ইউরোপের মানুষকে কে/কী এরকম হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো ইসলামের দিকে খেদিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ মুসলিম বিশ্বের অমুসলিমরা ইসলামে তেমন আকর্ষিত হয় না, উল্টো বিকর্ষিত হয়- খুব কাছে থেকে না দেখলে হয়তো এর উত্তরে ম্যানুফ্যাকচার্ড মিডিয়ার উপর ঈমান আনতে হতো।
সংযুক্ত ছবিটি ফ্রান্সের দুজন মানুষের। কাজে যেতে যেতে কেপচার করা। এরকম চিত্র প্রায়ই দেখা যায়। এই সংস্কৃতিতে যেন ইউরোপ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ছবিতে (ডানে) মহিলার বয়স কত হবে? মিনিমাম ষাট? সন্ধায় বাসে করে বাসায় ফিরছেন। বাসের সিটে বসেই কোর’আনুল কারীম বের করে তেলাওয়াত শুরু করলেন। আর (বামে) কৃষ্ণাঙ্গ লোকটা? ট্রেনের অপেক্ষা করছেন, হাতে কোর’আনুল কারীম। দুজনেই নিজ নিজ স্টপিজে নামলেন। কারো দিকে তাকালেন না, কাউকে বিরক্ত করলেন না। চেহারায় ক্লান্তি নেই, নেই দুশ্চিন্তার চাপ!
যে দেশগুলোতে পথে পথে কমেডি ক্লাব করা হয়েছে মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্য। যে দেশের মানুষ weekend এ পাগলের মতো বের হয় একটু চিত্তরঞ্জনের জন্য, রিফ্রেশ হওয়ার জন্য- সেখানে কে না খুঁজবে মুসলিমদের এই সুখের রহস্য কী, তাদের এরকম চোখ ধাঁধানো আলাদা চালচলনের কারণ কী!
যখনই খুঁজে পায় ইসলামিক লাইফ স্টাইল এবং রেগুলেশন এসব মুসলিমদের সুখের মূল রহস্য। সাথে সাথে অমুসলিমরা ইসলামের ছায়াতলে চলে আসে। (বিভিন্ন নওমুসলিমের সাক্ষাৎকার থেকে)
আবার অনেক সময় দেখা যায়, অমুসলিমদের সাথে মুসলিম একজন চাকরি করছে, কিংবা স্কুল-কলেজে একসাথে পড়ছে অথবা বন্ধুত্ব হয়েছে। তো মুসলিমদের (অধিকাংশের) কাজকর্মে, চালচলনে ব্যতিক্রমী কিছু চমৎকার বৈশিষ্ট্য অমুসলিমদের চোখে স্পষ্ট ভাসে, যা তাদেরকে ইসলামের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট করে। কিছুদিন যেতে না যেতেই অমুসলিম লোকটি মুসলিম হয়ে যাচ্ছে। (অবশ্য হিদায়াত আল্লাহই দিয়ে থাকেন।)
বই পড়ে কিংবা লেকচার শুনে যত মানুষ মুসলমান হয়েছে, তার চেয়ে কয়েক শ গুণ বেশি লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে মুসলমানদের আখলাক-আচরণ এবং জীবনপ্রণালী দেখে। যুগে যুগে। ইউরোপে যে ইসলাম গ্রহণের হার রকেট গতিতে বাড়ছে, সেটা কি টিভিতে ইসলামি প্রোগ্রাম দেখে কিংবা নিউজ পেপার পড়ে আর ইসলামি বই/আর্টিকেল পড়ে?! অবশ্যই না। যেখানে টিভি/রেডিও কিংবা পত্রিকার খবর শুরু হয় ট্যাররিস্টের অমানুষিক নির্যাতনের ভিডিও দিয়ে এবং শেষ হয় অমুসলিম কারো রক্তের লালিমার সাথে করুণ সুরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
হ্যাঁ; ইসলামের জন্য, দাওয়াতী মিশনের জন্য মিডিয়ার প্রয়োজন। কিন্তু, একমাত্র মিডিয়া দিয়েই যদি কেল্লা ফতেহ হতো তাহলে শুধু USA ভিত্তিক খৃস্টান ধর্মপ্রচারক চ্যানেল রয়েছে কতশত, পুরো বিশ্বকে খৃস্টান বানিয়ে ফেলতো।
অন্তে বলা চলে, মুসলিম বিশ্বে মুসলিমদের আখলাক-আচরণে ইসলাম-বিদ্বেষীর সংখ্যা বাড়ছে এবং পশ্চিম বিশ্বে মুসলিমদের আখলাক-আচরণ তথা সাংস্কৃতিক প্রভাবে ইসলাম গ্রহণের হিড়িক পড়েছে।
আপনি কোর’আন পর্যন্ত কাউকে আনতে হলে অবশ্যই আপনার মাঝে কোর’আনে বাতলানো আকর্ষণীয় আচরণ থাকতে হবে। দুনিয়ার সকল খারাপ কাজ করে শুধু “শ্রেষ্ঠ ধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম” বলে খামাখা চিৎকার করে কোনো লাভ নেই।
লেখক : ফ্রান্স প্রবাসী