বুধবার, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:৩৬
Home / কবিতা-গল্প / নির্জন রাতে – শাপলা নিয়ে একটি হৃদয়স্পর্শী কবিতা ‍!

নির্জন রাতে – শাপলা নিয়ে একটি হৃদয়স্পর্শী কবিতা ‍!

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ::

shaplaনির্জন রাতে !

সেজদাতে লুটিয়ে পড়বেন

শাপলা শহিদের মা।

চোখে কেবলি ভেসে উঠছে

ফুটফুটে পুত্র ফাহাদ।

বুক ভেঙ্গে পুত্র শোকে

ফরিয়াদ করে

এভাবেই কাটে তার রাতের পর রাত,

চোখের জলে

ভিজান জায়নামাজ।

নির্জন রাতে

ভয় আর শন্কায় কাটে তাদের প্রতিক্ষন ,

কাঁদতে কাঁদতে চোখে নালি পড়ে

অসহায় পিতার ।

shapla.jpg1ক্রমাগত চক্রান্তের জালে

আর ষড়যন্ত্রের করাল গ্রাস ধেয়ে আসছে ,

ভাবছেন, তাহলে কি সব কিছুই মিথ্যা।

ভন্ডের ভাস্বর!

সব কিছু কি কেবলি আবেগের উচ্চাস,

ধোকার মরিচিকা?

নির্জন রাতে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে

বিড়বিড় করে উঠে শহিদ ফাহাদের

আদুরের মুন।

সমাজের চোখে আজ ভয়ংকর

অপরাধ সে শাপলা শহীদের বোন ।

নির্জন রাতে

দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে পুলিশ ।

shapla2ক্রমাগত মামলার ভয়ে

অপরাধির মতো কাঁপতে থাকে

শাপলা শহীদের পিতা ,

একের পর ছেলের বিরোদ্ধে

ভয়কর যতো সব নালিশ ।

নির্জন রাতে গৃহে এসে

দেখা করেন ফাহাদের প্রিয় উস্তাদরা ।

হাতজোড় করে বলেন,

কখনো বলবনে না আপনার ছেলে

আমাদের মাদরাসার ত্বালাবা ছিল।

মাদরাসার ভর্তির খাতা আর

হাজিরা খাতা থেকে ছিড়ে ফেলেছি তার নাম।

কেউ বলে না, এই নিস্পাপ কিশোর

একদা ছিল তাদেরই প্রিয় পাত্র । তাদেরই হাত ধরে

গিয়েছিল শাপলায়।

নির্জন রাতে

গ্রামের মাতব্বর আসেন ,

শহীদ পরিবারকে-

একের পর ধমকিয়ে যান;

গ্রাম থেকে তাড়া হও বোকা।

পুলিশের লোকজন কেন

গ্রামের চারপাশে।

ভাগো নালায়েক, নাফরমান ।

হ্যায় আজ এটাই বাস্তব কেউ

পাশে নেই সবকিছু ধোকা ।

12212557_1731891340377191_979749302_nনির্জন রাতে নেতারা বৈঠক করেন ,

শিতাতপ কক্ষে চলে বাহারি খাবার।

জোট ভোট নোট, নিবর্চনী লবিং,

পদ পদবীর মহড়ায় গলায়

উঠে বিজয়ের মাল্য।

হাস্যোজ্জল তাদের চোঁখ মুখ।

আজ তার বিজয়ী।

ফাহাদের লাশ তাদের ভাগ্য বদল করেছে।

তারা অপেক্ষায় আছেন কবে

আরেকটা বিপ্লব হবে,

আবাল কিশোরদের নিয়ে

শাপলা অবরোধ হবে?

নির্জন রাতে

আহত ফাহাদের বন্ধু

কিশোরটি পঙ্গুত্ত নিয়ে ফেল ফেল করে

চেয়ে থাকে সুদুর আকাশের তারার দিকে।

সে জানে না তার ভবিষ্যত।

কেউ খোঁজ রাখেনা তার।

মামলায় জর্জরিত মহল্লার

ইমাম সাহেব হুজুর কোট কাচাড়িতে

দৌড়তে দৌড়তে আজ ভিটেমাটি ছাড়া।

কেউ জানে না।

নির্জন রাতে

খোদার দরবারেই তার শত অভিযোগ।

নির্জন রাতে

ভাগ হয়ে বিদেশি চাঁদা ,

পান চিবুতে চিবুতে নেতারা

ভাগ্যবদলের ঢেকুর তুলেন।

পুরান ঢাকায় নতুন

shapla3হাই মডেলের গাড়ি হাকান ,

দামি ফ্লাটে এসির ভিতর

রিমুট টিপে দেখেন, ” কাহানি গরগর”।

ছিলিমছি তে পানের পিক

ফেলতে ফেলতে ভাবেন

শাপলা কি ফের আসবে আবার !

নির্জন রাতে

রাজনৈতিক নেতা ঘুমের ঘুরে

চিৎকার করেন ,

আবার যদি আরেকটা শাহবাগ জাগত ।

কেউ যদি থাবা বাবার মতো লিখত ,

ফের আন্দোলনটা আবার জেগে উঠত।

নির্জন রাতে

বিরোধি দলের নেতা আসেন ,

হাত চেপে ধরে বলেন ,

আরেকটা বার মাটে নামুন না হযরাত।

গুনফলে ভূল হয়েছিল সেই বার।

একবার না পারিলে দেখ শত বার।

যাবার সময় জুলা পান্জাবির

পকেটে দিয়ে যান, চেকের পাতা।

না ওঠা হাদিয়া ! আর কিছু না।

নির্জন রাতে

আসেন সরকারী দলের আমলা ,

কখনো আসেন মন্ত্রি মহুদয়

কাছে টেন দিয়ে দেন একান্ত ছোহবত।

আশ্বাসের পর আশ্বাস দেন

নিরাপত্তার , আমরা থাকতে

চিন্তা করবেন না হযরত ,

আপনার জন্য বিলিয়ে দিব

আছে যতো মহব্বত।

নির্জন রাতে সবার হিসাব-

নিকাস ঠিকই আছে।

কেবল দুই দুই গুনে পাঁচ,

ফাহাদের এই অংকটা জানা ছিল না।

অপরিচিত ঢাকার বায়ান্ন-

বাজার তিপান্ন গলির পথঘাট

না চিনা গ্রামের কিশোর যোগ বিয়োগ

কখনো করেনি এসব নিয়ে।

তারা আজো জানে না

নির্জন রাতের

রাজনৈতিক তিলিসমাতি।

নির্জন রাতে শাপলায় উত্তাপ ছড়িয়ে,

গনভবন, বঙ্গবভন দখলের হুংকার দিয়ে,

ইসলামি রাজনীতিযারা নির্জন পথে সূদুরে পালিয়ে-

গিয়েছিল নিরাপদে। সেই গাদ্দার,

মীর জাফররা আজো আমাদের

সিপহসালার হতে ব্যস্থ।

তারা আবার শাহাদতের ফজিলতে

উত্তাপ তুলেন মঞ্চে। হাজারো ফরহাদ

আজো সেই বয়ানে আবেগী হয়।

তারা মনে মনে ফের প্রস্তুত

আবার শাপলা যেতে। শহীদ হতে।

নির্জন রাতে

হিসাবটা তারা এভাবেই মিলায়,

বড়হুজুরের মতো প্রগাঢ় এখলাসে।

নির্জন রাতে বৈঠক হয়।

নেতারা এমপি মন্ত্রির স্বপ্নে বিভোর।

হুজুরদের তারা তাড়া দেন।

কিছু একটা করুন।

ইসলাম যায় যায়। হায় হায়।

12226523_421037111440637_1522866475_n (1)আপনারা নিরবে বসে কেন ।

আর মনে মনে বিড়বিড় করেন,

“বোকা মোল্লারা মরবে।

শীদ হবে, জান্নাতে যাবে।

আমরা এমপি মন্ত্রি হব। ক্ষমতায় যাব “।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...