অধ্যাপক আব্দুল কাদের সালেহ::
আমি মনে করি সতর্কতা , দৃঢ ও কৌশলী পদক্ষেপ এবং নেতৃত্বের কেন্দ্রীকতার সাথে সমন্বয় ও আনুগত্য না থাকলে কোন লক্ষ্য হাসিল করা য়ায়না । বার বার দেখা গেছে , কোন ঘটনা ঘটলে তার পূর্বাপর উৎস এবং পরিণাম না ভেবে কিছু লোক অতি বিপ্লবী আওয়াজ তুলে নিজেকে ব্যঘ্র সিংহ প্রমানে অপরিণামদর্শী উত্তজনা তৈরী করে । এতে একটি যৌক্তিক আন্দোলন হঠকারিতায় আক্রান্ত হয় । তারা এমন বাতাবরনও তৈরী করেন যে সংলাপ আলোচনা ও আন্দোলনের রণকৌশলকে তারা সুবিধাবাদী বা মোনাফেকী বলে সাব্যস্ত করে আরেকদফা নিজেদের বিক্রম বীরত্বের ইজহার করেন । তেরা পথে নেতৃত্ব নেয়া এবং জাতীয় হিরু সাজবার জন্যে এটিকে তারা মাহেন্দ্রক্ষণ বিবেচনা করে সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহারে বিউগল বাজাতে থাকেন । কিন্তু ময়দানের প্রকৃত চ্যালেন্জ এবং বাস্তবতার মোকাবেলার সময় তাদেরকে আর পাওয়া যায়না ।ঘটনায় যার প্রাণ গেল হাত গেল শেষ পরিণামে তারই গেল । হ্যমিলনের বাঁশী এক সময় যারা বাঁজিয়েছিলেন তারা তখন নিজ বাঁশীকে চাঙায় তুলে নগরের ইঁদুর নিধনে তপস্বী বিডালের দারস্থ হন ।
এতে লাভ হয় শুধুই তাদের আর তপস্বী হুলো বিড়ালের । মাঝপথে ফোরাতের নীল জলরাশী যাদের শোণিতে উষ্ণ হলো তাদের মাতম বঞ্চনা আর ব্যথার দায় বহনে ঐ বীরসিংহদের আর পাওয়া যায়না । সিলেটের সর্দার আলাউদ্দীন আন্দোলন থেকে শাপলা চত্তর পর্যন্ত একই চরিত্র-প্রবনতা দেখা গেছে বার বার। আবেগ উত্তেজনা একপ্রকার সদগুন বটে যদি এর সাথে সুস্পষ্ট লক্ষ্য , নির্মোহ কমিটমেন্ট ও নেতৃত্ব থাকে । ব্রাম্মনবাডীয়ার ঘটনাকে জাতীয় রুপ দেয়ার আওয়াজটা খুব বিবেচনা প্রসুত মনে করতে পারছিনা ।সিরিয়ায় উত্তেজনা সৃষ্ঠি করে যারা আইসিস বানালো তারা এখন আইসিস নিধনে জোট বেঁধেছে । যারা আইসিসের জয়ের সময় তাদের সমর্থন না করাকে ঈমানের সাথে গাদ্দারী বলতো ,তারাই এখন বলছে ভিন্ন কথা ! নিজেদের গা বাঁচাবার জন্যে আমেরিকার সূরে বলছে আইসিস মুসলমানের দুশমন । এ ভাবেই ঐ অতি উত্তেজকদের বোল পাল্টাতে বেশী সময় লাগেনা । মাদ্রাসার হিফজখানা আর এতিম খানার ছাত্র রাস্তায় বের করে দিলে নিজের মধ্যে এক প্রকার উত্তেজনা অনুভব করা যায় । তবে এটা যে মাদ্রাসা ও দ্বীন রক্ষার সহীহ তরীকা না এর প্রমান বার বার পাওয়া গেছে ।
শাপলা চত্তরে যারা যতো দরাজ গলায় হুংকার দিয়েছিলেন তারাই পথ না জানা মাসুম তালাবাদের গুলির মুখে ফেলে রেখে নিজেদের জানা পথে আগে পালিয়েছিলেন । তাই জাতীয় নেতৃত্বের ভার আজ যাদের স্কন্ধে বর্তেছে তাঁরা যেনো এ কথাটি বিবেচনায় রাখেন । ব্রাম্মনবাডীয়ার মাদ্রাসা বন্ধ পুলিশ ও সন্ত্রাসী দের হামলার নিন্দা জানাই এবং প্রতিবাদী ছাত্র সমাজের জাগরণ ও সাফল্য কামনা করি ।
লেখক পরিচিতি: সুসাহিত্যিক ইসলামি চিন্তাবিদ গবেষক ও প্রাবন্ধিক।