খতিব তাজুল ইসলাম::
লন্ডন থেকে কায়রো-৩য় পর্ব
৩রা এপ্রিল ২০১৬: আরবরা বিগড়িতে বিগড়িতে যেখানে পৌছুবে; আমাদের ইবাদত করতে করতে সেখানে পৌছা খুব মুশকিল। এই কথাটি বার কয়েক আমি শুনেছি মহান এক বুজুর্গের বয়ানে। ইসলামের পথে আমাদের দৌড় যেখানে শেষ তাদের মাত্র শুরু। আসলে কথাটার বাস্তবতা অনেকাংশে সত্য। মিশরীয়দের মাঝে লোভ আছে দৈন্যতা ্আছে কিন্তু তাদের মহানুভবতা খুবই প্রশংসনীয়। তারা আধুনিক হয়েছে। পাশ্চাত্য ধ্যান ধারণা চেপে বসেছে ঠিকই কিন্তু তাদের সামাজিকতায় এখনো ইসলাম মুখ্য। একজন মসজিদের ইমাম মুস্তাফার সাথে পরিচিত হলাম। এখানের শিক্ষার কিছু খোঁজ খবর নিলাম। মিশরের স্কুল গুলোতে শিশুরা এখনো কোরআন শিখে। দ্বীনের জরুরী বিষয়গুলো জানতে পারে। জীবনে মাদরাসায় না পড়লেও চলার মতো দ্বীনী শিক্ষা সেখান থেকে পেয়ে যায়। এই জাতিটাকে যারা রুলার বা শাসক ডিক্টেটর তারাই নষ্ট করছে। যেভাবে বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে বিপদে ফেলে অন্যের নাক জুড়া লাগানোর কাজ আমাদের শাসকরা করে। ঠিক তেমনি ইসরাইল তলে তলে গোটা মিশরের শাসক কুলকে কন্ট্রোল করে। পুরো দেশব্যাপী ইসরাইলীরা ছেয়ে না গেলেও প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে তাদের রাজনীতিতে। মিশরীয়রা যদি দেখতো বাংলাদেশের মতো প্রতিটি কর্ণারে অন্য কেউ বসে যাচ্ছে তারা জীবন দিয়ে হলেও তা প্রতিহত করতো।কিন্তু রাজনৈতিক কুঠচালের সাথে কতটুকু পারিয়ে উঠা যায়। অথচ বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে বিশেষ একশ্রেণীর লোকদের বসিয়ে পুরো দেশকে জিম্মি বানানোর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিন্তু কারো কোন ছে নেই। কেউ কিছু বলারও যেন সাহস পাচ্ছেনা।
শিরক কুফর আর বিদআতে বাংলাদেশ এখন সয়লাব। ভন্ড মাজারপুজারী কবরপুজারী পীর পুজারীদের স্বর্গরাজ্য এখন বাংলাদেশ। তাই বলছিলাম আরবের মাটিতে শিরক শেঁকড় গাড়তে পারেনি এখনো। তারা বেহায়াপনা বেপর্দেগী গান বাজনায় মজেছে। আর আমাদের দেশীরা মজেছে বেহায়াপনা গান বাজনা অন্যের গোলামী আর কবর পুজা মাজার পুজা মন্দির পুজা মিনার পুজা ও স্মৃতি সৌধ পুজায়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আছে তবে আমাদের দেশের মত নয়। সি সি একটা নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে। পুলিশ মেলেটারি আমলাদের দেশ এই মিশর। পথে পথে বন্দুকধারী পুলিশ মেলেটারীদের টহল। তারপরেও বলবো আমাদের পরিস্থিতি থেকে তারা ৮০ ভাগ এগিয়ে। এখানে মা সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করেনা। এখানে ঐশীরা মা বাবাকে হত্যা করেনা। এখানের র্যব পুলিশ অহরহ খুন গুমে মত্ত নয়। রাস্তা ঘাটে ফুটপাতে দেহপশারীনীদের আস্তানা নেই। মোটামুটি দেশটা ডেপলাফ হচ্ছে।
আজ চারদিন হলো বিশেষ কোন অসুবিধা দেখিনি। কথা হয়েছে বিভিন্ন জনের সাথে। মিশরীরা ধুমপান প্রিয়। আর হুক্কা বা শীশা পান তাদের ঐতিহ্য। ট্যাক্সি ড্রাইভাররা লোভি বিদেশি দেখলে। নতুবা সবকিছু সহ্যের ভিতর। ঐতিহ্যবাহী এ্ই দেশটি উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌছানোর কথা। কিন্তু এইযে সেনা দখল তাদের পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ট্রান্সপোর্ট পরিস্থিতি তথ উন্নত নয় তবে বাংলাদেশর চেয়ে আগেই বলেছি ৮০ ভাগ এগিয়ে। সামাজিক নিরাপত্তা ভাল। যেহেতু আমারা বসবাস করি উন্নত বিশ্বের একটি সিটিতে। তাই সেখানের তুলনায় এখানে অনেক কিছু ম্লান বা সমস্যা মনে হয়। বাংলাদেশে গেলে আমাদের মনে হয় বিরাট এক আবর্জনার শহরে এসে উপস্থিত হলাম। গাড়ির ধুয়া নালা নর্দমার দুর্ঘন্ধ ছোট ছোট রাস্তা দেখলে বিরক্তি লাগে। সেদিক দিয়ে মিশর অনেক আগে। ঐতিহাসিক নীল নদীর কথা কেনা জানি। পুরো শহর ব্যাপী বাধানো পার। সারি সারি গাছ গাছালি। আমাদের সুরমা কুশিয়ারা বুড়িগংগা কথা বললে শুধু কেন্সার আর মারাত্মক ডিজিজের কথা স্মরণ হয়। প্রতিটি নদী এখন মরা ও মারাত্মক ধংসাত্মক আবর্জনায় ভরপুর।
এমনি পরিস্থিতিতে মিশরের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি দেশটি উন্নতির দিকে এগুবে তবে তার ইতিহাস ও ্ঐতিহ্যের পথ ধরেই ইনশা্আল্লাহ।