(দ্বিতীয় পর্ব) বস্তুত : দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করার পেছনে এর প্রতিষ্ঠাতাদের উদ্দেশ্য কী ছিল তা প্রনিধাণযোগ্য। এ ক্ষেত্রে দেওবন্দের আকাবিরগণের যে মনোভাব ছিল তা হলো: ‘ইংরেজরা আমাদের রাজ্য নিয়ে গেছে। এখন আমাদের ধর্ম ও ধর্মীয় জ্ঞানও ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। রাজ্য তো রক্ষা করতে পারলাম না। অতএব ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধর্মীয় জ্ঞান রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হোক। যেন মুসলমানরা ব্যক্তিগতভাবে দীন ও ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে। ধর্মীয় জ্ঞানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। তাহলে এক সময় এর মাধ্যমে কর্মীবাহিনী তৈরি করে স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা করা যাবে।’ নিঃসন্দেহে বলা যায় এ মনোভাব সময়োপযোগী ছিল। এ কারণে দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাসে ধর্মীয় বিষয়াবলির প্রাধান্য ছিল। একটি ইসলামি আধুনিক রাষ্ট্র বা প্রচলিত সেক্যুলার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যেসব জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী ক্যাডার, সচিব, আমলা বা কর্মকর্তার প্রয়োজন হয় সেসব জ্ঞান-বিজ্ঞান পাঠদানের ব্যবস্থা এখানে ছিল না। কেননা দারুল উলুমের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে সরকারি কোনো চাকরি গ্রহণের মানসিকতা ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দীনি ইলমের সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ। এ উদ্দেশ্য পূরণে এর সফলতা অনস্বীকার্য। এ শিক্ষা ব্যবস্থা একসময় এ উপমহাদেশে নীরব অথচ প্রচণ্ড বিপ্লব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল।
এ শিক্ষাক্রম উত্তীর্ণ হয়ে এমন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছিলেন যারা শুধু এ উপমহাদেশকে নয় বরং প্রাচ্য ও প্রতীচ্যকে বিস্মিত ও হতবাক করেছিলেন। তারা শুধু আক্ষরিক জ্ঞানেই সমৃদ্ধ ছিলেন না বরং থিউরিক্যাল জ্ঞানের সফল বাস্তবায়নে ছিলেন অনুপম দৃষ্টান্ত । তারা ছিলেন এখলাস , নিষ্ঠা , পরোপকার ও আদর্শিক গুণাবিলীর মূর্ত প্রতীক। আবার তীক্ষ্ন ও সুগভীর এলেমের অধিকারী। দারুল উলুম মূলত যে কারিকুলাম অনুসরণ করেছিল তাকে দরসে নেজামী বা নেজামী শিক্ষা ব্যবস্থা বলা হয়। মোল্লা নেজামুদ্দীন শহীদ সেহালভী সমকালিন চাহিদানুসারে যে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস ও পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করেন সেটাই দরসে নেজামী বলে পরিচিত এবং উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছিল।
মূল : আল্লামা তকি উসমানি
ভাষান্তর : কাজী মোহাম্মদ হানিফ
শাইখুল হাদিস, জামিয়া আরাবিয়া মারকাজুল উলুম, কাঁচপুর, নারায়ণগঞ্জ