খতিব তাজুল ইসলাম : শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকে আঁতকে উঠবেন। বলবেন, পাগলে কিনা বলে !
চলুন তাহলে একটু গভীরে যাই। ইউরোপের খৃস্টান ধর্মিকরা যখন দেখতো কেউ ধর্মের বাইরে গিয়ে কিছু করছে বা ধর্ম কর্ম ঠিকমতো মেনে চলছে না, তখন তাকে বলা হতো লোকটি সেক্যুলার হয়েগেছে। খৃস্টধর্ম শাসিত সমাজে পাদ্রীরা ধর্মের কল ব্যবহার করতো মানুষকে বলাৎকার জুলুম নির্যাতন করার জন্য। একসময় গোটা সমাজ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে তাদের পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে। স্পেনের মুসলমানদের এভাবেই একদল মজলুম নিরীহ লোক খৃস্টাবাদের জুলুম থেকে বাঁচার জন্য এগিয়ে আসার আহব্বান জানিয়েছিলো। হয়েও ছিলো তাই। তারা জানতে পেরেছিলো মুসলিম সমাজে উঁচু-নিচু রাজা-প্রজার কোন বিভেদ নেই।
সে ধর্ম থেকে দূরে সরে গেছে। মানে সেক্যুলার হয়ে গেছে। যদিও বর্তমানে বাংলায় তরজমা করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। অর্থাৎ ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের লেনদেন থাকবে না। ধর্মিকরা থাকবে মন্দির প্যাগোডা গীর্জা আর মসজিদ মাদরাসায়।সংসদ চলবে, যেখানে থাকবে না ধর্মের ছোঁয়া । ভারত উপমহাদেশে আমাদের মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত ধারণা হলো- মসজিদ মাদরাসা খানকা ধার্মিকদের জন্য ধর্ম চর্চার জায়গা। অফিস আদালত ব্যাংক পুলিশ হাসপাতাল জনপ্রশাসন সবগুলো চলবে সেক্যুলার ব্যবস্থায়। অর্থাৎ ধর্মের প্রভাবমুক্ত।
মানুষ সত্যিই কি ধর্ম মুক্ত হয়ে চলতে পারে? ধর্ম হচ্ছে একটি বিশ্বাস। এই বিশ্বাস সে সব সময় লালন করে।ধর্ম হচ্ছে একটি সংস্কৃতি। মুসলমানরা হালাল খায় বিযে শাদি করে। রোজা রাখে নামাজ পড়ে ঈদ উদযাপন করে হজ্জ করে। পর্দা পুশিদা করে। তাই এইসব তো কেউ অস্বীকার করতে পারে না। ধর্মের প্রভাব সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে। যারা নাস্তিক তাদের কথা আলাদা। কারণ নাস্তিকের ধর্ম হচ্ছে আল্লাহকে বিশ্বাস না করা। সেও কিছু না কিছু আচার-বিহার লালন করে। তাই বলবো নাস্তিকের ধর্মই হলো নাস্তিকতা।
ইসলামের শিক্ষা হলো একজন মুসলমান তার জীবনের প্রতিটি বিষয় ইসলামের আলোকেই সাজাবে। সে ডাক্তার হোক ইঞ্জিনিয়ার হোক পলিটিশিয়ান হোক দার্শনিক হোক ইমাম মুহাদ্দিস মুফাস্সির মুফাক্কির যাই হোক তাতে কোন অসুবিধা নেই; জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে জীবনের প্রয়োজনে যা দরকার সবকিছু মুসলমানদের জন্য দরজা খোলা।চাই সে মঙ্গল গ্রহে যাক কিংবা চাঁদে যাক তাতে কিছু যায় আসে না।
কিন্তু কোন মুসলমান যদি ইসলামকে ‘ধর্মীয় কিছু বিষয়’ এভাবে আলাদা করে দেখতে শুরু করে। এবং জাগতিক শিক্ষা নামে জীবনের প্রয়োজনীয় শিক্ষাকে ভিন্ন ভাবে দেখে আর বলে- এগুলো দুনিয়ার শিক্ষা। মসজিদ মাদরাসার সাথে দুনিয়ার শিক্ষা মানায় না। তখন আমরা অকপটে বলতে পারি সেক্যুলার চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে আমাদের মসজিদ মাদরাসা কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায়। রাষ্ট্রথেকে ইসলামের (ধর্মের) শিক্ষাকে আলাদা করে প্রকারান্তরে আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি যে, ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত বিষয়।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদিদের দাবীই হলো ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়। রাষ্ট্র থাকবে সব জাগায়। সে পথ অনুসরণ করে আমরা আমাদের মাদরাসা শিক্ষা পরিসরকে এমন ভাবে সাজিয়েছি যেখানে ইসলামের নামে কেবল ফিকহী বিষয়কে প্রাধান্য দিই এবং তা নিজেদের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখি। এইসব প্রতিষ্ঠানকে আমরা রাষ্ট্রের অংশ ভাবি না। রাষ্ট্রের অংশ না বানাতে মরিয়া হয়ে ছুটি। লক্ষ লক্ষ লাশ পড়ারও ঘোষণা দিই। সাধারণভাবে সকলকে শিক্ষার সুযোগ এখানে দেই না। উপজাতির মতো কিংবা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতো সবকিছু আগলে রেখে একটা সীমারেখা একেঁ দিয়েছি। আর প্রকৃত অর্থে সেকুলার সমাজ তা-ই চায়। তারা চায় না ধর্মীয় শিক্ষালয় রাষ্ট্রের অংশ হোক।
সার্বজনীন পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা কিন্তু এই ধারা সমর্থন করে না। মতের ওপর মত থাকতেই পারে। আপনাদের সুচিন্তিত মতামত নিয়ে আসার আহব্বান জানাই।