শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৮:৪১
Home / প্রতিদিন / সালাহ উদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর

সালাহ উদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর

সাকা-মুজাহিদএকাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে তাঁদের মত্যুদণ্ড কার্যকর হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মুহম্মদ মারুফ হাসান। অবশ্য আইজি প্রিজন ইফতেখার উদ্দিন জানান, ১২টা ৫৫ মিনিটে ওই দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এছাড়া রাত পৌনে দুইটার দিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা​গারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান ১২টা ৫৫ মিনিটে ওই দুইজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়ে কলঙ্কমোচনের পথে এগিয়ে গেল দেশ।

১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিলের রায়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এর ১৪ দিনের মাথায় ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন সাকা চৌধুরী।

মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সে সময়কার আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মুজাহিদ। চলতি বছরের ১৬ জুন ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মুজাহিদ।
প্রায় পাঁচ বছরের দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ১৮ নভেম্বর আপিল বিভাগের চূড়ান্ত আদেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কার্যক্রম।

সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ দুজনকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাশাপাশি দুটি কনডেমড সেলে রাখা হয়েছিল। রায় হওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে দুই বন্দীর পরিবারের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন। ওই দিনই রাত নয়টার দিকে রায়ের অনুলিপি কারা কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা। রায় হাতে পেয়ে তা দণ্ডিত দুজনকে পড়ে শোনানো হয়।

দণ্ডিত দুজন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা আবেদন করেছেন কি করেননি, তা নিয়ে শনিবার ছিল নানা গুঞ্জন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রাণভিক্ষার বিষয়টি শুনেছেন বলে প্রথম আলোকে জানান। বিকেল পৌনে চারটার দিকে স্বরাষ্ট্রসচিব মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন তাঁর হাতে এসেছে।

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদনের খবরকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেন।
গণমাধ্যমে প্রাণভিক্ষার খবর দেখতে পেয়ে দণ্ডিত মুজাহিদ ও সাকার আইনজীবী ও পরিবারের পক্ষ থেকে দেখা করার অনুমতি চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়। সেই অনুমতি পাননি তাঁরা। এমনকি সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বাবাকে দেওয়া দণ্ড ‘পুনর্বিচারের’ আবেদন নিয়ে বঙ্গভবনে যান। তবে বঙ্গভবনের ফটকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাঁর এ আবেদন নেননি। বরং তাঁকে ওই আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন।
সাকার বড় ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেছেন, বাবা ক্ষমা চেয়েছেন, এটা তাঁদের বিশ্বাস হয় না।
স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন দুটিরে ব্যাপারে মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মতামত শেষে তা আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষে আবেদন দুটির ফাইল বঙ্গভবনে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাত সাড়ে নয়টার পর রাষ্ট্রপতি আবেদন দুটি নাকচ করেন।
এর আগে রাত সাড়ে আটটার দিকে সাকা চৌধুরীর ও আলী আহসান মুহম্মাদ মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তাঁদের পরিবারকে ডেকে পাঠায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। পরে দুই পরিবারের সদস্যরাই দেখা করেন।

বিকেল সাড়ে চারটা থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কারাগারের আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র‍্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাজধানীজুড়ে মোতায়েন করা হয় বিজিবির ২০ প্লাটুন সদস্য।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

এখন পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা (২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর) ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের (২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল)। আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। কারাগারে মারা গেছেন ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম (২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর) এবং বিএনপির সাবেক নেতা আবদুল আলীম (২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট)। তাঁর আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছিল।

আপিল বিভাগে বিচারাধীন

জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সুবহান (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলী (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), সাবেক জাপা নেতা সৈয়দ মো. কায়সার (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), বহিষ্কৃত আ.লীগ নেতা মোবারক হোসেন (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি), জাপার সাবেক সাংসদ আবদুল জব্বার (ট্রাইব্যুনালের রায় আমৃত্যু কারাদণ্ড) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান (ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসি)।
ফিরে দেখা
মুক্তিযুদ্ধের পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দেশ ছেড়ে পালান। তাঁর দাবি, ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে তিনি দেশে ফেরেন। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর পাল্টে যায় দেশের রাজনৈতিক চালচিত্র। দেশে ফেরার পর তিনি বারবার দল বদলে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকেছেন। একপর্যায়ে স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন সাকা চৌধুরী। সবশেষে তিনি যোগ দেন বিএনপিতে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারে (২০০১-২০০৬) প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টাও হন। বর্তমানে তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।
মুক্তিযুদ্ধের পর আলবদর নেতা মুজাহিদ ছিলেন আত্মগোপনে। জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পেলে মুজাহিদসহ অন্য নেতারা সামনে আসেন। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল। ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধে জামায়াত। জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মুজাহিদকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, মানবসভ্যতার সম্মিলিত বিবেককে কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো ঘৃণ্যতম অপরাধ করেছেন এই আসামি। এ জন্য তাঁকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, আদালতে তাঁর আচরণ ভালো ব্যবহারের পরিচয় বহন করেনি।
আর একাত্তরে বুদ্ধিজীবী নিধনের পরিকল্পনা ও সহযোগিতা করার জন্য জামায়াত নেতা মুজাহিদ কীভাবে দায়ী, তার ব্যাখ্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছিলেন, একাত্তরে ছাত্রসংঘের সদস্যরা আলবদর বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়। মুজাহিদ ছাত্রসংঘের ঊর্ধ্বতন নেতা ছিলেন। ক্ষমতাধারী রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে আলবদর গঠন থেকে শুরু করে হত্যা-নিধনযজ্ঞের শেষ পর্যন্ত এই বাহিনীর ওপর তাঁর কর্তৃত্ব ছিল।
২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে মুজাহিদ বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। অতীতেও কোনো যুদ্ধাপরাধী ছিল না।’ কিন্তু ট্রাইব্যুনাল থেকে গতকাল পর্যন্ত সব কটি রায়ে তিনি নিজেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত ও দণ্ডিত হলেন।

সূত্র : বিভিন্ন অনলাইন দৈনিক ও টিভি নিউজ

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...