আগামিকাল ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ৪৪তম বিজয় দিবস। কাল সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় চুয়াল্লিশতম বিজয় দিবস পালিত হবে। উনিশশ’ একাত্তর সালের ষোল ডিসেম্বর বাংলাদেশ হানাদার বাহিনীমুক্ত হয়ে বিজয় লাভ করে স্বাধীন-স্বকীয় জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে। ত্রিশ লাখ প্রাণ আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের দামে অর্জন আমাদের মহান বিজয়। ষোল ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্য গৌরবময় একটি দিন। বক্ষমান প্রবন্ধে বিজয় দিবসের কর্মসূচি বিষয়ে ইসলাম কী বলে এবিষয়ে আলোকপাত করা হলো।
পবিত্র কুরআন কারীমে দু’টি সুরায় বিজয় দিবসের কর্মসূচি বর্ণনা করা হয়েছে। সূরাদ্বয়ের একটির নাম সুরা ফাতাহ, অপরটির নাম সুরা নাসর। ‘ফাতাহ’ অর্থ বিজয়, আর ‘নাছর’ অর্থ মুক্তি বা সাহায্য। দেশ-স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে দেশ ও মাটির গাদ্দারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ দখলমুক্ত করার নাম বিজয়। আর বিজয় অর্জনের পেছনে অলৌকিক শক্তির নাম হচ্ছে নাসর বা সাহায্য। বিজয় অর্জন হলে কি করতে হবে তা সুরা নাসর থেকে বুঝার চেষ্টা করি।
মহান রাব্বুল আলামিন সুরা নাছরের প্রথম আয়াতে ইরশাদ করেন,‘যখন তোমাদের বিজয় আসবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসবে, তখন দেখবে, দলে দলে মানুষ ইসলাম ধর্মে প্রবিষ্ট হচ্ছে’। মহান রাব্বুল আলামিন তিনটি কর্মসুচী এই সুরায় ঘোষণা করেছেন। সেগুলো হল: ১.ফাসাব্বিহ, (আল্লাহর তাসবীহ পাঠ তথা পবিত্রতা বর্ণনা করা ) পাঠ করা।
২. বিহামদী রাব্বিক, (আল্লাহর হামদ তথা শুকরিয়া ) আদায় করা।
৩. ওয়াসতাগফীর, (যুদ্ধের সময় ভুলভ্রান্তি তথা সীমালংঘন থেকে রবের কাছে ক্ষমা চাওয়া) প্রার্থনা করা ।
স্বাধীনতা এবং বিজয় একমাত্র মহান করুণাময় তায়ালারই দান। আল্লাহ তায়াআলার অশেষ করুণার বদৌলতেই আমরা দেশ বিজয় করতে পেরেছি। তাই শুকরিয়াও করতে হবে তাঁরই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি আমাদেকে এই বিজয় ও স্বাধীনতা দান না করতেন, তাহলে আমরা পাকিস্তানী হানাদারদের শাসন ও শোষণে যাতাকলেই বন্দি থাকতাম। বাংলার আকাশে বিজয়ের নিশান উড়ানোর ভাগ্য হতো না । স্বাধীন জাতি হিসেবে পৃথিবীতে পরিচয় দিতে পারতাম না। স্বাধীন বাঙলাদেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে নাম লিখাতে পারতাম না । বাংলার আকাশে লাল সবুজের পতাকা উড্ডীন করতে পারতাম না। দেশ যদি স্বাধীন না হতো তাহলে আজও আমাদেরকে পাকিস্তানের বর্বররা কলুদ বলদের মতো খাটাতো।
আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী দেশ এখনো কিন্তু পরাধীন। দীর্ঘকাল যাবত তারা সংগ্রাম করে যাচ্ছে কিন্তু এখনো তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না । অতএব তিনটি কর্মসুচী পালনের মাধ্যমেই আমাদেরকে বিজয়ের আনন্দ করতে হবে। বিজয়ের দিন মহান রবের কাছে সেজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে শুকরিয়া আদায় করা নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব। বিজয়ের দিন শুকরিয়া নামাজ পড়া নবীজীর সুন্নাত। ইতিহাস থেকে জানা যায় নবী (সা:) দশ বছর পর বিজয়েরবেশে সহস্র সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে যখন মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি চেহারা নিম্নগামী অবস্থায় একটি উটের ওপর বসা ছিলেন। প্রথমে হযরত উম্মে হানীন (রা:) ঘরে প্রবেশ করে আট রাকাত নামাজ আদায় করলেন। সেই নামাজকে সালাতুল ফাতহ বা বিজয়ের নামাজ বলা হয়।
এছিলো নবিযুগের কথা। আর এযুগে বিজয়ের মাস আসলেই আমাদের দেশের শহীদ মিনারগুলোকে সুসজ্জিত ও আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়। বিজয় দিবস আসলেই দেশের দেশপ্রেমিরা খুব ভোরে ফুলের তোড়া নিয়ে শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। বিজয় দিবসের আনন্দের নামে সারাদেশেই গানবাজনা-নর্তকী ও অশ্লীল কনসার্টেও আয়োজনে মগ্ন থাকতে দেখা যায় তরুণ-তরুণীদের। বছরে একবার শহীদদের স্মরণে মিলাদ মাহফিল আর শহীদ মিনারে ফুলের তোড়া অর্পণ করে তাদের স্মরণ করা ওইগুলোকে ইসলাম কখনোই সাপোর্ট করে না। কবর জিয়ারতের পরিবর্তে শহীদ মিনারে অশ্লীলতা ও কুসংস্কার পালন এবং দোয়া-মোনাজাতের বদলে নাচ-গান করে শহীদানের শ্রদ্ধা ও স্মরণ এসকল কাজ শহীদানের রক্তের সাথে উপহাস নয় কি ? হ্যঁ শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিল করতে অসুবিধা নেই, যে কোনদিন যে কোন সময় করেন। কিন্তু বছরে একদিন নিরবতা আর ফুলের তোড়া দিয়ে কেনো? কেনো?
আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক বিশ্বনবীসহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামগণ কত যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছেন কিন্তু বিজয়ের দিন মিছিল বা র্যলী করেছেন বলে ইতিহাসে বর্ণনা নেই। আল্লাহপাক আমাদেও বুঝা ও আমলের তাওফিক দান করুন।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও আলেম
Tags বিজয় দিবস: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও আজকের প্রেক্ষিত
এটাও পড়তে পারেন
কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ
খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...