(১ম পর্ব)
কমাশিসা ডেস্ক:: বাংলাদেশ কওমিশিক্ষা বোর্ড হিসাবে বেফাকই এখন আগের কাতারে। বোর্ডের আকার আয়তনে সংস্কারে বেফাক বেশ এগিয়ে আছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। বেফাক কেমন এগিয়েছে তার কিছু ধারণা পেতে আজকের এই অনুসন্ধানী রিপোর্ট। কিছুদিন আগে বেফাক বিষয়ে মক্তব পাঞ্জমের সিলেবাসের ব্যাপারে একজন অভিজ্ঞ আলেমেদ্বীন কি লিখেছেন তা আগে পেশ করতে চাই।
তিনি লিখেছেন-
পঞ্চম শ্রেণীর ব্যাপারে আমাদের ক্ষোভ!
বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসার সর্ববৃহৎ শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এর সম্মানিত নীতিনির্ধারক ও দায়িত্বশীলবৃন্দের প্রতি আমাদের কিছু ক্ষোভ , দুঃখ ও অভিমান আছে। আপাদমস্তক বেফাকবোর্ডের অধীনে লেখাপড়া করায় অভিমান প্রকাশের অধিকার আমাদের আছে বলেই বিশ্বাস করি।
আমাদের অভিমান অভিযোগ হলো বেফাক নির্ধারিত পঞ্চম শ্রেনীর পাঠ্যপুস্তক নিয়ে।
বেফাকে পঞ্চম শ্রেনীর পাঠ্যপুস্তক হলো নিম্নোক্ত সাতটি।
১. নাজেরা (সমস্ত কোরআন , তাজবিদ সহ)
২. তালীমুল ইসলাম (চতুর্থ খন্ড)
৩. উর্দু তেসরী (ইমদাদিয়া)
৪. বাংলা পঞ্চম পাঠ (ব্যাকরণ সহ)
৫. ইতিহাস ও ভূগোল
৬. ইংরেজি
৭. গণিত
উক্ত সাতটি সাবজেক্টর মাঝে ‘ নাজেরা ও বাংলা ‘ নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এই দুটি বিষয় পঞ্চম শ্রেণীর উপযোগী বলেই বিশ্বাস করি।
তালীমুল ইসলাম (চতুর্থ খন্ড) বইটি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রদের উপযোগী হলেও এখানে অনেক বিষয় আছে যা পঞ্চম কেন আরো বড় ক্লাসের ছাত্রের পক্ষেও বুঝা কঠিন।
আমাদের কথা হলো এই কঠিন অধ্যায়গুলোকে বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত তালীমুল ইসলামের এমন একটা নুসখা চাই যা উক্ত শ্রেণীর ছাত্রদের জন্যে সহজ ও উপভোগ্য হবে।
কারণ এমন সব অধ্যায় পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করে রাখা যা কোনো মেধার ছাত্রের পক্ষেই বুঝা সম্ভব নয় তা বেফাকের মতো একটা বোর্ডের জন্যে যেমন বেমানান তেমনি ছাত্রদের অযথাই সময় নষ্ট করা বৈ কিছু নয়।
উর্দু তেসরী , ইতিহাস , অংক , ইংরেজী এই চারটি বই পঞ্চম শ্রেনীর জন্যে একদম বেমানান। এগুলো থেকে কিছু অংশ মুখস্ত করে কোনো মতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া শিক্ষায় কোনো ভুমিকা রাখছে বলে আমাদের বোধগম্য নয়।
বরং আমি ব্যক্তিগতভাবে জোর দিয়ে বলছি এই বইগুলো উক্ত শ্রেণীর ছাত্রদের মেধার সাথে মোটেও পরিচিত নয়। খামাখা সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই হচ্ছেনা।
বেফাকের নীতিনির্ধারকদের সকলেই উচ্চ পর্যায়ের হওয়ায় তাঁরা পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রদের মেধার সাথে পরিচিত নয় নাকি এব্যাপারে উদাসীনতার কারণেই বছরকে বছর উক্ত বইগুলো পাঠ্যপুস্তক দখল করে আছে তা আমরা জানিনা!
বাংলাদেশে থাকাকালীন আমি যখন সিলেটের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষা সচিব ছিলাম তখন উক্ত বইগুলো নিয়ে দীর্ঘ চিন্তাভাবনার সুযোগ পেয়েছি। চিন্তাভাবনা করেছি। নিজে পড়িয়েছি। অন্য যারা পড়িয়েছেন তাদের সাথেও যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে। এসব থেকেই আমরা নিশ্চিত হয়েই বলছি যে উপরোক্ত বইগুলো পঞ্চম শ্রেনীর উপযোগী নয়।
সেই হিসাবে বেফাক থেকে আগত পরিদর্শকদের আমরা নিয়মিতই আমাদের অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকারের দেখা মিলেনি।
আমরা এবার খোলা মেলাই জোর দিয়ে বলছি যে উক্ত গ্রন্থসমুহ অতি দ্রুত মর্ডিফাই করে সাবলীল ও সহজ ভাষায় পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রদের উপযোগী করে প্রকাশ করা হউক। যাতে ছাত্রদের জ্ঞান বিকাশে সহায়ক হয় এবং অযথাই মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়া থেকে বেচেঁ যায় আমাদের আগামীর সুর্য সন্তানেরা।
এক্ষেত্র আমাদের বিষয় বস্ত ঠিক রেখে সরকারি পাঠ্যপুস্তকের পঞ্চম শ্রেনীর পুস্তক পদ্ধতির অনুসরণ করা যেতে পারে। উর্দুর ক্ষেত্রে আজাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের উর্দু অনেকটাই উপযোগী . সেরকম উর্দু বা এরচেয়ে ভালো কিছু করা যেতে পারে।
আরেকটা বিষয় পঞ্চম শ্রেণিতে বেফাকের নির্ধারিত পুস্তকে আরবি না থাকাটা দুঃখজনক। তাই আবু তাহের মিসবাহ সাহেবের ‘এসো আরবি শিখি ‘ প্রথম ও দ্বীতিয় খন্ডকে পঞ্চম শ্রেনীর ফাইনাল পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করার সবিনয় আবদার জ্ঞাপন করছি।
বিনীত
আপনাদের বাধ্য
জুবায়ের বিন আরমান
ইমাম , মাসজিদ শায়খ আহমাদ
মুসানদাম , ওমান।
২১/০৪/২০১৬
আমাদের ক্ষোভ ও অভিযোগের দাস্তান প্রলম্বিত না করে সাপ সুজা কয়টি প্রশ্ন বেফাকের কাছে রাখতে চাই।
(ক) বেফাক কেন ৫ম শ্রেণীতে ছেলে-মেয়েের মাঝে বৈষম্যের দেয়াল খাড়া করে দিয়ে ছেলেদের জন্য উর্দু মেয়েদের জন্য এসো আরবি শিখি বই অন্তর্ভুক্ত করলো?
(গ) ছেলেদের জন্য ফার্সি ১লি অথবা ইংরেজী ৫ম আর মেয়েদের জন্য শুধু ইংরেজী ৫ম এই এখানে কি রহস্য? ফার্সি কেন এখনো সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত? ছেলেরা এসব পড়ে লাভ কি হবে? কেন এই বৈষম্য?
(ঘ) তালীমুল ইসলাম ৪র্থ খন্ড অথবা ইসলামী তাহযীব ! এখানে কচি কাচাদের কেন বড়দের যৌনতার কথা শিক্ষা দেয়া হয়? কওমি প্রজন্মরা কি এখনো প্রাথমিক বিভাগের উপযোগী বই পুস্তক রচনা করতে অপারগ? তাহলে এই সমস্ত লেখাপড়ায় কি মেধা উপহার দিচ্ছে?
(ঙ) সাধারণ জ্ঞান বিজ্ঞানের কোন বই পুস্তক নেই। অতি স্যাকেলে ভুগল। যা পড়ে বর্তমান পৃথিবী সম্পর্কে কোন ধারনা পাওয়া যায়না। বোর্ডের রাহবরগণ কোন দেশ থেকে এসেছেন? তাদের মেধার মাপকাঠিই বা কি? ৫ম শ্রেণীর ছেলে-মেয়েদের মেধানুযায়ী সিলেবাস প্রণয়নের জন্য যোগ্য অভিজ্ঞ উলামা নিয়োগের জোর দাবী আমাদের।
(চ) যে সিলেবাস পড়ে একমাত্র কওমি ছাড়া দেশের স্বীকৃত অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের ভর্তি বন্ধ।এমন অসৌজন্য ও বৈষম্য মূলক শিক্ষার সিলেবাসের গ্লানি বাংলাদেশের মুসলিমদের আর কতদিন টানতে হবে?
(ছ) অতি দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বেফাক কর্তৃক ইবতেদায়ীয়াহ বিভাগের জন্য আরবী বিষয়ের কোন পরিকল্পনা বা ক্রম বিন্যাস নেই। অথচ বোর্ডের নামই হলো আরবী বোর্ড? একদিকে দেশের স্যাকুলার শিক্ষা সিলেবাসে সরকার মুসলিম প্রজন্মকে হিন্দু বানানোর ফয়সালা চুড়ান্ত।আর এদিকে মুর্খতা অজ্ঞতা আর খামখেয়ালিপনাও চুড়ান্ত?
(জ) আরো আক্ষেপের বিষয় হলো একই মাদরাসায় পরীক্ষার্থী ছাত্রদের জন্য আলাদা সিলেবাস হওয়ায় তাদেরকে নিয়ে যেতে হয় এক সেন্টারে আর ছাত্রীদের জন্য অন্য সিলেবাস থাকায় নিয়ে যেতে হয় ভিন্ন সেন্টারে ! কী আজব লীলা খেলা? কী আজব পেরেশানী ?
সম্মানিত উলামা মাশায়েখগণের টনক কি নড়বে?একটি সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা কি বাস্তবায়ীত হবে? মুসলিম উম্মাহর আশা আকাংখার প্রতিফলন কি ঘটবে কখনো? আজকের তরুণ প্রজন্ম এসবের জবাব চায় দ্রুত জবাব ?!
তাই আমাদের রাস্তায় নামানোর আগে বেফাক ও অন্যান্য বোর্ডের কাছে বিনীত অনুরোধ দয়া করে সময় ও বয়স বান্ধব দেশ বান্ধব ইসলাম বান্ধব সিলেবাস প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করুন।