ইলিয়াস মশহুদ :: ভারতের প্রখ্যাত আলেম, বিশ্ব বরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা সিদ্দিক উল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, শিক্ষার জন্য কিছুসংখ্যক চাকুরীজীবি সৃষ্টি করা মাদারিসে কওমীয়ার উদ্দেশ্য নয়। দেশ, সমাজ ও জাতির জন্য হিতকর মানুষ তৈরি করাই এর উদ্দেশ্য। মনুষ্যত্ব, মানবিকতা এবং ইহ-পারলৌকিক সফলতা অর্জনই এ শিক্ষাধারার মূল উদ্দেশ্য। এসব দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আদর্শ মানুষ গড়ার কারখানা। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা এবং নৈতিক শিক্ষা সম্প্রসারণে মাদারিসে কওমীয়ার বিকল্প নেই। কওমী মাতদরাসায় পড়ে একজন ছাত্র বহুমুখী জ্ঞান অর্জন করতে পারে। একজন ছাত্র একাধারে আলেম, হাফেজ, মুফতী, মুহাদ্দিস, ইমাম-খতীব হতে পারে কিন্তু অন্য কোনো শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বহুমুখী জ্ঞানার্জনের সুযোগ নেই। যারা ডাক্তারী লাইনে পড়েন, তারা শুধু নির্দিষ্ট একটি বিভাগ নিয়ে কাজ করতে পারেন। এদিক দিয়ে কওমী মাদরাসা সমূহ অনন্য।
তিনি গতকাল শনিবার সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার মাদরাসার ২দিন ব্যাপী ৪১তম বার্ষিক ইসলামী মহা সম্মেলনের শেষ দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে বুপরোক্ত কথাগুলো বলেন। জামেয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং জামেয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা মুসা বিন হাবীব, শিক্ষক হাফেজ মামুন আহমদ, শিক্ষ মাওলানা ফাহাদ আমানের যৌথ পরিচালনায় সম্মেলনের সমাপনী দিনে বয়ান পেশ করেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট আরেমে দ্বীন, বিশ্ব বরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা সিদ্দিক উল্লাহ চৌধুরী, মাওলানা আবুল কালাম জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুস সালাম বাগরখালী, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক সাহেবের সাহেবজাদা মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা ইসমাঈল হোসেন নরসিংদী, মাওলানা ফজলুর রহমান বানিয়াচঙ্গী, বিশিষ্ট টিভি ভাষ্যকার, কমাশিসার রুপকার খতীব মাওলানা তাজুল ইসলাম, ক্বারী মুখতার আহমদ প্রমুখ।
জামেয়ার প্রিন্সিপার মাওলানা হাবীবুর রহমান বরেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম অর্থই হচ্ছে শান্তি। ইসলামে সন্ত্রস-দুর্নীতির কোনো স্থান নেই। আর মাদারিসে কওমীয়া হচ্ছে শান্তির সোপান। সুতরাং কওমী মাদরাসাকে নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত জাতি কখনো মেনে নেবে না। মাওলানা হাবীবুর রহমান আরো বলেন, বিশ্বনবী সা.’র ইজ্জত রক্ষায় একদফা এক দাবী আন্দোলনের এখনই সময়। অবিলম্বে এ দাবী আদায়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। যে দেশে বঙ্গবন্ধু আর প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করলে এর কঠিন শাস্তি হয় কিন্তু মহানবী সা.কে কটাক্ষ করলে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়, এদেশের ধর্মপ্রাণ তাওহিদী জনতা এটা কখনো মেনে নিতে পারেনা।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খতীব মাওলানা তাজুল ইসলাম বলেন, কওমী মাদরাসার ছাত্রদের এখন আর গোড়া, সেকেলে বলার সাহস এবং সুযোগ কারো নেই। বাংলাদেশের ধর্মীয় আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রসৈনিক পিন্সিপাল হাবীবুর রহমান এবং তাঁর হাতেগড়া জামেয়া মাদানিয়া এর উজ্জল দৃষ্টান্ত। কওমী শুধু কওমী মাদরাসার ছাত্ররা এখন আর শুধু মসজিদ-মাদরাসার চার দেয়ালে আবদ্ধ নয়। তারা দেশ ও জাতির বহুমুখী খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। কওমী মাদরাসায় শিক্ষা অর্জন করার পামাপাশি জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনামের সাথে অধ্যাপনার কাজ করে যাচ্ছে। বেতার, টেলিভিশন তথা মিডিয়া পাড়ায়ও উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। এটা আনন্দের বিষয়।
জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার মাদরাসার ২দিন ব্যাপী ৪১তম বার্ষিক ইসলামী মহাসম্মেলন গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে আজ সোমবার বাদ ফজর আখেরী মুনাজার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। সম্মেলনে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার তওহিদী জনতা, উলামায়ে কেরাম, ছাত্র সমাজ অংশ নেন।