হিজাব এক ধরনের কাপড় যা মাথা, বুক কিংবা পুরো শরীর আবৃত রাখে।একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের মধ্যে এই পোশাক পড়ার প্রচলন রয়েছে। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল (সাঃ) প্রদর্শিত নিয়ম অনুসারে নিজের আব্রু রক্ষার্থে আমরা মুসলিম নারীরা এ পোষাক পড়ে থাকি। মূলত পুরুষের প্রত্যক্ষতা এড়াতে এটি পরিধান করে থাকি আমরা মুসলিম নারীরা। কারণ পুরুষের প্রত্যক্ষতা এড়াতে পারলে, সমাজে নারীঘটিত অনেক অপরাধ অনেকাংশেই কম হয়।
তবে হিজাবের চর্চা কেবল ইসলামে আছে তা নয়। ভিন্ন নামে, ভিন্ন পরিসরে তা জারি আছে অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাসীদের মধ্যেও।
“বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী খ্রীষ্টপূর্ব ১৩’শ শতাব্দি থেকে হিজাব বা চুল আবৃত করার পোশাক ব্যবহৃত হয়ে আসছে । সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী হিন্দুদের ধর্ম ধর্মগ্রন্থ গীতাতেও শরীর কিংবা মাথা আবৃত রাখার কথা বলা আছে। ঋগবেদ-এর ১৯-২০ মন্ত্রে বলা হয়েছে, পুরুষদের নারীদের বস্ত্র পরিধান করা উচিত নয়। রামায়ন থেকে জানা যায়, সীতার প্রতি রামের নির্দেশ ছিলো নিজেকে ঢেকে রাখার ।”(সংগৃহীত)
“পর্দা নারীর মর্যাদার প্রতীক”। বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী । একটা সময়ে শুধু পর্দা করার জন্যই হিজাব পরা হতো। কিন্তু বর্তমানে সব বয়সী নারী ও তরুণীদের কাছে হিজাবের ব্যবহার দারুণ এক ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিজাবে পর্দা করা ছাড়াও রয়েছে নানা উপকারী দিক। বাইরের ধুলাবালি থেকে ত্বক ও চুলের সুরক্ষা দিতেও হিজাব কার্যকর ।
আগে যতটা না চোখে পড়তো টাইট,পাতলা,শরীর দেখানো জামা পড়ুয়াদের বর্তমানে তার থেকেও বেশী চোখে পড়ে হিজাবের ফ্যাশন । জিন্স পেন্ট আর শার্ট পড়ে হিজাব পড়া নারীদেরও অভাব নেই এ সমাজে । পাতলা জামা ; আপাদমস্তক শরীর দেখা যাচ্ছে আর এদিকে মাথায় হিজাব পড়া ; স্লিভলেস জামা পড়া কিন্তু মাথায় হিজাব । এমন কিছু ফ্যাশনেবল হিজাবধারীদের দেখা যায় যা সহজেই যে কাউকে আকর্ষিত করবেই । হিজাব পড়ে পার্কে বয়ফ্রেন্ড এর বুকের উপর শুয়ে থেকে হিজাবের এ অবমাননা না করলেই কি নয় ! বলছিনা হিজাব পড়ে প্রেম করতে নেই কিংবা প্রেম করা যাবেনা ; কেন হবে সেটা পাবলিক প্লেসে !
আবার এমনও নারীর অভাব নেই যারা নিয়মিত হিজাব পড়ে থাকে কিন্তু অকেশনালি হিজাবের ধরা ছুয়ার বাইরে থাকেন । কোন বিশেষ অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে,জন্মদিন,কিংবা কোথাও ঘুরতে যাওয়া এমন দিনে হিজাবের আওতামুক্ত থাকার চেষ্টা করেন । অনেককে অনেক সময় প্রশ্ন করেছি এটা কেন ? অনেকেই উত্তরে বলেছেন একদিনই তো ; একদিন না পড়লে কি আর হয় ! আর এমন অনুষ্ঠানে হিজাব পড়লে কেমন যেন খেত দেখায় ! অনেকে আবার এও বলে থাকেন আজ প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করছে তাই পড়তে ইচ্ছে করলোনা । যদি পর্দা করার জন্য হিজাব পড়ে থাকেন এই মানুষ গুলো তবে বলবো আল্লাহর এমন কোন বিধানের মধ্যে আছে কি কোন বিশেষ দিনে পর্দা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন? আর যদি ফ্যাশন হিসেবে পড়ে থাকেন তবে বলবো হিজাবের এই অবমাননা না করলেই কি নয় ?
আমার কাছের অনেকেই আছে যারা হিজাব পড়ে দেখে তাদের প্রতি আমার একটা শ্রদ্ধাবোধ জন্ম নিয়েছে । তাঁকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি ।তার থেকে হিজাব পড়ার উৎসাহ পেয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছি হঠাৎ যখন তাঁকে আবার হিজাব ছাড়া দেখতে হয় তখন সেই শ্রদ্ধাবোধ কোথায় এসে নামে ধারণা করুন !
হিজাব নিয়ে কথা বলার মতো অতটা ধার্মিক এখনো হতে পারিনি । আল্লাহ কে ভয় করে আর পর্দা করার জন্যেই হিজাব পড়তে শুরু করেছি । কিন্তু প্রতিটা পদে পদে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হয় “তুমি কি ফ্যাশন হিসেবে হিজাব পড়া শুরু করেছ? আচ্ছা , তুমি কি হিজাব প্রতিদিনই পড়বা নাকি অকেশনালি বাদ দিবা ? হিজাব কি কয়দিন পর ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছে আছে ? কোন বিয়ে কিংবা কোন অনুষ্ঠানে হিজাব পড়ার ইচ্ছে আছে নাকি পড়বানা ?” এখানে প্রশ্নকারীর কোনো দোষ নেই ; তিনি নিয়মিত এমন পরিস্থিতি দেখে অভ্যস্ত তাই হয়তো প্রশ্ন করছেন । কিন্তু যারা এসব করছে তাদের অনেকেই ধর্মীয় পোশাক হিসেবেই ব্যবহার করছে কিন্তু অকেশনালি হিজাবের আওতামুক্ত থাকার যে কোন বিধান কোন ধর্মেই নেই এ কথা হয়তো তারা জানেনা । অথবা সঙ্গ দোষে হয়ে যাচ্ছে । বন্ধু,কলিগ কিংবা কাছের কোন একজন বলছে আজ হিজাব না পড়লেই কি নয় ? আজকে বাদ দাও ; কিছু হবেনা । ঐ কথা শুনেই হয়তো বাদ দিয়ে দিয়েছেন । কিন্তু তিনি তখন তার ব্যক্তিগত মতামত কেও যে অসম্মান করছেন এটা তিনি নিজেও বুঝেননি। এমন প্রস্তাব আমিও অনেক পেয়েছি । কিন্তু এ বিষয়ে আমি আমার কথার বাইরে কখনো যাইনি।
আশা করি আমরা যারা পর্দার জন্য হিজাব ব্যবহার করছি তারা একটু জানার চেষ্টা করবো ইসলামে নারীর পর্দা করার মর্যাদা কতটুকু ! হিজাবের অবমাননা না করে আসুন আমরা হিজাবের সঠিক ব্যবহার করার চেষ্টা করি ।
ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতা অথবা এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে না বুঝার কারণে কেউ কেউ একে পশ্চাৎপদতা, সেকেলে, নারীকে শৃঙ্খলিতকরণের পন্থা, উন্নয়নের অন্তরায় এবং নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি বৈষম্য সৃষ্টির প্রয়াস বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। মূলত এই ভুল বুঝাবুঝির জন্য মুসলিম-বিশ্বের কতিপয় এলাকায় ইসলামের সত্যিকার শিক্ষার অপপ্রয়োগ আর পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকাই দায়ী। পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের এটা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ইসলামের কথা উঠলেই তার প্রতি একটা কুৎসিৎ আচরণ প্রদর্শন করা হয়। আর তাঁদের এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে আমাদের এই অঞ্চলেও অনেকে পর্দা-প্রথা সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করে থাকেন। একজন খ্রীষ্টান ‘নান’ বা ধর্মজাজিকা যখন লম্বা গাউন আর মাথা-ঢাকা পোশাক পড়ে থাকেন তখন তা আর পশ্চাৎপদতা, উন্নয়নের অন্তরায় বা নারীকে শৃঙ্খলিতকরণের প্রয়াস বলে বিবেচিত হয় না। বরং তা শ্রদ্ধা, ভক্তি বা মাতৃত্বের প্রতীক রূপেই বিবেচিত হয়।(সংগৃহীত)
অতএব, ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থা বা ক্ষেত্র-বিশেষে নারী-পুরুষের পৃথকীকরণ নারীকে শৃঙ্খলিত করার পরিবর্তে তাঁকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, সমাজে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ-ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে।
লেখক : শিক্ষার্থী, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, ঢাকা