বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:৫০
Home / কওমি অঙ্গন / কওমি মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার পথ ও পদ্ধতি

কওমি মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার পথ ও পদ্ধতি

13450258_491977211013293_2291914300146829271_n(সপ্তম পর্ব) অনেকে আবার দীনি সব শিক্ষালয়ের প্রতি শুভাকাঙ্ক্ষিতা ও দরদ দেখিয়ে এমন প্রস্তাব করেন যে, এসব প্রতিষ্ঠানে হস্তশিল্প ও কারিগরি বিদ্যা শিক্ষাদানের ব্যবস্থাও করা উচিত। যেন এখানে শিক্ষা সমাপ্তকারী আলেমগণ সমাজের দুঃসহ বোঝা ও পরমুক্ষাপেক্ষী না হয়ে নিজ হস্তশিল্প ও কারিগরিজ্ঞান চর্চা করে জীবিকা উপার্জনে স্বাবলম্বী, স্বনির্ভর হতে পারে এবং কোন বিনিময় ছাড়াই দীনের মহান খেদমত আঞ্জাম দিতে পারে। এ প্রস্তাব যতই ভালো উদ্দেশ্যে পেশ করা হোক এবং বাহ্যত যত চমৎকারই মনে হোক না কেন প্রকৃতপক্ষে তা যুক্তিগ্রাহ্য নয় এবং এটা বাস্তবায়ন করা সঙ্গত নয়। প্রথমত কথা হল– যদি দীনি মাদরাসাগুলো লক্ষ্য হয় কোরআন সুন্নাহ সম্পর্কীয় বিষয়াবলীতে পারদর্শী ও বিচক্ষণ আলেম তৈরী করা, তবে এসব জ্ঞান অর্জন ও চর্চার জন্য তো পুরো সময় ব্যয় করতে হবে। কারিগরি বা হস্তশিল্প শিক্ষার সময় সে পাবে কোথায়? আর বর্তমান কঠিন যুগের বাস্তব অভিজ্ঞতা হল যে, টেকনিক্যাল কাজে কেউ ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়ার পর দীনি এলেম চর্চার আশা আশাই থেকে যাবে ।কখনো তা পূর্ণ হবে না। কোন ছাত্র যদি এলেম অর্জনের পাশাপাশি কারিগরি শিল্প আয়ত্ব করে, বাস্তবে দেখা যাবে যদি সে শিক্ষা সমাপ্ত করে এলেম চর্চায় আত্মনিয়োগ করে তবে অর্জিত হস্তশিল্পের দিক কিছুতেই সে মনোযোগ দিতে পারবে না। আর যদি সে অর্জিত শিল্প দিয়ে জীবিকা অন্বেষণে নিয়োজিত হয় তবে এলমে দীনের সাথে সামান্য সংযোগও তার আর অবশিষ্ট থাকবে না। উভয়ের সমন্বয় সাধন কিছুতেই সম্ভবপর নয়। এ জন্য যে সব মাদরাসা উচ্চ যোগ্যতাধারী আলেম সৃষ্টির প্রায়াসেই একমাত্র প্রতিষ্ঠিত, সে সব মাদরাসার জন্য ছাত্রদেরকে এলেমের পাশাপাশি টেকনিক্যাল বিদ্যা প্রশিক্ষণ দানের আয়োজন করা শুধু অসমীচীন নয়, অসম্ভবও।

দ্বিতীয় কথা হল – যদি কোন মানুষ সমাজের দীনি প্রয়োজন পূর্ণ করে বিনিময় বা বেতন সংগ্রহ করে তবে সে ‘সমাজের বোঝা’ ‘পর নির্ভরশীল’ হয়ে যাবে এটা কোন ধরনের কথা। জ্ঞানের প্রত্যেক বিভাগ ও শাখা সম্পর্কেই এ রীতি প্রচলিত যে, প্রত্যেকে যে যে বিভাগে জ্ঞানার্জন করবে, সে সে বিভাগের আওতাধীন বিষয়ে সমাজের দায়িত্ব পালন করবে। আবার তার জীবিকার ব্যবস্থাও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত। যদি সে ঐ বিষয়ে সমাজে দায়িত্ব পালন করার কারণে কোন বেতন বা ভাতা গ্রহণ করে তাকে সমাজের বোঝা বা পর নির্ভরশীল বলার প্রশ্নই উঠে না। বরং তা সামাজিক নিয়মের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ যার উপর পুরো মানবতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। যদি কোন ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার , বিজ্ঞ অর্থনীতিজ্ঞ বা বিজ্ঞানী নিজ বিভাগে পরিমণ্ডলে সমাজের সেবা করে অর্থ উপার্জন করে সেটা তার প্রতি সমাজের কোন দয়া নয়। আর তাকে সমাজের বোঝা এবং পরনির্ভর বলারও কোন অবকাশ নেই। প্রশ্ন হল – তাহলে কি এলমে দীনের সেবা করা সমাজের একটি প্রয়োজন নয় ? প্রত্যেক মুসলিম সমাজের জন্য কি এমন আলেম অপরিহার্য নয় যিনি তাদের ধর্মীয় প্রয়োজন পুর্ণ করবেন? যিনি নিত্য নতুন সমস্যার ধর্মীয় দিক নির্দেশনা দিবেন? তাদের বাচ্চাদের যিনি দীনি শিক্ষা দিবেন ? তাদের ধর্মীয় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সংরক্ষণের তাগিদে নিজের জীবন ও সময় যিনি উৎসর্গ করে দিবেন? ধর্মের বিরুদ্ধে সকল হামলা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিরোধ প্রয়াস চালিয়ে যাবেন? এবং ধর্ম সম্পর্কিত ঐসব কর্মকাণ্ড নির্বাহ করবেন যা অন্যান্য কায় কারবারে নিয়োজিত ব্যক্তিদের পক্ষে সমাধা করা সম্ভবপর নয়। যদি এগুলো মুসলিম সমাজের জন্য অত্যাবশ্যক হয় (কেউ কি তা অস্বীকার করতে পারবে ?) তাহলে সমাজ যদি ঐ দায়িত্ব পালনকারী আলেমকে জীবিকা উপার্জন থেকে চিন্তামুক্ত করার জন্য নিজ দায়িত্ব পালন করে, তবে এটা কি সে আলেমের উপর সমাজের বড় দয়া বা করুণা ? আর এর উপর ভিত্তি করে এ ভাবনা কেন সৃষ্টি করা হয় যে, আলেমদেরকে সামাজিক বোঝা হবার বা পর নির্ভরতার অপবাদ ঘোচাতে হস্তশিল্প শিক্ষা করতে যেতে হবে।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে জরুরী কিছু কথা!

কমাশিসা ডেস্ক: শুক্রবার ২৫সেপ্টেম্বার ২০২০. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি যখন কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির ...