শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:৪৪
Home / প্রতিদিন / প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে মন্তব্য : বিব্রত আ’লীগ হাইকমান্ড

প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে মন্তব্য : বিব্রত আ’লীগ হাইকমান্ড

4792_ind

দুই মন্ত্রীর বক্তব্যে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী

দুজন মন্ত্রী বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য ও প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মীর কাসেম আলীর মামলা নতুন করে শুনানির দাবি করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরক্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচারাধীন মামলার বিষয়ে কথা বলা তাঁদের কাজ নয়। তিনি এ–ও বলেন, মীর কাসেমের মামলার রায়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে চলমান বিতর্কের ব্যাপারে দুই মন্ত্রী যা বলেছেন, তা সরকারের বক্তব্য নয়।

মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তাঁর মত প্রকাশ করেন। একাধিক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাব প্রকাশ হওয়ার পর গতকাল এ নিয়ে সরকারের কোনো মন্ত্রী বা বিচার–সংশ্লিষ্ট কেউ কোনো মন্তব্য করেননি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি শেষে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলার সময় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। ওই আলোচনায় মন্ত্রিসভার আর কোনো সদস্য অংশ নেননি।
গত শনিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর মামলার পুনঃশুনানি দাবি করেন। ওই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। গত রোববারও আবার নিজের কথার পুনরাবৃত্তি করেন কামরুল ইসলাম। আর দুই মন্ত্রীর বক্তব্যকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আলোচিত ওই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। গত কয়েক দিনে বিতর্ক ও সমালোচনার অন্যতম লক্ষ্য প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি এ সময় দেশের বাইরে ছিলেন। গতকাল বিকেলে তিনি দেশে ফিরেছেন।
রায় ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে দুজন মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, এতে মনে হয় যেন ওই সংগঠনটি সরকারের কোনো সংগঠন এবং এই বক্তব্য যেন সরকারের বক্তব্য। এতে কারও কারও ধারণা হতে পারে, সরকারই যেন বিষয়টি আদালতের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই একজন মন্ত্রী যা বলতে চান তা ভেবেচিন্তে বলা উচিত। বিচারাধীন বিষয়ে এভাবে মন্তব্য করা ঠিক নয়।         

কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হক। ফাইল ছবি

দুই মন্ত্রীকে তলব করেছেন আপিল বিভাগ

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে তলব করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই দুজনের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের নয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রচারিত কিছু সংবাদে বিচার বিভাগ নিয়ে অশোভন ও অবমাননাকর মন্তব্য দেখে আদালত স্তম্ভিত। এসব মন্তব্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল বলে আদালত মনে করেন।
আদালত বলেন, গত ৫ মার্চ (শনিবার) একটি গোলটেবিল বৈঠকে দুই মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে চরম অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন, যা বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপের শামিল। তাঁদের ওই বক্তব্য বিচার বিভাগের সম্মান ও কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চান আদালত।

দুই মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হককে আগামী ১৫ মার্চ সকাল নয়টায় আপিল বিভাগে সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত শনিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার পুনঃশুনানি দাবি করেন। ওই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। গত রোববার আবার নিজের কথার পুনরাবৃত্তি করেন কামরুল ইসলাম।

্ববিচারাধীন বিষয়ে বক্তব্য না দিতে আইনমন্ত্রীর অনুরোধ

বিচারাধীন কোনো বিষয় নিয়ে বক্তব্য না দিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সবার কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে, সুপ্রিম কোর্ট একটি প্রতিষ্ঠান। এখানকার বিচারপতিগণ সেই প্রতিষ্ঠানের অংশ। যখন আদালতের কোনো বিষয় তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেসব বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়। এতে এই প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। এই প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণ্ন হলে দেশের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বর্তমান সরকারের আমলে দৃঢ় হয়েছে। বিচার বিভাগে তারা কোনো হস্তক্ষেপ করে না বা চাপ দেয় না।’
তবে দুই মন্ত্রীকে আদালতের ‘রুল-নিশি’ জারির বিষয়ে আইনমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তিনি আগেও কখনো মন্তব্য করেননি এখনো করবেন না।’
আজ সকালে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে তলব করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই দুজনের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা যদি রিভিউ পিটিশন দাখিল না করেন, তাহলে রায় কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর রিভিউ পিটিশন করলে শুনানি শেষে যে রায় হবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

দুই মন্ত্রীকে লিগ্যাল নোটিশ
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়ায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী
আ ক ম মোজাম্মেল হককে লিগ্যাল নোটিস দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুলফিকার আলী জুনু এ নোটিস পাঠিয়েছেন। নোটিসে বলা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪-এর অনুচ্ছেদের ৪ নম্বর উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারক বিচারকাজ পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন। মন্ত্রীর নির্দেশনামূলক বক্তব্য সরাসরি বিচার বিভাগ এবং প্রধান বিচারপতির বিচারিক ক্ষমতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের শামিল। তাই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অসাংবিধানিক ও আদালত অবমাননার শামিল। নোটিসে আরও বলা হয়, এসব বক্তব্যের মাধ্যমে আপনারা প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগে বিচারাধীন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন। রায় প্রকাশের আগেই কোনো মামলায় আদালত কী রায় দেবেন, তার নির্দেশনামূলক বক্তব্যের মাধ্যমে আপনারা অনুরোধ করেছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থি ও আদালত অবমাননার শামিল। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রধান বিচারপতিকে আপনারা বিচারাধীন মামলা থেকে সরে নতুন বেঞ্চ গঠন এবং পদত্যাগের দাবি করেছেন, যা সরাসরি আদালত অবমাননার শামিল। তাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রেরুলের জবাব দিতে সময় চাইবেন খাদ্যমন্ত্রী

আদালতের রুলের জবাব দিতে সময় চাইবেন বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। মন্ত্রী বলেন, এক সম্মেলনে যোগ দিতে আজ তিনি মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। ১৬ বা ১৭ মার্চ দেশে ফিরবেন। এ জন্য মন্ত্রী আদালতের কাছে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চাইবেন। দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। টিভিতে দেখেছেন যে রুল-নিশি জারি হয়েছে। হয়তো আদেশের কাগজও পেয়ে যাবেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি কাজ করবেন। তবে আজ মালয়েশিয়ায় একটি সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন। এ বিষয়ে ২ মার্চ সরকারি আদেশ জারি হয়েছে। এ জন্য তিনি জবাব দিতে সময় প্রার্থনা করবেন। আইনজীবীর মাধ্যমে সময় প্রার্থনার জন্য তিনি বলে যাবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তা একজন মন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। একজন বিচারপ্রার্থী হিসেবে তিনি বক্তব্য দিয়েছিলেন, তবে তিনি যে একজন মন্ত্রী, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’
খাদ্যমন্ত্রী মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকায় আনন্দ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, এর ভাষা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এতে তিনি খুবই আনন্দিত।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে তলব করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই দুজনের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের নয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রচারিত কিছু সংবাদে বিচার বিভাগ নিয়ে অশোভন ও অবমাননাকর মন্তব্য দেখে আদালত স্তম্ভিত। এসব মন্তব্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল বলে আদালত মনে করেন। উৎস- প্র.আলো ও মানব জমিন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...