গণধিকৃত বিবেক বিক্রিত এইসব বর্ণচোররা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে …
কমাশিসা ডেস্ক রিপোর্ট: হেফাজতে ইসলামের স্বপ্নের সেই গণজোয়ারকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে লাভবান হতে যারা চেয়েছিলেন তাদের অন্যতম মুফতি ফয়জুল্লাহ বঙ্গভবনে দাওয়াত খেয়ে এলেন। রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে বঙ্গভবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের দাওয়াত খেতে আসা আট নেতার মধ্যে ছিলেন বহুল আলোচিত ফয়জুল্লাহও।
বঙ্গভবনে বুধবার বিকেলে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন তিনি। ৫ মের হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের পর থেকে অনেকটা আত্মগোপনেই ছিলেন বহু মামলার আসামী মুফতি ফয়জুল্লাহ। মাঝে মাঝে অল্পসময়ের কিছু প্রোগ্রামে তাকে দেখা যেতো। আকস্মাৎ রাষ্ট্রীয় দাওয়াতে গণভবনে উপস্থিত হওয়ায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
সরকারের বিরুদ্ধে বারবার হুংকার ও জনমত গঠনে পরিচিত এই হেফাজত নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগেরও শেষ নেই। ৫ মে-তে সন্ধ্যার পরও সমাবেশ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার ছিলো সর্বাধিক ভূমিকা। হেফাজতের অন্য বর্ষীয়ান নেতারা সন্ধ্যার আগেই সমাবেশ শেষ করার কথা বললেও ফয়জুল্লাহ ও তার সহকর্মীরা হেফাজত চেয়ারম্যানের কান ভারি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপপ্রয়াসের গুরতর অভিযোগ তার উপর। সন্ধ্যার যেই মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়া তার নেতাকর্মীদের হেফাজতের পাশে দাঁড়াবার আহ্বান জানান তখনি নির্ধারিত সময়ের পরেও সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে সমাবেশ চালিয়ে যাওয়ার মূলনায়ক ছিলেন এই মুফতি ফয়জুল্লাহ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন নিয়ে সংঠনের দায়িত্বরত কজন শীর্ষ নেতা নিজেদের নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব জাহির করে ১৮ দলীয় জোট থেকে পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়নসহ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এদিকে হেফাজতভুক্ত জোটের বাইরের দলগুলো চায় হেফাজতের ১৩ দফার আন্দোলনকে পুঁজি করে কেউ যেন নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে না পারে। তারা বলেছিলেন, হেফাজতের আন্দোলন হবে সব সময় রাজনীতি ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে।
এ বিষয়ে হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ওয়াক্কাস সেই সময় সাংবাদিকদের বলেছেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত ছিলো ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থান না করার পক্ষে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই সমাবেশ শেষ করে দেয়ার মত আমি দিয়েছিলাম। সন্ধ্যার একটু আগে আমিও সমাবেশ থেকে চলে গেছি। সেদিন অবস্থান না করলে হেফাজতের পরিস্থিতি এমন হতো না।
রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশ থেকে ৫ মে রবিবার সন্ধ্যায় মুফতি ফয়জুল্লাহ হুংকার ছেড়ে বলেছিলেন, আমরা খুনের প্রতিশোধ না নিয়ে যাব না। মুফতি ফয়জুল্লাহ হেফাজতের নির্ধারিত ১৩ দফার চেয়ে দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির বিষয়টিই বড় করে উঠেছিলো। তিনি সমাবেশে এক পর্যায়ে বলেছিলেন, নাস্তিক-ব্লগারদের মুখোশ উন্মোচনকারী মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে দেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
সূত্র জানিয়েছে, হেফাজতে ইসলামের এই গণজোয়ার দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোরও চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ আছে, হেফাজতের এই মহাসমাবেশ করতে যুদ্ধাপরাধী চক্র জামায়াতেরও আর্থিক সহযোগিতার কথা। কারণ, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগে যে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়, এর বিরুদ্ধে জামায়াত চেয়েছিলো ভিন্ন আরেকটি প্লাটফার্ম দাঁড় করানোর জন্য। কিন্তু সেটা হালে পানি পায়নি।
জানা গেছে, কওমীপন্থী ওলামায়ে কেরাম আকিদাগত দিক থেকে কট্টর জামায়াতবিরোধী। তারা জামায়াতের আদর্শিক নেতা আবুল আলা মওদুদীকে পথভ্রষ্ট মনে করেন। আর এজন্যই গণজমায়েতকে দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হয়নি। তবে মুফতি ২৫ জুন ২০১৫ তে জামায়াতে ইসলামীর ইফতার মাহফিলে মুফতি ফয়জুল্লাহসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেক নেতাদেরকেই দেখা যায়। তারা এটিকে রাজনৈতিক ঐক্য বলে প্রচার দিয়ে থাকেন।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামী নেতা আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগে শুরু হয় গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম। পরে ওই মঞ্চে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে রাজীব নামে একজন সন্ত্রাসী আক্রমণে খুন হলে ব্লগে তার ইসলাম ও মহানবী সা.কে কটূক্তি করে লেখার বিষয়টি প্রকাশিত হয়। এ রকম আরো কয়েকজন ব্লগারের ইসলামবিদ্বেষী লেখার বিষয়েও খবর প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে তওহিদী জনতা, ইসলামি দল ও সংগঠনগুলো নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম ৯ মার্চ হাটহাজারীতে ওলামা সম্মেলন আহ্বান করে। সূচিত হয় ১৩ দফা আন্দোলন। ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ শেষে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ইসলামপ্রিয় মানুষের অংশগ্রহণে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশ থেকেই ৫ মে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আর এই অবরোধই মূলত হেফাজতের শেষ বড় কর্মসূচি ছিলো। অবরোধ, এরপর শাপলাচত্বরে সমাবেশ এবং নিশ্চুপ হেফাজত। মাঝখানে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার রাজসাক্ষী হতে পারেন এই মুফতি ফয়জুল্লাহ।
সুত্র: সিলেট রিপোর্ট/আজ,রুন ২০-১২-২০১৫