প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের অন্যতম একজন। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, সুলেখক, সংগঠক, তুখোড় বক্তা ও শিক্ষাবিদ হিসেবে সমানভাবে সমাদৃত। শিক্ষাজীবনে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল ফাস্র্টক্লাস পেয়ে পাস করেন। ১৯৭৪ সালে সিলেটের কাজিরবাজারে জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া নামে একটি কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মাদরাসাটিকে দেশের সেরা কওমি মাদারাসার কাতারে নিয়ে আসতে সক্ষম হন।যুগোপযোগী শিক্ষার প্রয়োজনে একই সাথে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত একটি কিন্ডার গার্টেন এন্ড হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
গণমানুষের প্রয়োজনে ‘মারকাজুল খাইরী আল-ইসলামী’ নামে একটি দাতব্য সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে মুসলিমরীতিতে মৃতদেহের দাফন-কাফন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও অর্থিক সেবাসহ বিভিন্ন সামজিক সহায়তা পেয়ে থাকে।
২০১২ সালে ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশে খেলাফত মজলিসের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক মৃত্যুবরণ বরণ করার পরে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তে দলের আমির নিযুক্ত হন মাওলানা হাবিবুর রহমান। ব্যক্তি জীবনে প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান ইংল্যান্ড, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ভারত, পাকিস্তানসহ বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন। মওদুদি ফেতনাসহ নানান বিভ্রান্ত আকিদার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার লক্ষে তিনি বহু গ্রন্থও রচনা করেছেন। প্রিয়.কমের পক্ষ থেকে এই গুণী মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রিয় ইসলাম, প্রিয়.কমের এডিটর ইনচার্জ মাওলানা মিরাজ রহমান ও প্রিয় ইসলাম, প্রিয়.কমের কনটেন্ট রাইটার মাওলানা মনযূরুল হক।
প্রশ্ন: আপনি আজকাল কোন কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন? স্বাভাবিক কোন কাজ নিয়ে আজকাল সময় পার হয়?
উত্তর : আসলে শারিরিক ভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে বাইরের কোন প্রোগ্রাম রাখিনা। বাসা থেকে মাদরাসায় আসি, মাদরাসা থেকে বাসায় যাই। দারস ও তাদরিস ও লেখালেখি নিয়ে এখন বেশি সময় কাটাই।
প্রশ্ন: এ ছাড়া তো আপনি একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। সেখানে কোনো কর্মসূচী বর্তমানে আছে কি না?
উত্তর: আমাদের তো তাৎক্ষণিক কাজ কম হয় আমাদের বেশি গুরুত্ব নিয়মিত কাজের ওপর। যেমন- নিয়মিত মাসিক মিটিং। এটা কিন্তু সব সময় রেগুলার হয়ে আসছে। সেখানে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসেন। তারা কথাবার্তা বলেন এবং প্রয়োজনবোধে সবাই যদি কোনো কাজের প্রয়োজন অনুভব করেন, তখন তারা সময় বুঝে কোনো কর্মসূচী যদি আসে তখন সেটা আমরা পালন করার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: আমরা কাজির বাজার মাদরাসাকে বাংলাদেশের মধ্যে একটা মডেল কওমি মাদরাসা বলে জানি। আমরা দেখেছি, এটা আর দশটা মাদরাসার মতো না। যখন আপনি এই মাদরাসা শুরু করেন, ঠিক ওই সময় আপনার স্বপ্নটা কী ছিলো? কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি কাজিরবাজার মাদরাসা শুরু করেছিলেন?
উত্তর: তখন তো সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত অস্থিতিশীল একটি পরিস্থিতি চলছিলো দেশে। তখন দেশের যে অবস্থা ছিলো, ইসলাম থাকবে কি না- এ ধরনের একটা আশঙ্কা ছিলো । আমি লেখাপড়া করেছি একটা আলিয়া মাদরাসায়। তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো, যেখানে সরকারের কোনো চাপ থাকবে না, কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, স্বাধীনভাবে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবো।
প্রশ্ন: আলিয়া মাদরাসায় পড়েও কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করলেন…!
উত্তর: আলিয়া মাদরাসায় পড়েছি বলেই সেখানকার অবস্থাটা আমার ভালো জানা ছিলো। দেখা যেতো জোহরের নামাজের সময় আমি একাই আজান দিতাম, একাই নামাজ পড়তাম। এতো শিক্ষক-শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও দেখা যেতো অনেকেই নামাজে আসেন না, বা দেরি করে আসেন, বা একা একা নামাজ পড়েন। আমি তাই নিজেই আজান দিতাম। লজ্জা লাগতো না। সবাই আমাকে, বিশেষ করে ছাত্ররা এ নিয়ে মশকরা করতো— তুমি এখানের মুয়াজ্জিন নাকি? তুমি তো কামিলে (এমএ) পড়ো, আজান দাও তুমি? আমি বলতাম— ভাই, কামালতের কাজ করছি আমি। আজান দেয়ার মাধ্যমে আমি তো আরও বেশি ‘কামিল’ হলাম। অসুবিধা কি, নামাজ তো ফরজ। মাদরাসায় মুয়াজ্জিন নাই, তাই আমি আজান দিচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনার প্রিয় শিক্ষকদের দুয়েকজনের নাম বলতেন যদি?
উত্তর : শিক্ষক তখন ছিলেন, হজরত মাওলানা আব্দুল বারী সাহেব।
প্রশ্ন: ঢাকার কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ হয়েছে কি…
উত্তর : সুযোগ হয় নাই, মানে প্রয়োজন হয় নাই । কেননা, ঢাকা আলিয়া মাদরাসা ও সিলেট আলিয়া মাদরাসা সমান ছিলো । সারা দেশের দুই আলিয়া মাদরাসায়ই ছিলো সরকারি এবং সমস্ট্যাটাসের ।
প্রশ্ন: এখন যে আপনার মাদরাসায় একটা কিন্ডার গার্টেন এন্ড হাইস্কুল আমরা দেখছি, এটা কি সেই চেতনা থেকেই? যেহেতু আপনি আলিয়া মাদরাসায় পড়েছেন এবং কওমি মাদরাসা করেছেন— এই দুই শিক্ষার মধ্যে কি একটা সমন্বয় আনতে চাচ্ছেন ?
উত্তর: তেমন কোনো চিন্তা-ভাবনা নাই। আসলে কিন্ডার গার্টেন করা হয়েছে— আমাদের সমাজের বড় বড় ব্যবসায়ী-বুদ্ধিজীবী, উকিল-ডাক্তার আছেন, তারা মাদরাসা শুনলেই একটা অনীহা ভাব দেখান— আমার ছেলেকে মাদরাসায় পড়াবো? অনেকে মাদরাসা শুনলে ভয় পান পাশে না ছেলেটি বেকার হয়ে যায়। আর কিন্ডার গার্টেন শুনলে ভাবেন, এখানে জাগতিক শিক্ষার সমন্বয় আছে। ইংলিশ মিডিয়াম আছে, আরবি আছে তাতে তারা উৎসাহিত হন এবং সন্তানকে এখানে দিতে তৈরি হন। সমাজের এই ক্লাসের লোকদেরকে অনুপ্রাণিত করার জন্যেই করা হয়েছে। তবে দেখা যায় এখানে আসার পর তাদের মনোভাবে আমূল পরিবর্তন এসে গেছে। ইসলামের দিকে ঝুকেন আকৃষ্ট হন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে যে মাদরাসা শিক্ষাধারায় দুইটা পদ্ধতি চালু আছে, আলিয়া শিক্ষা-কওমি শিক্ষা— এই দুইটা শিক্ষাধারা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তর: সরকারি মাদরাসাগুলো নামে মাদরাসা হলেও কাজের বেলায় নাই। ধরুন নামাজের অবহেলা তারা করে। সে-সময় দেখা যায় ফুটবল খেলতে যায়, টিভি দেখে। অনেকে সেটাকে বলে— টিফিন আওয়ার, নাস্তার সময়। কত জঘন্য একটা ব্যাপার। এগুলি আমার কাছে খুবই নিন্দনীয় মনে হয় এবং খুবই কষ্ট হয় যে, জোহরের আজানের সময় আবার টিফিন আওয়ার হয় কী করে? এটা প্রেয়ার আওয়ার হওয়া উচিত। অনেক হিন্দু টিচারও দেখা যায় ইসলাম ধর্মীয় বিষয় আলিয়া মাদরাসায় পড়ান। তাহলে তার থেকে কী দীন শিখবে। রাসুল সা. বলেছেন— দীন কার কাছ থেকে শিখছো সেটা দেখো। এ দিক থেকে খুব খারাপ লাগে আমার।
প্রশ্ন: আপনার কাছে কি কখনো মনে হয়েছে যে, এ দুইটি ধারা এক হওয়া উচিত ?
উত্তর: আমার মনে হওয়া না হওয়ায় তো কিছু যায় আসে না। আমার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা জিল্লুর রহমান সাহেব, তিনি সরকারি মাদরাসার শায়খুল হাদিস ছিলেন। তিনি আমাকে একদিন বললেন— বাবা, তুমি আমাদের এতো ভালো ছাত্র, সারা বোর্ডে তুমি ফার্স্ট হয়েছো, ফার্স্টক্লাস পেয়েছো, এখন কওমি মাদরাসা দিচ্ছো, তাতে তোমার বেতন কত হবে? আমি বললাম— দুইশ’ টাকা। তিনি বললেন— আস্তাগফিরুল্লাহ। চলো, তুমি আমাদের আলিয়া মাদরাসায় আসো, তুমি হাদিস পড়াবা, তোমার বেতন হবে ৭ হাজার টাকা । এটা ’৭৪-৭৫ সালের কথা। আমি বললাম আপনি আমার উস্তাদ। আপনাকে মোবারকবাদ। কিন্তু আমি চাচ্ছি, আলিয়ার মাদরাসার থেকেও বড় একটা কওমি মাদরাসা করবো। তখন তিনি আমার পিঠে হাত দিয়ে বললেন— তোমাকেও মোবারকবাদ। তোমার বেশ সাহস।
প্রশ্ন: আপনি কোথায় কোথায় পড়েছেন কী কী পড়েছেন, যদি বলেন…
উত্তর: আমি তো শুধু দুইটি মাদরাসায়ই পড়েছি। বাড়ির কাছে ফুলবাড়িয়ায় দেশের প্রাচীনতম আলিয়া মাদরাসায় ফাজিল পর্যন্ত পড়েছি । এরপর সিলেট সরকারি আলিয়ায় কামিল পর্যন্ত পড়লাম।
প্রশ্ন: আমাদের আলেম সমাজের মধ্যে জাগতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষার মাঝে একটা বিভাজন দেখতে পাই। কেউ কেউ বলেন জাগতিক শিক্ষার কোনো দরকার নেই। এই যে দুই ধরনের শিক্ষা— এ নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
উত্তর: জগতে থাকতে হলে তো জাগতিক শিক্ষা লাগবেই। আর মুসলমান হিসেবে আমাকে ধর্মীয় শিক্ষা শিখতে হবে। যেমন প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছেন, আপনার সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষাদিন। অর্থাৎ বুঝতে পারছেন যে, শুধু জাগতিক শিক্ষা দ্বারা সন্ত্রাস দূর হবে না । কবি বলেছেন— ধর্মের নৈতিকতা ছাড়া কেবল চেঙ্গিসি সন্ত্রাসই বাকি থাকে। শিক্ষা শিক্ষাই তাতে বিভাজন নিয়ে আসা সমিচিন নয়।
প্রশ্ন: আমাদের কওমি মাদরাসায় যে শিক্ষা ব্যবস্থা আছে, এর সংস্কার কি জরুরি? নাকি যেমন আছে সেটাই ভালো?
উত্তর: আসলে আকাবির থেকে যা পেয়েছি, এটাই আমাদের মূলনীতি হওয়া দরকার। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনবোধে কিছু সংস্কার করা দরকার। যেমন- আজকাল প্রায় মাদরাসাতেই ইংরেজি শিক্ষা শুরু হয়েছে, অংক শিক্ষা আছে, বাংলা আছে। আগে তো বাংলা পড়লেই ছাত্ররা মার খেতো। এটা কী পড়ছো, কোরআন পড়ো। আমাদের বুজুর্গরা বলেন নাই যে, আমরাই তোমাদের একমাত্র আদর্শ, আমরা যা করছি, তাই তোমাদের করতে হবে। সুতরাং সংস্কার অবশ্যই দরকার, আর তা আমাদের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে ।
প্রশ্ন: একজন প্রবীন রাজনীতিবিদ হিসেবে জানতে চাচ্ছি, রাজনীতিটাকে ইসলাম কিভাবে দেখে?
উত্তর: ইসলাম তো ইসলামই। রাজনীতি ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কোরআনে ফিরাআউনসহ বিভিন্ন রাজা বাদশাহরা কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন এবং নবীরা কিভাবে তাদের মোকাবেলা করেছেন— পুরোটা কোরআনেই এই কথা আলোচিত হয়েছে। নামাজ সম্পর্কে ৮৬টা আয়াত, হজ সম্পর্কেও এরকম। কিন্তু বাকি হাজারও আয়াত কেবল রাজনীতি সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। রাজনীতি বাদ দিলে ইসলাম পরিপূর্ণ থাকে না।
প্রশ্ন: একজন তরুণ যদি আপনার কাছে জানতে চায়, আমি যদি রাজনীতি করি, তাহলে কিভাবে করবো? আপনি কী গাইড লাইন দেবেন তাকে?
উত্তর: কোরআনে গাইড লাইন দেয়া আছে। তোমরা যদি ক্ষমতা পাও, তাহলে এই চার কাজ করো— নামাজ কায়েম করো, জাকাত আদায় করো, সৎকাজের আদেশ করো এবং অসৎকাজ থেকে বাধা দাও।
প্রশ্ন: তসলিমা নাসরিনের প্রসঙ্গ আসলেই আপনার নামটা প্রথমে আসে। তাকে বাংলাদেশ থেকে তাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকাই মূখ্য বা প্রধান বলা হয়। এখন এই সময়ে যদি তসলিমা নাসরিন আবার দেশে ফেরেন, যেমনটা আমরা বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে দেখছি যে, তিনি দেশে আসতে চাচ্ছেন, তিনি যদি আবার ফেরেন সে ক্ষেত্রে আপনাদের এমন কোনো উদ্যোগ আছে কি না যে, তখন আপনারা তাকে ঢুকতে দেবেন না?
উত্তর: কাউকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা বা রাখা এটা আমাদের কাজ নয়, এটা সরকারের কাজ। তসলিমা নাসরিন এমন কিছু উল্টাপাল্টা কাজ করেছে এবং ধর্মের ওপর নানানভাবে সে আঘাত করেছে, যার ফলে বাংলাদেশের মানুষ বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে এবং মানুষের দাবির মুখে সরকার তাকে দেশছাড়া করেছে। এখন যদি সে আবার ফিরে আসে এবং আগের মতো কাজ করে তবে অবশ্যই সচেতন মুসলমান তার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
প্রশ্ন: দেশে যে কওমি মাদরাসার এতোগুলো বোর্ড রয়েছে, এই বিক্ষিপ্ত বোর্ডগুলো একত্র করা সম্পর্কে আপনার অভিমত আছে কি না । একইভাবে সরকারের স্বীকৃতির ব্যাপারে যে উদ্যোগ চলছে, যা এই বিচ্ছিন্নতার কারণেই হচ্ছে না বলে ধারণা করা হয়— এ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি।
উত্তর: এটা অত্যন্ত দু:খজনক। বিভিন্ন নামে বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক বোর্ডগুলো তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেগুলো থাকুক। কিন্তু একটি কেন্দ্রীয় বোর্ডের অধীনে সবগুলো মাদরাসা ঐক্যবদ্ধ হোক। এতে মাদরাসার সম্মান বাড়বে, শক্তি বাড়বে এবং ইসলামের বিজয় আসবে ।আর সরকার যদি স্বীকৃতি দেয় নিঃশর্তভাবে, স্বাধীনভাবে, এটা করতে হবে, এটা ছাড়তে হবে— এমন কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ না করে, তাহলে সেই স্বীকৃতি নেয়া যেতে পারে। নইলে দরকার নেই ।
প্রশ্ন: আপনাদের এই মাদরাসায় দেখলাম সাধারণ মানুষের জন্যে লাশ গোসল করানোর জায়গা, অ্যাম্বুলেন্স, ড্রাইভিং শেখার স্কুল এবং কিন্ডার গার্টেনের সাথে মাদরাসাও দেখলাম— এই সমাজসেবামূলক কার্যক্রমগুলো মাদরাসায় যুক্ত করার পেছনে আপনার উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: আমাদের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আমরা কেবল মানুষের কাছ থেকে দান নেবো আর মানুষকে কিছু দেবো না, এই শিক্ষা ইসলামের নয়; ইসলাম আমাদের এই শিক্ষা দেয় না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য নেই কেনো? শুধু রাজনীতি না, চ্যারিটি, ব্যবসা, প্রতিষ্ঠান এরকম প্রতিটি সেক্টরেই আলেমদের মধ্যে বিভক্তি দেখছি— এটা কেনো?
উত্তর: ইলম বেশি তো। একজন আরেকজনের প্রতি নমনীয় হতে পারেন না— এ জন্যে সমস্যা। ইলম শিখতে না বলছি না। ইলম শিখুন, নিজেকে ছোটো মনে করুন, তাহলেই হবে। নিজেকে ছোটো মনে করতে পারলে আর সমস্যা থাকবে না। ঐক্যটা তাহলেই সম্ভব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তর: আল্লাহর ইচ্ছা ছিলো বলেই এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। একটা দেশ আরেকটা দেশের থেকে দেড় হাজার মাইল দূরে আবার মাঝখানে আরেকটা দেশ, এটা একসাথে থাকার কথা না ।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদেরকে আপনি শহিদ মনে করেন কি না?
উত্তর : হাদিসে আছে, কেউ যদি তার সম্পদের জন্যে জীবন দেয় সে শহিদ। কেউ যদি তার পরিবারের জন্যে, তার মা-বোনের ইজ্জতের জন্যে প্রাণ দেয়, সে শহিদ। পাক আর্মিরা যে কাণ্ডকারখানা করেছে, বিশেষ করে যুদ্ধের শেষের দিকে, মা-বোনের ইজ্জত হানি এবং মানুষের সম্পদ যেভাবে তারা নষ্ট ও লুন্ঠন করেছে, আমি মনে করি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরজ ছিলো এবং যে সকল মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তারা সবাই শহিদ।
প্রশ্ন: টিভি-মিডিয়া নিয়ে আলেমদের এখনও অনেক দ্বিমত রয়েছে। আমাদের সেখানে যাওয়া ঠিক কি না। কিংবা ইসলামি রাষ্ট্র হলে এগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে কি না?
উত্তর: টিভি-চ্যানেল তো একটা প্রচার মাধ্যম। এটাতে খারাপ প্রচার করা হলে খারাপ, ভালোটা প্রচার করা হলে ভালো। আমাদের উদ্দেশ্য যদি হয়, আল্লাহর দীনকে মানুষের কাছে পৌঁছানো, তাহলে এটা মন্দ নয়। আমাদের খতিব উবায়দুল হক সাহেব টিভিতে কোরআনের বাণী উপস্থাপন করেছেন— এমন নজির তো আছে। সুতরাং এটা নিয়ে খারাপ বলে দূরে থাকা ঠিক হবেনা।
প্রশ্ন: ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে একটা বার্তা আমরা পৌঁছে দিতে পারছি— এর ব্যবহার সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
উত্তর: সুবহানাল্লাহ। এটা তো বেশ ভালো কাজ। এর নামই তো তাবলিগ। মানুষের কাছে দীনের আওয়াজ যত বেশি সম্ভব, এই শক্তির মাধ্যমে পৌঁছে দিতে হবে। আর এই পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাদের দ্রুততম মাধ্যমগুলোই ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো পিছুটান থাকা উচিত না।
প্রশ্ন: আমাদেরকে এতোখানি সময় দেয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রশ্ন : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই। দোয়া করি, আল্লাহ আপনাদের ভালো রাখুন।
সৌজন্যে : প্রিয়.কম