শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:৪৮
Home / কওমি অঙ্গন / কওমি সনদের স্বীকৃতি কেন চাই না? সরকারের করণীয় তাহলে কী ?

কওমি সনদের স্বীকৃতি কেন চাই না? সরকারের করণীয় তাহলে কী ?

রোগাক্রান্ত অসহায় মৃতপথযাত্রী রোগীকে জিজ্ঞেস করে করে অষুধের ফর্মুলা না দিয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সুস্থ ডাক্তারের পরামর্শে কাজ করা উচিত বলে অভিজ্ঞ  মহলের পরামর্শ

খতিব তাজুল ইসলাম :

14055738_515962405281440_1774134480_nহাফিজ আসাদ সাহেব। পাকিস্তান বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সেক্রেটারি জেনারেল । হানিফ জালান্দারি সাহেবের স্ত্রীর ছোট ভাই সম্পর্কে শ্যালক। ঘরে এনে পেটভরে ভাতের দাওয়াত খাওয়ালাম। রাতে পেটে ব্যথার কথা বললেন ফোনে। কেন ভাই? এই যে ভাত দিয়ে উদর ভরালেন। বললেন এতো চাউল পুরো মাসে খওয়া হয়নি যা আপনি এক বসায় খাওয়ালেন। বললাম আসাদ ভাই! এতটুকু চাউলতো আমরা রোজ দুপুরের খাবারে খাই। ভাবলাম কয়েক ওয়াকত যদি একাধারে রুটি খাওয়া হয়ে যায় তাহলে বাংগালি হিসাবে আমার অবস্থা খারাপ। অথচ সেই আসাদ সাহেব জীবনে একবার ভাত না খেলেও হয় কেবল রুটি ছাড়া চলে না। একই রক্ত গোশতে শরির। কারো ভাত সয় না কারোবা রুটি। ঠিক তেমনি ভাতে-মাছে বাংগালি। অনেক সমাজ নিয়মিত মাছ খেতে পারে না আমাদের মতো।

আচ্ছা আমরা স্বীকৃতি চাই না। কেন চাই না তার বড় বড় ব্যাখ্যা আছে। স্বীকৃতি হলে কওমি আলিয়া হবে। দীন থাকবে না।সুন্নাত চলে যাবে।আলেমগণ কর্তৃত্ব হারালে কওমি স্কুল থেকেও খারাপ হবে। সরকার স্বীকৃতির কথা বলে মুলো দিবে। আরো কতো কিছু। আমি তার সরল ব্যাখ্যায় বলবো মূলতঃ এটা আমাদের অভ্যাসের দোষ।কওমি ছাড়া বোধহয় বিশ্বের আর কোন মুসলমান দেশ নেই ? কওমি মানে ইসলাম ইসলাম মানে কওমি? কওমির আগে এ বিশ্বে ইসলাম ছিলো না? কওমির পরে হয়তো ইসলাম আর থাকবে না?

আরেকটু খুলে বলি। আজ থেকে প্রায় ২৩ বছর আগে আব্বা আম্মা দাদী ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে লেখা-পড়ার খাতিরে সিলেট শহরে চলে আসেন। আমি ছিলাম দেশের বাহিরে। শহরের পরিবেশে দাদী সপ্তাহ তিনেক পর প্রায় মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। একটু পরপর বলেন অজু করতে পুকুরে যাবেন। কিছুক্ষণ পর পর গাট্টি গোল করেন বাড়িতে যাবেন বলে। এভাবে ঘর বাহির পুকুর করতে করতে শেষ পর্যন্ত আব্বা কিছু দিনের জন্য দাদীকে নিয়ে বাড়িতে গেলেন যে দেখা যাক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় কি না। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের যে দাদী আর সুস্থ হলেন না। মানসিক রোগটা স্থায়ী হয়ে গিয়েছিলো আমাদের এই ভুলের কারণে।

কওমি সনদের স্বীকৃতি হলে কোন যে বিপদ আসবে এই একটা আশংকা! সরকার থেকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা থাকতে থাকতে মন মেজাজে রক্তে গোশতে আমরা উপজাতির মতো হয়ে উঠেছি। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিদের দাবী হলো আমাদেরকে আমাদের মতো করে থাকতে দাও। জুম চাষ আর জংগলের ফলমুল খেয়ে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় বাইরের উন্নত পরিবেশকে ভয় পায়। মাচানের উপর বসাবাসকেই তারা রাজকীয়তা অনুভব করে। এই যে চলে আসা রীতিনীতি কিছুতেই হেলাফেলার নয়। অনেকে জীবন কোরবান করে দিতেও প্রস্তুত। কওমির বর্তমান সিস্টেমের কথা না কোরআনে আছে, না আছে হাদীসে। বরং নিজের চলে আসা এই ধারাবাহিকতাকে কোরআন ও সুন্নাহর মতো করে দেখাতে মরিয়া। আমি যদি বলি মুসলমানদের রাষ্ট্র ছিলো, আমীরুল মু’মিনীন ছিলেন। রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ এসব দেখাশোনা করতো। কিন্তু এখন আপনি কেন নিজের কাছে রেখে গোষ্ঠীগত ভাবে এসব দেখাশোনা করতে চাচ্ছেন?

বস্তুত কওমি ব্যবস্থা আমাদের দিয়েছে অনেক। তার শুরুটা ছিলো ভিন্ন ও অনেক উন্নত। কাটছাট করতে করতে শেষ পর্যন্ত আরেম নন এমন একজন নেত্রী বলতে বাধ্য হলেন যে ‘আপনারা নুন্যতম একটি কারিকুলাম নিয়ে আসেন, স্বীকৃতির জন্য যা দরকার’। আচ্ছা আমাদের আল্লামারা ভদ্র মহিলার এই কথার জবাবে কিছু বলছেন না কেন?

আমরা আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে পারবো তারা এক হবেন না কখনো। ন্যুনতম কারিকুলাম করতে যাবেন না । কারণ সে যোগ্যতাও নেই তাদের মাঝে। যারা উর্দু তা’লিমুল ইসলামকে এখনো বাংলায় তরজমা করে পড়ান। সীরাতে খাতিমুল আম্বিয়া এখনো সেই উর্দু থেকে বাংলায়। তারা নিজস্ব ভাষায় নিজের মতো করে এখনো একটা তা’লিমুল ইসলামের বিকল্প সিরাতে খাতিমুল আম্বিয়ার বিকল্প দিতে অপারগ; তারা আবার ন্যুনতম সিলেবাস দেবেন বা সংস্কারে মত প্রকাশ করবেন ! হাস্যকর অবাস্তব অকল্পনীয়।

বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্যে পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই যে, কে কী বললো বা বলবে তার তোয়াক্কার কোন প্রয়োজন নাই। কওমিতে হাত লাগানোর দরকার নেই। শুধু একটা আইনের দরকার। শক্ত একটা ফরমান যে, যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে প্রাইমারি হলে ন্যুনতম এই কারিকুলাম। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক হলে নুন্যতম এই কারিকুলাম। বাংলা অংক বিজ্ঞান ইংরেজি ভুগোল ইতিহাস। এই ভাবে ৫-৬টা সাবজেক্ট দিয়ে ঘোষণা দিয়ে দিন। ৬মাস একবছর সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন। তারপর কোর্টের অর্ডার জেল জরিমানা। যাদুর কাঠির চেয়ে আরো ভাল কাজ হবে নিঃসন্দেহে।

কারণ আমরা যা বলছি, জ্ঞানীরা যা বলছেন, তাকি উসমানি যা বলছেন, আবুল হাসান আলী নদভী রহ. যা বলছেন, শামছুল হক ফরিদপুরি রহ. যা বলছেন এসব বোঝা এবং মানার যোগ্যতা নিয়ে এই প্রজন্ম বেড়ে ওঠে নি। তাদের দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই। তাই রোগাক্রান্ত অসহায় মৃতপথযাত্রীকে জিজ্ঞেস করে অষুধের ফর্মুলা না দিয়ে অভিজ্ঞ সুস্থ ডাক্তারের পরামর্শে কাজ হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...