রাজধানীর গোলাপবাগের বাসায় একান্ত সাক্ষাৎকারে জানা যায় তার জীবনের না জানা অধ্যায়গুলো। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও পেশা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কথা। একই সঙ্গে খোলামেলাভাবে কথা বলেন বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার কারণ ও বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের নির্যাতিত হওয়ার বিষয়েও। তিনি জানান, ১৯৪০ সালে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার পূর্ব সৈয়দ নগর গ্রামে জন্ম। সেখানেই পিতা মরহুম সিদ্দিকুর রহমান ও মা জাবেদা খাতুনের গৃহস্থ পরিবারে বেড়ে ওঠা। পাশের গ্রামের কুমড়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি শেষ করে আবার দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন কুমড়াদি দারুল উলুম সিনিয়র মাদরাসায়। এখানেই এবতেদায়ী, দাখিল, আলিম ও ফাজিল ১ম বর্ষ পর্যন্ত একটানা পড়ালেখা করেন। ১৯৬৪ সালে ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষে ট্রান্সফার হয়ে ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় চলে আসেন। পরে ১৯৬৫ সালে ফাজিল ও ১৯৬৭ সালে হাদিস বিষয়ের উপর কামিল পাস করেন।
কুমড়াদি মাদরাসায় পড়াকালে ১৯৬১ সালে মাদরাসার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন পূর্ব পাকিস্তানের বড় মাদরাসাগুলোর মধ্যে কুমড়াদি মাদরাসা ছিল অন্যতম। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর পূর্বপাক জমিয়তে তলাবায়ে আরাবিয়ার মাধ্যমে ১৯৬১ সালে ছাত্র রাজনীতি শুরু হয়। তখন তিনি আলিম শ্রেণির ছাত্র। যখন তলাবায়ে আরাবিয়ার রাজনীতি শুরু করেন তখন পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র সংগঠনটির প্রধান ছিলেন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। তিনি জানান, আমি যখন রাজনীতি শুরু করি তখন ছাত্র সংগঠনগুলো স্বাধীন ছিল। এখনের মতো কোন সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লেজুড়বৃত্তি করে চলতো না। তবে তখন পূর্বপাকিস্তানে নেজামে ইসলাম পার্টি ছিল। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম। কর্মজীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে দ্যা ডেইলি পিপলস ইংরেজি পত্রিকায় টাইপিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আবিদুর রহমান। সিনিয়র সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবিরও তখন ওই পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন।
১৯৭৪ সালে কাউন্টার পয়েন্ট সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। তখন ওই পত্রিকায় ছিলেন সংসদ সদস্য জহুর হোসেন চৌধুরী। চারটি পত্রিকা ছাড়া অন্য সব পত্রিকা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন ১৯৭৫ সালে হাইস্পিড গ্রুপে জয়েন করেন। আবার পত্রিকা চালু হলে ১৯৭৬ সালে বাংলার মুখ পত্রিকায় সাব এডিটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে পিআইবিতে সাব এডিটিংয়ের উপরে ট্রেনিং নেন। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে দৈনিক শক্তি পত্রিকায় সাব এডিটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখানে ১০ বছরের কর্ম জীবনে সাব এডিটর থেকে চিফ সাব এডিটর ও সর্বশেষ নিউজ এডিটরের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সারা পৃথিবীতে মুসলমানদের এমন দুর্যোগের কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল পুঁজিবাদ। এখন সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ দুটিরই বিরুদ্ধে এসেছে ইসলাম। যদিও ইসলামের পর আরও অনেক সমাজব্যবস্থা এসেছে। কিন্তু সেগুলো ধোপে টেকেনি। ইসলামের উত্তরোত্তর সাফল্যে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদীদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।
তারা সবাই ইসলামের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। এখন আমেরিকার নেতৃত্বে নয়া অগ্রযাত্রা শুরু করেছে এ ইসলাম বিরোধীরা। তারা বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে মুসলমানদের উপর দায় চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য যেন নতুন প্রজন্ম ইসলামের দিকে না আসে। তিনি বলেন, ইসরাইলের পেছন থেকে যদি আমেরিকা সরে দাঁড়ায় তবে কালই ইসরাইল টিকতে পারবে না। উপর মহলের চাপ অথবা বড় অঙ্কের লেনদেনের কারণে ২০ দলীয় জোট ছেড়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগদান ও দেশের এমন একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জোট ছাড়লে এমন অনেক কিছু চিন্তা করার সুযোগ থাকে। তবে আসলে আমাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।
১৯৫৪ সাল থেকে ওলামারা জোটবদ্ধ রাজনীতি করছে। নেজামে ইসলাম পার্টি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে পরে বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটে যোগ দেয়। আমরা জোটবদ্ধ রাজনীতিতে এত বেশি ব্যস্ত ছিলাম যে দলকে সময় দিতে পারছিলাম না। তাই দলীয় কর্মকাণ্ডে সময় দেয়ার জন্যই জোট থেকে বের হয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা আমাদের রাজনীতি করেছি। অন্যান্য দল তাদের রাজনীতি করেছে। ২০ দলীয় জোট ছিল নির্বাচনী জোট মাত্র। এজন্য বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে পাওয়া না পাওয়ার তেমন কিছু নেই।