তাহমীম আহমদ ::
চৈত্রের তাজা রাত। ভ্যাপসা গরম। বিদ্যুৎ নাই। গরম পড়লে পাড়া গায়ে বিদ্যুৎ থাকেনা। নিয়ম নাই। এক খিলি পান মুখে দিয়ে উঠনে পাটি ফেলে বসেছেন রমিজ মিয়া। ঘরের ভেতর জাহান্নামের গরম থাকলেও বাহিরটা বেহেস্তের মত। ঝিরিঝিরি বাতাস। বেশ ভাল্লাগছে। বসতে না বসতেই তানিমের আগমন। নাতি। বড্ড পাজি। কিছুক্ষণ আগে খেতে বসে রমিজ মিয়ার প্লেটে একটা গান্ধা পোকা ফেলে দিয়েছিলো। খেতে পারেননি তারপর। তানিমকে আচ্ছামত বকেছেন তখন। এখন আবার মায়া জন্মেছে নাতির জন্য। আছে আসতেই হাতে ধরে পাটিতে বসালেন।
” দেখছছ ভাই! কত্তো সুন্দর চাঁন!”
শুক্লাপক্ষের ৩য় রাত। আকাশ মেঘশূণ্য। তারকার মিছিলে কাস্তে চাঁদের নেত্রিত্ব চলছে। তানিম জিজ্ঞেস করলো, “দাদাভাই! চাঁনটা ত্যাড়া কেন? আমার বইয়ে তো দেহি ফুডবলের লাহান গোল?”
রমিজ মিয়া ব্যাখ্যা করেন। ৫বছর বয়সের তানিম দাদার বক্তব্য শুনতে থাকে গভীর আগ্রহে।
“জানস ভাই! এই চান্দের মাসেই আমাগো নবী সাঃ মেরাজে গিয়াছিলেন। তাই এইডারে মেরাজের মাস কয়। বড়ই পবিত্র মাস।”
“দাদাভাই! মেরাজ কী? বিদেশের নাম! বাপজানও তো বিদেশ থাহে। তাইলে বাপজানও কি মেরাজে? ”
অবুঝ নাতির কথায় হেসে ওঠেন রমিজ মিয়া। বহুত পন্ডিত হইবো পোলাডা। বাপেরে কইয়ো মাদ্রাসায় ভর্তি করাইবার চিন্তা করেন রমিজ মিয়া।
“শোন! তরে মেরাজের গল্প শোনাই। মেরাজে সবাই যাইতে পারেনা। মেরাজ হইলো গিয়া আমগো নবীঃ এর জন্য আল্লাহ তালার বিশেষ একখান পুরষ্কার।
জানস ভাই! এই মাসের ২৭তারিখ রাইতে আমাগো নবী নিজের বাড়ি থাইকা অ-নে-ক দূর এক মসজিদে গেছিলেন। মসজিদটার নাম হইলো গিয়া বাইতুল মুকাদ্দাস। বড়ই পবিত্র মসজিদ। কোরআন শরিফে আছে। ঐ মসজিদে নবীজী ইমাম হইয়া নামাজ পড়াইছেন। হেরপর সাত আসমান পাড় হইয়া গেছেন আল্লাহর মেহমানখানায়। আল্লাহ নিজে দাওয়াত দিয়া নিছেন আমাগো নবীরে। এর আগে আর কোনো নবী এমন জায়গায় যান নাই। ঐখানে গিয়া বেহেস্ত-দোযখ সব দেইখা আওনের পথে আমাগো লাইগা ‘নামাজ’ নিয়া আইছেন। বড়ই পবিত্র উপহার। নবীজি সাঃ কইছেন, এই নামাজটাই আমাগো লাইগা মেরাজ। যে যতবার নামাজ ঠিকমত পড়বো, হে ততোবারই মেরাজে যাইবো। বুইচ্ছস ভাই! নামাজ ছাড়া মেরাজে যাওয়ার রাস্তা নাই। এমনকি বেহেস্তে যাইতে হইলেও নামাজ পড়তে হইবো পাঁচ বেলা।”
নাক ডাকার শব্দে গল্পে ছেদ পড়ে।
লেখক : গল্পকার, অনলাইন এ্যক্টিভিস্ট।