রোকন রাইয়ান : বর্তমান সময়ের আলোচিত টপিক ‘ব্লগ’ দিয়ে লেখাটা শুরু করি। একটা ব্লগে কওমি মাদরাসা নিয়ে পোস্ট দেয়া হয়েছে। পজিটিভ পোস্ট। সেই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে তুমুল সমালোচনা। কেউ কওমি মাদরাসাকে তুলোধুনো করছে। কেউ সেটার জবাব দিচ্ছে। তাদের উভয়ের ভঙ্গিটা এমন; যিনি বিপক্ষে বলছেন নাচতে গিয়ে তার উঠান ভেঙে ফেলার অবস্থা। তিনি লিখেছেন, কওমি মাদরাসা ব্যাকডেটেড। তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। তারা সমাজ বিচ্যুত। আরও অনেক কিছু…
তার কঠোর মন্তব্যে পোস্টদাতার নরম জবাব- হ্যাঁ আমরা পিছিয়ে আর আপনারা এতটাই এগিয়ে যে, পথে ঘাটে আপনাদের ছুড়ি-কোদাল নিয়ে মার্চ করতে দেখা যায়। আপনাদের ওখান থেকে পড়ালেখা শেষ করার পাশাপাশি ধর্ষক সেষ্ণুরিয়ানও বের হয়। আপনারা অনেক দূর এগিয়েছেন। অনেক দূর এগুবেন।
বিপক্ষজন আবারও লিখলেন- হুম, কওমি মাদরাসা সমাজের জন্য কি করেছে। তারা জাতীয় পর্যায়ে কোনো উন্নতি করতে পেরেছে? কেবল মসজিদে আজান দেয়া আর লাশ দাফন ছাড়া?
পোস্টদাতার উত্তর- কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আদর্শ ন্যায়-ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে। তাদের মাধ্যমেই ইংরেজ উপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে এ উপমহাদেশ। না হলে আজও তোমাদের ব্রিটিশদের যাঁতাকলেই মরতে হতো। আর বর্তমানে যারা রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন তাদের গা থেকে ভূত তাড়ানোর কাজ করছে কওমি মাদারাসা। এটা সমাজের উন্নতির প্রধান শর্ত। ইউরোপ-আমেরিকায় সভ্যতা নেই বলে ফ্রি সেক্সের খেলা চলছে। সেখানে প্রতি ৪৬ সেকেন্ডে একজন নারী ধর্ষিত হয়। ৪০ পার্সেন্ট সন্তান জারজ। কওমির মতো সভ্য মানুষরা না থাকলে বাংলাদেশও একই পরিণতি বরণ করত।
ব্লগের টপিক এখানেই শেষ করতে হলো। কেননা এই পর্যায়ে বিপক্ষজন লেজ গুটিয়েছেন। কারণ সভ্যতার নামে অসভ্যতার যে শিখরে আরোহণ করছে সমাজে তা কোনো ভালো মানুষ মেনে নিতে পারছেন না। লাগামহীন এই সভ্যতার কোনো সংজ্ঞা নেই। কোনো উত্তর নেই।
কওমি মাদারাসার সমালোচনার বড় অঙ্কটা এমনই। অনেকটা ‘দুর্বলের শেষ ভরসা গালি’র মতো। গালি গালাজে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চান তারা। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব।
মূলত কওমি মাদরাসা সমাজের উপকারই করে যাচ্ছে নিরন্তর। যারা বলেন সমাজের বড় পদে যেতে পারছে না তাদের জন্য বলতে হয়, সরকারি একটা পদবি পেতে কালো বেড়ালের মুখ ভরার ক্ষমতা সবার থাকে কই। আর একটা পদের জন্য যেভাবে হাজারজন লাইন দেন সেখানে কওমি ছাত্ররা বরং লাইনে না দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্যই করছে। তবে একটা কথা বলা যায়, আলেমরা সর্বজ্ঞানী। তাদের সর্ববিষয়ে জ্ঞানী হওয়া চাই। একটা সময়ে এই কওমি আলেমরাই রাষ্ট্র চালিয়েছেন। সেখানে বরং আজকের মতো নোংরামি ছিল না। তবে রাষ্ট্রব্যবস্থায় চেঞ্জ আসায় কওমি সিলেবাস সংস্কারের দাবি রাখে। ততটুকুতে কার্পণ্য করছেন না আলেমরা। তারা সমাজের সঙ্গে মিলিয়ে সিলেবাস সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছেন। কওমি মাদরাসার ধারাবাহিক প্রতিবেদনে গত কয়েক পর্বে এমনটাই প্রতিয়মান হয়েছে। এ সংখ্যায় আমরা খোঁজ নিয়েছি ইসলামী রাজনীতিকদের অবস্থান। কওমি মাদরাসা নিয়ে তাদের ভাবনা-কল্পনা।
কওমি মাদরাসাভিত্তিক একাধিক দল রাজনীতির মাঠে সক্রিয়। তারা আদর্শিক ও ন্যায়ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করে যাচ্ছেন। কওমি মাদরাসার সিলেবাস ও স্বীকৃতির বিষয়টি তাদের আন্দোলনের বড় অংশ বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এর প্রতিষ্ঠাতা চরমোনাইর মরহুম পীর সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম। আধ্যাত্মিক আন্দোলনের সূত্রে এই দলে আলেম-উলামার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ব্যাপকহারে। সংগঠনটি গত নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষাবিষয়ক অধ্যায়ে কওমি মাদরাসা বিষয়ে বলা হয়েছে- ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষার সরকারি স্বীকৃতি প্রদান ও যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে এবং মাদরাসা শিক্ষতদের দেশ গঠন ও উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কওমি মাদরাসা শিক্ষার মৌলিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে সিলেবাসকে যুগোপযোগী ও অভিন্ন করা হবে।’
কওমির পাশাপাশি ইশতেহারে সাধারণ শিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাবও রয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, কওমি মাদরাসা ঠিক জায়গাতেই পরিচালিত হচ্ছে। নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের ভিত্তিতে এ শিক্ষাকার্যক্রম চলছে। তবে সময়ের প্রয়োজনে এ শিক্ষার স্বীকৃতি ও সিলেবাস পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে আমাদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি হলো, স্বীকৃতি ও সংস্কার উভয়টিই দরকার তবে মৌল কাঠামো ঠিক রেখে। এটা ভুলে গেলে চলবে না কওমি মাদরাসা একটি চেতনার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং আজকে আলিয়া মাদরাসা সংস্কারের ফলে তার চেতনায় নেই। কওমি মাদরাসা যদি সংস্কারের ফলে এমনটা হয়ে যায় তবে এটা হবে আমাদের জন্য ক্ষতিকারক।
সরকার গঠিত কওমি কমিশন নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কওমি মাদরাসা নিয়ে আন্দোলন করে আসছে আলেমরা। সুতরাং সব আলেমের মত থাকে এমনভাবেই স্বীকৃতি হওয়া উচিত। সেটা না হলে এই নিয়ে আলেমদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিতে পারে।
সাধারণ শিক্ষা বিষয়ে তিনি বলেন, কেবল কওমি শিক্ষার সংস্কার নয় সাধারণ শিক্ষারও সংস্কার প্রয়োজন। আজ শিক্ষার নামে আমরা যেভাবে বাণিজ্যিকিকরণ দেখতে পাচ্ছি, যেভাবে নৈতিকতার স্খলন দেখতে পাচ্ছি সেটা তো কাম্য নয়। তাই আমাদের কথা হলো শিক্ষার সঙ্গে দিক্ষারও প্রয়োজন। দিক্ষা না থাকলে সে শিক্ষায় ফায়দা হবে না। নীতি-নৈতিকতা না থাকলে সে শিক্ষায় দেশের উন্নতি হবে না। সে জন্য সাধারণ শিক্ষার সংস্কারও জরুরি।
ইসলামী দলগুলোর মধ্যে প্রাচীন দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। ব্রিটিশ আমল থেকেই রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে দলটি। কওমি মাদরাসা ও আলেম উলামা নিয়ে বিস্তর কাজও করেছে দলটি। এক সাক্ষাৎকারে দলটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা ওলীউল্লাহ আরমান বলেন, আমাদের দলের নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই কওমি মাদরাসা থেকে উঠে আসা। আমাদের অধিকাংশ কার্যক্রমই ইসলামকে কেন্দ্র করে। কওমি মাদরাসা ইসলাম ও মুসলিমদের আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা। এ শিক্ষার ধারা ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখা প্রয়োজন। আর শিক্ষা যেহেতু একটা রাষ্ট্রকেই উন্নত করে সে জন্য সরকারি স্বীকৃতি ও সুযোগ সুবিধা দরকার। আশা করি কওমি মাদরাসা নিয়ে সরকার তাদের স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি দিয়ে এই ধারাকে অব্যাহত রাখবে। সিলেবাস সংস্কারেও তাদের দল সম্মত বলে জানান তিনি। এ দলের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস বেফাক বোর্ডে কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন। সংস্কারের বিষয়টিতে গোড়া থেকেই একমত বলে জানান মাওলানা আরমান।
সিলেবাস সংস্কারে হ্যাঁবোধক মতাধিক্য থাকলেও সংস্কারে রাজি নয় খেলাফত আন্দোলন। এক ফোনালাপে এমনটিই জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান। তিনি বলেন, কওমি মাদরাসা একটি আদর্শিক সংগ্রামের নাম। এখানে দ্বীনের উজ্জ্বল আলো তৈরি হচ্ছে। এ আলো সমাজকে আলোকিত করছে। আর এটা প্রয়োজন হবে সব সময়। তাই কওমি মাদরাসা সিলেবাসে সংস্কার প্রয়োজন নেই।
তবে তিনি স্বীকৃতির পক্ষে মত দিয়েছেন এবং স্বীকৃতির প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন। মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, আমরা কওমি মাদরাসাগুলোর স্বীকৃতি চাই। সেটা যেভাবে যে সরকারই দেয় আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
বর্তমান কওমি কমিশনের আন্ডারে স্বীকৃতি হলে সেটার বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকবে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, যে কমিশনের প্রধান আল্লামা আহমদ শফী নিজেই এটাকে প্রত্যাখ্যান করেন তার আওতায় স্বীকৃতি মানা সম্ভব নয়। এটা কেউ মানবে না বলেই মনে করি।
সিলেবাস সংস্করণ কেন প্রয়োজন নয় এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কওমি মাদরাসা যে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি সংস্কার হলে সেটা টিকবে না। এজন্যই সংস্কার প্রয়োজন নেই।
অনেকে বলেন সংস্কার ও স্বীকৃতির অভাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেতে পারছে না কওমি পড়–য়ারা- এসবের জবাবে তিনি বলেন, সমাজে কিছু ভালো আর সৎ মানুষের প্রয়োজন আছে। সমাজের অধিকাংশ মানুষই আজ ভালো পথে নেই। সেখানে কওমি পড়–য়ারা একটা সুন্দর সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করছে তারা দুর্নীতিতে যাচ্ছে না এটা তো রাষ্ট্রের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি ও সিলেবাস বিষয়ে কথা হয় ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান ও খেলাফতে ইসলামীর আমির মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা কওমি মাদরাসা বিষয়ে সবসময় চিন্তা করি। এর সিলেবাস ও স্বীকৃতি বিষয়ে ইতোপূর্বে ইসলামী ঐক্যজোট বেশ কাজও করেছে। ভবিষ্যতেও করে যাবে। সিলেবাস সংস্কার বিষয়ে আমাদের মত হলো আকাবিরদের জায়গা ঠিক রেখে কিছুটা সংস্কার করা যেতে পারে। তবে সেটা কোনো ব্যক্তিগত পর্যায়ে না হয়ে জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হতে হবে। আর স্বীকৃতি বিষয়ে আমাদের কথাও পরিষ্কার। আমরা স্বীকৃতি চাই তবে এ সরকার যে কমিশন করেছে তাতে আমরা একমত নই। এই স্বীকৃতির পক্ষে জনমত যাবে না। আমরা এই সরকারের কাছে কোনো কিছুই চাই না।
এই সরকার বলেই কি আপনাদের আপত্তি নাকি বিএনপি স্বীকৃতি দিতে চাইলেও আপত্তি থাকবে এমন প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা হাসানাত বলেন, এই সরকার বলে আপত্তি নয়, আমরা আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে তার কাছে একশবার স্বীকৃতি চাইতাম, তবে আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় নেই। এখন আছে ভারত সরকার। দালাল সরকার।
কওমি সিলেবাসে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্তির পক্ষে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। সংগঠনটি মনে করে কওমি মাদরাসা দ্বীন ও সমাজের উন্নতি সাধনের জন্য একটি বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থা। তবে এতে সমকালীন বিষয়াদি যোগ করলে এ শিক্ষার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবীর। স্বীকৃতি বিষয়ে তিনি বলেন, এ শিক্ষার স্বীকৃতি অবশ্যই থাকা উচিত। সরকারকে বিষয়টি ভাবতে হবে। কারণ দেশের বৃহৎ একটি অংশ যার সঙ্গে জড়িত সেই শিক্ষায় শিক্ষিতদের রাষ্ট্র স্বীকার করবে না বিষয়টি ভালো দেখায় না।
বর্তমান সরকার স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছে এবং এ বিষয়ে প্রক্রিয়াও পাকাপাকি বিষয়টি কিভাবে দেখছেন জানতে চাওয়া হলে হুমায়ুন কবীর বলেন, এখন শোনা যাচ্ছে সরকার হেফাজতের আন্দোলনকে দমাতে কৌশলে স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে আনছে। বিগত চারদলীয় জোট আমলেও শেষ সময়টাতে একটা খেলা খেলেছে। স্বীকৃতির কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। বরং ভোট দখলের প্রচেষ্টা হয়েছে। এ সরকারও শেষ সময়টাতে এসে একই খেলা খেলছে না এটা কিভাবে বিশ্বাস করা যায়।
একই নামের আরও একটি ইসলামী সংগঠন খেলাফত মজলিস। কওমি মাদরাসা বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, খেলাফত মজলিস কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হিসেবে এর স্বীকৃতি ও অন্যান্য বিষয়ে বেফাকের সঙ্গে সহমত পোষণ করে আসছে। এ বিষয়ে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি হলো কওমি মাদরাসা সময়ের একটি আলোকিত প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে লাখো আলেম ইলম সম্পন্ন করে বের হচ্ছে। এরা সমাজের বিভিন্ন খেদমত করে যাচ্ছে। তাই এ শিক্ষাকে রাষ্ট্রীভাবে স্বীকৃতি দিয়ে সর্বত্র গুরুত্ব দেয়া উচিত।
এক ফোনালাপে খেলাফত মজলিসের প্রচার সম্পাদক, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল জলিল বলেন, কওমি মাদরাসা সর্বকালীন উপযোগী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানথনিয়ে কাজ করা হলে রাষ্ট্র উপকৃত হবে। সিলেবাস বিষয়ে তিনি বলেন, কওমি সিলেবাস দেওবন্দের অনুসরণে প্রণীত। এতে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন নেই তবে সময়ের চাহিদায় আপডেট হতে পারে। বর্তমান সরকারি কমিশন নিয়ে তিনি বলেন, এটা যদি কিছু মানুষের সুবিধা ভোগের স্বীকৃতি বা কমিশন হয় তবে এই স্বীকৃতি ছাত্ররা মানবে না।
ইসলামপন্থি সংগঠনের মধ্যে আরেকটি সংগঠন ইসলামী ঐক্য আন্দোলন। দ্বিধারা বিভক্ত দলটির একাংশের চেয়ারম্যান ড. ইসা শাহেদী প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, কওমি মাদরাসার সিলেবাস পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। আমার মনে হয় এটা হলো দ্বীন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। সুতরাং একে স্বতন্ত্রভাবে রাখাটাই উচিত।
কওমি মাদরাসার মৌলিক চিন্তা-চেতনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে একটা আদর্শিক সংগ্রামের মাধ্যমে। সুতরাং এ চেতনার ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে কওমি মাদরাসাগুলো পরিচালনা করাটাই যুক্তিযুক্ত। দলীয়ভাবে কওমি মাদরাসা বিষয়ে এমনটাই মনে করে ইসলামী ঐক্য আন্দোলন।
কওমি মাদরাসা নিয়ে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে তৎপরতা রয়েছে। তবে সংস্কার ও স্বীকৃতির বিষয়টিতে কিছুটা দ্বিধা কাজ করছে নেতাদের মধ্যে। অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, স্বীকৃতি কোন সরকার দিচ্ছে সেটা বিবেচ্য নয়; এখানে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি দেখার কিছু নেই। একাধিক আলেম রাজনীতিকের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তারা বলেছেন, গত বিএনপি সরকারও তো স্বীকৃতি দেয়নি। সামনে যে দেবে এমনটা ভেবে সুযোগ নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। তবে বিপক্ষে যারা বলছেন তাদের যুক্তি হলো- আওয়ামী সরকার ইসলামের জন্য ভালো নয়; তাদের থেকে স্বীকৃতি নেয়াটা হবে নিজেদের কুরবানির মতোই। তবে ডানপন্থি সরকারের কাছে স্বীকৃতি নিলে পড়ে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসে এতে যে হাত দেবে না এর গ্যারান্টি কী? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তারা।