স্টাফ রিপোর্টার :: বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামই থাকছে। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে যে রিট দায়ের করা হয়েছিলো আজ সোমবার তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুর দুইটায় বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশাফুল কামাল। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিক ও সুব্রত চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এ সময় বিচারপতি বলেন, “এ বিষয়ে আর শুনানির কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত পড়ে এসেছি। যারা আবেদন করেছেন, তাদের আবেদনটি গ্রহণযোগ্য নয়।” আদেশে বলা হয়, আবেদনকারীদের আবেদনের অধিকার (লোকাস স্টান্ডি) নাই। ২৮ বছর আগে দায়ের করা এ রিটে ৫ বছর আগে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। রিট আবেদনকারীদের বেশিরভাগ এরই মধ্যে মারা গেছেন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে সবশেষ শুনানি হয়। সেদিন ১৪ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি মনোনীত করে ২০১১ সালের দেয়া আদেশ প্রত্যাহার করেন হাইকোর্ট। আবেদনকারীদের আইনজীবী এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক রিট খারিজের পর এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান, আদালত রিটের বিষয়ে আমাদের কোনো জবাব গ্রহণ করেননি। আমরা আদালতকে বলেছি রিটের সপক্ষে আমাদের জোরালো যুক্তি রয়েছে। কিন্তু আদালত আমাদের কোনো জবাব গ্রহণ না করেই আবেদনটি খারিজ করে দেন। যা দুর্ভাগ্যজনক। ১৯৮৮ সালের ৫ জুন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম জাতীয় সংসদে পাস করা হয়। সংশোধনীতে ২(ক) অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করে বলা হয়, “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করিবেন।” একই বছরের ৯ জুন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এটা আইনে পরিণত হয়। ওই বছরের আগস্টে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেনসহ দেশের ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। দীর্ঘদিন পর ২০১১ সালের ৮ জুন হাইকোর্টে একই বিষয়ে ফের সম্পূরক আরো একটি আবেদন করে রিটের শুনানির আবেদন করা হয়। পরে ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেয়া কেন অবৈধ, বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার ও আইন সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। রুলের জবাব দাখিলের পর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনকারীদের অপর একটি আবেদনে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন। পরে ওই রুল শুনানির জন্য আদালতের নজরে নেয়া হলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বৃহত্তর এই বেঞ্চ ২৭ মার্চ দিন ধার্য করেছিলেন। ওই রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নানা ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ বাস করে। এটি সংবিধানের মূল স্তম্ভে বলা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রধর্ম করে অন্যান্য ধর্মকে বাদ দেয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অভিন্ন জাতীয় চরিত্রের প্রতি ধ্বংসাত্মক।
Copyright Daily Inqilab