ওমর শাহ :: টানাটানি ভাগাভাগি চলছে ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে। তিন টুকরা হয়ে পড়া এই ইসলামী মোর্চার তিন পক্ষই নিজেদের মূল ধারার দাবি করছে। ‘ভুয়া স্বঘোষিত’ সহ নানাভাবে চিহ্নিত করছে এক পক্ষ অপর পক্ষকে। ফলে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে, ইসলামী ঐক্যজোট! ’তুমি কার?’
বর্তমানে বেশি সক্রিয় আছে মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী আর অ্যাডভোকেট আবদুর রকিবের নেতৃত্বাধীন দুই ইসলামী ঐক্যজোট। ২০০৫ সালে ভাগ হয়ে যাওয়া মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট ১৪ দলের অংশ হিসেবে সরকারের সঙ্গে আছে। নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত এই সংগঠনটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জামায়াতে ইসলামীকে জোটে রাখা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে ২০০৫ সালে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী আলাদা হয়ে যান। তবে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটের বড় অংশটি চারদলীয় জোটে একীভূত থাকে। কিন্তু ২০১২ সালের ১১ই ডিসেম্বর মুফতি আমিনীর ইন্তিকালের পর এই জোটে টানাপড়েন শুরু হয়। যার প্রকাশ ঘটে গত ৭ই জানুয়ারি। সমমনা তিনটি ইসলামপন্থি সংগঠন নিয়ে চলা এ জোটে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। ওই দিন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল করে জোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন। তার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর জোটের নেতা মাওলানা আবদুর রকিব সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০ দলেই আছে। এ সময় জোটের নতুন কমিটিরও ঘোষণা দেয়া হয়। অন্যদিকে সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা করে নেজামীর নেতৃত্বাধীন অংশ। ৭ই জানুয়ারি রাতেই আবদুর রকিবের নেতৃত্বাধীন অংশের নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেদিন থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের প্যাডে দুই পক্ষই সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে আসছে। এ পর্যায়ে আবদুল লতিফ নেজামী গতকাল নেজামে ইসলাম পার্টির ব্যানারে আবারও সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, রকিবের পক্ষে ইসলামী ঐক্যজোটের কমিটি গঠন বা ঘোষণা করার কোনো নৈতিক এবং সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। রকিবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটের তথাকথিত কমিটি গঠনের খবরে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির নেতাকর্মী সমর্থকদের প্রতি আহবান জানান।
হঠাৎ জোট ভাঙার কারণ সম্পর্কে আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, জোটের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আচরণ এবং মূল্যায়ন দিক থেকে অনেক দিন ধরে দূরত্ব চলে আসছিল। সেজন্য আমরা ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেলাম। বঙ্গভবনে দাওয়াতে যাওয়াতে জোটে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে দাওয়াতে আরও অনেকেই গেছেন।
এদিকে ৭ ই জানুয়ারি মাওলানা নেজামীর জোট ছাড়ার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে জোটে থাকার ঘোষণা দেয় মাওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটের অপর অংশ। সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে মাওলানা আবদুর রকিব বলেন, গত ৬ই জানুয়ারি বুধবার পুরানা পল্টনে দলের কার্যালয়ে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মজলিশে শুরার বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ইসলামী ঐক্যজোট ২০-দলীয় জোটে থাকবে। কিন্তু পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আকস্মিকভাবে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ইসলামী ঐক্যজোটের সংবিধান পরিপন্থি কাজ করায় মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী ও মহাসচিব মুফতি ফয়েজুল্লাহ পদ হারিয়েছেন। তাই ঐক্যজোটের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন তিনি। এছাড়া মহাসচিব পদে মাওলানা আবদুল করিমের নাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি এখন দলের চেয়ারম্যান। নেজামীসহ যারা জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মজলিশে শুরার বৈঠক করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। এছাড়া আগামী ৩১শে মার্চ ইসলামী ঐক্যজোটের জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণাও দেন তিনি। এরপর ওইদিন রাতে গুলশান কার্যালয়ে মাওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ৬ই জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করা হয়। এরপর থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটেই ছিল ইসলামী ঐক্যজোট। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট থেকে নির্বাচন করে জাতীয় সংসদে দুটি আসনও পায় তারা। তবে নবম সংসদ নির্বাচনে এই জোট কোনো আসন পায়নি।
সংগৃহীত।