কমাশিসা ডেস্ক :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সোমবারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার জেলা সদরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সোমবার রাতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মাসুদুর রহমান (২৫) নামে এক ছাত্র নিহত হওয়ায় বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আজ সকাল থেকে শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন স্থানে এ সময় হামলা ভাংচুর হয়। রেললাইনে অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আজ সকাল পৌনে ১১টার দিকে শহরের মৌড়াইল রেলগেট এলাকায় বিক্ষুব্ধরা গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন জ্বলিয়ে অবরোধ করে। এতে কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন আটকে যায় বিভিন্ন স্টেশনে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঘাচং রেলস্টেশনে, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস আজমপুর রেলস্টেশনে এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনে আটকা পড়ে।
বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে ভাংচুর করে। সকাল থেকেই শহরের টিএ রোড, হাসপাতাল রোড, কান্দিপাড়ার মোড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে অবরোধ সৃষ্টি করে মাদ্রাসা ছাত্ররা। তারা মঠের গোড়া এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শহরে ৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সকাল সাতটার পরে বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসা ছাত্ররা বেশ কিছু স্থানে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করেছে। বিক্ষুব্ধরা টিএ রোডের মঠের গোড়া এলাকায় সড়কে আগুন ধরিয়ে দেয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধরা সদর থানা এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। তারা টিএ রোড, ফকিরাপুল, পৌর আধুনিক সুপার মার্কেট ও পুরাতন কাচারি এলাকায় বিক্ষোভ করে। বিক্ষুব্ধরা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিসে একটি ব্যাংকের সস্মুখভাগ ভাংচুর করে। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে বঙ্গ সংস্কৃতি উৎসবের গেট মঞ্চসহ চেয়ার ও অন্যান্য জিনিস ভাংচুর করে। শহরে এখনো চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এর আগে, আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পক্ষে মাওলানা মোবারক উল্লাহ হরতালের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, মাদ্রাসাছাত্র নিহত ও মাদ্রাসায় হামলার প্রতিবাদ, সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তাপস রঞ্জন বোস, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকূল চন্দ্র বিশ্বাসের অপসারণ ও নিহত মাদ্রাসাছাত্রের নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা তৌহিদী জনতার ব্যানারে হরতাল পালিত হবে।
এর আগে আজ মঙ্গলবার ভোররাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমানের (২২)। তিনি শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রামের বাড়ি নবীনগর উপজেলার সামন্তঘর গ্রামে। তিনি শহরে থেকেই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। তাঁর লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমানের ভাই হাফেজ মোহাম্মদ মামুন ও সহপাঠী মুফতি নিয়ামুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, মাসুদের গায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গতকাল সন্ধ্যায় শহরের জেলা পরিষদ মার্কেটের বিজয় টেলিকমের মালিক রনির সঙ্গে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার (বড় মাদ্রাসা) এক ছাত্রের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে এতে ছাত্রলীগ ও এলাকাবাসী যোগ দেয়। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। চার ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
আজ সকাল থেকে এলাকায় দুই প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হোসেন। তিনি জানান, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাদ্রাসাছাত্রের সঙ্গে ব্যবসায়ীর বাকবিতণ্ডার পর কয়েকশ ছাত্র জেলা পরিষদ মার্কেটে গিয়ে রনির মালিকানাধীন বিজয় টেলিকমসহ একাধিক দোকানে হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে। এর পর ব্যবসায়ীরা মাদ্রাসাছাত্রদের ধাওয়া করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দিলে সংঘর্ষ মারাত্মক আকার ধারণ করে। অন্যদিকে মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেয় কান্দিপাড়া এলাকাবাসী। সংঘর্ষের সময় শহরের টিএ রোড ও বড় মাদ্রাসার সামনে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। মাদ্রাসার সামনে কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সূত্র. নয়াদিগন্ত