খতিব তাজুল ইসলাম::
কেউ বলবেন আল্লাহকে রাজি ও খুশি করা।কেউ বলবেন আল্লাহ ও তার রাসুলকে জানা ও মানা। কেউ বলবেন দ্বীন শিখা। কেউ বলবেন ঈমানের লজ্জত হাসিল করা। কেউ বলবেন সত্যিকার মানুষ বনা। কেউ বলবেন কোরআন হাদীসের জ্ঞানার্জন। কেউ বলবেন কর্ম শিক্ষা। কেউ বলবেন ধর্ম শিক্ষা।এখানে কি কোন কিছু বাদ পড়ার মতো আছে? ইসলামের প্রথম ওহী পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। এখানে ধর্মীয় না জাগতিক কোন বিষয়কে আলাদা করা হয়নি। প্রয়োজনে যা লাগে তাই পড়তে হবে। তিনি বললেন আমি পড়া জানিনা।জিব্রাইল আঃ বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন এবার পড়ো দেখি! না আমি পড়তে পারিনা। আবার বুকে চেপে ধরে ছেড়ে দিয়ে বললেন পড়েনতো দেখি! হ্যাঁ তিনি গড় গড় করে পড়তে শুরু করলেন। পড়ার জন্য উপায় অবলম্বন লাগে। আল্লাহ তায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার কুদরতের অপার মহিমায় সকল জ্ঞানের শিক্ষাদান করেছেন। দুনিয়া বা জাগতিক শিক্ষার জন্য পয়গম্বর আলাইহিস সালামাগণকে প্রেরণের প্রয়োজন ছিলোনা। কারণ পুরো জগতটাকে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের সামনে মেলে ধরেছেন। যেন তারা যারতার মতো করে আহরণ করে। কিন্তু আখেরাত বা পর জীবনের জ্ঞানতো মানুষের সাধ্যের বাহিরে। তাই ওহীর মাধ্যমে মানুষকে সেই শিক্ষা দান করেছেন।পবিত্র কোরআনে বিজ্ঞানময় অনেক আয়াতও আছে।পৃথিবী সৃষ্টির কথা বার বার উল্লেখ করা হয়েছে।সৃষ্টজগতের রহস্য নিয়ে মানুষকে ভাবতে আহব্বান জানানো হয়েছে।শিশু জন্মেরপর মা তার মুখে খাবার দেন।তাকে আস্তে আস্তে শিক্ষা দিতেহয় কিভাবে শক্ত খাবার দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খাবে। এটাই নিয়ম ও পদ্ধতি।পুকুরের মাছ জমিনের ধান লতার কদু গাছের ফল এমনিতেই রেডি হয়ে মুখে এসে পড়বেনা ; আপনাকে রেডি করেই খেতে হবে। যতদিন যাচ্ছে চাহিদা বাড়ছে প্রডাকশনের দরকার পড়ছে। বাড়তি প্রডাকশনের জন্য বাড়তি পরিশ্রমের প্রয়োজন। এভাবেই প্রয়োজনীয় জিনিস আহরণের প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বময়।কেউ ধান ফলাচ্ছে অন্যজন ধানের বিনীময়ে তার সন্তানদের পড়াচ্ছেন। এটাই হলো অর্থনীতির চক্র।
আমাদের কেউ ইমাম হবেন কেউ মুহাদ্দিস কেউ মুফাস্সির কেউ ডাক্তার কেউবা ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু সকলকে দ্বীনদার হতে হবে এটাই মুলকথা।অর্থনীতির এই চক্রের শুধু একটি ডাল ধরে যদি আপনি বসে থাকেন তাহলে অবশ্যই চলমান সমাজ ব্যবস্থা থেকে ছিটকে পড়বেন। ইসলামী শিক্ষা বলতে শুধু কোরআন হাদীসের জ্ঞান বা নিছক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের শিক্ষা বললে ইসলামকে খাটো করার নামান্তর।ইহা একটি পাঠ বা অংশ মাত্র।বাংলাদেশের মুসলমানদের দুর্ভাগ্য হলো যে, বৃটিশ দখলে আসার পর তারা এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের জন্য চালু করে গেছে যা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে আদর্শিক দেউলিয়াপনার দিকে ঠেলে দিয়ে আমাদেরকে সামাজিক ভাবে খন্ড বিখন্ড করে ফেলেছে। আমরা ভাবতে শুরু করেছি স্কুলে হবে জাগতিক শিক্ষা মাদ্রাসায় হবে ধর্মীয় শিক্ষা। আজকে জাগতিক শিক্ষার দৌরাত্ম্যে ধর্মীয় শিক্ষা কুণ্ঠাসা। অথচ মুসলমানদের জন্য শিক্ষাটা হবে ইসলামিক। যেখানের প্রতিটি সবক শুরু হবে বিসমিল্লাহ দিয়ে। চাহে রসায়ন বায়োলজি মেডিকেল সাইন্স কিংবা অংকের জটিল সমাধান।যে বিভক্তি আজ আমাদের কাঁদাচ্ছে। পুরো জাতি আজ মুখোমুখি অবস্থানে আছে। কেউ চাচ্ছে ধর্মের সর্বশেষ নিশানা টুকু মুছে দিতে।কেউবা রাস্তায় মিছিল করছে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের নামটা যেন বহাল থাকে। জনতার প্রবল চাপে হয়তো সাময়ীক বহাল আছে কিন্তু তা যেকোন ভাল সুযোগে বাতিল হতে বাধ্য। কারণ সংবিধানে করাত চালানোর মতো ক্ষমতা যাদের হাতে তারা এসব চায়না।তাহলে আমাদের লাভটা হচ্ছে কি যে, মাদরাসা আর স্কুল কলেজের শিক্ষাকে আলাদা করে রেখে? এই সরকার যদি ইসলামের গুরুত্ব তাদের কাছে থাকতো তাহলে প্রতিটি মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনের বেতন সরকারের কুষাগার থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতো।যারা কোরআন হাদীস পড়াচ্ছেন স্কুল কলেজের মতো তাদেরও অধিকার আছে সরকারী ভাবে বেতন পাবার।
বৃটিশ চাচ্ছিলো ইমাম মুয়াজ্জিন আর ধর্মীয় বিষয়ের ভার পাবলিকের উপর ছেড়ে দিলে তা বেশিদিন টিকবেনা। কিন্তু মুসলমানরা খেয়ে না খেয়ে তারা তাদের মসজিদ-মাদরাসা গুলোকে আবাদ করে রেখেছে।নিভু নিভু হালত বইছে।পাবলিক এবং ব্যক্তি যারতার সুযোগ মতো ওগুলোকে ব্যবহার করছে। এই পরিস্থিতি কখনো কাম্য ছিলোনা। এখনতো প্রকাশ্যে কোরআন-হাদীসের শিক্ষাকে ফালতু শিক্ষা বলে প্রচার করার সাহস দেখাচ্ছে।কদিন পরে বন্ধ করার তাগিদ আসবে।অলরেডি স্কুল থেকে তা বিদায় করে দেয়া হয়েছে।তারা এমনিতেই বলছেনা। এরও একটা কারণ আছে আর তাহলো যে, ওসব ধর্মীয় শিক্ষা থেকে জাতি কি লাভমান হচ্ছে? কোন প্রডাকশন নেই । বাহ্যিক দৃষ্টিতে তারা বিভিন্ন কোম্পানির সাথে তুলনা করে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার প্রকৌশলির সাথে তুলনা করে বলে যে ওরা কোন কাজে লাগছে তাহলে?
লতীফ সিদ্দীকী হজ্জ নিয়ে উপহাস করে কী বলেছিলো? এতো টাকা পয়সা খরছ করে কী লাভ? আসলে তার ভিতর নুন্যতম ইসলামের সৌন্দর্য্যবোধ নেই।
বস্তুত জীবন থেকে ধর্ম শিক্ষাকে আলাদা করার কারণেই এই অভিশাপ আজ আমাদের মাঝে নেমে এসেছে। এই আজাব থেকে মুক্তি পেতেহলে আগে মাদরাসা গুলোকে সংস্কার করে কার্যকরী সিলেবাস বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বীনদার মানুষকে রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে অবদান রাখার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তখন বলা যায় আস্তে আস্তে মানুষের ভিতর প্রচলিত ভুল ধারণার অপনোদন হবে।