মুসা আল হাফিজের কলাম প্যারিস হামলা :
বলতে চাই প্যারিস হামলা আসলে ইউরোপে ইসলামের বিস্তার ও মুসলিমদের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে। ইসলাম ফোভিয়ার পক্ষে এ হচ্ছে অত্যন্ত সবল এক প্রয়াস। গ্রীট উইল্ডার্সরা দীর্ঘ দিন ধরে বলে চলছে ইউরোপে ইসলামকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যদিও এটা সম্ভব নয়, কিন্তু সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে এর প্রেক্ষাপট তৈরী করতে হলে ইসলামের নামে ইউরোপের মাটিতে কিছু নৃশংস ঘটনা দরকার। প্যারিস হামলা সেই প্রয়োজন পূরণ করলো। এখন ইউরোপ বলবে শরণার্থীরা সন্ত্রাস বহন করছে, ওদের স্থান দেয়া নয় আর। মসজিদ,ইমলামী সেন্টার,ইসলামের দাওয়াত ইত্যাদি আমাদের নিরাপত্তাকে কোনো না কোনোভাবে ব্যাহত করছে। অতএব সেগুলোকে কঠোরভাবে সামলানো ততটাই প্রয়োজন, যতটা প্রয়োজন আমাদের স্বাভাবিক জীবন। গণতান্ত্রিক নীতি সব ধর্মের প্রতি সমতা চায়, কিন্তু ইসলামের অনুসারীদের একটি অংশ যেহেতু ইউরোপের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধলিপ্ত, তাই ইসলামকে সাধারণ ধর্ম হিসেবে অন্যদের সাথে বিচার করা যাবে না। বরং তাকে শত্রু মতাদর্শ হিসেবে দেখতে হবে।এই ‘দেখার ‘ চল গোটা ইউরোপে যারা কামনা করে, তাদের লোকেরাই এই হামলা চালিয়ে থাকবে।এদের হয়ে খেলছে বলেই আইএস ও অন্যান্য চরমপন্থিদের আমি ইসলামের উল্থানের প্রতিপক্ষ মনে করি দুই। ইউরোপের সকল নেতা এন্টি ইসলাম নন।ওদের চোখে দেখার সেই চশমা তুলে দেয়া হবে বিবিধ পন্থায়। এ প্রয়াস যদি সামান্যও সফল হয়, তাহলে ইউরোপ ভয়ানক ভুলটি করে বসবে। মুসলিমদের সামাজিক নিরাপত্তা ও অধিকার সমূহে হাত দেবে।ফলে পশ্চিমাবিশ্বে মুসলিম কমিউনিটির একটি অংশ নিজেদেরকে আরো বেশি মজলুম হিসেবে আবিস্কার করবে।তাদের সবচে’ হতাশ অংশটি ঝুকে পড়বে চরমপন্থার দিকে।অতএব আমরা দেখতে থাকবো এমন ঘটনা আরোও ঘটতে থাকবে।এতে জয়ী হবে তারাই, যারা ইউরোপ কিংবা ইসলাম, কারোই বন্ধু নয়। তাহলে ইউরোপকে এর মোকাবিলা করতে হবে কীভাবে? অবশ্যই হিংসার পথ ধরে নয়।মুসলিম কমিউনিটিকে এ সংকট মোকাবেলায় সহযোগী হিসেবে কাজে লাগান।চরমপন্থার বিরুদ্ধে আদর্শিক হাতিয়ার খুজুন ইসলামেই।আদর্শিক সেই বোধ ব্যাপক হয়নি বলেই চরমপন্থিরা ইসলামের নামে কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছে।ওরা পেশ করেছে বিকৃত ইসলাম।ফলে তৈরী হয়েছে সংকট।এ সংকটের সমাধান রয়েছে একমাত্র যথার্থ ইসলামে। পশ্চিমাবিশ্বে বসবাসরত মুসলিমদের ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা নিশ্চিত করা তাই পশ্চিমা নেতৃবৃন্দের প্রধান দায়িত্ব।সে কারণেই তাদেরকে সেলিব্রেট করতে হবে ইসলামের যথার্থ প্রতিনিধিদের। তিন। ইউরোপ যে ইসলামনীতি অবলম্বন করছে, তার গোড়ায় গলদ রয়ে গেছে। তারা ইসলামকে এখনো বহিরাগত বিষয় হিসেবে বিচার করছে। যে কী না তাদের মানচিত্রে প্রবেশ করেছে তাদের সভ্যতাকে পরোক্ষে হুমকি জানিয়ে। এটা আসলে মধ্যযোগীয় মানসিকতা। তখন তারা ইসলামকে সেভাবেই দেখতো। বর্তমানে ইহুদী জনগোষ্ঠীর চেয়ে ইউরোপে মুসলিম জনগোষ্ঠী প্রধান।অতএব ইহুদী সমস্যা ইউরোপের নিজস্ব বিষয় বলে বিবেচিত হলে ইসলামের বিষয়টি নিজেদেরই রাষ্ট্রের একটি নিজস্ব প্রসঙ্গ হয়ে হাজির হোক।তখন হিজাব শত্রুসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ হিসেবে বিবেচিত হবে না।মিনার আপনাকে আতংকিত করবে না। যতদিন মিনার আপনাকে আতংকিত করবে,আপনার আচরণে তা প্রতিফলিত হবে। ফলে নিজের রাষ্ট্রের ভেতর “আপন ও পর ” সৃষ্টি করেই চলবেন। যাদেরকে ‘পর ‘ করবেন,তাদের একটি অংশের মনস্তত্বে দূরত্ব ও বন্চনার যে অনুভব সন্চারিত হবে, তা বিশেষ পরিস্থিতিতে হিংস্ররুপ ধারণ করা স্বাভাবিক। চার। ইউরোপের দ্বিচারিতাকে অবশ্যই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।মুসলিম বিশ্বে চরমপন্থার বিরোধীতায় আপনারা কখনোই সৎ নন। আপনারা চেয়েছেন হিংস্রতার উল্থান, কারণ আপনারা মুসলিমবিশ্বকে উপহার দিেয়েছন হিংস্রতা।আপনারা চেয়েছেন হিংস্রতার উল্থান, কারণ প্রতিটি চরমপন্থি গ্রুপ আপনাদের প্রশ্রয় পেয়েছে নানানভাবে। আপনারা চেয়েছেন হিংস্রতা, কারণ শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলোকে আপনারা বিকশিত হতে দেননি পাঁচ। পশ্চিমা মিডিয়াকে বুঝতে হবে ইসলাম ফোভিয়া ছড়িয়ে বিশ্বকে অস্থির ও ভীত করে তুলে ইসলামকে তারা গোটা পৃথিবীর প্রধান আলোচ্যবিষয়ে পরিণত করেছে মাত্র।এতে নেতিবাদী মন নিয়ে অনকে ইসলামকে জানতে এসেছেন।কিন্তু ইসলাম আপন সৌন্দর্য দিয়ে তাদেরকে ‘নিজের ‘ করে নিচ্ছে।
অপরদিকে ইসলামকে না জেনে অনেকেই এন্টি ইসলামী এক্টিভিটিস প্রবল করে তুলছেন। দেশে দেশে শুধু মুসলিম বিদ্ধেষকে পুঁজি করে গঠিত হচ্ছে বহু দল।তারা ভয়ানক অবয়ব নিচ্ছে দিন দিন। অপরদিকে মসলিমদের উপস্থিতি বাড়ছে দিন দিন।আত্মার পিপাসায় অধীর মানুষকে মুসলিম হবার পথে বাঁধা দিতে পারছে না ইসলাম ফোভিয়া।তারা প্রবলভাবে মুসলিম হচ্ছেন। আরেকটি অংশকে আপনারা প্রবলভাবে ইসলামবিদ্ধেষী করে তুলছেন। ফলে ভয়ানকভাবে বিভক্ত হচ্ছে আপনাদের সমাজ। দিন যত যাবে, এ বিভক্তি বাড়বে।পরে যখন পানি অনেক দূর চলে যাবে, দেখবেন ইউরোপীয় সমাজ জীবন ভীষণভাবে অসহিষ্ণু হয়ে গেছে। হিটলারের আত্মা ইসলামবিরোধী অবয়বে বর্বরতার ঝান্ডা উড়াচ্ছে।কিন্ত ইসলামকে উচ্ছেদের জন্য ইউরোপের প্রতিটি শহরে তার প্রয়োজন ভয়াবহ গণহত্যা। মুসলিমদের এথনিক ক্লিনজিং। মরা ও মারার দিকে যখন সমাজ ধেয়ে চলবে, তখন না থাকবে স্থিতিশীল আপনাদের অর্থনীতি। না থাকবেন আপনারা বিশ্বনেতৃত্বে। পশ্চিমা মিডিয়াকে নিজেদের স্বার্থেই নিজেদের ভূমিকা পূণর্মূল্যায়ন করতে হবে। ছয়। পাশ্চাত্য নিজেকে প্রশ্ন করুক বোমাগুলো কেন ধেয়ে আসছে? হতাশ ও বিপন্ন জীবনগুলো কেন হয়ে উঠছে মানববোমা? আফগানে অপ্রমানিত কারণ দেখিয়ে হামলা,ইরাকে মিথ্যা বাহানায় হামলা, লিবিয়া বা সিরিয়ার দুর্বল জনপদগুলোকে মৃত্যুর অরণ্যে পরিণত করা বোমাগুলো কেন ও কীভাবে সবলদের জীবন ও জনপদের দিকে ফিরে যায়!! মুসলিমদের রক্ত কি লাল নয়? তাদের হত্যা কি ক্রাইম নয়? মুসলিমগণহত্যা কি অমানবিক নয়? এই সব অপরাধ কি আরো অপরাধের জন্ম দেবে না? যখন বিপরীত দিক থেকে পাল্টা অপরাধ সংগঠিত হবে, তার দায় কার? শক্তিমানদের বিবেকে এই বিবেচনার জাগরণ ততটাই প্রয়োজন,যতটা প্রয়োজন বিশ্বশান্তি
লেখক পরিচিতি: কবি সাহিত্যিক প্রাবন্ধিক গ্রন্থাকার গবেষক।