মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্যে সবসময়ই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায় না। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এখন এসব অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ জন্মানোর কথা ভাবছেন। আর এসব জন্মানো হবে অন্য একটি প্রাণীর শরীরে।
বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, মানুষের শরীরের কোনো একটি অঙ্গ কিভাবে শূকরের শরীরের ভেতরে জন্মানো যায়। জিন এডিটিং বা জিন সম্পাদনার মাধ্যমে তারা এই কাজটি করছেন আর এই গবেষণাটি চালানো হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটি করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, শূকরের শরীরে মানুষের অগ্নাশয় জন্মানোর।
শূকরের ভ্রুণের ভেতরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে, মানুষের স্টেম সেল প্রবেশ করিয়ে মানুষ ও শূকরের একটি সংকর ভ্রূণ তৈরির চেষ্টা করছেন তারা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শূকরের ভ্রুণের ভেতর থেকে ডিএনএ সরিয়ে, তারপর সেখানে মানবদেহের স্টেম সেল ঢুকিয়ে এই কাজটি করা হচ্ছে। তারা বলছেন, এর ফলে যে ভ্রুণের সৃষ্টি হবে সেটা দেখতে এবং আচার আচরণে সাধারণ একটি শূকরের মতোই হবে কিন্তু এর ভেতরে একটি প্রত্যঙ্গ তৈরি হবে যেটি তৈরি হবে মানব কোষের মাধ্যমে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এর ফলে ওই প্রাণীটির ভেতরে অগ্নাশয়ের জন্ম হবে। অনেক বিজ্ঞানীই এই উদ্যোগের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী। তিনি বলছেন, এধরনের গবেষণার জন্যে শূকরের মতো প্রাণী খুবই উপকারী।
তিনি বলেন, “শূকরের সাথে আমাদের অনেক দিক থেকেই মিল আছে। সেকারণেই মানুষের অসুখ বিসুখের চিকিৎসায় মডেল হিসেবে এই প্রাণীটিকে প্রচুর ব্যবহার করা হচ্ছে।” “দেখা গেছে, শূকরের শারীরবৃত্তের সাথে আমাদের শরীরেরও মিল পাওয়া যায়। মানবদেহের ক্রোমোজম যেভাবে গঠিত, শুকরের ক্রোমোজমও গঠিত হয়েছে প্রায় একই ধাঁচে ,” বলেন তিনি।
জিন এডিটিং-এর মাধ্যমে শূকরের শরীরে মানব অঙ্গ তৈরির এই পদ্ধতিটি নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক হচ্ছে।
অনেকেই নীতি নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, এটি করতে গিয়ে মানব দেহের কোষ, শূকরের মস্তিষ্কের ভেতরেও ঢুকে পড়তে পারে। প্রাণীর অধিকার রক্ষায় কাজ করে এরকম একটি সংস্থা- পেটার একজন উপদেষ্টা জুলিয়া বেইন্স এই প্রকল্পের সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, “মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে মিশ্রণ ঘটিয়ে এই সংকর সৃষ্টি খুবই আতঙ্কের বিষয়। প্রাণীর এরকম বর্বর ব্যবহার শুধু ভৌতিক কল্পকাহিনির বইগুলোতেই দেখা যেতো।” “এই কাজটা করা হচ্ছে শুধু একারণে যে ওই প্রাণীর শরীরে মানব দেহের ওই উপাদানগুলো রয়েছে। এটা করতে গিয়ে প্রাণীটির নানা রকমের যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এবং তারপর যদি ওই সংকর শিশুটির জন্ম দেওয়া হয় তাহলে তার অনেক খারাপ পরিণতিও হতে পারে। যেমন তাদের শরীরে টিউমার জন্মাতে পারে, ত্রুটি থাকতে পারে মস্তিষ্কের গঠনে। সুতরাং এই কাজটা করা নীতি ও নৈতিকতার পরিপন্থী।”
সৌজন্যে : বিবিসি বাংলা