বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:৫১
Home / আকাবির-আসলাফ / মাদীনার শেষ সিপাহসালার (তিন)
মাদীনায় ফাখরুদ্দীন পাশা কর্তৃক নির্মিত একটি দুর্গ

মাদীনার শেষ সিপাহসালার (তিন)

মাদীনায় ফাখরুদ্দীন পাশা কর্তৃক নির্মিত একটি দুর্গ
মাদীনায় ফাখরুদ্দীন পাশা কর্তৃক নির্মিত একটি দুর্গ

মুহাম্মাদ সাজিদ করিম : যেদিন মক্কায় শরীফ হুসেইনের গুলিতে আক্রমণ শুরু হয়, ঠিক একই দিনে মাদীনায় আক্রমণ করে তার বড় ছেলে আলী ও তার তৃতীয় ছেলে ফয়সালের বাহিনী। কিন্তু ফাখরুদ্দীন পাশার নেতৃত্বে উসমানীয় বাহিনী সে আক্রমণ সাহসিকতার সাথে প্রতিহত করে। জেনারেল ফাখরুদ্দীন পাশা মাদীনাকে প্রতিরক্ষার জন্য কিছুটা বাইরে শহরকে ঘিরে ট্রেঞ্চ খোঁড়ার আদেশ দেন। সেই সাথে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্গ নির্মাণ করেন। অক্টোবর ১৯১৬ তে ফয়সালের নেতৃত্বে আরেকবার বড় মাপের হামলা চালায় ব্রিটিশ সমর্থিত বেদুইনরা। কিন্তু তাদের সেই হামলাও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এরপর বিদ্রোহী আরব বাহিনী মাদীনায় সিজ (অবরোধ) আরোপ করে।

হিজাযের অধিকাংশ সৈন্য বিদ্রোহের আগে চলে গিয়েছিল সিনাই উপত্যকায় যুদ্ধের জন্য যে দিক দিয়ে ব্রিটিশ বাহিনী ফিলিস্তিন দখল করতে এগিয়ে আসছিলো। হিজাযে উসমানীয় বাহিনীর মূল গ্যারিসন ছিল দুটি শহরে, মক্কা ও মাদীনাহ। মক্কার তো আগেই পতন হয়েছিল। যে কারণে আর কেউ সে সময় মাদীনায় ফাখরুদ্দীন পাশার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারেনি। মাদীনার ইয়ানবু বন্দরের মতো জেদ্দাসহ উপকূলবর্তী শহর ও বন্দরগুলোতেও হামলা চালায় বিদ্রোহীরা। কিন্তু উসমানীয় বাহিনীর প্রতিরোধে তারা বারংবার ব্যর্থ হয় যতক্ষণ না তাদের উদ্ধারের জন্য ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ আর বোমারু বিমানগুলো এগিয়ে আসে। ইয়ানবু বন্দর পুনরুদ্ধারের জন্য বেশ কিছু সৈন্য নিয়ে জেনারেল ফাখরুদ্দীন পাশা ডিসেম্বর ১৯১৬ তে সেখানে হামলা চালিয়ে তা প্রায় পুনরদ্ধার করে ফেলেছিলেন। কিন্তু ৫ টি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজের একত্রে বোমাবর্ষণ ও ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর ক্রমাগত বোম্বিংয়ে তিনি বাধ্য হন সৈন্য নিয়ে মাদীনায় ফিরে আসতে। মাদীনায় অবস্থানরত হাজার হাজার সৈন্যের রসদ ও গোলাবারুদ আসার একমাত্র পথ তখন দিমাশক-মাদীনার মধ্যে চলাচলকারী “হিজায রেলওয়ে”। ফাখরুদ্দীন পাশাকে এই দীর্ঘ রেললাইনেরও সুরক্ষা দিতে হতো। কারণ এটাই ছিল তাদের একমাত্র লাইফলাইন। এই লাইফলাইন থেকে তাদের বঞ্চিত করতে এই রেললাইনে চোরা-গুপ্তা হামলা শুরু করে বিদ্রোহীরা (শুধু ৩০ এপ্রিল, ১৯১৮ সালে এক দিনে এই রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে ৩০০ টি বোমা ফুটিয়ে একে অকেজো করে দেয়া হয়)।
ব্রিটিশ ও ফরাসীদের লুট করার অভ্যাস কারো অজানা নয়। তারা যে দেশেই ক্ষমতা লাভ করেছে সে দেশ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে মূল্যবান যা কিছু সরানো যায় তা ইউরোপে পাঠিয়ে দিয়েছে। এমনকি ব্রিটেনের রাজমুকুট যা অভিষেকের দিন রাজা/রানীর মাথায় পরানো হয় তাতে যে দুটো রত্ন আছে তার একটি ভারতবর্ষ থেকে লুট করা হীরে ‘কোহিনূর’ আর লাল রত্নটি ছিল গ্রানাডার আমীর মুহাম্মাদ বিন ইসমাইলের। ফাখরুদ্দীন পাশা এ বিষয়টি অনুধাবন করলেন। মে, ১৯১৭ সালে তিনি মাদীনায় মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ জড়ো করে দুই হাজার সৈন্যকে পাহারায় দিয়ে স্পেশাল এক ট্রেনে সেগুলোকে ইস্তাম্বুলে পাঠিয়ে দিলেন। তার এ দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর জামাসহ বাকী নিদর্শনগুলো আজও ইস্তাম্বুলে টোপকাপি প্রাসাদে সংরক্ষিত আছে; নতুবা ধ্বংস না হলেও এগুলো দেখতে হয়তো মুসলিমদের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে যাওয়া লাগতো। (চলবে)

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

আদালতের ওপর বিশ্বাস ভেঙে গেছে: সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী

নাজমুল মনযূর: আদালতের ওপর বিশ্বাস ভেঙেছে ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা সেই মুসলমানদের। এমন কথাই ...