্মাদ হানিফ : বস্তুত: দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করার পেছনে এর প্রতিষ্ঠাতাদের উদ্দেশ্য কী ছিল তা প্রনিধাণযোগ্য। এ ক্ষেত্রে দেওবন্দের আকাবিরগণের যে মনোভাব ছিল তা হলো: ‘ইংরেজরা আমাদের রাজ্য নিয়ে গেছে। এখন আমাদের ধর্ম ও ধর্মীয় জ্ঞানও ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। রাজ্য তো রক্ষা করতে পারলাম না। অতএব ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধর্মীয় জ্ঞান রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হোক। যেন মুসলমানরা ব্যক্তিগতভাবে দীন ও ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে। ধর্মীয় জ্ঞানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। তাহলে এক সময় এর মাধ্যমে কর্মীবাহিনী তৈরি করে স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা করা যাবে।’ নিঃসন্দেহে বলা যায় এ মনোভাব সময়োপযোগী ছিল। এ কারণে দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাসে ধর্মীয় বিষয়াবলির প্রাধান্য ছিল। একটি ইসলামি আধুনিক রাষ্ট্র বা প্রচলিত সেক্যুলার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যেসব জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী ক্যাডার, সচিব, আমলা বা কর্মকর্তার প্রয়োজন হয় সেসব জ্ঞান-বিজ্ঞান পাঠদানের ব্যবস্থা এখানে ছিল না। কেননা দারুল উলুমের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে সরকারি কোনো চাকরি গ্রহণের মানসিকতা ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দীনি ইলমের সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ। এ উদ্দেশ্য পূরণে এর সফলতা অনস্বীকার্য। এ শিক্ষা ব্যবস্থা একসময় এ উপমহাদেশে নীরব অথচ প্রচণ্ড বিপ্লব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। এ শিক্ষাক্রম উত্তীর্ণ হয়ে এমন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছিলেন যারা শুধু এ উপমহাদেশকে নয় বরং প্রাচ্য ও প্রতীচ্যকে বিস্মিত ও হতবাক করেছিলেন। তারা শুধু আক্ষরিক জ্ঞানেই সমৃদ্ধ ছিলেন না বরং থিউরিক্যাল জ্ঞানের সফল বাস্তবায়নে ছিলেন অনুপম দৃষ্টান্ত । তারা ছিলেন এখলাস , নিষ্ঠা , পরোপকার ও আদর্শিক গুণাবিলীর মূর্ত প্রতীক। আবার তীক্ষ্ন ও সুগভীর এলেমের অধিকারী। দারুল উলুম মূলত যে কারিকুলাম অনুসরণ করেছিল তাকে দরসে নেজামী বা নেজামী শিক্ষা ব্যবস্থা বলা হয়। মোল্লা নেজামুদ্দীন শহীদ সেহালভী সমকালিন চাহিদানুসারে যে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস ও পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করেন সেটাই দরসে নেজামী বলে পরিচিত এবং উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছিল।

একটি আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা ও কারিকুলাম কেমন হতে হবে?
দরসে নেজামি ছিল শিল্পবিপ্লব ও আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার গোড়াপত্তনের আগের আমলের শিক্ষা কারিকুলাম। এর মাধ্যমে কেবল ধর্মীয় জ্ঞানের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল কিন্তু একটি আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্রের ও এর নাগরিকদের সবধরনের চাহিদা এর দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়। ইংরেজশাসিত পরাধীন ভারতে ধর্মীয় জ্ঞানের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সমকালে এর উপযোগিতা অবশ্যই ছিল। কিন্তু ইংরেজরা এ দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর মুসলমানরা যখন স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করলো তখন সে সাময়িক কারিকুলাম দরসে নেজামির উপযোগিতা আর অবশিষ্ট ছিল না। তখন দরকার ছিল দীন ও দুনিয়াবি জ্ঞানের সমন্বয়ে একটি ব্যাপকভিত্তিক ও সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করা যে শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলিম নাগরিক ফরজে আইন পরিমাণ ইলম অর্জনের পর কেউ আলেম হবে, কেউ মুফতি হবে, কেউ বিচারক হবে, কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হবে, কেউ সচিব হবে, কেউ প্রফেসর হবে, কেউ ব্যবসায়ী হবে, কেউ কৃষিবিদ হবে, কেউ নাবিক হবে হবে, কেউ পাইলট হবে, কেউ সৈন্য হবে, কেউ পুলিশ হবে ইত্যাদি। দীন ও ‘দুনিয়াবি’ খেদমতের একেক ক্ষেত্রে একেকজন কাজ করবে। এখানে দুনিয়াবি বলতে আক্ষরিক অর্থে দুনিয়াবি বুঝানো হয়েছে। নতুবা মুসলমানের সব কাজই তো দীনি কাজ।

দীনি ও দুনিয়াবি ইলমের বিভাজন কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
এ প্রসঙ্গে হজরত মাওলানা মুফতি মাহমুদ রহ. বলেছেন: ‘দীন ও দুনিয়ার শিক্ষা যেদিন থেকে বিভাজিত হয়েছে সেদিন থেকে উম্মাহর দুর্ভাগ্য শুরু হয়েছে।’ আর সমকালিন মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ সাহেবের ভাষায়: ‘বস্তুত আসমানি ইলম ও দুনিয়াবি ইলম নামে আলাদা দুটি জিনিসের অস্তিত্ব শরিয়তে নেই।
সুতরাং উম্মাহ যদি বিশ্বের জাতিবর্গের মাহফিলে মর্যাদা ও নেতৃত্বের আসন লাভ করতে চায় তাহলে আসমানি ও নববি ইলমরূপেই ‘সবকিছুর’ শিক্ষা অর্জন করতে হবে। এবং মাদরাসাতুছ্ছুফ্ফার সিলসিলার ধারক ও বাহক যে ওলামায়ে কেরাম তাদের কাছ থেকেই সে শিক্ষা লাভ করতে হবে।’

২৬-০৮-২০১৬ তারিখে প্রদত্ত লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...