রোকন রাইয়ান : দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে সরকারি ও বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরেই চালু আছে শিক্ষাবৃত্তি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ দিয়ে থাকে শিক্ষার্থীদের। মজার ব্যাপার হলো এই শিক্ষাবৃত্তি বা ঋণের কোনো তালিকাতেই নেই কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। সবই স্কুল কলেজ বা আলিয়া মাদরাসার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য। বর্তমানে স্কুলের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে ডাচবাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক ছাড়াও আছে বিভিন্ন কোম্পানি। যারা নিয়মিত দরিদ্র ছাত্র/ছাত্রীদের অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্ন রকম প্যাজেক সুবিধা দিয়ে থাকে। এখানে রয়েছে ব্যক্তি কেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যারা নিয়মিত দরিদ্র ছাত্রদের নিয়ে কাজ করে থাকে। আর এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে জনগণের ডোনেশন ভিত্তিক। সেটাও এক ধরনের খয়রাত। এমন পদ্ধতির খয়রাতি টাকায় শিক্ষিত হওয়ার নজির কওমি শিক্ষার্থীদের নেই। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামের রাজধানীর একটি শিক্ষা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর ৬০ জন দরিদ্র শিক্ষার্থীকে ঋণ দিয়ে থাকে। ডপ্স নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে দুইশ’ থেকে তিনশতাধিক ছাত্র/ছাত্রীকে খাতা ও কলমের যোগান দেয়। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সেনাসদস্য শাহিন মিয়া লিখনীকে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, শিক্ষার ধনী-দরিদ্র নেই। সবাই শিক্ষা অর্জন করবে। যেখানে যেভাবে সুযোগ পায়। স্কুলের যে সবাই উচ্চ পরিবারের এমন হলে তো আমরা এ ধরনের সহায়তামূলক কাজ করতাম না।
দেশে হিউম্যান বা ডপ্সের মতো হাজারো সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সাধারণ শিক্ষার জন্য এমন দান-খয়রাত বা ডোনেশনের ব্যবস্থা করে থাকে।
স্কুলগুলোতে প্রাথমিক থেকে ঝরে পড়া রোধ করতে সরকারি বা বেসরকারিভাবে নানান উদ্যোগ চালু আছে। এই উদ্যোগগুলোর জন্য খরচ করতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। দেশের প্রাইমারি লেবেলে সব ছাত্রছাত্রীর জন্যই রয়েছে উপবৃত্তি। আবার অনেক জায়গায় রয়েছে টিফিন। বিভিন্ন জায়গায় কর্মশালা, সেমিনার ও উঠোন বৈঠকও করা হয়। ব্র্যাক বা আনন্দ স্কুলগুলোতে ছাত্র/ছাত্রীদের ধরে রাখতে প্রতিদিন টিফিন বা মাসিক বেতন সিস্টেম চালু করেছে। ২০১১ সালে সরকারি উদ্যোগে শিশুদের ঝরে পড়া রোধ করতে শিখনকেন্দ্র নামের একটি প্রকল্প খোলা হয়। যাতে ব্যয় ধরা হয় ১৪৮ কোটি টাকা।
অথচ এরই বিপরীতে কওমি মাদরাসাগুলোর লাখ লাখ ছাত্রের কোনো ঝরে পড়ার ইতিহাস নেই বললেই চলে। আর এখানে এরকম কোনো উদ্যোগ, অর্থ খরচ, টাকা-নাস্তা বা বিনোদন ইত্যাদি প্রলোভন দিয়ে ক্লাসে আনার ঘটনাও কল্পনাতীত। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্নভাবে যেখানে ঝরে পড়া রোধে নানা রকম কসরৎ করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না সেখানে বিনাশ্রমে কওমি ছাত্রদের শিক্ষা অর্জন মানুষকে অবাক ও বিস্মিত করে তোলে।