একবার ইবনে শিহাব জুহরি রহ. খলীফা আব্দুল মালেকের নিকট এলেন। খলীফা জিজ্ঞাসা করলেন— জুহরি, তুমি কি বলতে পারো ইসলামি বিশ্বের বিভিন্ন শহরে জনগণের আস্থাভাজন আলেম কারা? যাঁদের কথা সকলে শোনে, সমস্যা-সংকটে যাঁদের কাছে যায়, মাসআলা-মাসায়েল জিজ্ঞাসা করে? জবাবে জুহরি বললেন— হ্যাঁ, জানি। আপনি কোন অঞ্চলের কথা জানতে চান? খলীফা জিজ্ঞাসা করলেন— তুমি এখন কোত্থেকে এসেছো?
: মক্কা মুকাররমা থেকে।
: আচ্ছা বলো, মক্কায় সবচে’ জনপ্রিয় ও আস্থাভাজন আলেম কে?
: আতা ইবনে আবী রবাহ।
: আরব না গোলাম?
: গোলাম।
: আতা কীভাবে পেলো এতো সম্মান?
: ইলমে দীন ও হাদিস রেওয়ায়েতের মাধ্যমে।
: হ্যাঁ, ঠিকই বলেছো। ইলমই মানুষকে সুউচ্চ শিখরে পৌঁছে দেয়।
: ইয়েমেনে সবচে’ নির্ভরযোগ্য আলেম কে?
: তাউস ইবনে কাইসান।
: আরব না গোলাম?
: গোলাম।
: মিসরে কে?
: ইয়াজিদ বিন হাসিব।
: আরব না গোলাম?
: গোলাম।
: সিরিয়ায় কে?
: মাকহুল।
: আরব না গোলাম?
: গোলাম।
খলীফা কিছুটা মনঃক্ষুণœ। কণ্ঠ পাল্টে গেছে। চেহারা মলিন।
: (ক্ষুব্ধ কণ্ঠে) জাযীরা অঞ্চলে কে?
: মাইমূন ইবনে মেহরান।
: আরব না গোলাম।
: গোলাম।
: পুরো ইরাকে সবচে’ বড়ো ফকীহ কে?
: হাসান ইবনে আবুল হাসান ও মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন।
: আরব না গোলাম।
: গোলাম।
: মদিনায় কে?
: জায়েদ বিন আসলাম, মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির ও নাফে’।
: কী তাদের পরিচয়?
: গোলাম।
এতটুকু শুনে খলীফা আব্দুল মালেক অধৈর্য হয়ে গেলেন। রাগে ক্ষোভে ফুঁসছেন। চক্ষু রক্তবর্ণ। দ্বীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
: আচ্ছা বলো, খোরাসানে কে সবচে’ বড়ো আলেম?
: দাহ্হাক ইবনে মুযাহেম ও আতা ইবনে আব্দুল্লাহ খোরাসানি।
: তাঁরা কারা?
: গোলাম।
: হায়রে পোড়া কপাল! খালি গোলাম গোলামই করতে থাকবে। আরবদের কথা বলবে না। রাষ্ট্রের সবগুলো প্রদেশের প্রধান বিচারপতির পদ কি গোলামরাই দখল করে রেখেছে?
খলীফা নিজে আরব। তাই চাইতেন আরবদের হাতে থাকুক এসব পদ ও পদবি। তাঁর চেহারা ভয়ানক রকম মলিন হয়ে গেলো। বোঝা যাচ্ছে রাগে ফুঁসছেন। আবার জিজ্ঞাসা করলেন— কুফায় কে?
জুহরি বলেন— এবার কোনো গোলামের নাম নিতে সাহস পেলাম না। যদিও হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমান ও হাকাম বিন উতবা দু’জনেই গোলাম, কিন্তু তাদের সঙ্গে ইবরাহিম নখয়ি ও শা’বি দু’জন আরবও আছেন। আরবদের নাম বলে বাদশার রোষাগ্নি থেকে বাঁচলাম। তিনিও যেনো এবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।
: যাক বাঁচা গেলো! এত বড়ো সাম্রাজ্যে কোনো আরব বিচারপতি নেই ভাবতেই খারাপ লাগে। যাক, শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেলো। মন কিছুটা হলেও শান্ত হলো। না হয় কলজে ফেটে মরে যেতাম।
(তালিবে ইলমের জীবন গঠন)