অনলাইন ডেস্ক :: আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছর এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা। এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৫২৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৩৩ জন ছাত্র এবং ৮ লাখ ৮ হাজার ৫৯০ জন ছাত্রী। এবারের পরীক্ষায় এক লাখ ৭২ হাজার ২৫৭ শিক্ষার্থী বেড়েছে। এর মধ্যে ছাত্রী ৯২ হাজার ৬৬৩ ও ছাত্র বেড়েছে ৭৯ হাজার ৫৯৪ জন। গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৯ ও ছাত্রী ছিল ৭ লাখ ১৫ হাজার ৯২৭ জন। গতকাল (শনিবার) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষক ও শিক্ষকদের প্রতি উত্তরপত্রে বেশি নম্বর দেওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। কম নম্বর দেওয়ারও নির্দেশনা নেই। যার যা প্রাপ্য, তা-ই দিতে হবে।
তিনি বলেন, পরীক্ষার ফল দেওয়ার সময় বলা হয় আমরা শিক্ষকদের বেশি নম্বর দেওয়ার জন্য বলেছি। আমরা এটা করি না। খাতা যাতে সঠিকভাবে দেখা হয় এটা আমরা বলি। শিক্ষক ও পরীক্ষকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যার যা প্রাপ্য তাতে তাই দেবেন। সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করে ফল দেবেন। এতে সংখ্যা বাড়ল না কমল তাতে আমাদের কোনো চাপ নেই। মন্ত্রী বলেন, ‘এবার বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি প্রথমপত্র, ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র ছাড়া সকল বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। গত বছর থেকে গণিত ও উচ্চতর গণিত বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’ নাহিদ বলেন, ‘গত বছর শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা নামে নতুন একটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা হচ্ছে।’ প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে বলেন, এবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সম্ভাবনা একেবারেই নেই। সন্দেহজনক যারা আছে, তাদের প্রতি নজরদারি আছে। কোচিং ও ফটোকপির দোকানেও নজরদারি আছে। এ ছাড়া ফেসবুকে এ ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা যেন বন্ধ করে দিতে পারে, বিটিআরসিকে তা বলা আছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর প্রথমে বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) পরে সৃজনশীল বা রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। উভয় পরীক্ষার মধ্যে ১০ মিনিটের ব্যবধান থাকবে। আগে তত্ত্বীয় পরীক্ষা হলে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টির সুযোগ থাকে। এটা বন্ধ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী বছর থেকে এমসিকিউ পরীক্ষায় ১০ নম্বর কমিয়ে দেব।
এবারও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবেন। এবারই প্রথম বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (অটিস্টিক ও ডাউন সিনড্রোম বা সেরিব্রালপালসি আক্রান্ত) পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় পাবেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে পরীক্ষার কক্ষে তাদের অভিভাবক বা শিক্ষক বা সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সারাদেশে সাতজন অটিস্টিক এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এবার ৩ হাজার ১৪৩টি কেন্দ্রে ২৮ হাজার ১১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে। গত বছরের থেকে এবার ৩১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ২৭টি কেন্দ্র বেড়েছে। এবার নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯২৭, অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৭৪ ও বিশেষ (১ থেকে ৪ বিষয়ে পরীক্ষা দেবে) পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৭ জন।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সব ইনডিকেটর (সূচক) বলে দিচ্ছে গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, ছাত্রীর সংখ্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রের সংখ্যার দিক থেকে উন্নতি হয়েছে। বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীরা ভাল করছে, দিন দিন বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় বিজ্ঞানে এবার ৫৬ হাজার ২৮৬ পরীক্ষার্থী বেড়েছে।’ বিদেশে আটটি কেন্দ্রের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ সব কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০৪ জন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। নুরুল ইসলাম নাহিদ আরো জানান, এবার আটটি বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ১৩ লাখ ৪ হাজার ২৭৪ জন, মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৫ ও এসএসসি ভোকেশনালে (কারিগরি) ৯৮ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৮ মার্চ পর্যন্ত এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৯ মার্চ সঙ্গীতের ব্যবহারিক পরীক্ষা এবং ১০ থেকে ১৪ মার্চের মধ্যে বেসিক ট্রেডসহ এসএসসির সব বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সময়সূচি অনুযায়ী, মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে তত্ত্বীয় শেষ হবে ১০ মার্চ। এক্ষেত্রে ১৫ মার্চ থেকে ১৯ মার্চের মধ্যে সকল ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ করার কথা বলা হয়েছে।
অন্যান্য বছরের মতো এবারো সকালের পরীক্ষা সকাল ১০ থেকে ১টা এবং বিকালের পরীক্ষা বিকাল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ঢাকা বোর্ডসহ বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।