শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:০০
Home / অনুসন্ধান / বি-বাড়িয়া ও হলুদ মিডিয়া : বিক্ষিপ্ত আন্দোলন, একজন শহীদ মাসউদ, আপোষে শেষ, স্বার্থবাজদের মাথায় হাত এবং আমাদের সুখনিদ্রা

বি-বাড়িয়া ও হলুদ মিডিয়া : বিক্ষিপ্ত আন্দোলন, একজন শহীদ মাসউদ, আপোষে শেষ, স্বার্থবাজদের মাথায় হাত এবং আমাদের সুখনিদ্রা

12507679_1678479555756031_5057707984531507593_nইলিয়াস মশহুদ ::
এক। ২০১৬ সালের সূচনা মাস জানুয়ারি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বি-বাড়িয়ায় ঘটে যায় অনাকাঙ্খিত এক ঘটনা। হেফাজত আন্দোলন পরবর্তী দেশ কাঁপানো এই ঘটনায় উঁকি দিচ্ছিল আরেকটি হেফাজত আন্দোলনের। তবে শেষ পর্যন্ত সরকারের কৌশলী চিন্তায় তা আর হয়ে ওঠে নি। নবী ওয়ারিস আলিম-উলামাদের ইজ্জত নিয়েও কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারে নি। আমাদের আস্তিনে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা স্বার্থবাজরা সুযোগ হারিয়ে হাত তুলেছে মাথায়। সে যা হোক- মহিয়ান মাওলায়ে পাকের অপার অনুগ্রহে, তার কুদরতী মদদে এ যাত্রায় আমাদের রক্ষা করেছেন।
আল্লাহর ঘর মসজিদ ও দ্বীন রক্ষার বলিষ্ট দূর্গ নাসির নগরের স্থানীয় একটি কওমী মাদরাসা বন্ধের প্রতিবাদ ও মাদরাসা খোলে দেয়ার দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিলে সরকারের পুলিশ বাহিনীর বুলেটের আঘাত ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বর নির্যাতনে গত ১২ জানুয়ারি ভোর রাতে বি-বাড়িয়ার শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইউনুছিয়ার হেদায়াতুন্নাহু জামাতের নিষ্পাপ ছাত্র হাফিয মাসউদুর রহমান শাহাদতের অমিয় সুধা পান করেন। আহত হন প্রায় শতাধিক ছাত্র জনতা।
তার মৃত্যুতে ইতিহাসে রচিত হলো আরো একটি কালো অধ্যায়। এর আগে ১৯৯৯ সালে ঐতিহাসিক ফতোয়া বিরোধী রায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ বিলিয়েছিল এই জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার ছাত্রসহ ৯জন। ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালে আওয়ামী জালিমদের পতন হয়েছিল। এবারও মসজিদ, মাদরাসা রক্ষার আন্দোলন এবং শহীদের রক্ত ঝরলো এই জামিয়ায়। শহীদ বাড়িয়ায়।

12508779_715426041892129_8259741581839372504_nসদ্য ঘটে যাওয়া বি-বাড়িয়ার এই এই ঘটনায় তুলকালাম কাণ্ড এবং সরকার ও হলুদ মিডিয়ার তেলেসমাতি খুব ভাবিয়েছে আমাকে। বিশেষত মিডিয়ার কাণ্ড দেখে আমাদের অঙ্গনের অসহায়ত্ব আবারো ফুটে উঠল।

দুই। গঠনার আগে-পরে আমি গভীর মনযোগ দিয়েই সবকটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় চোখ বুলানোর চেষ্টা করেও মাদরাসা ছাত্র নিহত ও সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কিত প্রত্যাশিত কোনো খবর পেলাম না! কিন্তু স্কুল-কলেজ কিংবা কোনো ভার্সিটির কেউ যদি এভাবে নিহত হত, তখন মিডিয়ায় বদৌলতে সেটা লিড নিউজ, ব্রেকিং নিউজ হিশেবে এবং অনলাইন পোর্টাল ও টিভি চ্যানেলসমূহে ‘সদ্যপ্রাপ্ত’ সংবাদ নামে প্রদর্শিত হত। কত মর্মস্পর্শী শিরোনামে ছাত্রের মৃত্যুর খবর দেয়া হত, তার কোনো ইয়ত্তা নেই! হায়রে দালাল মিডিয়া! আফসোস তোদের জন্য! শত আফসোস এই আমাদের জন্যও!!
আওয়ামীলীগ এই দেশে কচুরিপনা নয় যে, আলিম-উলামারা ফুঁক দিবেন আর আওয়ামীলীগ উড়ে উড়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে। এই বোকামী ধারণা আমাদের দেশের আলিম সমাজের মাথায় যতদিন থাকবে, ততদিন শহীদ আর রক্ত হবে আলিম-উলামার নিত্যবন্ধু। আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তৈরি করছে। বিনা পায়সায় ফোর’জি ব্যবস্থার পায়তারা করছে। নাসা’র সাথে চুক্তির চিন্তা-ফিকির করছে। বিশ্ব তথ্যকেন্দ্রের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলছে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রযুক্তির উচ্চমার্গে দেশ ও দশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কসরত করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে প্রথম বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাবার আশ্বাস দিচ্ছে। তথ্য ও প্রযুক্তিকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট কন্ট্রোল করছে। করছে আরো অনেক কিছু। কিন্তু আমরা করছি কী? রাজনীতির দেউলিয়াপনায় গা ভাসিয়ে এই আমরা দলবদল, জোটবদল আর রেশারেশির রাজনীতি করছি। প্রতিহিংসার তা’লিম দিচ্ছি। স্বার্থের সবুজ কালিতে হেফাজত ট্রাজেডির খলনায়ককে ‘কুতবে যামান’ ‘কুতবে বাঙাল’ উপাধীতে ভূষিত করছি।

Brahmanbaria_Clash_Dead_Pic_3বি-বাড়িয়ার এই ঘটনায় একজন মাদরাসা ছাত্র শহীদ হলো। সারা দেশের আলিম-উলামা কিছু সময়ের জন্য এক কাতারে বসার চেষ্টা করলেন। আবার ব্যানার, ফ্যাস্টুন, মিছিল-মিটিংয়ের বিশ্রী চিত্রনাট্যও অন্যদিকে প্রকাশ করলেন। এই তো সিলেটের কোর্ট পয়েন্টের কথাই বলি। কয়েকশ’ গজের এই জায়গায় খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে প্রায় একডজন ইসলামী দল ও সংগঠন পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচী পালন করলো। কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে বাদ আছরের নামায পড়ে বের হয়ে এক নজর চোখ বুলিয়ে লজ্জা, ঘৃণা আর মানুষের ছিঃছিঃ রবে চলে আসতে বাধ্য হলাম। সে যা হোক- বিক্ষিপ্ত সেসব সমাবেশ  থেকে কেন্দ্র ঘোষিত হরতাল কর্মসূচী সফল করার আহবান আসল। শেষ পর্যন্ত সরকারী মধ্যস্থতায় বিষয়টি যেভাবেই হোক সমাধান হলো। পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে বদলী করা হলো। যাদেরকে বদলী করা হলো, তারা এ.এস.পি ও ওসি। সৌভাগ্যক্রমে তারা দুইজনই আবার হিন্দু! এই সামান্য বিষয়গুলো, শাসন ব্যবস্থার সামান্য রহস্যগুলো কোনো কারণে আমাদের মাথায় ঢুকে না। বিচার ব্যবস্থার সামান্য রহস্যগুলো এতদিন যাবত কেনো আমাদের মাথায় ঢুকে না? আমরা কেনো এই দেশে কিছু সিকিউরিটি গার্ডও তৈরী করার চেষ্টা করি না। অমুক সঙ্কর আর তমুক পালের গুলিতে ইসলাম উদ্দিন শহীদ হয়। কিন্তু ইসলাম উদ্দিনরা কেনো একজন সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্বে থাকে না। শহীদ ইসলাম উদ্দিনের আইনজীবি কেনো প্রভাত কুমার? শহীদ ইসলাম উদ্দিনের মামলার বিচারক কেনো সঞ্জয় দত্ত? কারণ সঞ্জয়-প্রভাতরা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছে। আর আমরা মক্তব-টাইটেল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে বগল বাজানোর ধান্ধায় পরস্পরে কামড়াকামড়িতে লিপ্ত।
বি-বাড়িয়ায় সেদিন হামলা করেছে আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ। ভাংচুর করেছে মাদরাসা। ছাত্ররা তা প্রতিহত করতে প্রতিশ্রুতি নেয়। ফলে যোগ হয় পুলিশ বাহিনী। নির্বিচারে মারধর শুরু করে ছাত্রদের। গুলিবিদ্ধ ও আহত হন প্রায় শতাধিক ছাত্রশিক্ষক। নিহত হয় হাফিয মাসউদুর রহমান নামে হেদায়াতুন্নাহু জামাতের এক ছাত্র।

1918899_1211053115589704_7818610829257038039_nশেষ কথা। বাংলাদেশ এখনো দারুল আমান। মানুষ নিরাপদ। বিশেষত মাদরাসাগুলো। কোন কথা না বলে নাকে তেল দিয়ে সুখনিদ্রায় যাওয়া উচিৎ। বিশেষ করে মাদরাসার গণ্ডির ভেতরে যাদের সীমাহীন রাজত্ব আছে, তাদের। যাদের একক কর্তৃত্ব আছে, তাদের। ইসলামি আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মৌদূদীবাদের মুখোশ উন্মোচক জমিয়তে উলামা, ইসলামী ঐক্যজোট আর খেলাফতাইনিল মজলিসাতাইন নামে যারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত প্রতিনিয়ত, তাদের। এবং আরো যারা ইসলামকে ব্যবহার করে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে তৎপর, তারা। আপনাদের ঘুম হোক সূখময়। সালাম হে কাণ্ডারী, যারা করেন ইসলামি রাজনীতি।

লেখক : শিক্ষক ও সাংবাদিক

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...