সৈয়দ ফাহিম আব্দুল্লাহ ::
রাগিব আলী সাহেব বাংলাদেশের বড় মাপের ধনীদের মধ্যে প্রথম সারির একজন। অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, যাকে দানবীর রাগিব আলী বলা হয়ে থাকে। নিজে যা তাতেই নিজের পরিচয় থাকাটাই ভাল। কয়েক দিন আগে শৈলীর সভাপতি মাহবুব মুহম্মদ আমাকে বললেন- ফাহিম ভাই রাগিব আলী কোন তাল্লুকের সৈয়দ? আমি মনে করেছি উনি মনে হয়তো মজা করে বলেছেন। আমি বললাম- কেন ভাই কি হয়েছে?
বললেন- না আজকে রাগিব আলী সাহেব নামের সাথে সিলেটের ডাক পত্রিকায় সৈয়দ লাগলো, দেখলামতো তাই।
এর কয়েকদিন পরে জিয়াউল হক ভাই ঐ দিনের সিলেটের ডাক পত্রিকায় সৈয়দ লেখা দেখে আমাকে বললেন- রাগিব আলী সাহেব আবার সৈয়দ হলেন কোনদিন?
আমি মনে করেছিলাম, ভুলে হয়তো দুইদিন সিলেটের ডাক পত্রিকায় চলে আসছে। আজ ক্লাস শেষ করে আমরা কয়েকজন শিক্ষক দাঁড়িয়ে আলাপ করছি এর মাঝে সায়্যিদ মুজাদ্দিদ আমাকে লাইব্রেরির ভেতর থেকে ডাক দিল। হাতে আজকের সিলেটের ডাক। প্রথম পৃষ্ঠায় রাগিব আলী সাহেবের একটি প্রোগ্রামের ছবি, ছবিতে ইংরেজিতে লেখা- সৈয়দ রাগিব আলী। এটা যদি ভুলক্রমে হয়ে যায়, এতে আমার নাক গলানোর কিছু নেই। যদি ইচ্ছে করে হয়, তখন অবশ্যই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, সম্পদ হলেই মনে হয় যার যা মনে চায় বংশ পরিচয় ব্যবহার করা যায়। একটু মুর্খশ্রেণিতে চলে আসলে এরা মনে করবে, আরো যারা সৈয়দ অর্থাৎ রাসুল সা.’র বংশের লোক রয়েছে, এরাও মনে হয় রাগিবপন্থা অবলম্বন করেছেন। একবার চৌধুরী আবার সৈয়দ প্রশ্ন আসতেই পারে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন- তোমরা তাদেরকে তাদের বাবার নামে ডাক। (আল-কুরআন) হযরত সাঈদ ইবনে যুবায়ের হযরত ইবনে আব্বাস রাযি.কে বলতে শুনেছেন যে, রসূল সা. বলেছেন- যে কেউ নিজেকে বাবার নাম ছাড়া অন্য নামে ডাকবে, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতা ও সমগ্র মানুষের লানত বর্ষিত হবে। (মুসনাদে আহমাদ) ইমাম বুখারী রাহ. এই হাদিসটি হযরত সাদ রাযি ‘র সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
হযরত সাদ ও হযরত আবু বকর রাযি. হতে বর্ণিত, তাঁরা বলেছেন- আমার দু’কান শুনেছে এবং আমার অন্তর মুহাম্মদ সা.’র এই কথা সংরক্ষণ করেছে যে, মহানবী সা. বলেছেন- যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজেকে নিজের পিতা ছাড়া অন্যের সাথে সংযুক্ত করে, তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। (ইবনে মাজাহ) আবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি হযরত মুহাম্মদ সা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল সা. বলেছেন- যে কেউ নিজের বাবা ব্যতীত অন্যের পরিচয়ে পরিচয় দেয়, সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না, যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ সত্তর বছর হাঁটার রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে। (মুসনাদে আহমাদ)
এমন অনেক হাদিস রয়েছে, যেখানে মহানবী সা. নারীদেরকে তাদের পিতার নামে ডেকেছেন। যখন পবিত্র কুরআনুল কারিমের আয়াত- ‘আপনি আপনার নিকটতম আত্মীয়দের সতর্ক করে দিন’ নাজিল হয়, তখন মহানবী সা. তাঁর আত্মীয়দের প্রত্যেককে ডেকে ডেকে বলেছিলেন- হে অমুকের ছেলে অমুক! আমি পরকালে তোমার কোন উপকার করতে পারব না। হে অমুকের মেয়ে অমুক! আমি কিয়ামতের দিন তোমার কোন কাজে আসব না। (আল-কাশফুল মুবদি) কিয়ামতের মাঠেও প্রত্যেককে তার বাবার নাম ধরে ডাকা হবে। হাদিসের কিতাবসমূহে এ সংক্রান্ত আরো অনেক হাদিস রয়েছে।
এমনকি আধুনিক সাজতে গিয়ে নামের আগ-পিছে স্বামীর নাম লাগানো, এটাও ইসলাম সমর্থন করেনা। সামসুদ্দিন যাহাবী রাহ. তার আকবারুল কাবাইর গ্রন্থে ৭০ টি বড় গুনাহের মধ্যে নিজের বংশ পরিচয় গোপণ রাখা বা অন্যের বংশ পরিচয় নিজের বলাকে কবিআ গুণাহের মধ্যে শামিল করেছেন।
শুধু রাগিব আলী সাহেবের বেলায় যে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে তা নয়, আমার জানা মতে অনেকেই আছেন যারা বুঝে অথবা না বুঝে নিজের নামের আগ-পিছ সৌন্দর্য্যমণ্ডিত করে যাচ্ছেন। আমার পরিচিত এক পরিবারেও এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে, আমার নামের সাথে সাথে আমার বংশ পরিচয়টাও আরেকজনের হয়ে গেছে। কুরআন-হাদিসের আলোকে আলোচলা করার মানে হলো, সবাই যাতে আল্লাহকে ভয় করেন। পৃথিবীর কোন মানুষ আমার শত্রু নয়, আমার শত্রু হলো অসত্য।
Tags সিলেটের ডাক’র তেলেসমাতি : রাগিব আলী থেকে সৈয়দ রাগিব আলী
এটাও পড়তে পারেন
কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ
খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...