যুগে যুগে কারবালা। চলছে কারবালার মহোৎসব। টপ টু বটম সাজানো-গোছানো। চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগে থেকেই করা। এখন চলছে শুধু বাস্তবায়নের মহড়া। বাংলাদেশ এখন খুনি জল্লাদের রাজ্য। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পুরোটাই হত্যাকারীদের নিয়মতান্ত্রিক দখলে। দুনিয়ার ইতিহাসে প্রকাশ্যে এমন জুডিশিয়াল কিলিং আর কখনো হয়েছে কিনা জানি না। হলে হতেও পারে।
গুডলাক ফর হাসিনা।
হাসিনার তকদির আল্লাহ তায়ালা খুলে দিয়েছেন। খালেদার কপালে লাগিয়ে দিয়েছেন সকল কালিমা। উলামাদের কপালে হতাশা আর সকল রাজনৈতিক দলের কপালে নৈরাজ্যবাদিতা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড সারা দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিলো। ঠিক আজও আরেকবার সারা পৃথিবীর মানুষ চমকে উঠছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের গণহারে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের উপর। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শেষে জেনারেল জিয়া সংসদে ইনডেমনিটি বিল এনে সেই বিচার ব্যবস্থা রহিত করে রাখেন। আর সেই জিয়া-ই তার জীবনে খাল কেটে এক কুমির ডেকে এনে দেশে আশ্রয় দিয়ে কিছুদিনের মাথায় শাহাদত বরণ করেন। বিষয়টা খুব ভাল করে ভেবে দেখুন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার পর বিচারপতি সাত্তার ক্ষমতায় আসেন। এরশাদ বন্দুকের নলে কৌশলে তাকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতারোহণ করে। এরশাদই ধীরে ধীরে জিয়ার ভুলের সুযোগ নিয়ে আওয়ামীলীগ ও হাসিনাকে আবার মাথা উচু করে দাঁড়াতে সহায়তা করতে থাকে। সময়ের দুর্বিপাকে এরশাদ ক্ষমতা হারান, পালে হাওয়া লাগে মুর্খ খালেদার।
অযোগ্য অথর্বদের নিয়ে খালেদা রানী এবং ছেলেদের প্রিন্স বানিয়ে পরিবারতন্ত্র মনের সাধ মিটিয়ে কায়েম করেছিলেন। তলে তলে আওয়ামীলীগ প্রতিটি সেক্টরে জায়গা করে নিতে থাকে। জামাতে ইসলামী ক্ষমতার মোহে হাসিনার সাথে জোটবেঁধে খালেদাকে নামান। জিত নিয়ে আসেন হাসিনা। ১৯৯৬এ হাসিনা অনেক কিছু করতে চেয়ে ছিলো কিন্তু পারেনি সেনাবাহিনীর কারণে। ভারত হাসিনাকে আস্তে আস্তে চলার পরামর্শ দেয়। জামাত বিএনপি ভারত বিরোধী টাইটেল গ্রহন করে আর আওয়ামীলীগকে ভারতের দালাল তকমা দিয়ে খুব মজা লুটছিলেন। হাসিনা ছিলেন সুযোগের অপেক্ষায়। প্রতিশোধের আগুন তার ভিতরে দাউ দাউ করে জ্বলছিলো। তিনি বলে বেড়িয়েছেন যে পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিতেই তিনি দেশে ফিরে আসছেন। একজন তার পিতার হত্যার বদলা নিবে তাতো স্বাভাবিক।
হাসিনার উত্থান! আওয়ামীলীগের হরতাল জ্বালাও পোড়াও ভাংচুর ছিলো এক ভয়ংকর চিত্র। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল পুলিশ সেনা ও সচিবালয়ে নিজেদের লোক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেটাফ করতে সক্ষম হন। আওয়ামীলীগ হয়ে উঠে মিডিয়া মাস্টার। বিএনপি ক্ষমতায় থেকেও মিডিয়া ছিলো আওয়ামীলীগের দখলে। এতো অপরাধের সাইন দেখেও খালেদা খুব মৌজে ছিলেন। একজন সাহসী সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার নায়িকা হাসিনার কাছে খালেদা হাতের পুতুল। খালেদার এই অজ্ঞতা মুর্খতা অপরিণামদর্শিতা হাসিনাকে আগাইয়া দেয়।
খালেদাকে জাতি কি দেয়নাই? কিন্তু প্রতিদান হিসাবে কি দিয়েছেন তিনি বাংলাদেশকে? না করলেন স্বাধীন বিচার বিভাগ! না করলেন স্বাধীন নির্বাচন কমিশন! না সরালেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা! দেশপ্রেমিক বিশাল একটি মিডিয়া করা হলোনা! একটা পুর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতিও করতে পারলেন না! লোটপাট আর লোটপাট। আওয়ামীলীগ এখন সুযোগ পেয়ে শ্বশুড় বাড়ির সম্পত্তি মনে করে দেশের সকল সম্পদ গ্রাস করে নিচ্ছে।
একজন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কতটুকু? হ্যাঁ খালেদাই এই মজা নিজের জন্য সেইভ করে নিয়েছিলেন। হাসিনা উত্তরাধীকার সুত্রে পেয়ে এখন খুব ইঞ্জয় করছে। পৃথিবীর বুকে এমন ক্ষমতাবান প্রধানমন্ত্রীর উদাহরণ দ্বীতিয়টি নেই। প্রেসিডেন্ট কলাপাতা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপুর্ণ জাতীয় সিদ্ধান্ত গুলো ঘরে বসে এক কলেমের খুঁচায় সেরে ফেলেন। সংসদ হলো হৈহুল্লুড় আর চেচামেচির জায়গা। তাইতো জঙ্গীবিমান ক্রয় সেনাবাহীনীর জন্য অস্ত্র ক্রয়, ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায়। কমিশনে ভাসে প্রধানমন্ত্রীর আপনজনের একাউন্টগুলো।
যুদ্ধাপরাধের বিচার বঙ্গবন্ধুর বিচার বুদ্ধিজীবি হত্যার বিচার একেকটা খুব প্লান মোতাবিক এগুচ্ছিলো। এতোগুলো বাস্তব প্রমাণ সামনে দেখেও খালেদা গোলাম আজমরা ছিলো আপন শক্তি ও দাম্ভিকতায় মত্ত। হাসিনা ক্রমান্বয়ে টার্গেটের দিকে আর উনারা মসনদের লিপসায় বিভোর। আজ ঘরে ঘরে আওয়ামীলীগ। উনারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। জিয়ার নাম ধুইয়ে খালেদা ভাবছিলেন এভাবে আজীবন মসনদের খোয়াব পুরা করে যাবেন।
২১আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হাসিনার পাল উঠে তুঙ্গে। কোন সুষ্টু বিচার তদন্ত কিছুই করা হলোনা। সাধে কি হাসিনা ফাঁসির দড়ি নিয়ে দৌড়াচ্ছে? দুশমন কে জামাত বিএনপি চিনলোনা। চিনেও তারা করলো রঙ্গলিলার খেলা! হাসিনা কিন্তু দুশমন চিনতে ভুল করেনি। হাসিনার বু্দ্ধিমত্তার কাছে হার মানতেই হয়। অবাক করার মতো এক একনায়কতন্ত্রী হিটলার।
আওয়ামীলীগের ভয়ংকর রাজনৈতিক কৌশল, দাঙ্গা হাঙ্গামা, মারমূখী ভুমিকার কাছে সবাই আজ ধরাসায়ী। মোল্লা মৌলভিরাও কল্লা বাড়ালে তালেবান আল-ক্বায়দা আইসিস জংগীবাদের ঔষধ রেডি করে রেখেছে। ১৯৯৬তে হাসিনা দেখেছেন কি কারণে তিনি পুণরায় ক্ষমতায় আসতে পারেন নি বা ক্ষমতাকে দীর্ঘায়ীত করতে পারেন নি। একনম্বর কঠিন বাঁধা হলো উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার যারা ছিলো জিয়া ভক্ত। তিনি তাই মাস্টার প্লান নিলেন। ২০১০ সালে খুব কৌশলে জামাত বিএনপিকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে হাসিনা মসনদে ফিরে আসেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে সেনা আশ্রিত তত্তাবধায়ক সরকারের সাথে হাতমিলিয়ে সবকিছু পাকাপাকি করেন। হাসিনা ক্ষমাতা্রোহনের ৩মাসের মাথায় ভারতের র’র কামান্ডো বাহিনী দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহের ধোঁয়া তুলে শুরু করেন আসল অপারেশন। একসাথে দুই শিকার। শক্তিশালি বর্ডার গার্ড বিডিআর ধংস যা ছিলো ভারতের প্রতিশোধ। আর গুরুত্বপুর্ণ জিয়াভক্ত সেনাদের দরাবার হলে এনে জমা করে একসাথে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় খুন। ৫৭জন দেশসেরা সেনা অফিসার খতম হয়েগেল। খালেদা জামাত তখনো ঘুমে। হাসিনা সেনাবাহিনীর মাঝে ত্রাস ঢুকিয়ে দিলেন। যে কেউ কথা বললে এভাবে শেষ। পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহ নাটকে খরছ হয়েছে মাত্র দশকোটি টাকা ।
হাসিনার এখন কোন বেকগিয়ার নেই। গাদ্দাফি এবং সাদ্দামের মতো বেঁচে থাকতে হলে ক্ষমাতয় ই থাকতে হবে তাকে; অথবা অবস্থা বেগতিক হলে পলায়ন। কেউ এখন তাকে নামানোর সাহস দেখেনা। পুরো পুলিশ বাহিনী হিন্দু অফিসার দিয়ে কন্ট্রোল। পুরো জন-প্রশাসন আওয়ামীলীগের গুন্ডাদের দিয়ে ঘেরাও করে রাখা। সেনা এখন হাসিনার হাতের পুতুল। বিচার ব্যবস্থা টপ টু বটম ব্লুপ্রিন্ট করা। কোন সুবিচার ইনসাফ কেউ আসা করতে পারেনা আদালত থেকে। নিজের পছন্দের খুনিদের যারা আদালতের মাধ্যমে ফাসি ও আজীবন জেল দন্ড পাওয়া ক্রিমিনালদেরকে প্রেসিডেন্টের মাফি নিয়ে বের করে দিচ্ছেন। আমলা কামলা পুলিশ সেনা সাংসদ মন্ত্রী অফিসারদের বেতন দুইশত থেকে তিনশতগুন বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ জনগণের কথা বলার সাহস নেই। যেন নাৎসীজম কায়েম হয়েছে পুরো দেশময়। হাসিনা একসাথে সবগুলোকে খামচে ধরেনা। একের পর এক। একটার পর আরেকটা। কোনটা আগে কোনটা পরে কি প্রতিক্রিয়া হবে তা আগ থেকে প্রস্তুতি নেয়া থাকে।
বিএনপি জামাতের মতো মসনদ পাগল দুর্নীতি পরায়ন দল আর কখনো ফিরে আসতে পারবেনা। আওয়ামীলীগ প্রথম প্রথম বলতো ভিশন ২০২১ এখন বলে ভিশন ২০৪১। হাসিনার পুত্র জয় বলেছে ২০৪১এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন হিন্দু হবে সেই ভিশন নিয়েই তারা এগুচ্ছে । ভারত এখন খামচে ধরেছে বাংলাদেশকে। এই ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে হলে আওয়ামীলীগের বিরোধীতা করে লড়াই করে আন্দোলন করে কোন লাভ হবে না।
তাই আমি বলবো:
ভারত বিরোধীতার নামে ঘৃণ্য রাজনৈতিক খেলা আমাদের পরিহার করতে হবে। ভারতের মনে সেই আস্থা জাগুরুক করতে হবে যে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসলে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করা হবেনা।
অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মিডিয়া করায়ত্ব করুন। ইনভেস্ট করুন। মিডিয়ার বিস্তৃতি ঘটান।
প্রতিশোধের রাজনীতি নয় সহমর্মিতার রাজনীতি চালু হউক। দেশের জনগনের জন্য কাজ করুন। কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন।
ধৈর্য্যের সাথে জুলুম অত্যাচারকে মোকাবেলা করুন। দলে দলে ভাল লোক আওয়ামীলীগে প্রবেশ করান। কৌশলে আওয়ামীলীগের স্যাকুলার মানসিকতার কমর ভেঙ্গে দিন।
হাসিনাকে নামানোর আন্দোলন না করে তাকে ভাল কাজের দিকনির্দেশনা দিন। ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের জন্য কাজ করুন।
আলেম উলামারা কথায় কথায় হুমকি ধমকি হরতাল অবরোধ নাস্তিক মুর্তাদ এই করবো সেই করবো এমন আত্মঘাতি কাথাবার্তা না বলে ইসলাহী মনোভাব নিয়ে দ্বীনী দাওয়াতে ঝাপিয়ে পড়ুন।
দুশমনকে আপন করুন। দুশমনের অন্তরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া বু্দ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ দুশমন এখন চুড়ান্ত আঘাতের জন্য তৈরী হয়ে আছে।
বিএনপি জামাতের ভুল রাজনীতির খেসারত আজ পুরা জাতিকে দিতে হচ্ছে ; তাই খালিছ নিয়তে তওবা করুন। কারণ কোন জুলুমবাজ জালিমকে আল্লাহপাক তখনই কোন জনপদে চাপিয়ে দেন যখন সেখানে নাফরমানীর সয়লাব হয়েযায়। নিজেদের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই আর সুস্থ সুন্দর কল্যাণের পথে আসুন সবাইকে আহব্বান করি।
লেখক: গবেষক কলামিস্ট স্পেন প্রবাসি।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কমাশিসা সম্পাদক বা কমাশিসা পরিবারের নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল/অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কমাশিসা কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এটা একান্তই লেখকের নিজস্ব ব্যাপার।