বুধবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ১০:২৬
Home / অনুসন্ধান / ভূগর্ভেও চলে কওমি মাদরাসার তা’লিম! কওমি বিরোধীরা সাবধান!

ভূগর্ভেও চলে কওমি মাদরাসার তা’লিম! কওমি বিরোধীরা সাবধান!

indexমুহা. আব্দুস সবুর ::

শায়খুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী হাফি. তাঁর উযবেকিস্তান সফরের স্মৃতিচারণে বলেন, আমরা সমরকন্দে এক মসজিদের ইমাম সাহেবের মেহমান হয়েছিলাম। তিনি সে অঞ্চলের একজন প্রসিদ্ধ ইমাম। তিনি আমাদের বলেছেন, এ মসজিদটি রুশ বিপ্লবের পর সিনেমা হল বানানো হয়েছিল। কিছুদিন আগে এলেও আমি আপনাদের সিনেমার পোস্টারগুলো দেখাতে পারতাম, যা এর দেয়ালে লাগানো ছিল। সে সময় নামায পড়ার অনুমতি ছিল না।

আমার আব্বা ছিলেন এই মসজিদের খাদেম। বিপ্লবের পর তাকে ক্ষেতের কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাকে ক্ষেতের কাজে ব্যস্ত থাকতে হত। দুপুরে ঘরে এসে নামায পড়তেন। ঘরে জায়নামায রাখার তো প্রশ্নই আসে না। কারণ যে কোনো সময় তল্লাশী হতে পারে। তখন যদি জায়নামায পাওয়া যায় তাহলে পুরা পরিবারের আর রক্ষা ছিল না। তাই মেঝেতেই নামায পড়তে হত। এতেও বিপদের আশঙ্কা ছিল। আম্মাকে বলতেন, তুমি চা বানিয়ে রাখ। যেন কেউ আসলে বলা যায় যে, চা তৈরি হচ্ছিল বা চা পান করছিল। এভাবে আব্বা নামায পড়তেন।

ইমাম সাহেব বলেন, আমি তখন ৪-৫ বছরের শিশু। আমাকে দরজায় দাঁড় করিয়ে দিতেন যেন আমি বাইরে নজর রাখি এবং কেউ আসলে বলি, আব্বা ভিতরে চা পান করছেন। কমিউনিস্ট সরকারের লোকেরা রাস্তায় ঘোরাফেরা করত। তারা এসে আমাকে আখরোট দিয়ে জিজ্ঞাসা করত, তোমার আব্বা ভিতরে কী করছেন? আমি বলতাম, চা পান করছেন। তারা বলত, না ভিতরে হয়ত নামায-টামায পড়ছে। এভাবে আমাকে ফুসলাতে চেষ্টা করত। তিনি বলেন, শৈশবের দিনগুলোর কথা আমার আজো মনে আছে। সারাদিন খাটা- খাটুনির পর রাতে যখন বসতির লোকজন ঘুমিয়ে পড়ত, তখন আব্বা আমাকে গোপন কক্ষে নিয়ে কুরআন মজীদ পড়াতেন। সেই কক্ষটা এমন ছিল যে, বাইরে থেকে দেখতে একটা আলমারীর মতো মনে হত। তার উপর বাসন-পেয়ালা ইত্যাদি রেখে দেওয়া হত। কিন্তু বাস্তবে তা ছিল গোপন কক্ষে যাওয়ার দরজা। সেখানে আব্বা আমাকে কুরআন মজীদের তা’লীম দিতেন। শুধু কুরআন মজীদই নয়; আরবী ভাষার ও ইসলামী উলূমের তা’লীমও আমি সেখানেই হাসিল করি। সারা দিন ক্ষেতের পরিচর্যা, আর রাতে বাচ্চাদের গোপনে পড়ানো এই ছিল তার কাজ।
এভাবে আল্লাহর বান্দারা দ্বীন হিফাযত করেছেন। যেখানেই কোনো মোল্লা ছিল তার ঘর ছিল একটি মাদরাসা। রাতের আঁধারে, ভূ-গর্ভের গোপন কক্ষে এই মাদরাসাগুলো চলত।

আজ মোল্লাদের নিন্দা করার লোক অনেক আছে। কিন্তু তারা জানে না যে, আল্লাহ তাআলা তাদের মাধ্যমেই তার কালিমাকে হিফাযত করেছেন। অনাহারে, অর্ধাহারে থেকে, সকল যন্ত্রণা সহ্য করে এবং মাথার উপর মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে তারা শুধু চেষ্টাই করেছেন যে, এই কালিমা উম্মতের মাঝে অক্ষত থাকুক। আজো সেসব অঞ্চলে যতটুকু দ্বীন আছে তা এসকল কুরবানীরই ফসল।
সেখানে অনেক আলিমের সাথে আমাদের দেখা হয়েছে। তাদের সাথে আরবীতে কথা হত। এছাড়া কথা বলার আর কোনো উপায়ও ছিল না। তারা খুব ভালো আরবী বলেন। তো যাকেই জিজ্ঞাসা করেছি, ভাই আপনি আরবী কোথায় শিখেছেন তিনিই উত্তরে বলেছেন, ‘হুজরাতে শিখেছি’। হুজরা মানে কক্ষ। প্রত্যেক মোল্লার বাড়িতে গোপন ঘরে ইলম চর্চার যে ব্যবস্থা ছিল এরই নাম হুজরা। সাধারণ মানুষ সুখ-নিদ্রায় বিভোর হত আর তারা দ্বীনের চর্চায় মশগুল হতেন। এভাবে আল্লাহ তাদের ঈমান হিফাযত করেছেন। শুধু তা-ই নয় আল্লাহ তাদেরকে ঈমানের মিষ্টতাও দান করেছেন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...