রশীদ জামীল ::
অনেক ভেবেও যে ব্যাপারটির কোনো কূল-কিনারা আমি করতে পারিনি, তা হল, মাদরাসাতুল বানাত যদি, তাহলে বাংলায় কেনো মহিলা মাদরাসা বলতে হবে! বানাত মানে তো মহিলা না। বানাত তো বিনতুন এর বহুবচন। বিনতুন মানে কি মহিলা? গার্লস স্কুল না হয় নাই বলা হল, বালিকা মাদরাসা না বলার তো কোনো কারণ ছিল না। আর মহিলা মাদরাসা বলবার যদি এতোই খাহেশ থাকে, তাহলে তো সাইনবোর্ড থেকে ‘মাদরাসাতুল বানাত’ মুছে ফেলে ‘মাদরাসাতুন নিসা’ লেখবার কথা। নামে খুব কিছু যায় আসে না, আবার অনেক কিছুই। কৈশোরিক গন্ধ গা থেকে ঝরে না পড়া এই মেয়েগুলোকে মহিলা বানিয়ে ফেলার এই ব্যাপারটি মোটেও ভালো লাগে না আমার। দরকার তো ছিল না। কেনো তবে এই খামখেয়ালী?
মহিলা (!) মাদরাসার সম্মানিত পুরুষ কর্ণধার’গণ! কথাগুলোকে হালকা কথা বলে উড়িয়ে দিতে চাইলে বলে রাখি, এভাবেই ছেটে যায় স্বপ্নের ডালপালা, ঢুকরে কেঁদে উঠে প্রত্যাশার পাপড়িগুলো। নীরবে সরব হয় অব্যক্ত হতাশা, জমা হয় মনের অরণ্যে। এমনই হয়ে থাকে, এমনই হয়। যদি হয়, সময়ের আঘাত ধেয়ে আসবে। স্বপ্নেরা আকাশেই ভাসবে, ভাসবেই। ভুলে গেলে ভুল হবে, স্বেচ্ছাচার কখনো কল্যাণ বয়ে আনেনি, কোনোকালেই না। সুন্দরের চাষাবাদে বাধা তো নেই কোনো। কেনো তবে পড়ে থাকা সম্মোহক ধূম্রজালে।
সারা দেশে মাত্র দু’একটি মাদরাসাই আছে হান্ড্রেড পার্সেন্ট মহিলা অধ্যুষিত। শিক্ষকতা করছেন তো মহিলারাই করছেন। শায়খুল হাদীসও মহিলা। এহতেমামের দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনিও মহিলা। ম্যানেজমেন্টেও আছেন মহিলারাই। সেখানে কোনো পোস্টেই কোনো পুরুষ নেই। এছাড়া বাকী প্রায় সব মহিলা মাদরাসা এখনো পুরুষ নিয়ন্ত্রিত মহিলা মাদরাসা। ম্যাক্সিমাম শিক্ষকগণও পুরুষ। ইতিনেতির দৃষ্টিভঙ্গি এখানে অ্যাপ্লাই করলাম না আর। জাস্ট ‘মহিলা (!) মাদরাসার সম্মানিত পুরুষ কর্ণধারগণ’ বলার শানে নুযুলটা বয়ান করলাম। আর কিছু না।
দুই : আজকের মেয়েগুলোই আগামীতে মা হবে। তাদের একটি বাগান হবে। বাগানের পরিচর্যায় একটুকরো ভালোবাসা মুখ তুলে তাকাবে, স্বপ্নের চাষ হবে সেখানে। কষ্টের আনাগোনা, কায়িক পরিবর্তনের পাল্টা হানা, সময়ে-অসময়ে। বড় আনন্দের এই ক।” তারপও…কলি হবে, ফুল হবে, ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জীবনের মধ্যদুপুর। ছড়িয়ে যাবে সুরভী, দূর-দিগন্তের অপারে। গেয়ে উঠবে মানবতা আবারো, বইবে আবার বিশুদ্ধ বাতাস এবং আবারো। ফিরবে আবার খাইরুল কুরুনের সোনালি সে দিনগুলো। আর এজন্য আজকের মেয়েগুলোকে তৈরি করতে লাগবে সেভাবেই, সময়ের উপযোগ মাথায় রেখে।
দেশের অর্ধেক নারী। নারীকে এভয়েড করে দ্বীনের প্রসার হয় কীভাবে? এশায়াতে দ্বীনের কন্টাক্ট শুধু পুরুষদেরই দিয়ে রাখা হয়েছে, এমন তো না। শরীয়তের দায়েরার ভেতরে থেকেই যদি নারীরা কাজ করতে পারে, কেনো প্রতিবন্ধতকার সৃষ্টি করতে হবে!
পরিপূরকতার সূত্রে গাথা ব্যাপার যেগুলো, সেগুলো নিয়ে তো সেভাবেই ভাবতে হয়। “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোদের একটি শ্রেষ্ঠ জাতি উপহার দেবো…” এই যে কথাগুলো, ফেলনা না কিন্তু। অনেক কথা লুকিয়ে আছে সামান্য এই শব্দগুলোয়। তার মানে, আগামী প্রজন্মের মাঝে দ্বীনীয়াত যদি জিন্দা রাখতে হয়, তখনকার মা’গুলোকে সেভাবেই তৈরি করতে লাগবে। কাজটা শুরু করতে হবে এখন থেকেই। আর এজন্যে স্থানে স্থানে গড়ে উঠা বালিকা মাদরাসাগুলোকে এই অর্থে অন্তত স্বাগত জানানোর কথা ভাবা যায়।
এদেশে এখন প্রচুর বালিকা মাদরাসা গড়ে উঠেছে। এক সময় কল্পনাও করা যেতো না, একটি মেয়ে অনর্গল পড়ে যাচ্ছে হাদীসের এবারত! ওয়া-বিহী ক্বালা হাদ্দাসানা…। আজকাল অনেক মহিলা মাদরাসায় ইলমে ফেক্বাহ’র মেয়েলি অধ্যায়গুলো মা’য়েরাই পড়াতে পারছেন। সবচেয়ে বড় কথা পর্দার ফরজিয়্যাতের কারণে মেয়েদের সুযোগ ছিল না ছেলেদের সাথে মাদরাসায় ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের। ধন্যবাদ জানাই আমি তাদের, যারা কোনো এক সুন্দর বিকেলে ব্যাপারটি নিয়ে ভেবেছিলেন। ধন্যবাদ তাদেরও, যারা স্থানে স্থানে বালিকা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে মেয়েদের সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন বোখারী-মুসলিম। কিন্তু… আসছি পরে।
তিন : একটি গল্প বলি। একজন নারী, ঠিক নারীও না, কিশোরী-ই বলবো আমি। নিতান্তই টিনএজ একটি বালিকা। বাবার বড় আদরের দুলালী। বড় মায়ার এই মেয়েটি তাঁর। সবসময় চোখে চোখে রাখেন। মাঝেমধ্যে অজানা কোনো ভাবনা শংকিত করে ফেলে বাবাকে। তিনি তখন বেশ আনমনা হয়ে যান। মেয়েটি একদিন বড় হবে। তুলে দিতে হবে অপরিচিত একটি ছেলের হাতে। সেই ছেলে তার কলিজার ঠুকরো মেয়েকে কীভাবে রাখবে, কতটুকু ভালোবাসা দেবে- কে জানে! মেয়েটি যদি কষ্টে থাকে আর ততদিন তিনি বেঁচে থাকেন, তাহলে দুঃখের আর শেষ থাকবে না। তিনি সেটা সহ্য করতে পারবেন না।
মনের গহিনে একটি আকাঙ্খাও রয়েছে তাঁর। সেটাকে লালন করে চলেছেন তিনি। তিলে তিলে লালিত এক টুকরো স্বপ্ন তার, ডানা মেলে সুনীলে। বাগানের মালি তিনি, দুরন্ত এক স্বপ্নচাষা। স্বপ্নের পাজর ভাঙার শব্দ তিনি শুনতে চান না কখনো। সময়ের পথ চেয়ে থাকতেও চান না আর। কাল’র চেহারা কেমন হবে-কে জানে। অতএব, সিদ্ধান্তের জয় হোক। যা হবার আজ হোক। সৌভাগ্য’র জানালা খোলে আছে সামনে, ইচ্ছের পাপড়িগুলো দুলে উঠছে বারবার, সম্মানের মুকুটটি পড়ে আছে নিঃশ্বাস দূরত্বে। হাত বাড়ালেই ছোঁয়ে ফেলা যাবে। নিজের করে নেয়া যাবে। তাহলে আর দেরি কেনো? ভালোবাসার ত্রিমুক্তো পাঠ করিয়ে কলিজার টুকরোটিকে পাঠিয়ে দিলেন চন্দ্রপুরিতে। আলোকিত আত্মার আবাহনে মেয়েটি এবার পূর্ণতা পাক, পাবেই।
অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে সংসারি হয়ে গেলেও সাংসারিক পরিপক্ষতা আসেনি তখনো মেয়েটির মাঝে। স্বামীবাড়ি গিয়ে স্ত্রী (ঠালিঘটি) খেলছেন-এমন দৃশ্য এর আগে কেউ আর দেখেনি। অবশ্য ন’বছর বয়স তো খেলাধুলা করারই বয়স। কর্মব্যস্ত স্বামী মধ্যদুপুরে অথবা শেষ বিকেলে ঘরে ফিরে দেখছেন স্ত্রী হাত-পা ছড়িয়ে মেঝেয় বসে কৃত্রিম বাসন-কোসন নিয়ে খেলাধুলায় মশগুল! প্রশ্রয়ী একটা হাসি দিয়ে তিনি নিজেই খেলাধুলার যোগাড়যন্ত্র এগিয়ে দিচ্ছেন। বয়সের এই কমতি পুষিয়ে দেয়া হচ্ছে পরিশুদ্ধ ভালোবাসায়।
যে মেয়েটির তখন হেসে-খেলে সময় কাটানোর কথা, দেখা গেলো অই মেয়েটিই হাজার হাজার বিশুদ্ধ হাদীসের বিশ্বস্ত ঠিকানা হয়ে আছে। বুঝে যাওয়ার কথা আমি কার কথা বলছি! আমি আমার মায়ের কথাই বলছি। হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবায়ে কেরামের যে তালিকা রয়েছে, সেখানে জ্বলজ্বল করতে থাকা একটি নাম হলো আমার মায়ের, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাজি.’র। বয়সের ক্যাটাগরিতে তলানির কাছাকাছি থাকা একটি মেয়ে, সাহাবায়ে কেরামের হয়ে উঠলেন মধ্যমনি। বিশ্বনবী সা.’র বিশ্বস্ত সঙ্গিনী ছিলেন বলে নবীকে শুধু দেখেনইনি, অনুভবও করতে পেরেছিলেন। একজন স্ত্রীই পারেন তার স্বামীকে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা করতে। আয়েশা সেটা করেও ছিলেন। আজ হাদীসের পরতে পরতে অই উম্মত জননীর বিচরণ। আর হযরত আয়েশা থেকে বর্ণনা মানেই দ্যাট ইজ দ্য রিয়েলিটি উইদাউট হেজিটেশন। সন্দেহাতীত সত্য।
অথচ আমাদের দেশের মেয়েগুলো হাদীস থেকে অনেক দূরে! মকসুদুল মু’মিনীন আর বেহেশতি জেওর ছিলো তাদের সর্বোচ্চ অবলম্বন। বোখারী-মুসলিম থেকে তারা ছিলো যোজন যোজন দূরত্বে। আশার কথা, এখন তারা চলে এসেছে হাদীসের কাছাকাছি। একটি মেয়ে যখন পাঠ করে, আন আয়েশাতা রা…তখন তারচে’ আনন্দের আর কী থাকে! বর্ণনা করেছেন একজন নারী, পাঠ করছেন আরেকজন নারী। আমি কল্পনার চোখে দেখতে পাই আজ থেকে এক দশক পরে এদেশে হাজার হাজার মেয়ে এমন পাওয়া যাবে, যারা ভালোবাসার কণ্ঠে তেলাওয়াত করতে থাকবে হাদীসের এবারত। কোনো মাসআলা জানবার জন্যে মসজিদের ইমাম সাহেবের মুখাপেক্ষি আর তাদের হতে লাগবে না। কারণ হেদায়ার মতো কিতাব থাকবে তাদের হাতের কাছে।
চার : আমি আবিস্কার করেছি একাগ্রতার ব্যাপারটি ছেলেদেরচে’ মেয়েদের মাঝেই বেশি থাকে। অথচ এদেশের মেয়েগুলোকে বঞ্চিতই রাখা হয়েছে, দিনের পর দিন। তাদের ট্যালেন্টকে কাজে লাগানোর ব্যাপারটি আমলেই নেয়া হয়নি দীর্ঘদিন। এই সিলেটের প্রখ্যাত এক শায়খুল হাদীস কোনো এক মহিলা মাদরাসায় ভিজিটিং শায়খুল হাদীস হিসেবে যাওয়ার পর অন্তরাল থেকে একটি মেয়ে যখন বোখারী শরীফের এবারত পড়ছিলো, বিস্মিত হয়ে তিনি বলেছিলেন, একটি মেয়ে এভাবে এতো চমতকার করে শুদ্ধভাবে এবারত পড়তে পারে- আমার কল্পনাতেও ছিলো না! আজ তো আমার ধারণাই পাল্টে গেলো!
চিন্তার সংস্কারের কথা অনেকদিন থেকেই বলে আসা চলছে। চিৎকার করে বলতে বলতে আমরা কিছু মানুষ গলা ভেঙে ফেলছি; মেয়েগুলোকে ইসলাম যে অধিকার দিয়েছে, সেটা তাদের ভোগ করতে দেয়া হোক। আল্লাহপ্রদত্ত সুবিধাদি তাদের থেকে কেড়ে নেয়ার অধিকার কারো নেই। তিনি যতবড় যেই হোন। কেনো আমরা আমাদের মেয়েগুলোকে পিছিয়ে রাখছি? কেনো ভাবছি নামায রোযা আর জরুরী মাসআলা-মাসাঈলই তাদের জন্য যথে।” একটি মেয়ে ফেক্বাহ’র কিতাবাদী থেকে মাসআলা বের করতে শিখলে সমস্যা কোথায়? নারী শিক্ষার অগ্রগতির এই যুগে সমবয়সী মেয়েরা বাংলা-ঈসায়ীলিশে অনার্স মাস্টার্স করছে। আমাদের মেয়েগুলো আমাদের মাদরাসায় হাদীসে-তাফসিরে অনার্স-মাস্টার্স করলে সমস্যা কী? ফেক্বাহ’য় পিএইচডি করতে চাইলে করুক না। বাধা দেয়া হবে কেনো?
ইতিবাচক কিছু দিক তুলে ধরবার চেষ্টা করা হলো। এবারে একটু ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে দেখা যাক। নেগেটিভ-পজিটিভ, দুটির সংস্পর্শ ছাড়া বাতি জ্বলে না। দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা মানে সফলতার দিকেই এগোনো। সমালোচনাকে পজিটিভলি নিতে হবে, সময়ের স্বার্থে। সুন্দর আগামীর নিশ্চিদ্র নির্মলতার প্রয়োজনে।
পাঁচ : বালিকা মাদরাসা (তাদের ভাষায় মহিলা মাদরাসা) নিয়ে আমার কৌতূহল ছিল খুব। পড়ালেখার মান, ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্ত্বা, কীভাবে কী হয়ে থাকছে, একটু খোঁজ নিতে শুরু করলাম। এটি একটি কঠিন কাজ ছিল। সচরাচর আমরা যে কোনো মাদরাসায় গিয়ে হানা দিতে পারি। পকেট থেকে আইডি কার্ড বের করে বলতে পারি, পত্রিকার জন্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করছি, ছাত্রদের সাথে কথা বলা দরকার। কর্তৃপক্ষ সুযোগ করে দেন। না দিলেও সমস্যা ছিল না। ছাত্রদের সাথে ওয়ান টু ওয়ান কন্ট্রাক্ট করে একটু ভুজুং-ভাজুং দিয়ে পেটের ভেতরের অনেক কথা বের করে ফেলা যায়। কিন্তু মহিলা (!) মাদরাসাগুলোর বেলায় এ সুযোগ তো নেই। মেয়েদের সাথে দেখা করে তাদের সুখ-দুঃখের কথাগুলো সামনে নিয়ে এসে কিছু বলা…সুযোগ তো নেই।
আবার হাওয়ায় ভর করে তো কিছু লেখাও যায় না। তথ্য-উপাত্ত তো লাগে। এ জন্য প্রথমে আমাকে আমার চৌদ্দগোষ্ঠীর মধ্যে কোন কোন মেয়ে মাদরাসায় পড়ালেখা করছে, তাদের একটা তালিকা তৈরি করতে হল। বোন-ভাগ্নিদের বেশ লম্বা একটা তালিকা দাঁড়িয়ে যাবার পর তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম আমি। তাদের কাছ থেকে মহিলা মাদরাসাগুলোর ভেতরগত অনেক কথা উদ্ধার করলাম। অনেক তথ্যই যোগাড় করা হলো। আমি তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ফলো করে থট রিডিং করতে চেষ্টা করলাম। আবিস্কার করলাম আরো অনেক কিছু বলতে চাইছে তারা; কিন্তু বলতে পারছে না। আমি সেগুলোও আন্দাজ করে নিতে শুরু করলাম। হাত-পা জমে যেতে লাগলো আমাও… আচ্ছা, সে প্রসঙ্গ এখন থাক। আজ আমাদের ফুলকে নিয়ে কথা বলার কথা। কাটা নিয়ে অন্য দিন।
অনেকগুলো মহিলা মাদরাসার ডাটা সংগৃহীত হয়ে যাওয়ায় এখন আমি মহিলা মাদরাসাগুলোর ভেতরগত অনেক ব্যাপার-স্যাপারই উইথ ডকুমেন্ট বলে দিতে পারি। বিস্তারিত অন্য কোথাও বলা হবে। আজকের অবসরে ইতিবাচকতার আশেপাশের সেই দিকগুলোই সামনে রাখছি, যেগুলো হজম করা মোটামুটি সহজ।
ছয় : এই বালিকা মাদরাসাগুলো নিয়ে এখনো অনেকের অসন্তোষ রয়ে গেছে। সাধারণত ছেলেদের মাদরাসার কর্তাব্যক্তিদের মাঝে এই নারাজেগিটা একটু বেশি। তাদের কথা, এতে করে ফিতনার আশংকা রয়েছে। তাদের এই ধারণা অমূলক নাও হতে পারে; কিন্তু কথা তো অন্যখানে। তাদের কথায় আমার হাসি পায় খুব। মুখ লুকিয়ে হাসি। সামনা-সামনি হাসার বেয়াদবিটুকু আর করি না। মুখ ফুটে আর বলি না, ফিতনা নেই কোথায়? মেয়েদের মাদরাসাগুলোর সাথে তো এককেন্দ্রিক ফিতনার আশংকা। ছেলেদের মাদরাসা যেগুলো, সেখানে কি সমস্যার অন্ত আছে? ফিতনার কি শেষ আছে? মেয়েলি মাদরাসাকেন্দ্রিক সর্বোচ্চ যে ফিতনার আশংকা করা হয়, ছেলেদের মাদরাসায় কি সেটার সহসাঙ্গিগ সম্ভাবনা থাকে না? নেই? তাহলে…আক্কেলমন্দ কে লিয়ে শুনেছি ইশারাই নাকি কাফি !
এককেন্দ্রিক চিন্তক যারা, আমি জানি না তাদের মনোভাব! আমি ঠিক বুঝি না তাদের মতি! মাথায় ঢুকে না তাদের নীতি! এ আমার অক্ষমতাই হবে। আমি আমার বোনকে মেডিক্যাল কলেজে পড়তে দিয়েছি! দোআ চাইতে গিয়ে মৃদু তিরস্কার ঝুটলো কপালে। মেয়েদের অসব পড়িয়ে লাভ কি? অদেরকে নামায-কালাম, মসনূন দোআ-দুরুদ শিখিয়ে দ্বীনদার পাত্র’র সাথে বিয়ে দিলেই তো দায়িত্ব আদায় হয়ে গেলো। খামোখা ঝামেলা করার দরকার কি-রে বাবা?
কিন্তু বিস্মিত হই সেই তিনিই যখন উনার আহলিয়া মুহতারামাকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে সেই মহিলা ঝামেলাকে (!) তালাশ করেন!! হযরতকে কে বোঝাবে আমি আমার বোনকে যদি মেডিক্যাল কলেজে পড়তে না দিই, তাহলে উনার ওয়াইফকে চেকাপ করানোর জন্যে মহিলা ডাক্তার তিনি পাবেন কোথায়?
তারা সবসময় দোআ করেন, আনেওয়ালা নসল যেনো হেদায়তের আলো-বাতাসের মাঝেই বেড়ে ওঠতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই যেনো দ্বীনদারি জারি থাকে। আবার মেয়েগুলোর উচ্চ দ্বীনীয়াত শিক্ষা, দাওরা পাশ করে আলিম হওয়া…এই স্বীকৃতি দিতে এখনো কুণ্ঠাবোধ করেন। আলিমা শব্দটি আমি ব্যবহার করতে রাজি না। লিখছি বাংলা, আমি বাংলা রীতিই অনুসরণ করবো, এটি প্রথম কথা। এটি আমাদের সংসদীয় সম্বোধন। সংসদ পরিভাষায় মাননীয়া, সদস্যা বা নেত্রী বলে কিছু নেই। সম্বোদনের ক্ষেত্রে সব সমান।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, একটি ছেলে যখন দাওরায়ে হাদীস পাশ করে, কই! তাকে তো আলিম আবদুশ শুকুর বলা হয় না! তার জন্যে রয়েছে স্বতন্ত্র একটি পরিশব্দ- মাওলানা। বলা হয় মাওলানা আবদুশ শুকুর। তাহলে মেয়েদের বেলায় ব্যতিক্রম কেনো? এখানে এতো আরবীর কায়দা-কানুন ফিট করে আলিম এর স্ত্রীলিঙ্গ হিসেবে আলিমা বলার দরকার কি? তাদের নামের পাশে মাওলানা জুড়ে দিতে সমস্যা কোথায়? আমার জানামতে আরবী ব্যাকরণ তো এ ক্ষেত্রে নিষেধ করছে না। তাহলে…?
সাত : যা কিছু ভালো, সেগুলো আরো ভালো হোক। ত্র“টি হিসেবে ধরা পড়া কিছু ব্যাপার নিয়েই বলা দরকার। সমালোচনার দৃষ্টিতে না, ভালোবাসার চাহনিতে। আর প্রথমেই বলে রাখি, নিচের কথাগুলো তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যাদের বেলায় খাটে। কাদের বেলায় খাটবে, সংশ্লিষ্টরা জানলেই হল। মনে রাখা দরকার, সতর্কতার বার্তা বারবার আসে না। সংশোধনের আওয়াজ কানে এলে কাজে লাগিয়ে ফেলা ভালো, যদি কিছু ভুল থাকে। এমন পরিবেশ যেনো অনিবার্য না হয়ে পড়ে, মাথা ব্যাথার জন্য মাথাগুলোই যেনো কেটে ফেলতে না হয়। হে আল্লাহ, সুমতি দাও।
বললে অনেক কথাই তো বলতে হবে। আমার বদখাসলত হলো, কথা বললে সেটাই বলবো, যা বিশ্বাস করি। মহিলা মাদরাসা সংক্রান্ত নেতিবাচক অনেক ব্যাপারও রয়েছে, যেগুলো নিশ্চিদ্র আগামীর সার্থেই সমাধান দরকার। ফোড়া বরন হয়ে ওঠার আগেই তো গেলে দেয়া ভালো। তা না হলে সমস্যা। একসময় ইনফেকশন হয়ে যাবে। তখন আর মলম-পট্টিতে কাজ হবে না। সার্জারী লাগবে। কোথাও কোথাও ওপেন হার্ট সার্জারীও জরুরী হয়ে পড়তে পারে, বলা যায় না। আজ আমি সেদিকে যাচ্ছি না। আগেই বলেছি, আজ শুধু ফুলকেই দেখবো। কাঁটাকে নয়। কাঁটা নিয়ে অন্য কোনো সুযোগে কথা হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মুখ তো বলে অভ্যস্ত। একেবারে না কিছুই না বলে মনে হয় পারাও যাবে না। কী আর করা।
আট : আবাসনের ব্যাপারটিই আমি আগেই বলবো। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি অস্বস্থিকর মনে হয়। আজকাল মাজারী সাইজের একখান বাসা ভাড়া করে বাসার সাইজের প্রায় সমান বড় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে সামনে। কড়কড়ে নীল অথবা গাঢ়ো সবুজ অক্ষরে লেখা থাকছে …মহিলা মাদরাসা! বাবারা তাদের কন্যাকে এনে সোপর্দ করে দিয়ে যাচ্ছেন মাদরাসায়। কিন্তু অনুল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছাড়া সবগুলো মাদরাসাই ছাত্রীদের জন্য কয়েদখানা হয়ে আছে। বাবা যে মেয়েকে দিয়ে যাচ্ছেন, মাস খানেক পরে এসে ছুটিতে নিতে আসার আগ পর্যন্ত এই মেয়ে আর বাইরের আলো বাতাস দেখেনি! গোসল করেছে, চুল শুকানোর সুযোগ পায়নি। ভেজা চুলে গামছা বেধে…পানি ঝরানো বন্ধ করা যায়; কিন্তু স্যাঁতসেতে আঁটালো ভাব দূর করা যায় না। রোদ থেকে ভিটামিন ডি’র ছোঁয়ায় চুলগুলো পুষ্টি পাবে দূরে থাক, মাথার উকুনগুলো পর্যন্ত ভোগতে থাকে পুষ্টিহীনতায়। শুরু হয় শোকার্তদের মিছিল। হাসবেন না। এমন বালিকা মাদরাসার কথা আমি জানি, এই সিলেটেই, উকুনের যন্ত্রণায় ছাত্রীদের মাথা পর্যন্ত কামিয়ে ফেলতে হয়েছে। ছাত্রীর নাম পর্যন্ত মুখস্ত আছে আমার।
কথাটি এ জন্যে বললাম, বাংলাদেশের কারাগারগুলোর মতো এই যে গাদাগাদি, এই যে আমন্ত্রিত নোংরা পরিবেশ, এই যে দমবন্ধ পরিস্থিতি, ইসলাম তো এই বাধ্যকতা চাপিয়ে দেয়নি উপরে! কুরআন-হাদীসের কোথাও তো বলে দেয়া হয়নি মেয়েদের (নারীদেরকেও পড়া যাবে) আলো বাতাসহীন স্থানে বন্দী করে রাখতে হবে! পর্দা ফরজ করা হয়েছে, ঠিকাছে। জাহেলিয়্যাতের যুগের মেয়েদের মতো বাইরে বেরুতে নিষেধ করা হয়েছে, ঠিকাছে। তার মানে তো আর এই না, বাইরের আলো-বাতাস তাদের জন্য হারাম করা হয়ে গেছে!
বলছি এ জন্য যে, যারা বালিকা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে করে অশেষ সওয়াব হাসিলের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, তাদের উচিত ছিল আগে যথাযত পরিবেশ তৈরি করা। মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র একটি স্থান বাছাই করা। যেখানে পর্দার প্রতি পূর্ণ খেয়াল রেখে সু-উচ্চ দেয়ালঘেরা খোলা মাঠ থাকবে সামনে। সেটা সম্ভব না হলে অন্তত খোলা ছাদ। একটু রোদ, একটু মুক্ত বাতাস, মেয়েগুলো একটু রিলাক্স করুক না। সুস্থ থাকুক না। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, রোগ-বালাই লেগেই থাকে মেয়েদের। থাকবেই তো। পরিবেশের-আবহাওয়ার একটা ফজিলত আছে না!
পুরুষ কর্তৃপক্ষ হওয়ায় আবাসনের এই অস্বস্থিকর ব্যাপারটি তাদের মাঝে কোনো প্রভাব ফেলে না। ফেলতো, যদি মাদরাসা এক সপ্তাহ বন্ধ দিয়ে এই এক সপ্তাহ এই পুরুষ কর্তৃপক্ষকে সেখানে আলো-বাতাসহীন অবস্থায় বন্দী করে রাখা যেতো, ঠিক যেভাবে মেয়েরা থাকে, তখন তারা বুঝতেন, এমন হলে কেমন লাগে!
নয় : স্যানিটেশন সমস্যার কথা আর বলার মতো অবস্থায় নেই। বিশেষত শহরকেন্দ্রিক মাদরাসাগুলোতে। সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং অপরিচ্ছন্ন ব্যবস্থায় চলতে থাকা এই প্রাকৃতিক ক্রিয়াকাণ্ডের অনিবার্য পরিণতিতে মেয়েগুলো প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। প্রয়োজনের তুলনায় ব্যবস্থা এতই কম থাকে যে, বেশ বিব্রত-বিরক্তিকর পরিবেশের সাথেই তাদের নিত্যপরিচয় ঘটতে থাকে। যে কারণে তাদের শরীরে বাসা বাধছে বিভিন্ন রোগ-জীবানু। সারা জীবন বয়ে বেড়াচ্ছে তারা সেগুলো। অথচ আমার মনে হয় না, কর্তৃপক্ষের কাছে এটাকে কোনো সমস্যা বলেই মনে হয়!
পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা তৈরি করতে না পারলে ছাতা মেলতে কে বলেছিলো? প্রকৃতিগতভাবে মেয়েলি অনেক ব্যাপার আছে, যেগুলোর জন্য যথাযত সুবিধা থাকা দরকার। মোটামুটি মানসম্পর্ণ বাথরুম তো অবশ্যই দরকার। তা নাহলে মেয়েগুলো ভোগতে থাকবে এক ধরনের মানসিক অস্বস্থিতে, যা আবার নোংরা পরিস্থিতির একেবারেই কাছাকাছি। কর্তৃপক্ষ আশা করি বুঝতে পাছেন, আমি কী বলতে চাইছি! আর এটাও যদি বুঝবার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে আমি দুঃখিত, আপনার মাদরাসাকে আমি আর মাদরাসা বলতে রাজি থাকবো না। এটাকে আমি আপনার দোকানই বলবো। আর অনুরোধ করবো, দোকানটি দয়া করে বন্ধ করে দিন। আমার বোনকে, আমার মেয়েকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করবার কোনো অধিকারই আপনার নেই।
দশ : খাবারের মান নিয়ে অনেক কথাই বলার আছে। যথেষ্ট মানসম্পন্ন খাবার সরবও করবার মতো খোরাকি ফি আদায় করা হলে খাদ্যমানে ঘাটতি থাকবে কোন দুঃখে? সাধারণত এদেশের কওমী মাদরাসাগুলো পরিচালিত হয়ে থাকে সাধারণ মুসলমানদের দানের পয়সায়। সেগুলোতে খাবারের মান যথেষ্ট উন্নত না হলেও কিচ্ছু করার থাকে না। কিন্তু এসব মহিলা (!) মাদরাসাগুলোতে খাবারের বিল আলাদাভাবেই আদায় করা হয়। সাথে থাকে দ্বীনদার মুসলমানের সহায়তা। তাহলে আলুর ঝুলের নিচে ডুবে থাকতে হবে কেনো?
আবার কিছু মাদরাসার ভয়াবহ দায়িত্বশীল এমন হযরতগণের কথাও আমার জানা আছে, দ্বীনদার মুসলমান মাদরাসায় গরু-ছাগল দিলে সেগুলোর শরীরের উল্লেখযোগ্য লোভনীয় অংশগুলো তারা তাদের জন্যই কম ঝুলে ভোনা করে আরাম করে খান। ব্যাপারটি শোনার পর আমি ভেবে পাইনি তাদের বিবেকটুকু তখন কোথায় চলে যায়? কন্যাদের আহার থেকে নিজেরা কেড়ে নিচ্ছেন, ওদেরকে কোনো রকমে খাইয়ে নিজেরা মজা করে খাচ্ছেন, কেমন বাবা তারা? এটা যারা করেন, তাদের নিজেদের লজ্জা করে কি না, জানি না, তবে ব্যাপারটি শোনার পর থেকেই নিজের ঘাড় থেকে লজ্জা সরাতে পারছি না!
এগারো
কথা শেষ করা দরকার। সমস্যা থাকলে চিহ্নিত করে প্রতিকার করতে হবে। বালিকা মাদরাসাগুলোর ত্র“টি-বিচ্যুতি ইন্ডিকেট করে সমাধানের পদক্ষেপ দরকার। আজকের দিনে, স্থানে স্থানে গড়ে ওঠা বালিকা মাদরাসাগুলো নিয়ে বিচিত্র এক অনুভূতি কাজ করে আমার মাঝে। এক কথায় বলা যায় কষ্টানন্দের বৈচিত্র মনোভাব! উপরের জগাখিচুড়ী টাইপ খুচরো কথাবার্তা সেটারই প্রতিফলন। সব ছাপিয়ে তবুও বলি, এই মাদরাসাগুলোকে নিয়ে, এই মেয়েগুলোকে নিয়ে চমৎকার একটি স্বপ্ন দেখি আমি। এদের চেহারায়, এদের কল্পিত চেহারায় আমি হযরত আয়েশার অবয়ব দেখতে চাই। আমি আশা করি এদের মধ্য হতেই একজন কেউ তৈরি হবে যামানার মুজাদ্দিদ হিসেবে। হতেও তো পারে। এদের ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসবে যুগের সংস্কারক। অন্তত মেয়ে মহলে, আমাদের মা মহলে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে নারীর পরিচয় চারটি,
সে কারো মা হবে
সে কারো স্ত্রী হবে
সে কারো বোন হবে
সে কারো কন্যা হবে।
সবগুলোর সাথেই জুড়ে আছে আবেগ আর ভালোবাসা। সব থেকে বড় পরিচয়, সে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ। নারীকে শ্রদ্ধা করতে হবে, ভালোবাসতে হবে। আর সবচেয়ে বড় ভালোবাসা হচ্ছে তাদেরকে তাদের অধিকার দেয়া। শিক্ষার অধিকার তো বটেই। এ ক্ষেত্রে সংকীর্ণ মানসিকতা ঝেড়ে ফেলতে লাগবে। আবেগ থাকবে আবেগের জায়গায়, বিবেক চলবে বিবেকের মতো।
শেষবেলায় বলি, জমে ওঠা ধুলিবিন্দু অলোকিত ছায়াসিন্ধু আমি তুমি সে তাহারা, আত্মজ হৈমন্তি অনুরাগে আবাহিত। পানসে হল চন্দ্রাহত’র অনুস্মৃতি, অভিলাসি অবিষাদি হৃদ্যিক অনুরাগে। তাড়নার চাপ আজ চেতনার গভীর থেকে। যাতনা অকালে পেকে বেরিয়ে আসে বাষ্পায়িত আভায়, হতে চায় প্রবাহিত, হারিয়ে যাওয়া প্রকর্ষণে অনুগম অভিসারি সেই, কেনো যেনো ললাটে ললাটে ভাজ।
সফেদ চাদরে ঢাকা কর্ষিত ক্ষণগুলো বিনোদিত হয় হোক, হোক না-
অনুনিত আবভহনে
বৈকল্য বিলাসগুলো সেই, ঘুছে যাক মুছে গিয়ে জেগে যাক, যাক না-
তন্দ্রিত জাগরণে
লেখক : জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত লেখক, কথা সাহিত্যিক, নিউইয়র্ক।