ফাহিম মুহাম্মদ আতাউল্লাহ ::
শায়খ যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী র. বলেন, আমার শৈশব কালের ঘটনা। আমি তখন প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। আমাদের এলাকায় মাঝে-মাঝে একজন লোক এসে হাঁক দিতো। পাত্র নিকেল করাবেন? পাত্র নিকেল করাবেন? এ্যালমুনিয়াম/ষ্টিলের পাত্র নিকেল করাবেন?
আমি তাকে থামিয়ে দ্রুত মায়ের কাছে গিয়ে বলতাম, মা!! তাড়াতাড়ি কোনো পাত্র দাও নিকেল করাবো। মা বলতেন, সব পাত্রইতো ঠিক আছে, নিকেল করানোর কোনো দরকার নেই। কিন্তু আমি নাছোড় বান্দা, পাত্র আমাকে দিতেই হবে। কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলতাম। আমার এ অতি আগ্রহের কারণ ছিলো, পাত্র নিকেল করার পদ্ধতিটি আমার অনেক ভালো লাগতো। তা উপভোগ করতাম।
আমি যখন পাত্রটি নিয়ে যেতাম, সে তা খুব উত্তপ্ত করতো। এরপর র্যাত দিয়ে তা ঘষে-মেজে পরিষ্কার করতো। অতঃপর তাতে নিকেল করার সাথে সাথে তা সম্পূর্ণ চকটকে নতুন হয়ে যেতো।
একদিন আমি তাকে বললাম, চাচা!! আপনি প্রথমেই কেনো নিকেল করেন না? তিনি জবাবে বললেন, তুমি তো ছোট মানুষ এতোকিছু কি বুঝবে? তবু যেহেতু জানতে চাচ্ছো তাই শোনো,যে পাত্র তোমরা নিয়ে আসো তা তোমাদের দৃষ্টিতে পরিষ্কার মনে হলেও তাতে অনেক ময়লা থাকে। তার মধ্যে তেল, চর্বি, ময়লা ইত্যাদি লেগে থাকে। এগুলো পরিষ্কার না করেই যদি নিকেল করা হয় তাহলে তা টিকবে না। এ জন্যই আমি প্রথমে তা আগুনে জ্বালিয়ে সম্পুর্ণরূপে পরিষ্কার করে নেই। এরপর নিকেল করার সাথে সাথে তা চকচকে হয়ে ওঠে।
ছোটো বয়সে তার কথার তাৎপর্য ঠিক বুঝতে পারিনি। আজ যখন শৈশবের সেই কথা মনে পড়ে তখন বুঝতে পারি, প্রকৃত পক্ষে গোনাহ মানুষের অন্তরে ময়লা ও আবর্জনার সৃষ্টি করে। এখন যদি আমরা চাই আল্লাহর সাথে আমাদের মজবুত সম্পর্ক স্থাপন হোক তাহলে প্রথমে আমাদের অন্তর থেকে গোনাহের আবর্জনাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। অন্যথায় মহান রাব্বুল আলামীনের সাথে আমাদের সু-সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হবে না।
বন্ধুরা!! আমরা সবাইতো চাই প্রভুর সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হোক। কিন্তু আমরাকি কখনো ভেবেছি প্রভুর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পথে কোন জিনিস আমাদের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে? তা হলো আমাদের গোনাহ। আমাদের অবাধ্যতা। নফসের পূজা। এই সবগুলো আমাদের অন্তরায়। আমাদের অন্তরের ওপর গোনাহের আস্তরণ পড়ে আছে তাই ঈমানের আলো প্রকাশিত হচ্ছে না।
আমরা অবাধ্যতার চাদর পড়ে আছি তাই আমলের মজা অনুভূত হচ্ছে না। ফলে প্রভুর রহমত থেকে দূরেই থেকে যাচ্ছে আমাদের অবস্থান।
তাই আসুন!! আজই তওবা করে নিজেকে শুদ্ধ করে নিতে প্রয়াসি হই। যিকরুল্লাহর রঙে রাঙিয়ে তুলি আপন হৃদয়কে। অতৃপ্ত আত্মাকে। নিজ সত্তাকে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন। আমীন।