শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:৫২
Home / খিলাফাহ / খলিফাতুল মুসলিমীন উমর (রা.) এর খোদাভীতি

খলিফাতুল মুসলিমীন উমর (রা.) এর খোদাভীতি

Ehsan Bin _Komashishaএহসান বিন মুজাহির ::

খলিফাতুল মুসলিমীন হজরত উমর রা. ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। বক্ষমান নিবন্ধে হজরত উমর ফারুক রা. এর অভাবনীয় আমানতদারি ও খোদাভীতি বিষয়ক বিস্ময়কর একটি ঘটনা উপস্থাপন করা হলো। হজরত উমর রা. যখন শাসনক্ষমতায় ছিলেন সে সময়ের ঘটনা।

একদা হজরত উমর রা. বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন। দেখতে দেখতে তার শরীরের তাপমাত্রা বেশ বেড়ে গেল। তাকে প্রয়োজন মতো সব চিকিৎসা করা হলো। কিন্তু এসব চিকিৎসায় তেমন কোন কাজ হলো না। খলিফার জ্বর সারার লক্ষণ দেখা গেল না। ফলে খলিফাকে নিয়ে মদিনার জনগণ শঙ্কিত হয়ে পড়ল। তারা খলিফার নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ ভাবনায় পড়ে গেল। দেশের ভালো ভালো হেকিমের খোঁজখবর নেয়া হলো। অবশেষে দেখে-শুনে এক হেকিম ডেকে আনা হলো। হেকিম সাহেব খলিফার শরীর ভালোভাবে পরীক্ষা করলেন। সব দেখে হেকিম মোটামুটি একটা ধারণা পেলেন। তাই তিনি চিকিৎসার একটা পরিকল্পনা নিয়ে ফেললেন। খলিফার জন্যে ওষুধ তৈরি করতে হবে। তাই হেকিম জানালেন, ‘ওষুধ বানাতে হলে কিছু মধু দরকার’। কিন্তু খলিফার ঘরে ওষুধ বানানোর মতো পর্যাপ্ত মধু ছিল না। খবর নিয়ে জানা গেল, বায়তুলমালে প্রচুর মধু জমা আছে। কেউ কেউ বায়তুলমাল থেকে মধু আনার জন্য প্রস্তাব করল। কেউ কেউ বলল, ‘জলদি চলো, বায়তুলমাল থেকে মধু নিয়ে আসি।’ হজরত উমর রা. সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন।

সবকিছু শুনে তিনি বললেন, ‘তোমরা বায়তুলমাল থেকে আমার জন্যে মধু আনতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। এটা কেমন করে হয়? বায়তুলমাল তো জনগণের সবার সম্পদ। এ সম্পদ খলিফার একার নয়। তাই নিজের জন্য এই মধু ব্যবহার করার সাধ্য আমার নেই। যত প্রয়োজনেই হোক না কেন, জনগণের মতামত ছাড়া বায়তুলমাল থেকে মধু নেয়া যাবে না।’খলিফার শরীরের অবস্থা ছিল বেশ নাজুক। তার জীবন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অথচ তিনি বায়তুলমালের মধু গ্রহণ করতে চাইলেন না।

এ ব্যাপারে সম্মতি দেয়ার জন্যে সবাই খলিফাকে প্রচণ্ড চাপ দিতে লাগল। তাকে নানাভাবে বুঝানো হলো। উমর রা. তার সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন। তবে সবার চাপের মুখে খলিফা অবশেষে রাজি হলেন। রাজি হলে কি হবে? এ জন্যে তিনি শর্ত জুড়ে দিলেন। তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, তোমরা এক কাজ করো। বায়তুলমালের মধু ব্যবহারের জন্যে জনগণের কাছ থেকে সম্মতি নাও। তাদের সম্মতি পেলেই কেবল বায়তুলমাল থেকে মধু নেয়া যাবে। তার আগে নয়।’ কিন্তু জনগণের সম্মতি নেয়ার কাজটা খুব সহজ ছিল না। জনগণের সম্মতি পেতে হলে শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার। জুমার নামাজের দিন বলে তখন সবাইকে একত্রে পাওয়া যাবে। তখনই তাদের সম্মতি পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে আলাপ করা যাবে।

পরিশেষে ঠিক করা হলো, জুমার দিন মসজিদের নববীতে যারা নামাজ পড়তে আসবেন তাদের নিকট বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। তাদের কাছেই খলিফার জন্যে প্রয়োজনীয় মধুর অনুমতি চাওয়া হবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাই করা হলো।

দেখতে দেখতে শুক্রবার ঘনিয়ে এলো। মুসল্লিরা মসজিদে এসে জড়ো হয়েছে। তাদের কাছে খলিফার অসুস্থতার কথা জানানো হলো। আর তাঁর ওষুধ বানাতে যে মধুর প্রয়োজন তাও জনগণকে জানানো হলো। একই সাথে বায়তুলমাল থেকে মধুর পাওয়ার জন্যে সবার কাছে অনুমতি চাওয়া হলো।

খলিফার জন্য বায়তুলমাল থেকে মধু পেতে অনুমতি দরকার এ কথা শুনে মসজিদের মুসল্লিরা হতবাক হলো। একি অবাক কথা শুনছেন তারা! বায়তুলমালের মালিক খলিফা নিজে। অথচ মুসল্লিরা তার ব্যাপারে কী অনুমতি দেবেন? মসজিদের মুসল্লিদের চোখেমুখে বিস্ময়। এত বড় বিশাল মনের মানুষ তাদের খলিফা! জনগণের সম্পদের ব্যাপারে তিনি কতই না সজাগ! খলিফার এ ধরনের অনুভূতি সত্যিই বিস্ময়কর।

উমর রা.’র অভাবনীয় আমানতদারি সবাইকে হতবাক করল। অনেকে খলিফার খোদাভীতি দেখে চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারল না। উমর রা.’র মতো তাকওয়াবান শাসনকর্তা পেয়ে জনগণ গর্ববোধ করল। মুসল্লিরা খলিফার সুস্থতার জন্য যত প্রয়োজন মধু বায়তুলমাল থেকে নিতে সম্মতি দিল। তারপর সমবেত মুসল্লিগণ দু’হাত তুলে খলিফার সুস্থতার জন্যে আল্লাহর দরবাওে প্রার্থনা করলো।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...