শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:২৩
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / আত্মার খোরাক (৪)

আত্মার খোরাক (৪)

imagesফাহিম মুহাম্মদ আতাউল্লাহ ::
হযরত মূসা আ.’র যুগের ঘটনা। এক ব্যক্তি জানতেন হযরত মূসা আ. তূর পাহাড়ে গিয়ে আল্লাহর সাথে কথাবার্তা বলেন। হটাৎ তার মাথায় পশু-পাখির ভাষা বোঝার ভূত চাপলো। যেমন অনেকের মধ্যে জিন দেখার আগ্রহ জাগে। সে হযরত মূসা আ.-এর কাছে আরজ করলো, হে আল্লাহর নবী! আপনি যখন তূর পাহাড়ে যাবেন তখন দয়া করে আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেনো পশু-পাখির ভাষা বুঝতে পারি। মূসা আ. তার জন্য দোয়া করলেন। ফলে সে পশু-পাখির ভাষা বোঝার সক্ষমতা অর্জন করলো।

পরের দিন। সকালে নাস্তা করার পর সে বেঁচে যাওয়া খাবারের উচ্ছিষ্ট টুকু বাইরে ফেললো। উচ্ছিষ্ট খাবার খেতে তার কুকুর ও মোরগটা ছুটে এলো। কিন্তু কুকুরের আগেই মোরগ পৌঁছে গেলো খাবারের কাছে। কুকুর মোরগকে উদ্দেশ্য করে বললো, ভাই মোরগ!! আমার প্রতি একটু দয়া করো, আমি সারারাত পাহারার কাজে ছিলাম, এখন খেয়ে ঘুমোতে যাবো। তুমিতো সারাদিন এদিক- সেদিক থেকে খেতে পারবে। তাই যদি আমাকে খেতে দাও তাহলে স্বস্তিতে ঘুমোতে পারতাম। তাছাড়া আমি প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত।

মোরগ বললো, ভাই !! তুমি চিন্তা করো না। আমাদের মালিকের যে ঘোড়াটি আছে তা কাল মারা যাবে। ফলে তুমি অনেক গোসত খেতে পারবে। একথা শুনে কুকুর খুশি মনে ঘুমোতে গেলো।

এদিকে মালিক একথা শুনে চিন্তিত হয়ে গেলো। সে বাজারে গিয়ে ঘোড়াটি বিক্র করে দিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো, যাক!! পশু-পাখির ভাষা বোঝার কারণেই আজ আমি বড়ো ক্ষতি থেকে বেঁচে গেলাম।

পরের দিন। মালিক নাস্তার পর উচ্ছিষ্ট ফেললে এবার ও কুকুর এবং মোরগ ছুটে এলো। কিন্তু এবারও মোরগই খাবারটা কেড়ে নিলো। কুকুর এবার করুণ কণ্ঠে বললো, ভাই! তুমি বড়ো অবিবেচক। কাল আমাকে অভুক্ত রাখলে, আজ অন্তত আমাকে খেতে দাও।
মোগ বললো, চিন্তা করো না, আজ মালিকের গাধাটা মারা যাবে। ফলে তুমি মজা করে পেটপুরে খেতে পারবে।

আজো মালিক চালাকি করে গাধাটা বিক্রি করে দিলো। ঘরে ফিরে গর্ব করে স্ত্রীকে বললো, দেখলে!! পশু-পাখির ভাষা বোঝার কারণে আমরা কতো বড়ো ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেলাম। তার কথায় স্ত্রীও তাকে বাহবা দিতে লাগলো।

তৃতীয় দিন। নাস্তার পর। মোরগ আজো জিতে গেলো। কুকুর এবার ক্রুদ্ধস্বরে বললো, তুমি একটা চিটার। মিথ্যাবাদী, এই মুখ দিয়ে আজাদ কীভাবে দাও?

মোরগ বললো, আমি পশু-পাখির মুয়াজ্জিন।আমি মিথ্যা বলি না। কাল আমাদের মালিক নিজেই মারা যাবেন। তার মৃত্যু উপলক্ষে অনেক খাবারের অায়োজন হবে। অনেক হাড্ডি তুমি পাবে। তখন পেট পুরে খেও।।

একথা শুনে মালিক চমকে গেলো। ভয় অস্থির হয়ে সে মূসা আ.-এর কাছে ছুটে এলো। বললো, হে আল্লাহর নবী!!! আমার মোরগ বলছে আজ আমি নিজেই মারা যাবো!! তার কথা শেষ হতে না হতেই মূসা আ. হযরত আজরাঈল আ. কে আসতে দেখলেন।

হযরত মূসা আ. বললেন, দেখো!! তোমার ভাগ্যলিপিতে লেখা ছিলো, তোমার ঘরে মৃত্যু আসবে। কিন্তু নির্দিষ্ট ছিলো না যে, কে মারা যাবে।
আল্লাহ প্রথমে তোমার ঘোড়ার ওপর মৃত্যু নির্ধারণ করলেন, কিন্তু তুমি চালাকি করে ঘোড়াটি বিক্রি করলে।

এরপর গাধার ওপর মৃত্যু নির্ধারণ করলেন। এবারো তুমি গাধাটি বিক্রি করে দিলে। সবশেষে আল্লাহ সে মৃত্যুকে তোমার জন্য নির্ধারণ করে দিলেন। মালাকুল মাওত তার জান নিয়ে চলে গেলো।

বন্ধুরা! আমরা অনেকেই ভাগ্য গণনার জন্য অস্থির হয়ে উঠি। কখনো কখনো ভাগ্যকে দোষারোপ করি। আফসোস করি। আহ! আগে জানলে এমন করতাম না। তেমন করলে এমন হতো না। সত্যি কথা হলো, আল্লাহ যা করেন, বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন। তাই আমাদের জন্য উচিৎ হলো, সব ব্যপারে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। ভাগ্যের ব্যপারে সন্তুষ্ট থাকা। সদা-সর্বদা আল্লাহর শোকর গুযার হওয়া। নিরাশ না হওয়া।

আল্লাহ আমাদের সকলকে শোকরগুযার হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...